খবরের বিস্তারিত...


শহীদ লিয়াকত আলী (রঃ) এর জীবনীঃ

শহীদ লিয়াকত আলীর মূল নাম মোঃ হাবিব উল্লাহ। মা আদর করে লিয়াকত আলী বলে ডাকতেন। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে লিয়াকত আলী ছিল সর্বকনিষ্ঠ। লিয়াকতের বাবার নাম মুহাম্মদ ইসলাম। মাতার নাম আবেদা খাতুন। লিয়াকতের বাবা ১৯৬৪ সালে লিয়াকতের জন্মের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর তিন মাস পর ১৯৬৪ সালেই লিয়াকত আলী যমজ বোন রৌশন আকতারের সাথে ১ ঘন্টা ব্যবধানে জন্মগ্রহণ করেন। অবশ্য যমজ বোন রৌশন আকতার মাত্র তিন বৎসর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় শাহ আলমও মাত্র ১২ বৎসর বয়সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দ্বিতীয় ভাই শামসুল আলম একজন টেক্সি চালক। তৃতীয় ভাই নুরুল আলম আবুধাবীতে থাকেন। চতুর্থ ভাই সিরাজুল আলম পেশায় একজন গাড়ী চালক। ৫ম ভাই মোঃ মুছা আলমও মাত্র সাত বৎসর বয়সে মারা যান। ৬ষ্ঠ তথা সর্বকনিষ্ঠ লিয়াকত আলী ১৯৮৬ সালের ১০ই এপ্রিল আগ্রাবাদস্থ সরকারী কমার্স কলেজ চত্ত্বরে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসী চক্রের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরন করে।

লিয়াকতের বড় বোন কুলসুমা খাতুনকে বহদ্দার হাটের সন্নিকটে বাদুরতলায় মোহাম্মদ লেদু মিঞার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। লেদু মিঞা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

লিয়াকতের বাড়ী ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মৌলভী পুকুর পাড়ের ফজু রহমান মিস্ত্রীর বাড়ী। পরে এই নাম পরিবর্তন করে লিয়াকতের দাদা আহমদুর রহমান মিস্ত্রীর নামে আহমদুর রহমান মিস্ত্রীর বাড়ী রাখা হয়। অবশ্য লিয়াকতের দাদার পুরাতন বাড়ী হচ্ছে সাবেক এম,পি প্রয়াত শরাফত উল্লাহর বাড়ী (বর্তমান ব্যবসায়ী এরশাদ উল্লাহর বাবা ছিলেন শরাফত উল্লাহ যিনি সম্পর্কে লিয়াকতের চাচা)। সেখান থেকে মৌলভীপুকুর পাড় এলাকায় লিয়াকতের দাদা নতুন বাড়ী করেন। শহীদ লিয়াকতের শাহাদাতের পর থেকে এই বাড়ীর নাম এখন শহীদ লিয়াকতের বাড়ী হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ঐ এলাকার সমস্ত কীর্তি পুরুষদের কীর্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়া লিয়াকতকে যারা বুঝতে পারেনি তারাও আজ শহীদ লিয়াকতের পূণ্যাত্মার আত্মীয়। লিয়াকতের নানা সুলতান আহমদ চৌধুরী ৫নং মোহরা ওয়ার্ডের এয়াকুব আলী চৌধুরী বাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন। লিয়াকতের মামাত ভাই এ,টি,এম, তাহের একজন সফল প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শহীদ লিয়াকতের স্মৃতি চারণ মূলক প্রোগ্রাম, স্মরণ সভা, ফাতেহা ইত্যাদি যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি আন্তরিকভাবে উপস্থিত থেকে ফুফাত ভাইয়ের অন্তরাত্মার শান্তি কামনা করেন। মৌলভী পুকুর পাড়ের এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসেবে লিয়াকতের ভাই বোনেরা জীবন-জীবিকার যুদ্ধে কেউ তেমন লেখা-পড়া করতে না পারলেও অভাব অনটনের সীমাহীন কষ্টের মধ্যেও শহীদ লিয়াকত আলী লেখা-পড়া চালিয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে অন্যান্য ভাইয়েরা তাকে সাধ্যমত সহযোগীতা ও উৎসাহ দিয়ে গেছেন। বিশেষতঃ মায়ের দোয়া ও প্রেরণা লিয়াকতের শিক্ষা জীবনকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। মেধাবী, বিনয়ী ও সৎ ছেলে হিসেবে ছোটবেলা থেকেই লিয়াকত সবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠে। সে হাছানিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআন শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে তৎকালীন দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দেস হযরত মাওলানা আবুল কাসেম জদীদ (রঃ) এর নেক নজরে পড়েন। মৌলভী পুকুর পাড় মসজিদের ইমাম হিসেবে প্রায় নামাজের সময় হযরত মাওলানা আবুল কাসেম জদীদ (রঃ) লিয়াকতকে নিজের পুত্রের চেয়েও বেশী ভালবাসতেন। হুজুরের প্রতি লিয়াকতের শ্রদ্ধাও ছিল কল্পনাতীত। লিয়াকত সময় পেলেই হুজুরের বাড়ীতে ছুটে যেত। হুজুরও লিয়াকতকে প্রাণ ভরে দোয়া করতেন এবং ইসলামের খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। ইসলাম সম্পর্কীয় সকল ধারণা ও শিক্ষা অর্জন করেছে লিয়াকত হযরতুল আল্লামা আবুল কাসেম জদীদ (রঃ) এর নিকট থেকে। ইসলামের বিভিন্ন আক্বিদাগত মাসায়ালা মাসায়েল নিয়ে আল্লামা জদীদ (রঃ) সাহেবের সাথে আলোচনা করতে করতে মাদ্রাসার ছাত্র না হয়েও সে অনেক কিছু জানতে পেরেছে। এমনকি অনেক মাদ্রাসার ছাত্র ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় লিয়াকতের জ্ঞানের গভীরতার কাছে হার মানতো। কারা ইসলামের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, কারা কি কারণে বাতেল বিষয়ে আবুল কাসেম জদীদ (রঃ) থেকে ধারনা লাভ করে লিয়াকত বাল্যকালেই নিজের ঈমান ও আক্বিদাকে মজবুত করেছিল।

হযরত মাওলানা আবুল কাসেম জদীদ (রঃ)বড় ছেলে ইকবাল বলেছেন, বাবা এক নাগারে লিয়াকতকে দু’তিন দিন না দেখলে অস্থির হয়ে যেতেন। তাকে লিয়াকতের বাড়ীতে পাঠাতো কি হয়েছে খবর নেয়ার জন্য। ছোট বেলা থেকেই লিয়াকত যুক্তি ছাড়া কোন কিছু মানতে রাজী হতো না। কোন বিষয়ে মনে সংশয় বা প্রশ্ন দেখা দিলেই হুজুরের কাছে গিয়ে সময়ে-অসময়ে হুজুরকে বিরক্ত করতো। যতক্ষন পর্যন্ত তার প্রশ্নের কাক্ষিত উত্তর পাবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত সে হুজুরের পাশে বসে থাকবে। লিয়াকতের শাহাদাতের পর হুজুরের চোখের পানি যারা দেখেছেন, কান্না যারা দেখেছেন; তাদেরকে বলতে শুনেছি আল্লামা জদীদ সাহেব (রঃ) লিয়াকতকে তার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান মনে করতেন। একদিন আমি মৌলভী পুকুর পাড়ে আছরের নামাজের পরে লিয়াকতের কবর জেয়ারত করত গেছি সেখানে দেখি লিয়াকতের কবর জেয়ারত করছেন হযরত জদীদ সাহেব হুজুর (রঃ)। তিনি মুনাজাতে কান্নাকাটি করছেন আর রুমাল দিয়ে চোখর জল মুছছেন। জেয়ারত শেষে সালাম দিয়ে যখন জিঞ্জেস করলাম হুজুর কেমন আছেন? প্রতি উত্তরে হুজুর বললেন খুব ভালো আছি। এখনতো কেউ আমাকে বিরক্ত করতে আসে না। আমাকে যে সব সময় বিরক্ত করতো সে চলে গেছে। এই বলে হুজুর কাঁদতে শুরু করলেন। আমি হুজুরকে সান্তনা দিতে দিতে কোন রকমে হুজুরের বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম। হুজুর লিয়াকতকে ঈমান, ইসলাম ও আক্বিদার এমন ছবক দিয়ে তৈরী করেছিলেন যাতে করে লিয়াকত ঈমান, ইসলামের প্রয়োজনে জীবন দেওয়ার সর্বদা প্রস্তুত থাকতো। যেহেতু লিয়াকত যুক্তি ছাড়া কোন কিছু মানতো না সেহেতু বাতেলদের যুক্তিতে মোকাবেলা করার সকল মন্ত্রই লিয়াকতকে শিখিয়ে দিয়েছেন মৌলান আবুল কাশেম জদীদ (রঃ)।

লিয়াকত হামিদিয়া সরকারী আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করে ভর্তি হয় বহদ্দার হাটস্থ এন, এম, সি হাইস্কুলে। এই স্কুলটি চৌধুরী স্কুল নামে সমধিক পরিচিত। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করে সে। মেধাবী ছাত্র লিয়াকত বরাবরই ক্লাসে প্রথম থাকতো। এর পরে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় নানার বাড়ীর পাশের স্কুল মোহরা এল, খান হাইস্কুলে। সেখান থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ১৯৮৩ সালে ১ম বিভাগে এস,এস,সি পাশ করে শহীদ লিয়াকত আলী। পারিবারিক দৈন্যতা ও নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও ‍লিয়াকতকে কোন কিছু পড়া লেখা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ইতিমধ্যে সে হযরত আবুল কাসেম জদীদ (রঃ) এর সাথে হালিশহর দরবারে যাতায়াত মাধ্যমে পীরে কামেল কাজী সিরাজুল মোস্তাফা (রঃ) (যিনি পীরে কামেল হাফেজ মুনির উদ্দীন (রঃ) এর বড় ছাহেবজাদা ছিলেন) এর হাতে বায়য়াত গ্রহন করে। এস,এস,সি পরীক্ষা দেয়ার আগ থেকেই নিয়মিত সে তরিকতের ছবক পালন করতো। বায়য়াত গ্রহনের পর লিয়াকত মাথায় টুপি এবং হাতে তসবিহ নিয়ে চলাফেরা করত। তার চেহারা-চরিত্র আরো সুন্দর হয়ে গেলো। কথা বার্তায় চলা ফেরায় আরো বেশি বিনয়ী হয়ে গেল। হালিশহরের পীর সাহেব কেবলার হাতে বায়য়াত গ্রহনের আগে হযরতুল আল্লামা আবুল কাশেম জদীদ (রঃ) এর সান্নিধ্যে থেকে লিয়াকত একদিকে যেমন ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক ধারনা লাভে সক্ষম হয়, অন্যদিকে একজন প্রকৃত ঈমানদারের উত্তেজনায় সাচ্চা মোজাহিদ হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে সক্ষম হয়।

ইতিমধ্যে সে মৌলভী পুকুর পাড়ে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে। এই পাঠাগারের নাম রাখা হয় হযরত মৌলানা হাছান শাহ (রঃ) এর নামে। ওনার বাড়ী মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় হলেও ওনার মাজার কদম মোবারক মসজিদের সম্মুখে। কদম মোবারক মসজিদে ঢুকতেই ডানে ওনার মাজার। মৌলভী পুকুর নাম করনও হযরত হাছান শাহ (রঃ) এর নামে হয়েছে। হাছানিয়া পাঠাগার হলেও এখানে লিয়াকত বয়স্কদের এবং ছেলে মেয়েদের বিনা পয়সায় আরবী ও বাংলা পড়াতো। সে মনে করতো শিক্ষা ছাড়া ইসলামকে জানা সম্ভব নয়। আর যারা বদ আক্বিদার অনুসারী, বাতেলপন্থী তারা অশিক্ষিত সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বেশী। তরিকতের ছবক পালনের জন্যও শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। সে এখানে মাঝে মধ্যে, ছেলে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ে সেজন্য বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। বায়য়াত গ্রহনের পর থেকে সে নিয়মিত হালিশহর দরবারে যোগাযোগ রাখতো। প্রায় জুমা হালিশহর দরবার মসজিদে আদায় করতো। লিয়াকতের মা বললেন এস,এস,সি পরীক্ষার আগে সে খুব বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, লেখা-পড়াতো দূরে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত করতে পারছিলনা। পরীক্ষা খারাপ হবে এই দুঃশ্চিন্তায় আরো বেশী কাহিল হয়ে পড়েছিল।হালিশহর দরবারেও কোনভাবে যোগাযোগ করতে পারছিলনা। পরীক্ষার মাত্র দু’দিন আগে মাওলানা আবুল কাশেম জদীদ (রঃ) এসে লিয়াকতের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ দেখে তাকে হালিশহর দরবার শরীফে নিয়ে গেলেন। সেখানে হালিশহরের পীর সাহেব হুজুর লিয়াকতের মাথায় হাত দিয়ে বললেন; তোমার ভয়ের কোন কারন নেই, তুমি পরীক্ষার আগেই সুস্থ হয়ে যাবে। লিয়াকত তখন খুব কান্নাকাটি করতেছিল। হুজুর বললেন তুমি কাঁদছো কেন তুমি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দেবে আল্লাহর রহমতে তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট খুবই ভালো হবে। সে জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এস,এস,সি) দিয়েছিল কোন প্রস্তুতি ছাড়াই। অথচ লিয়াকত অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এস,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছিল। পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে প্রথমে ছুটে গেলো মায়ের কদমে। মাকে কদমবুচি করে সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে মৌলানা আবুল কাশেম জদীদ (রঃ) এর বাড়ীতে গিয়ে ওনাকে সাথে নিয়ে সোজা চলে গেলো হালিশহর দরবার শরীফে।

কেউ না থাকলেও লিয়াকতই সর্বপ্রথম পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ ছেলে-মেয়েদেরকে লেখা-পড়ায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। এস,এস,সি পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হলো কুয়াইশ শেখ মোহাম্মদ ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে সে ১৯৮৫ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ১ম বিভাগে এইচ,এস,সি পাশ করে। এইচ,এস,সি পাশের ব্যাপারে লিয়াকতের বড় ভাই একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। লিয়াকত এইচ,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের আগেরদিন খুবই অস্থির হয়ে গিয়েছিল। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো করছেনা। কারো সাথে তেমন কোন কথাও বলছেনা। একবার ঘর থেকে বের হয়ে যায় আবার কিছুক্ষণনের মধ্যে ফিরে আসে। এভাবে বেশ কয়েকবার করার পর আমি (বড় ভাই) সিরাজুল ইসলাম ওকে জিঞ্জেস করলাম কিরে তোর কি হয়েছে, তোকে এমন নার্ভাস এবং অস্থির দেখাচ্ছে কেন? লিয়াকত বলল আগামীকাল আমার এইচ,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। রেজাল্ট কেমন হবে জানিনা। আমার কিছু ভালো লাগছেনা। পাশ দাড়ানো লিয়াকতের মা তখন ছেলেকে সান্তনা দিয়ে বলে আমার ছেলের পরীক্ষার ফল আল্লাহর রহমতে অবশ্যই ভাল হবে। সেদিন রাত্রে সে তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যায়। গভীর রাতে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বলতে থাকে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। আমি ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছি। তখন আমরা (লিয়াকতের ঘরের) সবাই দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোর কি হয়েছে তুই চিৎকার করছিস কেন? সে আবার বলে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে আমি ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছি। আমি বললাম এ গভীর রাতে একথা তোকে কে বলেছে। সে বলল এই মাত্র আমার হুজুর (হালি শহরের পীর সাহেব কেবলা) আমাকে ডেকে একথা বললো। তখন মা লিয়াকতকে বললো বাবা তুই স্বপ্ন দেখেছিস। সকাল বেলা উঠেই পত্রিকা হাতে নিয়ে দেখা গেল লিয়াকত ঠিকই ফাস্ট ডিভিশনে এইচ,এস,সি পাশ করেছে। রেজাল্ট পেয়েই সে ছুটে যায় হালিশহর দরবারে। পীর সাহেব হুজুরকে কদমবুচি করে গত রাতের স্বপ্নের কথা কলতে চাইলেই হুজুর স্বপ্নের কথা বলতে বারণ করেন। পরে পীর সাহেবের দোয়া নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে লিয়াকত।

কুয়াইশ কলেজ থেকে এইচ,এস,সি, পাশ করার পর অন্যকোন ভাল কলেজে ডিগ্রী পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকদের একান্ত অনুরোধে সে কুয়াইশ কলেজেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। লেখা-পড়ার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে লিয়াকত সমাজের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। সে বহদ্দার হাটের বজ্রকণ্ঠ ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ক্লাবের সাথেও জড়িত ছিলেন। হযরত আবুল কাশেম জদীদ (রঃ) এর সংস্পর্শে থেকে আক্বিদার ব্যাপারে তার আপোষহীন ভূমিকা একদিকে সুন্নীয়তের প্রতি সমাজের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে; অন্যদিকে বদ আক্বিদা পোষণকারী বিভ্রান্ত বাতিল পন্থীরা তাকে পথের কাটা মনে করতে লাগল। খুব ছোট বেলা থেকেই শহীদ লিয়াকত আলী ইসলামের বিধি নিষেধ অত্যন্ত কঠোর ভাবে মেনে চলতো। জীবনে কোনদিন দাঁড়ি পর্যন্ত কাটেনি। সে দৈনিক সকল ফরজ ইবাদতসহ প্রায় নফল ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকতো। লিয়াকতের মা বলেছেন, আমার ছেলে বালক হওয়ার পর থেকে কোনদিন তাহাজ্জতের নামাজ পর্যন্ত বাদ-দেয়নি। মা তাহাজ্জত পড়ার জন্য ঘুম থেকে গভীর রাতে জেগে উঠলেই লিয়াকত ঘুম থেকে উঠে অজু করে আলো নিবিয়ে অন্ধকারে তাহাজ্জত পড়তো এবং প্রায় নফল ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকতো। সে পাড়ার ছেলেদেরকে সাথে নিয়ে প্রায় মসজিদে নামাজ পড়তে যেতো। দলবদ্ধ ভাবে মাঝে মধ্যে এলাকার ছোট ছোট ছেলেদেরকে বিভিন্ন মাজারে জেয়ারত করতে নিয়ে যেতো। এলাকার মেয়েদেরকে পর্দাপ্রথা মেনে চলার অনুরোধ করতো। নিজের মা ও বোনের মাধ্যমে পাড়ার মহিলাদের নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতো। পাড়ার কোন মহিলা বেপর্দা চলাফেরা করলে সে বিচলিত হয়ে যেতো। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সে ঐ মহিলাকে ইসলামের নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করতো।

এইভাবে সে নিজে ও সৎপথে চলতো। অন্যদেরকে সৎপথে চলতে উৎসাহিত করতো। অতএব তার জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

Comments

comments