ছাত্রসেনার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহীদ রিজভীর জন্মদিনে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা
মুহাম্মদ শাহীদ রিজবী, ছাত্রসেনার ইতিহাসের কিংবদন্তীতুল্য এক নাম !!
ছোট্টবেলায় চক হাতে যখন ব্লাক বোর্ডে লেখা শুরু করেছিলেন,সেই সময় কাঁচা হাতে লিখেছিলেন দুই অক্ষরের একটি শব্দ ‘সেনা’ !! সেই থেকে ছাত্রসেনার সাথে তার ভালোবাসার বন্ধন শুরু। আজ থেকে দুই যুগ পূর্বে ১৯৯২ সালে ছাত্রসেনার সাথে সাংগঠনিকভাবে কাজ শুরু করেন বীর চট্টলার চান্দগাও থানার আওতাধীন চকবাজার ইউনিট শাখায়, সেই থেকে থেমে নেই পথচলা। ছাত্র রাজনীতির বন্ধুর পিচ্ছিল চড়াই উৎরাই পথ মাড়িয়ে কাজ করেছেন চকবাজার ইউনিট,চকবাজার ওয়ার্ড,পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড,চান্দগাও থানা, বাকলিয়া থানা,চট্টগ্রাম মহানগর এবং শিক্ষাগত কারণে ঢাকায় আসার পর ঢাকা মহানগর কাজ করার পর দায়িত্ব পালন করেছেন কেন্দ্রীয় পর্ষদে। সাংগঠনিক জীবনের শুরুতে ছাত্রসেনা ও সুন্নীয়তের কাজ করতে গিয়ে রাজাকারের প্রেতাত্বা জামাত-শিবিরের প্রাধান্য বিস্তারকারী এলাকা চকবাজারে বারে বারে শিবিরের চ্যালেঞ্জের সম্মুখে কাজ করেছেন, শিবির কর্তৃক অপহৃত হয়েছেন কয়েকবার, তাইতো কেন্দ্রীয় নেতারা সেই নব্বয়ের দশকে চকবাজারের নেতা কর্মীদের চেচনিয়া-বসনিয়া-কাশ্মীরের মুজাহিদদের সাথে তুলনা করতেন। ঢাকায় আসার পর পড়াশুনার পাশাপাশি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার কারণে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের চোখের মণি হয়ে যান। অতঃপর ২০০৫ সালের ১ মে এক বৈরী সময়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ছাত্রসেনার গঠনতান্ত্রিক প্রধান তথা কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হোন। সেই সময়ে অনেক সিনিয়র বাঘা বাঘা নেতা থাকার পরেও তার মত একজন অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতাকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সর্বোচ্ছ পদে আসীন করাটা তৎকালীন নেতাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত ছিল !! কিন্তু তারপরের ঘটনা তো ইতিহাস !!
ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মেধা,প্রজ্ঞা,ন্যায়-নীতি ও শ্রম দিয়ে ছাত্রসেনার সাংগঠনিক কাঠামো ও আন্দোলনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনা নিয়ে আসেন। তিনি যেন হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা, জাদুর পরশে সংগঠনের টপ টু বটম একই সুতায় বেঁধে সারা দেশের সংগঠনকে একই স্রোতে আন্দোলিত করতে থাকেন। যে ছাত্রসেনা ৮০ সালে জন্মের পর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক ছিল, সেই ছাত্রসেনার মূল পাওয়ার হাউসকে তিনি ঢাকাকেন্দ্রীক করে রাজধানী থেকেই ছাত্রসেনার আন্দোলনকে সারা দেশে বিস্তার করাতে থাকেন। মূলত তার প্যানেল থেকে ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ঢাকা নগর কিনবা ঢাকা বিশ্ববিদালয় থেকেই নির্বাচন করার যে ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল,সেই ধারা ইসলামী ছাত্রসেনাতে এখনো অব্যাহত আছে। সঙ্গী হিসেবে সেই সময় ঢাকায় পেয়েছিলেন এক ঝাঁক মেধাবী মুখ, বিশেষ করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাকির হোসাইন,ছাত্রসেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি এস এম কাউছার সহ এক ঝাঁক মেধাবী মুখকে সাথে নিয়ে তিনি ঢাকাতে ছাত্রসেনার অবস্থান ইতিহাসের যে কোন সময় থেকেই শক্তিশালী করেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে সংগঠনের ঐতিহ্যগত অবস্থানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের প্রতিটা জেলা চষিয়ে বেড়িয়ে সংগঠনের কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন, সংগঠনের মশাল নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গের রংপুর,সিরাজগঞ্জ থেকে শেষ সীমানা পঞ্চগড় অবধি, অন্যদিকে লালনের শহর কুষ্টিয়া সহ খুলনার বিভিন্ন জেলা এবং বরিশালের এমন সব জেলায় তিনি সংগঠনের কমিটি করেছিলেন যেখানে তার পূর্ববর্তী কোন প্যানেলে কখনো কমিটি হই নাই। এক এগারোর নিষিদ্ধ সময়েও সোৎসাহে সংগঠনের কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে সংগঠনে এক ঝাঁক মেধাবী নেতার সৃষ্টি হয় যারা পরবর্তীতে সংগঠনের হাল ধরেছেন। ২০১১ সালের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ছাত্র রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ২০০৮ সালে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ২০১৩ সালের জাতীয় কাউন্সিলে ইসলামিক ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এখনো কাজ করেছেন, পাশাপাশি ইসলামিক ফ্রন্ট ঢাকা নগর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন।
মেধাবী এই সংগঠক ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করেছেন। পূর্বপুরুষদের রক্তের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সুন্নীয়ত ও আলা হজরত (রহঃ) এর দর্শন মিশে আছে তার শিরা-রন্ধ্রে অস্থিমজ্জায়। তাইতো তার লেখা গল্প-প্রবন্ধ-কবিতায় ফুটে উঠেছে সুন্নী আদর্শের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম, কখনোবা সুপ্ত স্বজাতিকে ঘা মেরে জাগানোর অকুণ্ঠ বাসনা, কখনোবা বাতুলতাকে পায়দলে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য স্পৃহায় দ্রোহীর বহ্নিজ্বালা। ২০১৫ সালে প্রকাশিত তার লিখিত কবিতার বই ‘সুন্নিয়তের জোয়ার বানে’ পাঠকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
চট্টগ্রাম সরকারী বানিজ্যিক মহাবিদালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশুনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কৃতি ছাত্র হিসেবে সাবেক ভিসি ডঃ জামিলুর রেজা চৌধুরীর হাত থেকে পান ‘স্পেশাল রিকগনিশন এওয়ার্ড’। পরবর্তীতে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার ইন গভর্নেন্স বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।
কীর্তিমান এই সংগঠক বর্তমানে পেশায় আইনজীবি- বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত,ঢাকা বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় কর্মরত আছেন,পাশাপাশি বেশ ক’টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের আইনী দিক দেখ-ভাল করেন।
আজ ২০ ফেব্রুয়ারী কিংবদন্তীতুল্য এই নেতার জন্মদিন। জন্মদিনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানান ছাত্রসেনা ও ইসলামিক ফ্রন্টের সর্বস্তরের নেতাকর্মীবৃন্দ। শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই বলেন, ছাত্রসেনা তথা সুন্নীয়তের আন্দোলনে এবং অহিংস ও প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির বিকাশে শাহীদ রিজভীর অবদান ছাত্রসেনার ইতিহাসে তাকে অমর করে রাখবে। সবাই এই নেতার দীর্ঘহায়াতের জন্য মহান আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করেন।