খবরের বিস্তারিত...

জাকির নায়েক

জাকির নায়েকের বিষয়টা আসলে কী ?? —- গোলাম দস্তগীর লিসানী

[পরিমন্ডল বিষয়ক]

রুচিবোধের কারণেই, পারতপক্ষে কোনও ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কিছু বলি না। ব্যক্তির নাম ধরে টানাটানি করাটা নেহায়েত অপ্রযোজ্য রুচির ঠেকে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নাম ধরেও টানাটানি করি না।

সংঘ-সংগঠনের নাম চলেই আসে, এটুকু ঠেকানো যায় না। এবং সংঘ-সংগঠনের নামও অন্য কারণে আসে না। মূলত আসে মতাদর্শের কারণে। আর মতাদর্শের নাম আসে স্রেফ সেটার ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে।

নাহলে, আল্লাহরই শপথ, আমরা এমনকি কোনও মতাদর্শ (ফির্কা, ইজম) নিয়েও কথা বলতাম না। না কথা বলতাম কোনও ধর্ম নিয়ে। সত্যবোধের উপলব্ধিতে ডুবে থাকা এতই মহৎ বিষয়, তাতেই শান্তি এবং তাতেই পরিণতি… সেখানে কোনও ধর্ম, মতাদর্শ, সংঘ-সঙ্গঠনের নামই আসার কথা নয়, ব্যক্তির নাম তো আরো বহু পরে!

কিন্তু ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে হল পরিস্থিতির সাপেক্ষে। আমরা জাকির নায়েক বিষয়ে উপলব্ধির কিছু অংশ শেয়ার করব।

[শুরুর দিকের কথা]

আজ থেকে একযুগ আগের কথা। প্রচন্ড ক্ষুধা ছিল ইলমের। গভীর বক্তব্য শোনা ও তা উপলব্ধি করার। আমি কম্পিউটারে ইন্টারনাল টিভি কার্ড যুক্ত করি ‘ইসলামিক স্কলার’ দের বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য। তখন সত্যি সত্যি ইন্টারনেটের এমন দশা ছিল, যে, খুব একটা ইসলামিক ভিডিও পাওয়া যেত না। বাস্তব বলতে গেলে, প্রায় কিছুই পাওয়া যেতো না।

মনে পড়ে, সুযোগ পেয়েই আমি আসওয়াত আল ইসলাম ওয়েবসাইটের সমস্ত হিন্দি, উর্দু আর ইংরেজি লেকচার ডাউনলোড করেছিলাম। সব মিলিয়ে মনে হয় পৌনে দু’শ ‘ইসলাম-বক্তা’র লেকচার ছিল সেখানে।

ধর্ম প্রচারের বিষয় শোনার ও বোঝার অভ্যাসটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন আমার এক আত্মীয়। তিনি সেই টেপরেকর্ডারের যুগে বিদেশ থেকে আহমাদ দিদাতের লেকচার আনিয়ে শুনতেন, আমাদের শোনাতেন। আমরা বিভোর হয়ে শুনতাম।

সেই ধারাবাহিকতায়, ভারতীয় চ্যানেল পিস টিভি থেকে ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য রেকর্ড করতাম, তারপর তা এডিট করতাম, তারপর তা কনভার্ট করে রিনেম করে সুন্দর করে রেখে দিতাম।

এদের বক্তব্য বোঝার ও প্রচারের খাতিরে আমি ইংরেজি ভাষা ভালভাবে শেখা শুরু করেছিলাম। ভিডিও এডিট শিখেছিলাম। কমপ্রেশন শিখেছিলাম।

তখন আমার ধারণা ছিল, হয়ত বাংলাদেশে আমার মত এত সিরিয়াস জাকির নায়েক লিসেনার খুব কম আছে। কথাটা এখনো আমার সত্যি মনে হয়। আজকে জাকির নায়েক ভক্তে বাংলাদেশ সয়লাব, কিন্তু এর শুরু থেকেই আমরা গভীরভাবে তা অবজার্ভ করেছি।

[শিয়া সুন্নি বলতে কিছু নেই, অনলি মুসলিম বিষয়ক]

প্রথম খটকাটা লাগে এখানে। জাকির নায়েক সব সময় বলে বেড়ানো শুরু করলেন, শিয়া সুন্নি বলতে কিছু নেই। আমি সুন্নি নই, আমি অনলি মুসলিম। শুধু মুসলমান। শুনতে খুবই চটকদার লাগে।

কিন্তু ইতোমধ্যে আমাদের জানা ছিল, রাসূল দ. বলেছেন, ইসলামে ৭৩ টি ফির্কা হবে, যার মধ্যে আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ্ হল মুক্তিপ্রাপ্ত। বাকী ৭২ টি ফির্কা বিপথগামী, পথভ্রষ্ট। আহলুস সুন্নাহ্ হল পথের বা দলের নাম, আর সুন্নি হল সেই পথের অনুসারীর নাম।

যে লোক নিজেকে সুন্নি নয় দাবি করে, সে তো অবশ্যই রাসূল দ.’র পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।

যেখানে রাসূল দ. বলছেন, ইসলামের ৭২ দল সরাসরি পথভ্রষ্ট সেখানে একমাত্র পথপ্রাপ্ত দল থেকে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে বিচ্ছিন্ন করা কোনও সরল বিষয় হতে পারে না।

যে লোক সংস্কৃত ভাষায় শব্দ উল্লেখ করতে পারে, বাইবেল ঘাঁটতে পারে, সে বুখারি মুসলিম কোনটাই পড়ার সময় পায়নি, মেনে নিলাম। সে কি কারো মুখে এতগুলো বছরেও কারো মুখে শোনেনি, যে রাসূল দ. বলেছেন সুন্নিই হল পথপ্রাপ্ত?

রাসূল দ.’র ঘোষণার বিপরীতে এ ঘোষণা কী করে আসে?

[কারবালায় ইমাম হুসাইন রা.’র শাহাদাত বিষয়ক একটা ঠাট্টা মশকরা]

তখন মোবাইলে জাকির নায়েকের অডিও নিয়ে ঘুরঘুর করি। সময় পেলেই কানে লাগিয়ে শুনি। পজ দিই। কথাবার্তা বলি। তারপর আবার পজ ছেড়ে শুনতে থাকি। এত গভীর আগ্রহ। যারা একটু আধটু জাকির নায়েক বিরোধী কথা বলে তাদের মনে করতাম প্রথাগত গোঁড়া মোল্লা।

সেই সময়ে জাকির নায়েকের একটা অত্যন্ত পুরনো অডিও শুনি। সেখানে সে বলছে,
এক খ্রিস্টান পাদ্রী এসে এক আলিমকে জিগ্যেস করলেন,
ইমাম হুসাইন রা.’র কতল যখন কারবালায় হয়, তখন রাসূল দ. কোথায় ছিলেন?
জান্নাতে, আল্লাহর কাছে। জবাব দেন আলিম। তারপর তিনি প্রশ্ন করেন, যদি ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর পুত্র হয়ে থাকেন তবে ঈসা আলাইহিস সালামকে খ্রিস্টমতে শূলে চড়ানোর সময় আল্লাহ্ কোথায় ছিলেন?

এই জোকটা করার সময় জাকির নায়িককে খুবই রসিক এবং একই সাথে খুবই নিষ্ঠুর লাগছিল। বিশেষ করে কারবালার বিষয়ে তার কথাগুলো পরে বহুবার ভেবে দেখেছি, খুব বিঁধছিল।

এসব বিষয় থেকে মূলত খটকার শুরু হয়।

[ ‘নেহি মানতে’ বনাম ‘নেহি মাঙতে’ ]

‘আজকে দিনমে তো হাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেভি নেহি মানতে।’ এই কথাটা শেলের মত বিঁধেছিল।

এই অতি ভঙ্গুর হিন্দি বা উর্দু না বোঝার কোন কারণ নেই।
আজকের দিনে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও মানে না।

পরবর্তীতে এটাকে ‘মাঙতে’ বা চায় না করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

আসলে এমন অগুণতি উদাহরণ দেখা যাবে সব ধর্মে। সব ধর্মেই কিছু ফির্কার উদ্ভব হয় যেসব ফির্কা তাদের ধর্ম প্রণেতার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, বৌদ্ধ ধর্মে এমন একটা মত উদ্ভব হয়েছিল, যদি গৌতম বুদ্ধও আসে, এবং সে-ও তোমাদেরকে বলে, আমাকে অনুসরণ করো, তবে আমরা তাকেও হত্যা করব। এটাই একটা বৌদ্ধ সেক্টের কাছে সহীহ্ বুদ্ধিজম রূপে দেখা দিয়েছিল। ঠিক তেমনি কিছু ধার্মিক ইহুদি আছে যারা মূসা আলাইহিস সালামের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা বলে, মূসা আলাইহিস সালামের সমালোচনা করে এবং বিশেষ করে তাঁর শরঈ বিধানগুলোর প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা পোষণ করে।

ইসলামেও এরকম মত থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। আছেও। রাসূল দ. কে একেবারে সাধারণ মানুষের কাতারে নামিয়ে আনার জন্য তাদের চেষ্টার কোনও কমতি নেই। তারা রাসূল দ.’র ত্রুটি বিচ্যুতি বের করার কাজে দক্ষ। একজন মুসলিমের বলার কথা, রাসূল দ. কত বেশি জানেন, কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ চেষ্টা হল, রাসূল দ. কত কম জানেন! একজন মুসলিম বলেন, রাসূল দ. কত বেশি অসাধারণ, আর তাদের সম্পূর্ণ চেষ্টা হল, রাসূল দ. কত সাধারণ। তারা রাসূল দ.’র যত অসাধারণ গুণ ও বিষয় আছে, সবগুলোকে হাইড করে নেয়। একজন ব-কলম এতিম অসহায় এবং গোঁড়া মানুষ হিসাবে রাসূল দ. কে উপস্থাপিত করতে চায়। তারা রাসূল দ.’র জন্মের দিনকে ভুলে যেতে চায়, ভুলিয়ে দিতে চায় এমনকি ভুলে না যাওয়াটাকে শিরক সাব্যস্ত করে যদিও নবীদের জন্মদিনে ঘুম দিবসে এবং পুনরুত্থান দিবসে সালাম পাঠানোর আদেশ কুরআনে আছে। রাসূল দ.’র সাথে জড়িত যত সম্মানজনক বিষয় আছে, সবগুলোকে পাশ কাটাতে চায়। রাসূল দ.’র নামকে কালিমা থেকে বাদ দিতে চায়। রাসূল দ.’র রওজায় যিয়ারতকে নিষিদ্ধ করতে চায়, তাঁর সম্মানে দাঁড়ানোকে নিষিদ্ধ করতে চায়, তাঁর নামে দরুদ প্রেরণ পর্যন্ত তাদের আপত্তি। এমনকি নামাজেও রাসূল দ.’র প্রতি দরুদ প্রেরণের দরুদে ইব্রাহিম না পড়ে সালাম ফেরানোর দিকে খেয়াল।

রাসূল দ.’র পরিবারের প্রতিও তাদের যে মূল্যায়ন, তা যে কোন মানুষকে শিউরে দিবে।

আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন, জাকির নায়েক বাইবেল-উপনিষদ-বেদের পাশাপাশি সব সময় শুধু কুরআন থেকে রেফারেন্স দেয় এবং হাদীস থেকে তার রেফারেন্সের সংখ্যা না থাকার মতই?

[ ইমাম হুসাইন রা.’র নিহত হওয়ার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই- বিষয়ক]

জাকির নায়েক দেখলেন, যথেষ্ট জনসমর্থন আদায় করা হয়েছে। এখন একটা মৌলিক কথা বলার মত শক্তিশালী অবস্থানেও পৌছানো গেছে।

তিনদিনের ‘ইন্টারন্যাশনাল পিস কনফারেন্স’ এর দর্শক সবচে বেশি থাকে। সেখানে তিনি বললেন, ইসলামে ব্যক্তি নয়, আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে।

এবং তখনি তিনি বললেন, এজিদ এবং ইমাম হুসাইন রা.’র ‘যুদ্ধ’ ইসলামের কোনও বিষয় নয়! এটা ক্ষমতা দখলের যুদ্ধ।

আল্লাহু আকবর! একবার ভাবুন, যদি কেউ বলে, অমুক নবীকে হত্যা করা ইসলামের কোনও বিষয় নয়!

বনি ইসরাঈল বহু নবীকে হত্যা করেছে। হুসাইন রা. কোন নবী নন, কিন্তু তিনি স্বয়ং রহমাতাল্লিল আলামীনের অর্ধাংশ।
রাসূল দ. বলেছেন, হুসাইন আমা হতে আমি হুসাইন হতে।
রাসূল দ. বলেছেন, হুসাইন আমার অর্ধাংশ, হাসান আমার অর্ধাংশ।

একবার কল্পনা করুন,
রাসূল দ.’র অর্ধাংশকে হত্যা করা হচ্ছে অথচ তাকে আপনি ধরে নিচ্ছেন, ‘ইসলামের কোনও বিষয় নয়’!

রাসূল দ. বলেছেন,
এদের যে কষ্ট দিবে সে আমাকে কষ্ট দিবে।
এদের দু ভাইকে যে ভালবাসবে সে আমাকে ভালবাসবে।

একবার কল্পনা করুন,
রাসূল দ. কে জেনে শুনে বুঝে কষ্ট দেয়াকে আপনি ইসলামের কোনও বিষয় নয় তা ধরে নিচ্ছেন।

রাসূল দ. বলেছেন,
হাসান ও হুসাইন জান্নাতের তরুণদের প্রধান।
তিনি দ. বলেছেন, জান্নাতে সবাই তরুণ।
তিনি দ. বলেছেন, ফাতিমা জান্নাতের সকল নারীর প্রধান।

একবার কল্পনা করুন,
যাঁর ভাই, মা এবং তিনি স্বয়ং জান্নাতের সকল নারী ও পুরুষের অধিকারী তাকে হত্যা করাকে আপনি মনে করছেন ‘ইসলামের কোন বিষয় নয়’ এবং আপনি জান্নাতও কামনা করছেন!

[ এজিদকে রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলা বিষয়ক]

তিনদিনের ওই কনফারেন্সে জাকির নায়িক ইমাম হুসাইনের হত্যাকে রাজনৈতিক যুদ্ধ বলেই ক্ষান্ত দেন না, এজিদকে রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলেন।

প্রথমত, মুসলিমদের মধ্যে রাদ্বিআল্লাহু আনহু হচ্ছে সর্ব্বোচ্চ সম্মানজনক শব্দাবলী। যার নামের শেষে রাদ্বিআল্লাহু আনহু থাকে, তার ব্যাপারে মূলত বলা হয়, ‘তার উপর আল্লাহ্ রাজী ও খুশি আছেন’ এবং তা সাধারণত সাহাবায়ে কিরামের ক্ষেত্রেই বলা হয়।

সাধারণত মুসলিমরা খুবই দৃঢ়ভাবে রাদ্বিআল্লাহু আনহু শুধু সাহাবাদের বিষয়ে ব্যবহার করেন।

এটা জাকির নায়িক মুখ ফসকে বলেননি, তা এর পরপরই আইআরএফ বা ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিস টিভির প্রতিষ্ঠান) এর পক্ষ থেকে বলা হয়।

তাদের মূল কহতব্য ছিল, ‘জাকির নায়িক কি ভুল?’

তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, জাকির নায়িক ভুল নয়। সে এজিদকে রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলেছে, জেনেই বলেছে। যদিও এজিদ কোন সাহাবী নয়। সে এর পরের প্রজন্মের।

যার ব্যাপারে জান্নাত নিশ্চিত হয় তাকে রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলা যায়, এটা বলে তারা বলেন, এজিদ কনস্টান্টিনোপলের যুদ্ধে গিয়েছিল, রাসূল দ. বলেছেন, যারা সে যুদ্ধে যাবে তারা জান্নাতি। সুতরাং এজিদ জান্নাতি। সুতরাং রাসূল দ.’র কথা অনুযায়ী এজিদকে রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলা যায়।

এরপর তারা রেফারেন্স দেয়।

অথচ তারা যে রেফারেন্স দেয়, সেখানে লেখা আছে, প্রথম যে দল কন্সট্যান্টিনোপলের আক্রমণ করবে, তারা জান্নাতি।

এজিদ মদ্যপান করতে করতে কন্সট্যান্টিনোপলের যুদ্ধে যাওয়া সৈনিকদের বরফে দুর্দশার কথা শুনে কবিতা বলেছিল। তখন তাকে শাস্তিমূলকভাবে তার পিতা সে যুদ্ধে পাঠান।

সেটা ছিল অষ্টম যুদ্ধ। প্রথম যুদ্ধ নয়, প্রথম অভিযান নয়।

সম্পূর্ণ জেনেশুনে রেফারেন্স দিয়ে তারা জাকির নায়েককে শুদ্ধ প্রমাণ করার চেষ্টায় হাদিসকে বিকৃত করেছে। যে হাদিসের সূত্র যে পাতার সূত্র দিয়েছে সে পাতায় বলা আছে প্রথম আক্রমণের কথা।

এই সূত্র টেনে তারা জাকির নায়েককে জান্নাতি এবং সেই সূত্রে রাদিআল্লাহু আনহু বলা ঠিক আছে এবং সেই সূত্রে জাকির নায়েক ভুল নয় তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে।

কিন্তু কী কারণে কন্সট্যান্টিনোপল যুদ্ধ?
কারণ কন্সট্যান্টিনোপলের রাজা রাসূল দ.’র পবিত্র চিঠি ছিড়ে ফেলেছিল।

রাসূল দ.’র পাঠানো চিঠির যদি এত মর্যাদা হয়, যে, সে চিঠির অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া সকলে জান্নাতি,

তবে সে এজিদের জন্য তা প্রযোজ্য করার চেষ্টা তারা কীভাবে করে, যে এজিদ রাসূল দ.’র ওই দৌহিত্রর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে, হুসাইন রা.’র বিষয়ে রাসূল দ. বলেছেন, এদের রক্ত আমাদের রক্ত, এদের মাংস আমাদের মাংস, এদের সম্মান আমার সম্মান এদের অসম্মান আমার অসম্মান!

রাসূল দ.’র পরিবার তথা ইমাম হুসাইন বিষয়ে রাসূল দ. বলেছেন, যারা এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তারা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

এই সবকিছু জেনেও জাকির নায়েকের মতাদর্শের কাছে এজিদ জান্নাতি হয়। রাদ্বিআল্লাহু আনহু হয়। আর আমাদের সাধারণ মানুষরা শুধু টিভিতে দেখার কারণে, দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে তাকে সঠিক মনে করি, তার কথায় এজিদকে সঠিক মনে করি, রাদ্বিআল্লাহু আনহু মনে করি, এবং ইমাম হুসাইনের হত্যাকে সঠিক মনে করি!

[ জাকির নায়িক অনেককে মুসলমান করেছেন বিষয়ক]

তার কথায় শত শত হোক বা না হোক, বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ ‘ইসলাম’ গ্রহণ অবশ্যই করেছে।

কাদিয়ানিদের প্রচারণায় এই বাংলাদেশেই প্রতিদিন কিছু মানুষ অন্য ধর্ম থেকে তাদের উপলব্ধি অনুযায়ী ‘ইসলাম’ গ্রহণ করে। সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাদিয়ানিদের দ্বারা ‘ইসলাম’ গ্রহণ করেছে।

তেমনি বক্সার মোহাম্মদ আলী সাহেব প্রথমে ‘ইসলাম’ গ্রহণ করেছিলেন ‘নেশন অভ ইসলাম’ এর মাধ্যমে। ‘নেশন অভ ইসলাম’ এর মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু নেশন অভ ইসলাম রাসূল দ.’র পরে নুবুয়্যতের দাবিতে বিশ্বাস করে, তারা বিশ্বাস করে, এই পৃথিবী তৈরি করেছে কালো (নিগ্রো) দেবতারা। পরে বক্সার মোহাম্মদ আলী সালাফিজমে যান, অর্থাৎ জাকির নায়েকের মতাদর্শ গ্রহণ করেন এবং সবশেষে তিনি আহলে সুন্নাত এ পদার্পণ করেন। আল্লাহর শুকরিয়া, মোহাম্মদ আলীর ওয়াসিলায় ৮ লাখের মত মানুষ ইসলামকে চিনেছে। এবং লক্ষ মানুষ নেশন অভ ইসলাম নামক নুবুয়ত এবং সৃষ্টিতে শিরক দাবিদার ভ্রান্ত মেসনিক মতাদর্শ থেকে ইসলাম এ ফিরে এসেছে।

সবচে হৃদয়বিদারক বিষয় হল, কাদিয়ানিদের প্রচারণায় যারা ‘ইসলাম’ গ্রহণ করে তারা শেষ পর্যন্ত রাসূল দ.’র পর নবী সাব্যস্ত করে ইসলামের বাইরে চলে যায়।

ঠিক তেমনি নেশন অভ ইসলামের মাধ্যমে যারা ‘ইসলাম’ গ্রহণ করে তারাও নুবুয়ত দাবি এবং সৃষ্টিতে শিরকের দাবিতে পতিত হয়ে ইসলামের বাইরেই রয়ে যায়।

যেহেতু রাসূল দ. বলেছেন, আলাদা আলাদা অনেক হাদীস একত্র করে বলছি,
ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের রক্ত আমার রক্ত,
তাদের মাংস আমার মাংস,
তাদের ভালবাসা আমার ভালবাসা,
তাদের শত্রুতা আমার প্রতি শত্রুতা এবং হে আল্লাহ্ আপনিও তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করুন…
হাসান আমার অর্ধাংশ,
হুসাইন আমার অর্ধাংশ,
যে আমাকে ভালবাসে সে আলী ফাতিমা হাসান হুসাইন ও আমার সাথে একই স্থানে জান্নাতে থাকবে…
যে ফাতিমা ও তার সন্তানদের প্রতি ঘৃণা রেখে হাতিমে কাবা ও মাক্বামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সিজদারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে-ও ইসলামের বাইরেই মৃত্যুবরণ করল…

যেহেতু রাসূল দ. বলেছেন, হুসাইন নেতৃত্বেরও নেতৃস্থানীয়,
আর যেহেতু আল্লাহ্ বলেছেন, এই রাসূল দ. নিজ চাওয়া থেকে কিছু বলেন না, বরং তা সরাসরি ওয়াহয়ি হয়ে থাকে,
তাই রাসূল দ.’র কথাই ইসলাম হওয়াতে,

ইমাম হুসাইন রা. যখন নেতৃত্বের আহ্বান করেন,
তখন হুসাইন ভিন্ন সকল নেতৃত্ব নাল অ্যান্ড ভয়েড হয়ে যায়।

যেহেতু তখন হুসাইন ভিন্ন সকল নেতৃত্ব অনৈসলামিক হয়ে যায়,
সেহেতু অন্য সকল নেতৃত্বকে যারা বৈধ মনে করেন,
ঈমানি দিক দিয়ে তাদের বিশ্বাসও অনৈসলামিক হয়ে যায়।

তাই ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বের আহ্বানের সময় তার বিরুদ্ধে-
যারা যুদ্ধ করেছে তারা ইসলামের বাইরে,
যারা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে তারা ইসলামের বাইরে,
যারা সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছে তারা ইসলামের বাইরে
এবং যারা সেই সেনাবাহিনীর প্রেরককে, পৃষ্ঠপোষককে, সেনাকে এবং তাদের যে কাউকে ‘রাদ্বিআল্লাহু আনহু’ মনে করে এসব জানার পরও, তারা নি:সন্দেহে ইসলামের বাইরে।

কেননা, হুসাইন রা. তো ঘোষিত জান্নাতী, তিনি তো ঘোষিতভাবে জান্নাতের অধিকারী।
অপরদিকে ঘোষিত জান্নাতীকে হত্যা করা যে বৈধ মনে করে সে নি:সন্দেহে জাহান্নামী, বিপথগামী, পথভ্রষ্ট।

কেননা, রাসূল দ.’র কথা ওহীসম, আর রাসূল দ. বলেছেন, হুসাইন রা.’র রক্ত ও মাংস তাঁর রক্ত মাংসসম। যে রাসূল দ.’র রক্ত প্রবাহিত করাকে বৈধ মনে করে, যে রাসূল দ.’র রক্ত প্রবাহিতকারীকে মুসলিম মনে করে, তার সাথে বনী ইসরাঈলের নবীদের হত্যাকারীদের সাথে তফাত কী?

আমরা ভুলিনি, সালেহ্ আলাইহিস সালামের উটকে হত্যা করার কারণে আল্লাহ্ একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সালেহ্ আলাইহিস সালামের উট হত্যার পেছনে তাদেরও যুক্তি ছিল। ওই উট পানি খেয়ে ফেলে, ঘাস খেয়ে ফেলে বেশি বেশি। যা-ই হোক, তা নবীর উট।
সালেহ্ আলাইহিস সালামের উটের হাঁটু কাটার দায়ে যদি একটা জাতি ধ্বংস হতে পারে,
জান্নাতীদের সম্রাট ইমাম হুসাইনের গলা যারা কাটে তাদের সমর্থকদের আল্লাহর কাছে কোন্ মূল্যায়ন থাকা সম্ভব তা বুঝতে আমাদের এক মুহূর্তও সময় লাগার কথা নয়।

সেই ব্যক্তি ইসলামের বাইরে,
সেই ব্যক্তির মতাদর্শ ইসলামের বাইরে
এবং সেই মতাদর্শতে থেকে যে ইসলাম গ্রহণ করে-

সেই ইসলামও কাদিয়ানি এবং নেশন অভ ইসলামের মত ইসলামের বাইরে পরিগণিতব্য।

*** আপনি কি জাকির নায়িককে ভালবাসেন? ভালবাসা নিয়ে দারুণ এক যাত্রায় আসুন ***

ভালবাসা একটা অসাধারণ বিষয়।
ভালবাসা মূলত তৈরি হয় ভরসা থেকে, নির্ভরতা থেকে, বিশ্বাস থেকে।

আসুন, ভালবাসা নিয়ে একটা অসাধারণ হাদীস দেখি,
রাসূল দ. বলেছেন, ভালবাসা অন্ধ ও বধির করে দেয়।

অর্থা আমরা যাকে ভালবাসি, তার ত্রুটি দেখতে পাই না এবং তার ভুল শুনতেও পাই না। এটা আমাদের অবচেতন মন ইগনোর করে। আমরা তার মারাত্মক সব সমস্যা থাকলেও সেটা বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ি।

এজন্যই রাসূল দ. বলেছেন,
কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ পরিবার স্ত্রী সন্তান সম্পদ স্বাস্থ্য এমনকি নিজ প্রাণের চেয়ে আমাকে বেশি ভাল না বাসবে।

অর্থাৎ, স্পষ্ট, অন্ধ ও বধির হতে হলে রাসূল দ.’র বিষয়ে হতে হবে। কেননা তিনি ত্রুটিহীন। কেননা তাঁর কথাই ওয়াহী। কেননা তাঁর অনুসরণই আল্লাহর অনুসরণ।

আর সেই রাসূল দ. বলেছেন, হে আল্লাহ্! আমি হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসি! যারা এদের ভালবাসে তাদের তুমিও ভালবেসো!

এবার দেখুন, যাঁর কথা ওয়াহি, তিনি বলছেন, ইমাম হুসাইনকে ভালবাসতে। তিনি বলছেন, যে ইমাম হুসাইনকে ভালবাসবে তাকে যেন আল্লাহ্-ও ভালবাসেন। মানে আল্লাহ্ রাসূল দ.’র মাধ্যমে জানাচ্ছেন, যে ইমাম হুসাইন রা. কে ভালবাসবে তাকে আল্লাহ্ ভালবাসবেন।

সেই ইমাম হুসাইনের হত্যাকে সমর্থন করা কি তাঁর ভালবাসা?
সেই ইমাম হুসাইনের হত্যায় সেনা পাঠানো কি তাঁর ভালবাসা?
সেই ইমাম হুসাইনের সপরিবার হত্যাকারী এজিদকে ‘রাদ্বিআল্লাহু আনহু’ বলা কি ইমাম হুসাইনের ভালবাসা?

আমাদের আনুগত্যের দরজা আসলে কোথায়?
আমরা কি ইমাম হুসাইনকে ভালবাসি, যাঁর রক্ত রাসূল দ.’র রক্ত এবং যাঁর মাংস রাসূল দ.’র মাংস?
আমরা কি রাসূল দ.’র আমানতকে ভালবাসি?

যদি তা-ই হয়, আমাদের ঈমানের দরজা নির্ধারণ করে নিতে হবে,
আমরা কি জাকির নায়িককে ভালবাসি?

_____________________________________

আমার উম্মাহর ব্যাপারে আমি একটা মাত্র বিষয়ে দাজ্জালের চেয়ে বেশি শঙ্কা করি।
হে আল্লাহর রাসূল দ.! সেটা কী?
তারা হল পথভ্রষ্ট ‘স্কলার’।

-মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ৫/১৪৫; ২১,৩৩৪ এবং ২১,৩৩৫; আবু যর গিফারী রা. বর্ণিত হাদীস।

Comments

comments