নবী রাসূল ও আল্লাহর ওলীগণ শাফায়াত করার ক্ষমতা রাখে
বাতিল পন্থিরা বলে থাকে নবী রাসূল ও আল্লাহর ওলীগণ শাফায়াত করার ক্ষমতা রাখে না। অনেকে বলে থাকেন পীর, ওলী নিজেদেরই উপায় নাই, মুরিদের শাফায়াত করবে কিভাবে? নবী-রাসূলগণই বলবেন, ইয়া নাফসি! ইয়া নাফসি! সেখানে ওলীরাতো হিসাবের বাইরে।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে নবী ও ওলীগণের শাফায়াত করার ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
*দলিল-১
কুরআন পাক থেকেঃ কে আছে আল্লাহর কাছে অনুমতি ব্যতীত শাফায়াত করবে। (সুরা বাকারাঃ ২৫৫)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহর অনুমতিতে শাফায়াত করা হবে।
*দলিল-২
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতের কবীরা গুনাহের জন্য আমার শাফায়াত”।
তথ্যসূত্রঃ আবু দাউদ ২য় জি:, তিরমিজী শরীফ ২য় জি:, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, জামেউছ ছাগীর,২য় জি:।
*দলিল-৩
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন, আমি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং সর্বাগ্রে আমার শাফায়াত কবুল করা হইবে এতে আমার কোন ফখর নেই।
তথ্যসূত্রঃ ইবনে মাজাহ, সহিহ মুসলীম, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিজী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, শিফা শরীফ, আরো অনেক খ্যাতনামা ইসলামী পুস্তকে এই হাদিস খানা উল্লেখ আছে।
*দলিল-৪
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তিন (৩) শ্রেনীর লোক শাফায়াত করবে, ১। সকল নবীগণ, ২। আলিমগণ, ৩। শহীদগণ
তথ্যসূত্রঃ ইবনে মাজাহ, তাফছিরে মাজহারী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী।
#এবার আসি শাফায়াতকারী “আলিম” কে বা কারা এই সম্পর্কেঃ
*পবিত্র কুরআন পাক থেকেঃ “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা “আলিম”। (সুরা-ফাতির-২৮)
কুরআন পাক থেকেঃ “সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলীগনের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবেনা, তারাই ঈমানদার ও আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা ইউনুস-৬২/৬৩)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহর ওলীগনই আল্লাহকে ভয় করেন, আর যারা আল্লাহকে ভয় করে তারাই ‘আলিম’। সুতরাং আলিমগণ বলতে আল্লাহর ওলীগণকে বুঝানো হয়েছে, (দুনিয়াদার আলেমগণ নয়) তাই আলিমগণ বলতে আল্লাহর ওলীগণই হাশরের দিন শাফায়াত করবেন।
আল্লাহর ওলীগণ শাফায়াতের ক্ষমতা রাখেন এই সম্পর্কে কিছু দলিল তুলে ধরা হলো।
দলিল-৫,
পবিত্র হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়া (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমার একজন উম্মতের শাফায়াতে ‘বনী তামিম’ গোত্রের লোকের চাইতে অধিক লোক জান্নাতে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল্লুল্লাহ ইহা কি আপনি ব্যতীত অন্য কেউ? নবীজি বললেন হ্যা আমি ব্যতীত। ইমাম তিরমিজী বলেন, এই হাদিস হাছান-সহি।
তথ্যসূত্রঃ ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ।
#এই হাদিস দ্বারা নবী পাকের উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়। অর্থাৎ নবী পাক (সাঃ) এর উম্মত গণও শাফায়াত করতে পারবেন।
*দলিল-৬,
হাদিস শরীফ থেকেঃ নিশ্চয় রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মাঝে এমন এক ব্যক্তি হবে যার শাফায়াতে ‘মোদ্বার’ গোত্রের চাইতে অধিক লোক জান্নাতে যাবে।
তথ্যসূত্রঃ ইবনে মাজাহ, মুস্তাদরাকে হাকেম শরিফ, সহিহ হাদিস।
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম বলেন, এই হাদিস ঈমাম মুসলীমের শর্তানুযায়ী সহি (হাকেম, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা)। এই হাদিস দ্বারাও নবীজির উম্মতের শাফায়াত প্রমানিত হয়।
*দলিল – ৭
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত হাছান বছরী (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেন, উছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) ক্বিয়ামতের দিন ‘রবীয়া ও মোদ্বার’ গোত্রের সমপরিমান লোকদের শাফায়াত করবে।
তথ্যসূত্রঃ তিরমিজি, ২য় জিঃ, তাফছিরে মাজহারী, তাবারানী; বায়হাক্বী)।
*দলিল- ৮
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত আবু ছাইদ (রাঃ)হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের এমন লোক আছে যে বহু সংখ্যক লোক শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে একটি গোত্রের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে কিছু সংখ্যক লোকের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে কিছু সংখ্যক লোকের শাফায়াত করবে। এমন লোক আছে যে একজন শাফায়াত করবে, শেষ পরযন্ত তাঁদের শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করবে
তথ্যসূত্রঃ তিরমিজি, ২য় জিঃ, মুসনাদে আহমদ, তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৬মত জিঃ।
* দলিল -৯
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, হাশরের দিন আলিমগণকে বলা হবে তোমার শিষ্যদের শাফায়াত কর, যদিও তাদের সংখ্যা আসমানের তারার সমানও হয়।
তথ্যসূত্রঃ দায়লামী শরিফ; তাফসিরে মাজহারী, তাফছিরে মারেফুল কোরআন।
*দলিল -১০
হাদিস শরীফ থেকেঃ রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেনঃ একজন শহিদ তাঁর বংশ হতে ৭০ জনকে শাফায়াত করবে।
তথ্যসূত্রঃ তাফছিরে মাজহারী, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ।
* দলিল- ১১
হাদিস শরীফ থেকেঃ হযরত আলী (রাঃ)বলেন, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেনঃ যে কুরআন পাঠ করে ও মুখস্থ রাখে, হালালকে হালাল জানে ও হারামকে হারাম জানে, আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁর বংশের এমন দশজনকে শাফায়াত করবে যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব ছিল।
তথ্যসূত্রঃ মুসনাদে আহমদ, দারেমী শরিফ, তিরমিজি শরিফ; ইবনে মাজাহ; মেরকাত।
কাজেই বোঝা গেল বাতিল পন্থিরা ঠিক নয়। হাশরের মঠে (আল্লাহর অনুমতিতে) নবীগণ যেমন শাফায়াত করতে পারবেন, শহীদগনও যেমন শাফায়াত করতে পারবেন, তেমনি ওলী-আল্লাহগণও শাফায়াত করতে পারবেন্।