৬ই আষাঢ় বটতলীতে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) এর পবিত্র বার্ষিক ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত
আজ ৬ই আষাঢ় হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (র.) এর বার্ষিক ওরশ শরীফ। ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যে মধ্য দিয়ে আনোয়ারা বটতলী রুচ্চম হাটের মাজার প্রাঙ্গণে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (র.) এর বার্ষিক ওরশের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ওরশকে ঘিরে মাজার পরিচালনা কমিটি ছাড়াও উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠন ও ভক্তরা কোরআন খানী মিলাদ মাহফিল ও তবারুক বিতরণের মধ্য দিয়ে ওরশের কর্মসূচি পালন করছে।ওরশ উপলক্ষে আনোয়ারা উপজেলা ও আশেপাশের উপজেলা ভক্তদের মাঝে উৎসব আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। আর দূর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত অনুরক্তরা গরু, ছাগল, মহিষ সহ নানা গৃহপালিত পশু নিয়ে দরগাহ এলাকায় আসতে শুরু করেছে। ওরশকে ঘিরে মোহছেন আউলিয়া (র) এর ভক্ত অনুরক্তদের মাঝে ধর্মীয় আবহ ছড়িয়ে পড়েছে। আর বর্ণিল সাজে সেজেছে মাজার ও আশ পাশের পুরো গ্রাম। ওরশে আল্লাহপ্রেমিক ও নবীপ্রেমিক এবং ওলিপ্রেমিকগণের উপস্থিতি ভক্তদের মাঝে বাড়তি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে।
আরব দেশ হইতে বারো আউলিয়ার অন্যতম অলি হযরত বাবা বদর আউলিয়া ও বাবা হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) সাগর পথে পাথর কে তরি বানিয়ে একসাথে চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন । রুহানিয়তের সফরে মামা ভাগিনার সফর সেই আদিকাল থেকে প্রচলিত।কথিত আছে,হযরত মুসা (আ.) হযরত খিজির (আ.) এর নিকট তরিকতের সফরে যাওয়ার সময় তার ভাগ্নে হযরত ইউসা ইবনে নুহ (আ.) ছিলেন। এভাবে রুহানিয়তের ধারা প্রচলিত রয়েছে।
সেখান থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা হয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরী গ্রামের শংখ নদীর তীরে আস্তানা স্থাপন করেন।সাগর পথে তাদের বহনকারী পাথরটি আজো হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) এর মাজারে সংরক্ষিত আছে। ধারণা করা হচ্ছে, মাহাবুবে রব্বানী গাউছে ছমদানি হযরত শাহসূফি ছৈয়দ বাবা মোহছেন আউলিয়া (রহ.) ৮৮৬ হিজরী ৭২ বাংলা ১৪৬৬ সনে ১২ রবিউল আউয়াল জন্ম গ্রহণ করেন।
আধ্যাত্মিক রূহানিয়াতের মধ্যে মামা ভাগিনার এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। রুহানিয়তের সফরে মামা ভাগিনার সফরের কথা বহুকাল ধরে প্রচলিত। এই মহান অলির অসংখ্য কারামত আজো এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত। কোন একদিন এই নিঝুম নির্জন গ্রামের মাঠে এক বোবা ছেলে গরু ছাগল ছড়াচ্ছিল। বাবাজান কেবলা ঐ ছেলেকে নিজের হাতে ডাকলেন তার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানতে পারে ছেলেটি বোবা।
এ অবস্থায় বাবাজান কেবলা ঐ বোবা ছেলের মুখে তার পবিত্র হাত মোবারক রাখলেন তখন সাথে সাথে ছেলেটি কথা বলতে আরম্ভ করল। বাজাজান কেবলা ছেলেটিকে বলল যাও তোমার মাতাপিতাকে ডেকে নিয়ে আস। সে তার বাড়িতে গিয়ে সমস্ত ঘটনা তার মাতা-পিতাকে বললে তখন মাতা-পিতা ও পাড়া প্রতিবেশীরা সবাই বাবাজান কেবলার কাছে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং দোয়া প্রার্থনা করেন। বাবাজান কেবলা ঐস্থানে অবস্থান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তখন তারা একখানা ঘর তৈরি করিয়া দেন।
বাবাজান কেবলা দীর্ঘদিন ধরে এবাদত রেয়াজতে মগ্ন ছিলেন এভাবে ইবাদত করতে করতে অন্তিম সময় ঘনিয়ে এলে ৯৮৫ হিজরী ৯৭১ বাংলা ৬ আষাঢ় ১৫৬৫ সনে তিনি আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যে স্থায়ীভাবে জান্নাতবাসী হন। ইন্না….রাজেউন।
তিনি যে ঘরে অবস্থান করতেন ঐ হুজরা শরীফে শংখ নদীর পাড়ে তাকে দাফন করা হয়। এভাবে কয়েক বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর শংখ নদীর ভাঙনে বাবাজান কেবলার পবিত্র মাজার শরীফ ভাঙন দেখা দিলে একদিন পটিয়া উপজেলা বড় উঠান গ্রামের তৎকালীন এক মুসলিম জমিদারকে স্বপ্নে নির্দেশ দিয়ে বললেন আমার মাজার শংখ নদীর ভাঙনে ভেঙে তুমি আমার কফিনখানি বটতলী গ্রামে দাফন কর। এ প্রভাবশালী ব্যক্তি বাবাজানের স্বপ্নের নির্দেশকে গুরুত্ব না দেয়ায় ক্রমান্বয়ে তার জমিদারীর অবণতি ঘটতে থাকে।
তৎসময়ে বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলা বটতলী গ্রামের তৎকালীন জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তিকে বাবাজান কেবলা (রহ.) স্বপ্নে একই নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, তোমরা ঝিওরী গ্রামের শংখ নদীর পাড়ে আমার কবর ভাঙ্গা অবস্থায় দেখবে, তার পার্শ্বে একটি পাথরও দেখবে। তোমরা আমার কফিন ও পাথরখানা নিয়ে বটতলী গ্রামের যেখানে সুবিশাল একটি বটগাছ এবং উলুবন সমৃদ্ধ জায়গা আছে সে স্থানে দাফন করবে।
তৎকালীন ঐ জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা স্বপ্নের উক্ত আদেশ পেয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ঝিওরী গ্রামের শংখ নদীর তীরে গিয়ে বাবাজান কেবলার পবিত্র কফিন মোবারক স-সম্মানে এনে দাফন করেন এবং তাঁহার ব্যবহৃত পাথরখানা বর্তমান মাজারের বারান্দায় সংরক্ষণ করেন।
দেশ বিদেশ হইতে হাজার হাজার আল্লাপ্রেমিক ও নবীপ্রেমিক এবং ওলিপ্রেমিক জিয়ারতের উদ্দেশে মাজার শরীফে আসেন। প্রত্যেক বছর আষাঢ় মাসের ৬ই তারিখ বাবা হযরত শাহ মোহছেন আঊলিয়া (র) এর ওরশ অনুষ্টিত হই।