খবরের বিস্তারিত...


জ্ঞানের সাগর হযরত অালী (রা.) এর বিচার

আগস্ট 13, 2018 আক্বীদা

জ্ঞানের সাগর হযরত অালী (রা.) এর বিচার,
ছেলে কার?
———————————————————————-
ঘটনাটা ঘটেছিল হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফত কালে। একদিন সকালে এক বেদুইন মহিলা খলিফার দরবারে এসে নালিশ জানালো-‘হুজুর অমুক মহিলা আমার পুত্র সন্তান চুরি করে নিয়ে তার কন্যা সন্তান আমার বিছানায় রেখে গেছে রাতে। দু’জনের সন্তান একই তাঁবুতে এবং একই রাতে জন্মগ্রহণ করেছে। আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম তখন সেই মহিলা সন্তান বদল করেছে। এখন আমার বিনীত দাবি, আপনি সুবিচার করে আমার ছেলে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দিন।
খলিফা বিবাদী মহিলাকে ডেকে এনে বাদী-বিবাদী উভয়ের কথা শুনলেন। কিন্তু কিছুতেই সত্য উদঘাটন করতে পারলেন না। এ ঘটনার কোনো সাক্ষীও নেই।অগত্যা খলিফা মামলাটি হযরত আলী (রা.)-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এও অনুরোধ করলেন যে, যখন বিচার ফয়সালা করা হয়, তখন যেন খলিফাকে সে মজলিশে বসার সুযোগ দেয়া হয়।
বিচারের দিন ধার্য হলো এবং যথারীতি খলিফাকে জানানো হলো। খলিফা এলেন। হযরত আলী (রা.) বাদী-বিবাদী উভয় মহিলার কথা শুনে স্তম্ভিত হলেন। দু’জনই পুত্র সন্তান দাবি জানালো এবং উভয়েই নিজ দাবিতে স্থির রইলো।
হযরত আলী (রা.) দুটি পেয়ালা আনতে বললেন। পেয়ালা আনা হলো। তিনি দু’মহিলার হাতে দুটি পেয়ালা দিয়ে বললেন, তোমরা দু’জনেই আড়ালে চলে যাও। অন্দর মহলে গিয়ে যার যার পেয়ালায় নিজের বুকের দুধ ভর্তি করে নিয়ে এসো। মহিলা দু’জন তাই করলো। সভায় পিনপতন নিরবতা। কোনো পক্ষের কোনো সাক্ষী নেই। কিভাবে বিচার হয়।
দুধভর্তি পেয়ালা দুটি বিচারক হযরত আলীর সামনে রাখা হলো। তিনি গভীরভাবে পেয়ালা দুটির দুধ লক্ষ্য করে দেখলেন এবং এক নম্বর পেয়ালার মালিককে ডেকে বললেন, কন্যা সন্তান তোমার। তুমি কন্যা সন্তান নিয়ে যাও, আর ওকে ওর পুত্র সন্তান ফিরিয়ে দাও।
বিচারের রায় শুনে খলিফাসহ দরবারের সবাই অবাক। কেউ কিছুই বুঝতে পারলেন না। শেষমেষ নিরবতা ভেঙে খলিফা ওমর (রা.) জিজ্ঞেস কররেন, হে বিচারক আলী, কিভাবে স্থির করলেন যে, এ পেয়ালার দুধের মালিক পুত্র সন্তান প্রসব করেছে আর ও পেয়ালার দুধের মালিক কন্যা সন্তান প্রসব করেছে? আমি যে এর কিছুই বুঝতে পারছি না। অথচ আপনি সাক্ষী ছাড়াই শুধু দুধ দেখেই নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, এ দুধ পুত্র সন্তানের মায়ের আর ও দুধ কন্যা সন্তানের মায়ের। এর রহস্য কি?
হযরত আলী (রা.) খলিফার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপানি কুরআন পড়েন না? আমিতো কুরআন থেকেই এই ফয়সালা করলাম।
খলিফা আরো অবাক হলেন। বললেন, কুরআনতো আমি পড়ি। আমিতো কুরআন শরীফে এর কোনো সমাধান দেখছি না।
হযরত আলী তখন আল কুরআনের উত্তরাধিকার সম্পর্কীয় আয়াত তেলাওয়াত করে শোনালেন-
ইউসীকুমুল্লাহু ফী আওলাদিকুম লিযযাকারি মিছলু হাযযিল উনছাইয়াইনি।
“আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক নরের (পুত্রের) অংশ দুই নারীর (কন্যার) অংশের সমান অর্থাৎ ওয়ারিশ হিসেবে বোনের দ্বিগুণ সম্পত্তি পাবে ভাই।”
এ কথা শুনে সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। খলিফা নিজেও ঠিক বুঝে ওঠতে পারেননি।
তিনি প্রশ্ন করলেন, পুরুষ মিরাশ পাবে মহিলার দ্বিগুণ, তা দুধ দেখে কি করে নির্ধারণ করলেন?
হযরত আলী (রা.) ছিলেন অগাধ জ্ঞানের অধিকারী। তিনি বললেন, হাজিরানে মজলিশ, আপনারা সবাই দুধের দিকে লক্ষ্য করুন। প্রথম পেয়ালার দুধ পাতলা আর দ্বিতীয় পেয়ালার দুধ ঘন। আল্লাহ নারীর চেয়ে পুরুষের খাদ্যও দ্বিগুণ করে দিয়েছেন এভাবে।
খলিফা ওমর (রা.)সহ সকলেই পেয়ালার দুধ নেড়ে চেড়ে দেখলেন যে, মহাজ্ঞানী আলী যা বলেছেন তা ঠিকই বলেছেন। সবাই অবাক হলেন এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে আলী (রা.)-এর জ্ঞানের গভীরতা দেখে মুগ্ধ হলেন।

Comments

comments