খবরের বিস্তারিত...


উম্মাহ্’র অবস্থা: দেয়ালে পিঠ ঠেকার পরও কি আমরা দেখতে পাচ্ছি না?- গোলাম দস্তগীর লিসানী

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জ্যামাইকা। সেখানকার বেশিরভাগ তরুণ যখন ক্রিকেট বা বাস্কেটবল উন্মাদনায় ছুটছে, নিজের জীবনের সব মেধা, সব সময় শেষ করে দিচ্ছে খেলার পেছনে, ডেনিস ব্র্যাডলি ফিলিপস তখন ছুটছিল ‘সত্যে’র পেছনে।

ইসলামের নামে, তৌহিদের নামে তার কাছে সালাফিজম সত্য হিসাবে ধরা দিল।

সে আমাদের মত নয়, যা সত্য মনে করে তা থেকে দূরে থাকবে।
সৌদ গোত্রবাদীদের কট্টর ওহাবী ভার্সিটি, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করল। এরপর রাজা সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়, নজদ থেকে করল ‘আক্বিদা’র উপর মাস্টার্স। তারপর ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করল ডক্টরেট। বিষয়, ‘ইসলামে আধিভৌতিকতা/জ্বিন তাড়ানি’। তার বিষয়গুলো শুধু লক্ষ্য করুন! এরপর এক যুগ ইসলামিক বিষয়ে শিক্ষকতা করল দুবাইয়ের আমেরিকান ভার্সিটি এবং আমিরাতের আজমান ভার্সিটিতে।
তার প্রতিজ্ঞা এবং প্রভাব এতদূর বিস্তৃত হয় যে, সৌদদের সাথে থাকা আমেরিকান সৈনিকদের মধ্যে বহু নারী ও পুরুষকে সে সালাফিস্ট-মুসলিম হিসাবে ধর্মান্তরিত করতে পারে (তার মতে সংখ্যাটা হাজার হাজার, যাই হোক, সংখ্যাটা বহু)

তাকে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, কেনিয়া ও জার্মানিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও তাকে অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। সে থোড়াই পরোয়া করে। তার দৃঢ়তা- এইসব দেশের সুনাম বা দুর্নামে কিছু এসে যায় না।

যা করার তা ইতোমধ্যে করে ফেলেছে বিলাল ফিলিপস।
মাত্র ২৩ টি বই। মাত্র মনে হতে পারে, কিন্তু এই প্রতিটা বই অত্যন্ত ভিত-নাড়ানো। অত্যন্ত প্রভাবশালী।

তার একটা অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি।
মাত্র ১৬ বছরে তার ওই ভার্সিটির ছাত্র সংখ্যা চার লাখ বিশ হাজার।

পৃথিবীতে কোন্ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেটা গত ১০০ বছরে ৪ লাখ ছাত্র ভর্তি করেছে?
দুদিন আগে জ্যামাইকার এক ছেলে ইসলামের সালাফি ভার্শন গ্রহণ করেছে, তার হাত ধরে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই নিজেকে ইসলামিক বিশেষজ্ঞ এবং আলিম মনেকরা শুরু করছে।

এই মনে করাও কি বৃথা?
আসলে, না। শুধু অনার্সেই তারা ৮ পার্টে আরবি গ্রামার পড়ায়। আরবিতে তারা দুর্বল নাকি? পৃথিবীর কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদ্রাসায় আরবি ৮ টা পেপার আছে? কোর্স আছে পরপর?

কী পড়ায় না?
গ্রাজুয়েশনে ফিক্বাহ্ পড়ায় ৮ টা পার্ট। ৮ টা সাবজেক্ট!
৭ টা সাবজেক্ট আছে আক্বিদার!
তাফসীর ৩ পার্ট।
হাদীস ৩ সেমিস্টার।
সাইকোলজি, কম্পিউটার, দাওয়াহ্, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী সভ্যতা, ইসলামী কাউন্সেলিং, ইসলামী ম্যানেজমেন্ট, রিসার্চ মেথডোলজি, শিক্ষার আদব, গবেষণামূলক থিসিস সবই আছে।

হায়, কোন্ স্বপ্নে বিভোর আমরা?
একটা উগ্র, ভ্রান্ত মতবাদকে এভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলছে একজন মাত্র নব্য সালাফিস্ট। আমরা কীভাবে পিছিয়ে আছি, কেন পিছিয়ে আছি, আমাদের অভাবটা কোথায়!

অবশ্যই আমাদের নিয়্যতে সমস্যা আছে, অবশ্যই আমাদের খুলুসিয়াতে সমস্যা আছে, অবশ্যই আমাদের সার্বিক ট্রেনিঙে সমস্যা আছে।

বিলাল ফিলিপস যদি জ্যামাইকা থেকে উঠে এসে ক্রিশ্চিয়ানিটি, বাস্কেটবল আর ক্রিকেটে লাথি মেরে পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে- মুসলিমদের মধ্যে উগ্র সালাফিজম ছড়িয়ে দিতে পারে, আমাদের অভাবটা কোথায়?

খোদার কসম, সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশল ও পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত হওয়া আমাদের উপর ওয়াজিব। আমরা আল্লাহ্’র কাছে ফিরে গিয়ে বলতে পারব না,
‘মাওলা, আপনার দ্বীনকে আমরা পেয়েছি হক্কানি রূপে, যখন প্রায় সবাই সত্য পন্থায় ছিল,
এবং নিজ জীবদ্দশায় দেখেছি কীভাবে উগ্র বাতেলা সেই সত্যকে প্রায় বিলুপ্ত করে দিয়েছে
এবং মাওলা, আমরা পারতাম, তবু কিছু করিনি।
সেই সাহসই পাইনি। সেই নিয়্যতই করিনি। মনে করেছি সেটা অন্য কেউ করবে। মনে করেছি, মালিক! তোমার দলের আমি নই, তোমার কোন দায়িত্ব আমার উপর নেই।’

~~ গোলাম দস্তগীর লিসানী (ব্লগার/ অনলাইন এক্টিভিস্ট)

Comments

comments