খবরের বিস্তারিত...


হযরত মুহাম্মদ (দঃ) তিনি সর্বপ্রথম “নূর” হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা

জুলাই 21, 2018 আক্বীদা

হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম “নূর” হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন এ বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা

====================

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে নূর হিসাবে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন এ প্রসঙ্গে সুক্ষ বিশ্লেষণ।

সবাই একটা জিনিস লক্ষ্য করুন, অন্যান্য নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেলায় আল্লাহ পাক خلق শব্দটা সরাসরি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক উনার জন্য কালামুল্লাহ শরীফে خلق শব্দটি ব্যবহার করতে হয় নাই।

আরবী خلق শব্দের অর্থ হচ্ছে- শূন্যকে অস্তিত্ব দান করা, যে কিছু নয় তাকে কিছু করে দেয়া, সৃষ্টি করা ইত্যাদি।

কিন্তু কুরআন শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জমিনে আগমনের জন্য সরাসরি এই শব্দ ব্যবহার করা হয় নাই।

দেখুন আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে কি শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন —>

(১) لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا

অর্থ: আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করে তাদের মধ্যে হতে একজন রসূল প্রেরন করেছেন।”
দলীল-
√ সূরা আল ইমরান ১৬৪
√ সূরা বাক্বারা ১২৯
√ সূরা বাক্বারা ১৫১
√ সূরা জুমুয়া ২

(২) আল্লাহ পাক বলেন–
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে একখানা “নূর” বা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন।”
দলীল-
√ সূরা মায়েদা ১৫

(৩) আল্লাহ পাক আরো বলেন-

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
অর্থ : হে আমার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা, এবং ভয় প্রদর্শনকারী রুপে প্রেরন করেছি।”
দলীল-
√ সূরা আহযাব ৪৫
√ সূরা ফাতহ ৮

এরকম আরো অনেক আয়াত শরীফ আছে।

যাই হোক,সবাই মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন উক্ত আয়াত শরীফ সমূহে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন শব্দ রয়েছে। প্রথম আয়াত শরীফে এসেছে بعث , দ্বিতীয় আয়াত শরীফে এসেছে جاء ,এবং তৃতীয় আয়াত শরীফে আছে ارسلن ।

উক্ত শব্দ মুবারক উনাদের পবিত্রতম অর্থ গুলা হচ্ছে-

প্রথম,(بعث) – প্রেরণ করেছেন।

দ্বিতীয়, (جاء) – আগমন করেছেন।

তৃতীয়, (ارسلنا) – প্রেরণ করেছি।

দেখুন, আল্লাহ পাক উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ব্যবহার করেছেন- প্রেরণ, আগমন ইত্যাদি শব্দ ।

পাঠক, প্রেরণতো তাকেই বলা হয়, যা পূর্ব হতে নিজের কাছে মওজুদ থাকে। নিজের কাছে আগে থেকে তৈরী কোন জিনিষই কেবল মাত্র প্রেরন করা যায়।
অর্থাৎ যেটা অনেক আগেই সৃষ্টি করে রাখা হয়।

যেহেতু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ব থেকেই “নূর” হিসাবে সৃষ্টি হয়েই আছেন তাই উনার দুনিয়ায় তাশরীফ আনার ব্যাপারে প্রেরন বা আগমন শব্দটাই যাথাযথ। এবং নতুন করে خلق বা সৃষ্টি এই শব্দ প্রয়োগ কোন প্রয়োজনীয়তা বহন করে না।

সেটা হাদীস শরীফ ইরশাদ হয়
اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْئٍ مِّنْ نُّوْرِىْ.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেন এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাকতূবাত শরীফ, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

কিন্তু দুনিয়াতে যখন তাশরীফ আনার বিষয় আসলো তখন আল্লাহ পাক বলে দিলেন –

قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন একখানা নূর বা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”

দলীল-
√ সূরা মায়েদা ১৫

যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাহিরী ভাবে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগেকার সংবাদ জানতে চাওয়া হলো, যেটা হাদীস শরীফে বর্নিত আছে–
حَدَّثَنَا أَبُو هَمَّامٍ الوَلِيدُ بْنُ شُجَاعِ بْنِ الوَلِيدِ البَغْدَادِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا الوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কখন থেকে নবী ? উত্তরে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি রূহ ও শরীর মুবারকে ছিলেন তখন থেকেই আমি নবী।”
দলীল-
√ তিরমিযী শরীফ- কিতাবুল মানাকিব- ফাদ্বায়িলুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ৫ম খন্ড ৫৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস ৩৬০৯।
√ মুসতাদরাকে হাকেম ২য় খন্ড ৬৬৫ পৃষ্ঠা, হদীস শরীফ ৪২০৯।
√ মুছান্নাফে আবী শায়বা ৭/৩২৯, হাদীস ৩৬৫৫৩।
√ ইবনে হিব্বান ১/৪৭।
√ ইবনে আসাকীর ২৬/৩৮২।
√ তারিখে বাগদাদ ৩/৭০।
√ তাহযীব লি ইবনে হাজর ৫/১৪১।
√ বেদায়া ওয়ান নেহায়া ২/৩০৭।

অর্থাৎ দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগে থাকেই সব কিছু সৃষ্টি এমনকি আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্ট হওয়ার পূর্বেই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী হয়েই মওজুদ ছিলেন।

আর যখন দুনিয়াই তাশরীফ আনেবেন তখন তিনি বলেন-
بُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً
অর্থ: আমি সমস্ত মানুষের জন্য প্রেরীত হয়েছি।”

দলীল-
√ বুখারী হাদীস নং ৩৩৫
√ মুসলিম শরীফ ৫২৩

আরো ইরশাদ করেন,

ارسلت الي الخق كافة

অর্থ: আমাকে সকল মাখলুকাতের জন্য প্রেরন করা হয়েছে ।”

দলীল-
√ মুসলিম শরীফ

ব্যাপারটা পরিস্কার হাদীস শরীফে বর্নিত আছে–

হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন-
عَنْ حَضَرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالىٰ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ اَوَّلُ النَّبِيْنَ فِى الْخَلْقِ وَاٰخِرُهِمْ فِىْ الْبَعْثِ.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু প্রেরিত হয়েছি সব নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।”
দলীল-
√ তাফসীরে বাগবী ৫ম খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা।
√ তাফসীরে দূররে মানছূর লি জালালুদ্দীন সূয়ুতি ৫ম খন্ড ১৮৪ পৃষ্ঠা।
√ শেফা লিল কাজী আয়ায ১ম খন্ড ৪৬৬ পৃষ্ঠা।
√ মিরকাত শরীফ ১১/৫৮।
√ কানযুল উম্মাল , হাদীস ৩১৯১৬।
√ দয়লামী শরীফ , হাদীস ৪৮৫০।
√ মানিলুচ্ছফা ৫ম খন্ড ৩৬ পৃষ্ঠা।

অর্থাৎ বিষয়টা হচ্ছে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর পূর্বে নূর, নবী, রসূল, রহমত, নিয়মাত ইত্যাদি করে সৃষ্টি করে আল্লাহ পাক নিজের কুদরত মুবারকে মওজুদ রেখেছেন। তাই পরবর্তীতে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার সময় উনার শানে সৃষ্টি শব্দ আর ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে,- প্রেরণ, আগমন ইত্যাদি ।

সুবহানাল্লাহ্ !!

(সংগৃহীত)

Comments

comments