খবরের বিস্তারিত...


ইসলাম প্রচারে তথ্য ও প্রযুক্তি – রাশেদুল ইসলাম রাশেদ

ইসলাম প্রচারে তথ্য ও প্রযুক্তি
— রাশেদুল ইসলাম রাশেদ
কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ

পর্ব একঃ

“আমরা উটের পিঠে চড়ে ল্যান্ডত্রুজারের মোকাবিলা করতে পারব না।
সুতরাং আমাদের ইউরোপ ও আমেরিকার মোকাবিলা করার জন্য তাদেরই
উপাদান তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের তাদের
আবিস্কারগুলো তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। ইন্টারনেট ও
কম্পিউটার বর্তমানে এমন হাতিয়ার বা উপাদন, যা ব্যতীত কোন লড়াই এখন
চলে না, বিজয়ী হওয়াও যায় না”
উপরের কথাগুলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যাঘ্র অর্থনীতির
দেশ নামে খ্যাত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডঃ মাহাথির মুহাম্মদের। যিনি
আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। তিনি যখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব
নেন তখন মালয়েশিয়া ছিল তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর কাতারে। দায়িত্ব
গ্রহণের মাত্র দশ বছরের মাথায় অনুন্নত মালয়েশিয়া তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম
বিশ্বের তালিকায় চলে আসে। এটি এমন এক কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে
যায়, যা জীবনযাত্রা, অর্থনীতি এবং শিল্প ও কারিগরিতে ইউরোপ ও
আমেরিকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে। ব্যক্তিগত কারণে দীর্ঘ দুই বৎসর
মালয়েশিয়ায় অবস্থানের সুবাদে দেশটির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির কিছু নমুনা প্রত্যক্ষ
করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। ১২ মার্চ ২০০৫ মাহাথির মুহাম্মদ ব্যক্তিগত
সফরে পাকিস্তানে যান। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির
কনভোকেশানে যোগদানের জন্য তিনি ইসলামবাদে গিয়েছিলেন। ইসলামিক
ইউনিভার্সিটির ম্যানেজমেন্ট সাইন্স ফ্যাকালটি তাঁর সম্মানে এক গোলটেবিল
কনফারেন্সের আয়োজন করে। সম্মেলনে পাকিস-ানের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির
ভাইস-চ্যান্সেলর ও শিক্ষাবিদ সহ প্রায় ২৫জন ব্যবসায়ী এতে অংশ নেন।
মাহাথির মুহাম্মদ প্রথমে সেই ফর্মুলা উল্লেখ করলেন যার বদৌলতে তিনি
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি চাঙ্গা করেছেন। যা দ্বারা মালয়েশিয়া উন্নত লাভ
করেছে। তার ভাষণের পর প্রশ্নোত্তর শুরু হলে এক ব্যবসায়ী প্রশ্ন করেন
আমরাও যদি মালয়েশিয়ার মতো উন্নতি লাভ করতে চাই তাহলে আপনি
আমাদের কী পরামর্শ দিবেন? এ প্রশ্নে মাহাথির একটু মুচকি হাসলেন। তারপর
তিনি মাইকে হাত দিয়ে বললেন, ‘শিক্ষা’। তিনি হলেন চারদিকে দেখলেন,
কয়েক মুহুর্ত নীরব থাকার পর বললেন শিক্ষা ব্যাতিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমি
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতির উত্থান
পতনের ওপর গবেষণা চালালাম। এ দিনগুলোতে আমি রোমান সাম্রাজ্য থেকে
শুরু করে আধুনিক আমেরিকার ইতিহাস অধ্যয়ন করলাম। আমি দেখতে
পেলাম এসব জাতির উত্থানের পিছনে রয়েছে শিক্ষা। আমি পাঠ করলাম নবী
করিম সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন প্রথম ওহী নাযিল
হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে বলেছিলেন ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়ুন। আমি
চিন্তা করলাম, যে ধর্মের সূচনাই হয়েছে শিক্ষার মাধ্যমে, সে ধর্ম শিক্ষা
ব্যতীত উন্নতি লাভ করতে পারে না। সে ধর্মের অনুসারীদের পক্ষেও শিক্ষা
ব্যতিত উন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়।
আমি দেখলাম ইসলামের প্রাথমিক যুগে লোকেরা ‘ইকরা’ এর মূলনীতি
পুরোপুরি মেনে চলত এবং তারা সব ধরনের জ্ঞনার্জন করত। তারা কেমেস্ট্রি
পড়েছেন, পদার্থবিদ্যা ও জীববিদ্যা পড়েছেন, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা পড়েছেন,
শিখেছেন গণিত ও বীজগণিত। তারা শিখত জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা।
ফলে তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি
উন্নতি লাভ করে। আমি অনুভাব করলাম আমরা যদি মালয়েশিয়াকে প্রথম
বিশ্বের তালিকায় তুলে আনতে চাই তাহলে আমাদের খোদায়ী নির্দেশ ‘ইকরা’
বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করলাম এবং
১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ার শিক্ষা বাজেট করলাম মোট বাজেটের শতকরা ২৫
ভাগ। এ ছিল তখনকার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা বাজেট। আমরা সে বাজেট
দিয়ে মালয়েশিয়ায় নতুন নতুন জ্ঞান বিজ্ঞানের বড় বড় ইউনিভার্সিটি,
ল্যাবরেটরিজ ও ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করলাম। আমরা তৃতীয় বিশ্বের প্রথম
মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করলাম। তারপর আমাদের তরুণদের
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করালাম। তারা সেখানে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান
শিক্ষালাভ করল এবং তার ফল এই দাড়িঁয়েছে যে এখন আমাদের প্রথম বিশ্বের
তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন আমরা বিশ্বের আধুনিক দেশগুলোর একটি।

(চলবে…)

লেখকঃ রাশেদুল ইসলাম রাশেদ
সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসেনা

Comments

comments