খবরের বিস্তারিত...


জেনে নিন। পবিত্র কোরবানী সম্পর্কে শরীয়ত ভিত্তিক বিভিন্ন মাসয়ালা সমুহঃ

আগস্ট 10, 2018 আক্বীদা

কুরবানীর আলোচনা ১ম পর্বঃঅনেক কিছু জানার আছেঃ
১। কুরবানী প্রসঙ্গে কতিপয় হাদিস
(১) হজরত আবু হুরায়রা رضي الله عنه হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবেনা সে যেন আমার ঈদগাহের নিকটে না আসে। (ইবনে মাজাহ শরীফ)

(২) হজরত আয়েশা رضي الله عنها হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – আল্লাহর নিকট আদম সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কুরবানীর দিনে কুরবানী করা। (তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ শরীফ)

(৩) হজরত ইমাম হাসান رضي الله عنه হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – যে ব্যক্তি সওয়াবের উদ্দেশ্যে আনন্দ সহকারে কুরবানী করেছে সে জাহান্নাম হতে নিষ্কৃতি পেয়েছে। (তিবরানী শরীফ)

(৪) হজরত ইবনু আব্বাস رضي الله عنه হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – সবচেয়ে উত্তম পয়সা হলো তা যা ঈদের দিন কুরবানীতে খরচ করা হয়। (তিবরানী শরীফ)

(৫) হজরত উম্মে সালামা رضي الله عنها হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – যে ব্যক্তি জিলহাজের চাঁদ দেখেছে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা করেছে, সে যেন কুরবানী করার পূর্বে চুল ও নখ না কাটে। (তিরমিজী ও নাসায়ী শরীফ)

(৬) হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসাউদ رضي الله عنه হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – গরু ও উট সাত জনের পক্ষ হতে কুরবানী করা জায়েজ। (তিবরানী শরীফ)

(৭) হজরতে ইবনু আব্বাস رضي الله عنه হতে বর্ণিত। হুজুর ﷺ বলেছেন – কান কাটা ও শিং ভাঙা পশুর কুরবানী করা যাবে না। (ইবনে মাজাহ শরীফ)

২। কুরবানীর অর্থ ও শর্ত

নিদিষ্ট দিনে আল্লাহ্ পাকের নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবেহ করার নাম কুরবানী। কুরবানী হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত। এই সুন্নাতকে কেয়ামত পর্যন্ত চালু রাখার জন্য হুজুর ﷺ সামর্থ্যবান উম্মতের প্রতি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অবশ্য সূরা কাওসারের মধ্যে আল্লাহ্পাক হুজুর ﷺ কে সরাসরি কুরবানী করার নির্দেশ করেছেন। কুরবানী ওয়াজিব হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যথাঃ-
(১) মুসলমান হওয়া অর্থাৎ অমুসলিমের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয়।
(২) মুকীম হওয়া অর্থাৎ মুসাফিরের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয়।
(৩) সামর্থ্যবান হওয়া অর্থাৎ যার প্রতি সাদকায়ে ফিতির ওয়াজিব। গরীবের প্রতি ওয়াজিব নয়।
(৪) স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ পরাধীনের প্রতি ওয়াজিব নয়। পরাধীন বলতে কৃতদাস। বর্তমানে পৃথিবীতে দাস প্রথা নেই। কুরবানীর জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। যদি কোনো মহিলা সামর্থ্যবান হয়, তাহলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নাবালেগ সামর্থ্যবান হলে তার প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয় (দুররে মুখতার)।

অর্থ ও শর্ত সংক্রান্ত কতিপয় মসলাঃ –
=====================
মাসয়ালা (১) – মুসাফির কুরবানী করলে নফল হয়ে যাবে। অনুরূপ গরীব কুরবানী করলে নফল হয়ে যাবে। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (২) – গরু ছাগলের মালিক তার কুরবানী করার নিয়ত করলে কুরবানী ওয়াজিব হবেনা। অনুরূপ পশু ক্রয় করার সময় কুরবানীর নিয়ত না থাকলে ক্রয় করার পর নিয়ত করলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে না।। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (৩) – হজ্ব করতে গিয়া মুসাফির থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে না। কিন্ত কুরবানী করলে সওয়াব পাবে। (রদ্দুলমুহতার)

মাসয়ালা (৪) – কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে যদি কোনো সামর্থ্যবান অমুসলিম মুসলিম হয়ে যায় এবং কুরবানী করার সময় থাকে তাহলে তার প্রতি কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। অনুরূপ ঐ দিনগুলোর মধ্যে কোনো গরীব ধনী হয়ে গেলে এবং কুরবানী করার সময় বাকী থাকলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। (আলমগীরি)

মাসয়ালা (৫) – কুরবানীর দিনে কুরবানীর নিয়তে মোরগ, মুরগী ইত্যাদি জবেহ করা নাজায়েজ (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (৬) – যে ব্যক্তি দুইশত দিরহাম অথবা কুড়ি দিনারের মালিক হবে অথবা প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র ছাড়া এমন জিনিষের মালিক হবে যার মূল্য দুইশত দিরহাম, এপ্রকার ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। প্রয়োজনীয় জিনিষ বলতে ঘর-বাড়ি, পরিধানের কাপড়, চলাচলের ঘোড়া বা সাইকেল এবং সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র ইত্যাদি (আলমগীরি)।

মাসয়ালা (৭) – যার নিকট নেসাব পরিমাণ মাল রয়েছে, কিন্ত সাথে সাথে ঋণও রয়েছে, যদি ঋণ পরিশোধ করা হয় তাহলে নেসাব কমে যাবে। এমতাবস্থায় কুরবানী ওয়াজিব হবেনা। অনুরূপ যার নিকট বর্তমানে নেসাব পরিমাণ মাল নেই বরং কুরবানীর দিন অতিক্রম হবার পর সে পরিমাণ মাল হাতে এসেছে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবেনা (আলমগীরি)।

মাসয়ালা (৮) – এক ব্যক্তির নিকটে দুইশত দিরহাম ছিলো। বৎসর পূর্ণ হবার কারণে পাঁচ দিরহাম জাকাত প্রদান করেছে। এখন একশত পঁচানব্বই দিরহাম রয়েছে। এমতাবস্থায় কুরবানীর দিন আসলে কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। অবশ্য দুইশত দিরহামের মধ্যে পাঁচ দিরহাম নিজের প্রয়োজনে খরচ করলে কুরবানী করতে হবে না (আলমগীরি)।

মাসয়ালা (৯) – সামর্থ্যবান (সাহেবে নিসাব) কুরবানীর জন্য পশু ক্রয় করার পর তা হারিয়ে গিয়েছে এবং মাল নিসাব হতে কম হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কুরবানীর দিন আসলে তার প্রতি কুরবানী ওয়াজিব হবেনা। কুরবানীর দিনে হারানো পশুটি পেলেও কুরবানী ওয়াজিব হবেনা (আলমগীরি)।

মাসয়ালা (১০) – স্ত্রী স্বামীর নিকট মোহরের টাকা পেলেও স্ত্রীকে মালিকে নিসাব ধরা হবেনা। অবশ্য স্ত্রীর নিকট তা ছাড়া নিসাব পরিমাণ মাল থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে (আলমগীরি)।

মাসয়ালা (১১) – যদি কোরআন শরীফের মুল্য দুইশত দিরহাম হয় এবং তা দেখে ভালো ভাবে তিলাওয়াত করতে পারে, তাহলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবেনা। চাই তিলাওয়াত করুক অথবা নাই করুক। আর যদি তিলাওয়াত করতে না পারে, তাহলে কুরবানী করা ওয়াজিব। অনুরূপ প্রয়োজনীয় কিতাব থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবেনা। অন্যথায় কুরবানী করা ওয়াজিব হবে (আলামগিরী)।

মাসয়ালা (১২) – প্রয়োজনীয় জিনিষ ছাড়া অন্য জিনিষগুলোর মূল্য যদি দুইশত দিরহাম হয়, তাহলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। একটি ঘর শীতের জন্য এবং একটি ঘর গরমের জন্য রাখলে প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য হবে। তা ছাড়া বেশি ঘর থাকলে সেই ঘরের মূল্য যদি দুইশত দিরহাম হয়, তাহলে কুরবানী ওয়াজিব হবে। অনুরূপ বাড়ির মধ্যে পরিধান করার কাপড়, কাজ করার সময় পরিধান করার কাপড়, জুমা ও ঈদে যাবার সময় পরিধান করার কাপড় প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য হবে। তা ছাড়া বেশি কাপড় থাকলে যদি তার মূল্য দুইশত দিরহাম হয়, তাহলে কুরবানী ওয়াজিব হবে (রুদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (১৩) – স্ত্রী অথবা বালেগ সন্তানের বিনা অনুমতিতে কুরবানী করলে তাদের ওয়াজিব আদায় হবেনা। নাবালেগ সন্তানের পক্ষ হতে কুরবানী করা উত্তম, যদিও তার প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয় (আলমগীরি)।

মাসয়ালা (১৪) – কুরবানী করলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য ভালো নিয়তে করলে, আল্লাহর ফজলে আখিরাতে সওয়াব পাবে (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (১৫) – ১০ই জিলহজ্ব কুরবানী করা জরুরী নয়। ১২ই জিলহজ্ব পর্যন্ত জায়েজ। প্রথমদিনে যদি কারো কুরবানী করার সামর্থ্য না থাকে, কিন্ত শেষদিনে সামর্থ্য হয় তাহলে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। প্রথম দিন কুরবানী করার সামর্থ্য ছিলো কিন্ত কুরবানী করেনি, শেষ দিনে যদি সামর্থ্য না থাকে, তাহলে ওয়াজিব হবেনা (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (১৬) – অসামর্থ্য গরীব মানুষ যদি কুরবানী করে থাকে এবং কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে ধনী হয়ে যায়, তাহলে পুনরায় কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। অবশ্য কিছু উলামা প্রথম কুরবানী যথেষ্ট হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (১৭) – যদি কোনো মানুষ সামর্থ থাকা সত্বেও কুরবানী না করে এবং কুরবানীর সময় শেষ হয়ে যাবার পর গরীব হয়ে যায় তাহলে একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব হবে। যদি ধনী ব্যক্তি কুরবানী না করে কুরবানীর দিনে ইন্তেকাল করে তাহলে কোন গোনাহ হবেনা (আলমগির)।

মাসয়ালা (১৮) – কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী করা ওয়াজিব। বিনা কারণে কুরবানী না করে তার মূল্য সাদকা করলে জায়েজ হবেনা (আলমগির)।

মাসয়ালা (১৯) – কুরবানীর সমস্ত শর্তাবলি পাওয়া গেলে একটি বকরী জবেহ করা ওয়াজিব অথবা উট, গরু ও মহিষের সাত অংশের একাংশ দেয়া ওয়াজিব (রুদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (২০) – সাত অংশের একাংশ কম হলে কুরবানী হবেনা। অংশীদারদের মধ্যে যদি কারো অংশ সাত অংশের একাংশ কম হয়, তাহলে কারো কুরবানী হবেনা। যথা একটি গরুর মূল্য সাত হাজার টাকা সাতজন অংশীদারের মধ্যে একজনের অংশমাত্র ৫০০ টাকা হলে কারো কুরবানী জায়েজ হবেনা (রুদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (২১) – সাতজন ব্যক্তি একটি গরু অথবা মহিষ বা উট কুরবানী করতে পারে। অনুরূপ সাতের কম তিনজন চারজন, পাঁচজন, ছয়জন, মিলে করতে পারে। প্রত্যেকের সমান অংশ হওয়া জরুরী নয়। অবশ্য কমপক্ষে একাংশ নেওয়া জরুরী। দেড়, আড়াই, সাড়ে তিন, ও সাড়ে চার, এই প্রকারে অংশ নেওয়া জায়েজ নয় (রুদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (২২) –সাত ব্যক্তি মিলে পাঁচটি গরু কুরবানী করলে জায়েজ হবে। কিন্ত আট ব্যক্তি মিলে সমান অংশে পাঁচটি অথবা ছয়টি গরু কুরবানী করলে জায়েজ হবেনা (রুদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (২৩) – সাত ব্যক্তি মিলিতভাবে সাতটি ছাগল কুরবানী করলে জায়েজ হবে। অনুরূপ দুই ব্যক্তি মিলে দুইটি ছাগল কুরবানী করলে জায়েজ হবে (রদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (২৪) – একাধিক ব্যক্তি একটি পশু কুরবানী করলে মাংস ওজন করে বণ্টন করতে হবে। আনুমানিক বণ্টন জায়েজ নয়। একপক্ষের মাংস বেশি হলে অপর পক্ষ ক্ষমা করলে ও ক্ষমা হবেনা (দুররে মুখতার)।

৩। কুরবানীর সময়ের বিবরণ

কুরবানীর সময় তিনদিন। অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সুবাহ সাদেকের পর হতে বারোই জিলহজ্বের সূর্য্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ তিনদিন দুইরাত (দুররে মুখতার)

মাসয়ালা (১) – রাত্রে কুরবানী করা মাকরুহ (আলমগির)।

মাসয়ালা (২) – ১০ই জিলহজ্ব কুরবানী করা সবচেয়ে উত্তম। তারপর ১১ই জিলহজ্ব, তারপর ১২ই জিলহজ্ব। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে যদি ১০ই তারিখে সন্দেহ হয়, তাহলে ১২তারিখের পূর্বে কুরবানী করা উত্তম। যদি ১২ই তারিখে কুরবানী করা হয় এবং ১২ তারিখকে ১৩ তারিখ বলে সন্দেহ হয়, তাহলে সমস্ত মাংস সাদকা করে দেয়া উত্তম (আলমগির)।

মাসয়ালা (৩) – কুরবানীর দিনে কুরবানী করা উটের মূল্য সাদকা করা অপেক্ষা উত্তম। কারণ কুরবানী করা ওয়াজিব অথবা সুন্নাত এবং সাদকা করা কেবল নফল (আলমগিরী)

মাসয়ালা (৪) – যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার কুরবানী করতে হবে। সাদকা করলে ওয়াজিব আদায় হবেনা (বাহারে শরিয়াত)

মাসয়ালা (৫) – শহরবাসীর জন্য ঈদের নামাজের পূর্বে কুরবানী করা জায়েজ নয়। শহরবাসীর জন্য ঈদের খুতবাহ পর কুরবানী করা উত্তম (আলমগীরি)

মাসয়ালা (৬) – গ্রামবাসীদের জন্য সুবহ সাদেক হতে কুরবানী করা জায়েজ। কিন্ত সূর্য্য উদয়ের পর হতে কুরবানী করা উত্তম। (আলমগিরী)

জরুরীমাসয়ালা (৬.১) – যে সমস্ত গ্রামে জুমা ও ঈদের নামাজ হয়ে থাকে সেখানে ঈদের নামাজের পর কুরবানী করা উচিৎ।

মাসয়ালা (৭) – ঈদের নামাজের পর খুতবাহর পূর্বে কুরবানী করলে কুরবানী হয়ে যাবে। কিন্ত এই প্রকার করা মাকরূহ (বাহারে শরিয়াত)।

মাসয়ালা (৮) – একই শহরে বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হলে কোনো এক স্থানে নামাজ সমাপ্ত হলে সর্বত্র কুরবানী করা জায়েজ হবে। সর্বত্র নামাজ শেষ হওয়া শর্ত নয়। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)

মাসয়ালা (৯) – শহরবাসী নামাজের পূর্বে কুরবানী করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে পশু গ্রামে পাঠিয়ে সেখানে হতে কুরবানী করে আনতে পারবে। (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (১০) – গ্রামের মানুষ শহরে থাকলে ঈদের নামাজের পূর্বে কুরবানী করা জায়েজ হবেনা (বাহারে শরীয়ত)।

মাসয়ালা (১১) – ১০ই জিলহজ্ব ঈদের নামাজ না হলে জাওয়ালের পূর্বে কুরবানী করা জায়েজ হবেনা। অর্থাৎ ঈদের নামাজের সময় অতিক্রম হবার পর কুরবানী করতে হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে নামাজের পূর্বে কুরবানী জায়েজ। (দুররে মুখতার)

মাসয়ালা (১২) – যেহেতু মিনা শরিফে ঈদের নামাজ হয়না, সেহেতু ফজরের পর হতে সেখানে কুরবানী করা জায়েজ। কোন শহরে ফিতনার কারণে যদি ঈদের নামাজ না হয় তাহলে সেখানে ১০ই জিলহজ্ব ফজরের পর কুরবানী করা জায়েজ হবে (রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (১৩) – ইমামের সালাম ফেরানোর পূর্বে পশু জবেহ হয়ে গেলে কুরবানী জায়েজ হবেনা। ইমামের একদিকে সালাম করার পর জবেহ করলে কুরবানী হয়ে যাবে। ইমামের খুতবা শেষ হবার পর জবেহ করা উত্তম (আলমগীরি)

মাসয়ালা (১৪) – ঈদের নামাজের পর কুরবানী করা হয়েছে। কিন্ত জানা গিয়েছে যে ইমাম বিনা অজুতে নামাজ পড়িয়েছেন এমতাবস্থায় পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। কিন্ত পুনরায় কুরবানী করা জরুরী নয় (দুররে মুখতার)

মাসয়ালা (১৫) – ৯ই জিলহজ্ব সম্পর্কে কিছু মানুষ ১০ই জিলহজ্ব বলে সাক্ষ্য প্রদান করেছে। এই সাক্ষির উপর নির্ভর করে নামাজ ও কুরবানী করা হয়ে গিয়েছে। পরে সাক্ষ বাতিল প্রমাণ হয়ে ৯ই জিলহজ্ব প্রমাণিত হয়ে গেলে নামাজ ও কুরবানী দুই জায়েজ হয়ে গিয়েছে (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (১৬) – যদি কোন ব্যক্তি কুরবানী না করে, কুরবানীর দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায় এবং পশু অথবা তার মূল্য সাদকা না করে থাকে এবং দ্বিতীয় বৎসর কুরবানীর দিন উপস্থিত হয়ে যায় এবং গত বৎসরের কুরবানীর কাজা আদায় করতে চায়, তাহলে তা জায়েজ হবেনা। বরং পশু অথবা তার মূল্য সাদকা করে দিতে হবে (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (১৭) – যে পশুর কুরবানী করা ওয়াজিব ছিলো, কোনো কারণ বশতঃ কুরবানীর দিন অতিক্রম হয়ে গেলে যদি তা বিক্রয় করে থাকে তাহলে উক্ত টাকা সাদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (১৮) – যদি কোনো ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মান্নত করে কোনো পশু নির্দিষ্ট করে রাখে এবং কুরবানীর দিন অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে ধনী হোক বা গরীব, উক্ত পশু জীবিত অবস্থায় সাদকা করতে হবে। যদি জবেহ করে থাকে তাহলে সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে। তা হতে কিছু ভক্ষণ করা চলবেনা যদি কিছু মাংস খেয়ে থাকে তাহলে যতটুকু খেয়েছে ততটুকুর মূল্য সাদকা করতে হবে। যদি জবেহ করা পশুর মূল্য জীবিত পশুর মূল্য হতে কিছু কম হয়, তাহলে যত পরিমাণ হবে, তত পরিমাণ সাদকা করে দিতে হবে (আলমগিরী ও রদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (১৯) – গরীব মানুষ যদি কুরবানী নিয়তে পশু ক্রয় করে থাকে এবং কুরবানী দিন অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে ঐ নির্দিষ্ট পশুটি জীবিত অবস্থায় সাদকা করে দিতে হবে। যদি জবেহ করে থাকে তাহলে সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে (রদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (২০) – ধনীব্যক্তি কুরবানীর জন্য পশু ক্রয় করলে যদি কোনো কারণে জবেহ করা না হয়ে থাকে তাহলে তা সাদকা করতে হবে। যদি জবেহ করে থাকে তাহলে সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে। যদি ধনী পশু ক্রয় করে না থাকে, তাহলে একটি ছাগলের মূল্য সাদকা করতে হবে (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (২১) – যদি কোনো ব্যক্তি অসিয়ত করে থাকে যে তার পক্ষ হতে কুরবানী করে দিবে। কিন্ত গরু অথবা ছাগল তা কিছু বলেনি অথবা কত মূল্যের পশু দিতে হবে তাও উল্লেখ করেনি। এমতাবস্থায় অসীয়াত জায়েজ হবে এবং একটি ছাগল কুরবানী করে দিলে অসীয়ত পূর্ণ হয়ে যাবে। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (২২) – গরু অথবা ছাগল নির্দিষ্ট না করে কেবল কুরবানী করার মান্নত করলে একটি ছাগল কুরবানী করে দিলে মান্নত পূর্ণ হয়ে যাবে। অনুরূপ ছাগল কুরবানী করার মান্নত করে গরু অথবা উট কুরবানী করলে মান্নত পূর্ণ হয়ে যাবে। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (২৩) – কুরবানী মান্নতের হলে সমস্ত মাংস চামড়া প্রভৃতি সাদকা করতে হবে। তা হতে কিছু পরিমাণ খেলে সেইপরিমাণ মূল্য সাদকা করতে হবে। (আলমগিরী)

৪। কুরবানীর পশুর বিবরণ
মাসয়ালা (১) – কুরবানী পশু কয়েক প্রকার। যথাঃ উট, গরু, ছাগল। মহিষ গরুর মধ্যে গণ্য। অনুরূপ ভেড়া ও দুম্বা ছাগলের মধ্যে গণ্য। এই সমস্ত পশুর নর ও মাদাহ সবই কুরবানী করা জায়েজ। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (২) – জংলি জানোয়ার যথা হরিণ, নীল গাই ইত্যাদি কুরবানী করা জায়েজ নয় (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (৩) – জংলি পশু ও পালিত পশুর মিলনে বাচ্চা পয়দা হলে মাতার অবস্থা গ্রহণযোগ্য হবে। যথা হরিণ ও বকরীর মিলনে বাচ্চা পয়দা হলে কুরবানী জায়েজ হবে। কিন্ত বকরা ও হরিণীর মিলনে বাচ্চা পয়দা হলে কুরবানী জায়েজ হবেনা (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (৪) – উট পাঁচ বৎসর, গরু দুই বৎসর, ছাগল একবৎসরের না হলে কুরবানী করা জায়েজ হবেনা। দুম্বা অথবা ভেড়ার ছয়মাসের বাচ্চা যদি খুব বড় হয় এবং দেখতে একবৎসর এর মনে হয়, তাহলে কুরবানী জায়েজ হবে। (দুররে মুখতার)

মাসয়ালা (৫) – ছাগলের মূল্য এবং মাংস যদি গরুর সাত অংশের একাংশের সমান হয়, তাহলে ছাগল কুরবানী করা উত্তম হবে। আর যদি গরুর সপ্তমাংশ ছাগলের থেকে বেশী মাংস হয়, তাহলে গরু উত্তম হবে। যখন দুয়ের মাংস ও মূল্য সমান হবে, তখন যার মাংস ভালো হবে, তার কুরবানী করা উত্তম হবে। যদি মাংসের পরিমাণ কমবেশি হয়, তাহলে যার মাংস বেশি হবে তার কুরবানী উত্তম হবে। অনুরূপ মাংস ও মূল্য সমান হলে দুম্বা অপেক্ষা দুম্বী, বকরী (ধাড়ী) অপেক্ষা খাসী, উট অপেক্ষা উটনী ও বলদ অপেক্ষা গাভী কুরবানী করা উত্তম হবে (রুদ্দুল মুহতার)।

৫। কুরবানীর পশুর নিখুঁত হওয়া উচিত

মাসয়ালা (১) – কুরবানীর পশু নিখুঁত হতে হবে। সামান্য খুঁত থাকলে কুরবানী জায়েজ হবে, তবে মাকরুহ হবে। খুব বেশি খুঁত থাকলে আদৌ কুরবানী হবেনা। জন্ম হতে শিং না থাকলে কুরবানী জায়েজ হবে। শিং সামান্য ভেঙে গেলে জায়েজ হবে। কিন্তু শিং গোড়া হতে ভেঙে গেলে জায়েজ হবেনা। যদি পশু পাগল হয়ে যায় এবং চড়ে পানাহার করা ত্যাগ করে থাকে, তাহলে জায়েজ হবেনা। এই প্রকার পাগলামি না হলে জায়েজ হবে (রদ্দুল মুহতার, আলমগিরী)।

মাসয়ালা (২) – যে পশুর অণ্ডকোষ ও লিঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েজ হবে। অনুরূপ যে পশুর অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে যে, বাচ্চা হবেনা, যে পশুর দাগ দেয়া হয়েছে, যে পশুর দুধ দেয়া বন্ধ করেছে, এইসমস্ত পশুর কুরবানী জায়েজ। যে পশুর চুলকানি হয়েছে কিন্ত খুব মোটাতাজা রয়েছে, তার কুরবানী জায়েজ। যে পশু অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে এবং হাড়ের মগজ পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছে এই প্রকার পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। (আলমগিরি ও রদ্দুলমুহতার)।

মাসয়ালা (৩) – অন্ধ পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। অনুরূপ কানা পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। যে ল্যাংড়া পশু হেঁটে কুরবানীর স্থানে যেতে না পারে, সে পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। অনুরূপ খুব অসুস্থ পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। যে পশুর কান অথবা লেজ একতৃতীয়াংশর বেশি অথবা তার কম কেটে গেছে তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে। যদি জন্ম হতে কান না থাকে, তাহলে কুরবানী জায়েজ হবেনা। কান ছোটো হলে জায়েজ হবে। (হিদায়া ও আলমগিরী)

মাসয়ালা (৪) – যে পশু একতৃতীয়াংশর বেশি দৃষ্টিহীন হয়ে গিয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। দু’চক্ষুর জ্যোতি কম হলে পরীক্ষা করা সহজে সম্ভব। একটি চোখের জ্যোতি কম হলে পরীক্ষা করার নিয়মঃ – পশুটির দুয়েকদিন আহার বন্ধ করে দিবে। তারপর খারাপ চক্ষুটি বন্ধ করে দিবে এবং ভালো চক্ষুটি খুলে রাখবে। বহু দূরে খাদ্য রেখে দিবে, যাতে পশুটি তা দেখতে না পায়। তারপর খাদ্য পশুর দিকে নিকটবর্তী করবে। যেখান থেকে পশু খাদ্য দেখতে পাবে সেখানে চিহ্ন করে রাখবে। এবার ভালো চক্ষুটি বন্ধ করবে এবং খারাপটি খুলে দিবে। তারপর খাদ্য ধীরেধীরে পশুর নিকটে আনতে থাকবে। যেখান থেকে দেখতে পাবে, সেখানে চিহ্ন করে রাখবে। এবার দুইটির স্থান মেপে দেখবে। যদি এইস্থানটি প্রথমস্থানের একতৃতীয়াংশ হয় তাহলে চক্ষুর জ্যোতি একতৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর যদি অর্ধেক হয় তাহলে অর্ধেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। (হিদায়া)

মাসয়ালা (৫) – যে পশুর দাঁত নেই অথবা যার থানকাটা অথবা শুকিয়ে গিয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েজ নয়। ছাগলের একটি থান শুকিয়ে গেলে কুরবানী জায়েজ হবে। গরু ও মহিষের দুইটি থান শুকিয়ে গেলে কুরবানী নাজায়েজ হবে। নাককাটা পশু অথবা ঔষধের দ্বারা যে পশুর দুধ শুকিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা দুই লিঙ্গ বিশিষ্ট হিজড়া পশু অথবা যে পশু অত্যন্ত পেশাব ও পায়খানা খায়, সে পশুর কুরবানী জায়েজ নয় (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (৬) – ভেড়া অথবা দুম্বার পশম কেটে নিলে কুরবানী জায়েজ হবে। যে পশুর একটি পা কেটে নেওয়া হয়েছে তার কুরবানী জায়েজ নয়। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (৭) – পশু ক্রয় করার সময় এমন কোনো দোষ ছিলোনা, যাতে কুরবানী নাজায়েজ হয়ে যায়। কিন্ত পরে পশুর মধ্যে ঐপ্রকার দোষ পাওয়া গিয়েছে। এখন ক্রেতা যদি মালেকে নিসাব (ধনীব্যক্তি) হয়, তাহলে অন্য পশু কুরবানী করবে। ক্রেতা মালিকে নিসাব নাহলে ঐ দোষযুক্ত পশুটি কুরবানী করবে। যদি কোনো গরীব মানুষ কুরবানী মান্নত করে থাকে এবং নির্দোষ পশু ক্রয় করে থাকে, পরে পশুর মধ্যে দোষ পাওয়া গেলে অন্য পশু কুরবানী করতে হবে। (হিদায়া, রদ্দুল মুহতার)

মাসয়ালা (৮) – গরীব মানুষ এমন দোষযুক্ত পশু ক্রয় করেছে, যার কুরবানী জায়েজ নয়। যদি কুরবানীর দিন পর্যন্ত এপ্রকার দোষ থেকে যায় তাহলে গরীব তার কুরবানী করতে পারবে। যদি কোনো ধনীমানুষ দোষযুক্ত পশু ক্রয় করে থাকে এবং কুরবানী দিনপর্যন্ত ঐ প্রকার দোষ থেকে যায়, তাহলে ধনীর জন্য তার কুরবানী জায়েজ হবেনা। দোষযুক্ত পশু ক্রয় করার পর কুরবানী করার পূর্বে যদি পশু নির্দোষ হয়ে যায়, তাহলে গরীব ও ধনী উভয়ের জন্য কুরবানী জায়েজ হবে (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (৯) – যদি কোনো নির্দোষ পশু কুরবানী করার সময় লাফালাফি করার কারণে দোষযুক্ত হয়ে যায়, তাহলে তার কুরবানী জায়েজ হবে (রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (১০) – কুরবানীর পশু মারা গেলে ধনী ব্যক্তির জন্য অন্য পশু কুরবানী করা ওয়াজিব। কিন্ত গরীবের জন্য ওয়াজিব নয় (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (১১) – ধনী ব্যক্তির কুরবানীর পশু হারিয়ে গিয়েছে অথবা চুরি হয়ে যাবার পর পুনরায় পশু ক্রয় করার পর পশুটি পাওয়া গেলে দুইটির মধ্যে যেকোনো একটি কুরবানী করতে পারে। কিন্ত এই অবস্থা গরীবের হলে দুইটির কুরবানী করা ওয়াজিব হবে (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (১২) – ধনী ব্যক্তির পশু হারিয়ে যাবার পর পুনরায় পশু ক্রয় করার পর যদি প্রথমটি পাওয়া যায়, তাহলে প্রথমটি কুরবানী করলে তার মূল্য দ্বিতীয়টির অপেক্ষা কম হলে কোনো দোষ নেই। যদি দ্বিতীয়টি কুরবানী করে থাকে এবং তার মূল্য প্রথমটি অপেক্ষা কম হয়, তাহলে যত টাকা কম হবে ততটাকা সদকা করতে হবে। অবশ্য দুইটি কুরবানী করে দিলে কোনো টাকা সাদকা করতে হবেনা (রদ্দুল মুহতার)।

৬। কুরবানীর পশুতে অংশ গ্রহণ

মাসয়ালা (১) – সাত ব্যক্তি মিলিত ভাবে কুরবানীর জন্য গরু ক্রয় করার পর তাদের কেউ একজন ইন্তেকাল করলে তার ওয়ারিসগণের অনুমতিতে কুরবানী করলে সবার পক্ষ হতে কুরবানী জায়েজ হয়ে যাবে। ওয়ারিসগণের বিনা অনুমতিতে করলে কারো কুরবানী জায়েজ হবে না (হিদায়া)।

মাসয়ালা (২) – অংশীদারদের মধ্যে কেহ কাফের থাকলে অথবা কারো উদ্দেশ্য কুরবানী না হয়ে কেবল মাংস খাওয়া হলে কারো কুরবানী হবে না (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (৩) – অংশীদারদের মধ্যে একজনের নিয়ত বর্তমান সালের কুরবানী করা এবং অন্যদের উদ্দেশ্য গতসালের কুরবানী করা, এমতাবস্থায় যার উদ্দেশ্য বর্তমান সালের কুরবানী করা তার কুরবানী সহীহ হবে, এবং অন্যদের নিয়ত বাতিল হবার কারণে তাদের কুরবানী নফল হয়ে যাবে। যেহেতু গত বৎসরের কুরবানী বর্তমান সালে জায়েজ নয়, সেহেতু তাদের মাংস সাদকা করে দেয়া জরুরী। এমনকি যার কুরবানী সঠিক হয়েছে তার ও মাংস সাদকা করতে হবে (রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (৪) – তিনব্যক্তি কুরবানীর পশু ক্রয় করেছেন। প্রথমব্যক্তি তিনশত টাকায়, দ্বিতীয়ব্যক্তি দুইশত টাকায়, তৃতীয়ব্যক্তি একশত টাকায়, কোনো প্রকারে তিনটি পশু মিলে গিয়েছে। কোনটি কার তা জানা সম্ভব হচ্ছেনা। এমতাবস্থায় তিনজন তিনটি পশু কুরবানী করে দিলে, যিনি তিনশত টাকা দিয়ে ক্রয় করে ছিলো, তার দুইশত টাকা সাদকা করে দিবে। যিনি দুইশত টাকায় ক্রয় করেছিলেন তিনি একশত টাকা সাদকা করে দিবেন। যিনি একশত টাকায় ক্রয় করে ছিলেন তার কিছু সাদকা করতে হবেনা। যদি তিনব্যক্তি একে অপরকে কুরবানী করার অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে সবার কুরবানী হয়ে যাবে এবং কিছু সাদকা করতে হবেনা (দুররে মুখতার)।

৭। কুরবানীর কিছু মুস্তাহাব

মাসয়ালা (১) – কুরবানীর পশু খুব সুন্দর রিষ্ট-পুষ্ট হওয়া। জবেহ করার পূর্বে ছুরিতে ধার দিয়ে নেয়া। জবেহ করার পর প্রাণ বের হয়ে গেলে হাত পা কেটে চামড়া ছাড়ানো। জবেহ করার পদ্ধতি নিজের কুরবানী নিজে করা। জবেহ করতে না জানলে জবেহ করার সময় উপস্থিত থাকা। (আলমগীরি ও বাহারে শরীয়ত)

মাসয়ালা (২) – কুরবানীর পশু মুসলমানের দ্বারা জবেহ করাতে হবে। কোনো অগ্নিপূজক অথবা কাফের ও মুশরিক দ্বারা জবেহ হলে কুরবানী হবেনা। বরং উক্ত পশুকে হারাম এবং মৃত মনে করতে হবে। কাফেরের সাহায্য নিয়ে কুরবানী করলে কুরবানী হয়ে যাবে কিন্ত মাকরূহ হবে (বাহারেশরীয়ত)।

৮। কুরবানীর মাংস ইত্যাদির বিবরণ

মাসয়ালা (১) – কুরবানীর মাংস নিজে খেতে পারে অথবা কোনো গরীব অথবা কোন ধনীকে ও প্রদান করতে পারে। কুরবানী দাতার জন্য কুরবানী মাংস খাওয়া মুস্তাহাব। কুরবানীর মাংস তিন অংশ করা মুস্তাহাব। একাংশ গরীবের জন্য, একাংশ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এক অংশ নিজের জন্য রাখবে। একাংশের কম দান করা উচিৎ নয়। সমস্ত মাংস সাদকা করে দেয়া জায়েজ। অনুরূপ সমস্ত মাংস নিজের জন্য রেখে দেয়াও জায়েজ। তিন দিনের অধীক কুরবানীর মাংস রেখে খাওয়া জায়েজ। যদি কুরবানী দাতা গরীব হয় এবং সংসারে অনেক মানুষ থাকে, তাহলে নিজের বাড়ির জন্য সমস্ত মাংস রেখে দেয়া উত্তম। (আলমগীরি)

মাসয়ালা (২) – ভারতীয় অমুসলিম হারবী কাফের। কুরবানীর মাংস হারবী কাফেরকে দেয়া জায়েজ নয়। (বাহারে – শরিয়াত ও কানুনে – শরিয়াত ও আনওয়ারুল – হাদীস)।

– বিশেষবিজ্ঞপ্তি –
=========
কাফের তিন প্রকার। যথা – মুস্তামিন, জিম্মী, হারবী।
যে কাফের মুসলিম বাদশাহর নিকট থেকে আশ্রয়ের অনুমতি নিয়ে মুসলিম দেশে এসেছে তাকে বলা হয় মুস্তামিন। যে কাফের মুসলমান বাদশাকে জিজিয়া দেবার শর্তে মুসলিম দেশে বাস করে তাকে বলা হয় জিম্মী। যে কাফের নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীন তাকে বলা হয় হারবী।

প্রকাশ থাকে যে, হারবী কাফেরের হুকুম সম্পূর্ণ সতন্ত্র। এবার এখানকার কাফেররা কোন পর্যায় পড়ছে তা লক্ষ্যনীয়। আরো প্রকাশ থাকে যে হুজুর সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লামের যুগে মক্কা ও মদীনা শরীফে হারবি কাফের ছিলোনা। সুতরাং হাদীস পাকে যে কাফেরকে মাংস দেয়ার কথা বলা হয়েছে সে কাফের ছিলো জিম্মী। তা বোঝার মতো বোধ ওহাবীদের মধ্যে নেই। তাই তারা এখানকার অমুসলিমকে কুরবানী মাংস দেয়া জায়েজ বলে থাকে।

মাসয়ালা (১) – যদি কুরবানী মান্নতের হয়, তাহলে কুরবানী দাতা গরীব হলে ও নিজে খেতে পারবেনা এবং কোনো ধনীকেও খাওয়াতে পারবেনা। বরং সমস্ত মাংস সাদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (যায়লাই, ও বাহারে শরীয়ত)

মাসয়ালা (২) – মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানী করলে তার মাংস নিজে খেতে পারে। ধনী ও গরীব সবাইকে খাওয়াতে পারে। তিন অংশ করতে পারে। প্রয়োজনে সমস্ত মাংস নিজের জন্য রাখতে পারে। অবশ্য মৃত ব্যক্তি যদি তার পক্ষ হতে কুরবানী করার জন্য অসীয়ত করে যায়, তাহলে সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার)

মাসয়ালা (৩) – কুরবানীর চামড়া এবং তার দড়ি ইত্যাদি সমস্ত জিনিস সাদকা করতে হবে। কুরবানীর চামড়া বিক্রয় না করে নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে। যথাঃ নামাজের মুসাল্লা, মশক, থলী ইত্যাদি করা জায়েজ (দুররে মুখতার)।

মাসয়ালা (৪) – কুরবানী চামড়া দ্বারা নিজের কোনো প্রয়োজনীয় জিনিষ তৈরি করলে তা ভাড়ায় দেয়া জায়েজ। যদি ভাড়ায় দিয়ে থাকে তাহলে সেই পয়সা সাদকা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার)

মাসয়ালা (৫) – কুরবানী চামড়ার পরিবর্তে কোরআন শরীফ ও কিতাব নেয়া জায়েজ। (দুররে মুখতার)

মাসয়ালা (৬) – কুরবানীর চামড়া অথবা তার পয়সা এক ব্যক্তিকে অথবা একাধিক ব্যক্তিকে সাদকা করা জায়েজ। কুরবানীর চামড়া অথবা পয়সা দ্বীনি মাদ্রাসা দেয়া জায়েজ। (বাহারে – শরিয়াত ও কানুনে – শরীয়ত)

মাসয়ালা (৭) – ওহাবী দেওবন্দী মাদ্রাসায় জাকাত, উশুর ও কুরবানী এবং ফিতরার পয়সা দান করা হারাম। অনুরূপ তাবলীগ জামায়াত ও জামায়াতে ইসলামী তহবিলে দান করা ও হারাম (ফাতাওয়ায়ে – উলামায়ে – আহলে – সুন্নাত)।

মাসয়ালা (৮) – কুরবানীর মাংস ও চামড়ার পরিবর্তে কোনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা জায়েজ নয়। পরিবর্তন করলে সাদকা করতে হবে। (দুররে মুখতার ও হিদায়া)

মাসয়ালা (৯) – কুরবানীর পশুর চর্বি, পশম ইত্যাদির পরিবর্তে কোনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে সাদকা করতে হবে (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (১০) – কুরবানীর মাংস, চামড়া অথবা তার অন্য কোনো অংশ জবেহ করার পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েজ নয়। (হিদায়া)

মাসয়ালা (১১) – কষাইকে অথবা যারা মাংস তৈরি করে থাকে, তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে মাংস দেয়া জায়েজ নয়। পারিশ্রমিক হিসেবে পয়সা দেয়া হবে। অবশ্য অন্য মুসলমানদের ন্যায় তাদের মাংস দেয়া জায়েজ। (বাহারে – শরিয়াত)

মাসয়ালা (১২) – চিহ্ন স্বরূপ ভেড়ার লোম কেটে নিলে তা ফেলে দেয়া জায়েজ নয়। বরং সাদকা করে দিতে হবে (আলমগীরী)

মাসয়ালা (১৩) – নিজের কোনো কাজের জন্য জবেহ করার পূর্বে কুরবানীর পশুর পশম কেটে নেওয়া, দুধ দহন করা, পশুর পিঠের উপর আরোহণ করা, তার পিঠের উপর করে কোনো জিনিষ বহন করা ও পশুকে ভাড়ায় দেয়া ইত্যাদি মাকরূহ এবং নিষেধ (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (১৪) – জবেহ করার পর পশুর পশম কেটে নিজের কাজে ব্যবহার করা জায়েজ। অনুরূপ জবেহ করার পর দুধ দহন করে নিজে পান করতে পারে। (আলমগীরি)

মাসয়ালা (১৫) – কুরবানী করার পূর্বে পশুর বাচ্চা হয়ে গেলে বাচ্চাকেও জবেহ করে দিতে হবে। যদি বাচ্চাকে বিক্রয় করে থাকে তাহলে তার পয়সা সাদকা করে দিতে হবে। যদি জবেহ করা না হয় বা বিক্রয় করা না হয় এবং কুরবানীর দিনগুলো অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে জীবিত অবস্থায় সাদকা করে দিতে হবে। যদি কিছুই করা না হয় এবং পরের বৎসর তাকে কুরবানী করে থাকে তাহলে কুরবানী জায়েজ হবে না। পুনরায় কুরবানী করতে হবে। উক্ত জবেহ করা সমস্ত মাংস সাদকা করতে হবে (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (১৬) – কুরবানী করার পর পেট থেকে যদি জীবিত বাচ্চা বের হয় তাহলে তাকে জবেহ করে খাওয়া জায়েজ। যদি মরা বাচ্চা বের হয় তাহলে তা খাওয়া হারাম (হিদায়া ও বাহারে – শরিয়াত)।

৯। বিনা অনুমতিতে অপরের পশু কুরবানীর করার নিয়ম

মাসয়ালা (১) – দুই ব্যক্তি ভুল করে একে অপরের পশু যদি জবেহ করে থাকে তাহলে উভয়ের কুরবানী হয়ে যাবে। পশুর মাংস খাবার পর নিজেদের ভূল বুঝতে পারলে একে অপরের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিবে। যদি একে অপরকে ক্ষমা করতে রাজি না হয় তাহলে একে অপরের নিকট হতে নিজ নিজ পশুর মূল্য গ্রহণ করবে এবং তা সাদকা করে দিবে (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (২) – ইচ্ছাকৃত বিনা অনুমতিতে অপরের কুরবানীর পশু নিজের নামে জবেহ করলে যদি পশুর মালিক জবেহ কারীর নিকট হতে জরীমানা গ্রহণ করতে রাজি হয় তাহলে জবেহ কারীর পক্ষ হতে কুরবানী হয়ে যাবে। অন্যথায় জবেহ কারী নিজের নামে জবেহ করলেও মালিকের পক্ষ হতে কুরবানী হয়ে যাবে (রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (৩) – যদি কোনো ব্যক্তি অপরের ছাগল জোর পুর্বক নিয়ে কুরবানী করে থাকে এবং ছাগলের মালিক তার নিকট হতে জরিমানা নেয় তাহলে কুরবানী জায়েজ হয়ে যাবে। কিন্ত কুরবানীকারী গোনাহগার হয়ে যাবে, এজন্য তওবা করা জরুরী। মালিক জরিমানা গ্রহণ করে জবেহ করা ছাগল নিয়ে থাকলে কুরবানী জায়েজ হবেনা (রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (৪) – পোষণী ছাগলের কুরবানী জায়েজ হবেনা। কারণ সে পোষণী নিয়েছে সে প্রকৃত পক্ষে তার মালিক নয় (রদ্দুল মুহতার)।

মাসয়ালা (৫) – নিলামের পশু কুরবানী জায়েজ নয় কারণ নিলামকারী পশুর প্রকৃত মালিক নয়। (বাহারে – শরিয়াত)

মাসয়ালা (৬) – দুই ব্যক্তি একটি পশুর মালিক হলে উক্ত পশুর কুরবানী কোনো পক্ষের জন্য জায়েজ নয়। দুই ব্যক্তি দুইটি পশুর সমান সমান মালিক হলে দুইজন দুইটি পশুর কুরবানী করে দিলে উভয়ের কুরবানী জায়েজ হবে। (রদ্দুল মুহতার)

মাসয়ালা (৭) – যদি কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট না করে নিজের পক্ষ হতে এবং নিজ নাবালক পাঁচ সন্তানের পক্ষ হতে ছয়টি বকরী কুরবানী করে থাকে তাহলে সবার পক্ষ হতে কুরবানী জায়েজ হয়ে যাবে (আলমগিরী)।

মাসয়ালা (৮) – যদি কোনো ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে এবং নাবালক সন্তানের পক্ষ হতে একটি গরু কুরবানী করে থাকে তাহলে সবার পক্ষ হতে কুরবানী জায়েজ হয়ে যাবে। বালেগ সন্তানের বিনা অনুমতিতে কুরবানী জায়েজ হবেনা। অনুরূপ যেসমস্ত বালেগ সন্তানের নামে কুরবানী করা হয়েছে যদি এদের মধ্যে দু’একজনের অনুমতি না থাকে তাহলে কারো কুরবানী জায়েজ হবেনা। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (৯) – যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধ ক্রয়ের বকরী নিয়ে কুরবানী করে থাকে তাহলে বিক্রেতা ইচ্ছা করলে বকরীর মূল্য গ্রহণ করতে পারে অথবা জবেহকৃত বকরী নিতে পারে। যদি মূল্য গ্রহণ করে থাকে তাহলে জবেহ কারির দায়িত্ব কিছুই থাকবেনা। যদি জবেহকৃত বকরী গ্রহণ করে থাকে তাহলে কুরবানী দাতার জন্য জবেহ কৃত বকরীর মূল্য সাদকা করতে হবে। (আলমগিরী)

মাসয়ালা (১০) – দান সূত্রে পাওয়া ছাগল – গরুর কুরবানী করা জায়েজ। দানে পাওয়া ছাগলের কুরবানীর পর যদি দাতা জবেহ করা ছাগল ফিরত নিয়ে থাকে তাহলে কুরবানী দাতার কুরবানী জায়েজ হয়ে যাবে এবং তার দায়িত্বে কিছু সাদকা করা ওয়াজিব নয় (আলমগিরী)।

১০। কুরবানী করার নিয়ম

কুরবানী করার পূর্বে পশুকে পানাহার করিয়ে দিবে। অস্ত্রকে ভালো করে ধার দিয়ে দিবে। পশুকে বাম কাত করে শোয়াবে যাতে তার মুখ কিবলা দিকে হয়ে থাকে। নিজের ডান পা পশুর সামনের ডান রানের উপর রেখে ধারালো অস্ত্র দ্বারা দ্রুত জবেহ করে দিবে।

জবেহ করার পূর্বে –
“ইন্নি ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাতারস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানিফাউ ওয়ামা আনা মিলান মুশরিকীন”

“ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ ইয়াইয়া ওয়ামামাতী লিল্লাহী রব্বিল ‘আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়াবি জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলেমীন আল্লাহুম্মা লাকা ওয়ামিনকা বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর”

যদি কুরবানী নিজের পক্ষ হতে দেয়া হয় তাহলে জবেহ করার পর বলবে –
“আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী কামা তাকাব্বালতা মিন খলিলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস সালাম ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মাদিন সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম”

জবেহ এমনি ভাবে করতে হবে যাতে চারটি শিরা কেটে যায়, কমপক্ষে তিনটি শিরা কাটা জরুরী। খুব বেশি কেটে গরদানের হাড় পর্যন্ত অস্ত্র পৌঁছিয়ে দেয়া উচিৎ নয়, তাতে বিনা কারণে পশুকে বেশি কষ্ট দেয়া হয়। জবেহ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঠান্ডা না হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তার পায়ের শিরা কাটা চামড়া ছাড়ানো উচিৎ নয়।

যদি কুরবানী অন্যের পক্ষ হতে করা হয় তাহলে জবেহ করার পর বলবে –
“আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন ফুলানিন কামা তাকাব্বালতা মিন খলিলীকা ইব্রাহীমা আলাইহিসালাম ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মাদিন সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম”।

“ফুলানিন” এর স্থলে যার নামে কুরবানী হবে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে। অনুরূপ যদি একাধিক ব্যক্তির নামে কুরবানী করা হয় তাহলে ফুলানিন এর স্থলে সবার নাম উচ্চারণ করতে হবে।

Comments

comments