‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি’ ও ‘খাদ্যে ভেজাল’ ঠেকাতে সরকারকে কঠোর হতে আহবান ইসলামী ছাত্রসেনার
শুক্রবার বা’দ জু’মা বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে ইসলামী ছাত্রসেনা ঢাকা মহানগর পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে স্বাগত র্যালী আয়োজন করে। র্যালীটি প্রেসক্লাব প্রাঙ্গন এসে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং ইফতার–সেহরীসহ সকল খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরিষদের অর্থ সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ শাহীদুল আলম রিজভী, ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি ছাত্রনেতা এম মনির হোসাইন,সিনিয়র সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রসেনা সম্মিলিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবিএম আরাফাত, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক সামিউল শুভ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ইসলামী ছাত্রসেনা ঢাকা মহানগর সভাপতি ছাত্রনেতা শেখ ফরিদ মজুমদার এই কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথি এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মানববন্ধনে বলেন, পবিত্র মাহে রমজান মাস ঈমানদার মুসলমানদের জন্য আল্লাহ্’র এক বড় নিয়ামত,বড় এহসান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সারা বছর এই মাসটির জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। ছোট থেকে বড়,ধনী থেকে গরীব সকল শ্রেণির মুসুল্লিগণ সারাদিন সিয়াম পালন করেন এবং রাতে ইবাদাত বন্দেগি করেন।
তবে দুঃখের বিষয় এই যে, এক শ্রেণির লোক আছে, যারা অন্যান্য সময়ে নিত্যপণ্যের মূল্য তেমন বৃদ্ধি করেনা, কিন্তু এই পবিত্র মাহে রমজান এলেই তারা নিত্যপণ্য সিন্ডিকেট করে এবং পণ্যের উচ্চমূল্য ধার্য করে, সাথে খাদ্যে ভেজাল তো আছেই! তাই তাদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে জুলুম করবেন না, সততার সাথে ব্যবসা করুন,অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ করবেন না।
প্রধান বক্তা এডভোকেট মুহাম্মদ শাহীদুল আলম রিজভী বলেন, যতদিন যাচ্ছে খাদ্যে ভেজাল বেঁড়েই চলছে, সরকারের এই দিকে কোন পদক্ষেপ নেই। এখন তরল পাস্তুরিত দুধ বানানো হয় শ্যাম্পু দিয়ে, ইফতারীর অন্যতম আইটেম মুড়িতে দেয়া হয় বিষাক্ত ইউরিয়া,ফলমূলে দেয়া হয় ফরমালিন, একই তেল দিয়ে ভাঁজা হচ্ছে ছোলাবুট-পেয়াজু, জুস-শরবতে দেয়া হয় ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ ইত্যাদি নানাভাবে নিত্যপণ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এই তাপদাহ গরমে ধর্মপ্রাণ মুসলমান সারাদিন রোজা রেখে ইফাতারীর সময় এই ভেজাল মেশানো খাদ্যই সবাইকে খেতে হবে, যার পরিণতিতে কিডনিতে সমস্যা,হার্টে সমস্যা,লিভারে সমস্যাসহ নানা রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে, অথচ সরকার কিংবা মোবাইল কোর্ট এর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।
ফলে খাদ্যে ভেজাল কমছে না,বরং দিন দিন তা প্রকট আকার ধারণ করছে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এসকল ভেজালের বিরুদ্ধে যথার্থ ব্যবস্থা নিন, আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করুন এবং যারা এই পবিত্র মাসে নিত্যপণ্য দাম বাড়িয়ে দেয়, সেই সকল চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন এবং এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করুন যাতে এই ধরনের কাজ করা থেকে সবাই বিরত থাকে।
বিশেষ বক্তা ছাত্রনেতা এম মনির হোসাইন বলেন, একটা সময় ছিল, রমজানের দিনের বেলায় অধিকাংশ খাওয়ার হোটেল,ফাস্টফুড,চায়ের দোকান গুলো বাইরে কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকতো, আর এখন তা ব্যাপক হারে কমে আসছে। উন্মুক্ত ভাবে একজন রোজাদার ব্যক্তির সামনে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হয়। রমজান মাস শেষ হওয়ারতো দূরের কথা, শুরুই হয়নি অথচ ঈদের কেনাকাটা নিয়ে অনেকেই ব্যস্ত, যাদের অধিকাংশই না রাখে রোজা, না তারা যথাযথ ভাবে সালাত আদায় করে! এখান দিয়ে ঈদের পোশাকের নামে শরীয়ত পরিপন্থী পোশাকের ডিজাইন করা হচ্ছে, এমনকি পোশাকের নামকরণ করা হচ্ছে ভারতীয় কিংবা পাশ্চাত্য বিধর্মীদের নামের আদলে ইত্যাদি নানা ভাবে আমাদের ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে।
পবিত্র মাস মাহে রমজানের পবিত্রতা যথাযথভাবে বজায় রাখা হচ্ছে না। যাকাতের কাপড়ের নামে চলে মৌসুমি ব্যবসা, যা এক ধরনের তামাশা বললেই চলে, কেননা যাকাতের নামে যে কাপড় কিনে গরীবদের দেয়া হচ্ছে তা খুব নিম্নমানের এবং ব্যবহারে প্রায় অনুপযুক্ত। কিন্তু যারা এই কাপড় গুলো যাকাতের নামে গরীবদের দেয়, তারা কিন্তু ঠিকি তাদের মনমতো ভাল কাপড় নিজের জন্য কিনে। অপরদিকে ঠিকমতো ফিতরা আদায় করা হয়না। তাই সকলের প্রতি আবেদন থাকবে রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখুন এবং যাকাত-ফিতরা যথাযথ ভাবে আদায় করুন।