খবরের বিস্তারিত...


আল-কোরআন ও বিজ্ঞান- (এমদাদুল হক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)

আল-কোরআন ও বিজ্ঞান
মুহাম্মদ এমদাদুল হক
সহকারী অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল (রহ)বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
কুরআনুল করীম আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে নবীজির জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ মহান মুজেযা।
এই কোরআনুল করীম আল্লাহর পক্ষে থেকে নাযিলকৃত বলেই এতে কোন ভুল -ভ্রান্তি নেই।আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন ذلک الکتاب لاريب فيه هدي للمتقين
এটা সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই।
পরহেজগারদের জন্য প্রদর্শনকারী।(বাকার-২)

এই কিতাব যে বিজ্ঞানময় কিতাব সে ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন کتاب انزلناه اليک مبارک ليدبرروا ايته وليتذکر اولوا الالباب (হে নবী) আমি আপনার প্রতি এই কল্যাণময় গ্রন্থ নাযিল করেছি, যেন মানুষ এর আয়াতসমূহ সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেন জ্ঞানবানগল তা হতে উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সাদ২৯)

এভাবে আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন يس والقران احکيم -انک لمن المر سلين
ইয়া-সীন,প্রজ্ঞাময় (বিজ্ঞানময়) কুরআনের কসম! নিশ্চয় আপনি রাসূলগণের একজন ( সুরা ইয়াসিন১-৩)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ ফরমান-
تلک ايت القتاب الحکيم وهدي ورحمة للمحسين
এটা বিজ্ঞানময় গ্রন্থের
আয়াতমালা, সৎকর্মশীলদের জন্য পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহ স্বরূপ।( সুরা লুকমান২-৩)

বিজ্ঞান যেমনিভাবে কোন বিষয়ে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছায়, পবিত্র কুরআন তা থেকে ও অধিক যথাযথ ও চূড়ান্ত। এতে কোন অসংগতি নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
افلا يتد برون القران -ولوکان من عند غير الله لوجدوافيه اختافاکثيرا
তারা কেন কোরআনের প্রতি গভীরভাবে মন:সংযোগ করে না? যদি তা আল্লাহ ব্যতীত অপর কার ও নিকট হতে নাযিল হত, তবে তারা এতে বহু অসামঞ্জস্য দেখতে পেত।

কুরআনুল কারীমের সামঞ্জস্যতার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক বলেন- وان کنتم في ريب مما نزلنا علي عبدنا فاتوا بسورة من مثله – وادعوا شهداءکم من دون الله ان کنتم صدقين- فان لم تفعلوا ولن تفعلوا فاتقوا النار التي وقودها الناس والحجارة اعدت للکافرين-
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে,যা আমি আমার মাহবুবের প্রতি অবতীর্ণ করেছি তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও-এক আল্লাহ কে ছাড়া যদি তোমরা সত্যবাদি হয়ে থাক আর যদি তা না পার, অবশ্য তা তোমরা কখন ও পারবে না,তবে সে নরকাগ্নির ভয় কর, যার ইন্ধন (জালানী) হবে মানুষ ও পাথর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে। (সূরা বাকারা ২৩-২৪)

আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের এই চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করতে পারল না। অবশেষে আল্লাহ বললেন- قل لءن اجتمعت الانس والجن علي ان ياتوا بمثله هذا القران لاياتون بمثله- ولو کان بعضهم لبعض ظهیرا

আপনি বলুন – যদি সমস্ত মানব ও জিন জাতি এই কুরআনের সাদৃশ্য আনয়ন করতে একত্রিত হয়, তবু তারা এর সাদৃশ্য আনয়ন করতে পারবে না, যদি ও তারা পরষ্পরের সাহায্যকারী হয়।
(সূরা বনী ইসলরাইল৮৮)

পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী হযরত আদম (আ:) আল্লাহ পাক বলেন-
وعلم ادم الاسماءکلها
এবং তিনি (আল্লাহ) আদম (আ:)  কে সকল বস্তুর নাম শিখিয়েছেন।।
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শুধু কি নাম জানলে হবে? অবশ্যই না ব্যবহার ও জানতে হবে। যেমন একজন অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ কলমের নাম জানে, কিন্ত ব্যবহার জানে না অর্থাৎ লিখতে জানেনা, তাহলে এই কলমের নাম জানার কোন মূল্য আছে কি??
এই কারণে আল্লাহ পাক বলেন-انبءوني باسماءهولاء ان کنتم صادقين
(আদমের চাইতে বেশি জান) তোমাদের এই ধারণ যদিসত্য হয়, তাহলে পৃথিবীর এই সব দ্রব্য সমূহের নাম সহ এ প্রত্যেকটির গুণাগুণ ও ব্যবহার পদ্ধতি আমার নিকট বল।
এখানে গুণাগুণ ও ব্যবহার পদ্ধতি বলতে বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে।

কুরআনুল কারীম বিজ্ঞানের সাথে দ্বান্দিক নয় বরং সহায়ক। যেমন -মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :-واذ قال ابراهيم رب ارني کيف تحيي الموتی-قال اولم تومن -قال بلي ولکم ليطءن قلبي -قال فخذ اربعة من الطير فصرهن اليک ثم اجعل علي کل جبل منهن جزء ثم اد عهن يتينک سعیا-واعلم ان الله عزيز حکيم
(স্মরণ করুন) যখন ইব্রাহীম (আ:) বলেছিলেন : আমার প্রভু! তুমি মৃত কে কি ভাবে জীবত কর আমাকে দেখাও। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি (ইব্রাহিম আ:) বললেন:হা অবশ্যই, কিন্ত আমার মন প্রশান্তির জন্য। তিনি বললেন “চারটি পাখি ধর, অত:পর সেগুলোকে পিষ্ট কর এবং একটি একটি অংশ প্রত্যেক পাহাড়ের উপর রেখে দাও এবং সেগুলোকে ডাক দাও। তারা তোমার দিকে দ্রুত গতিতে দৌড়ে আসবে।সুতরাং জেনে রাখ! আল্লাহ সর্বসময় ক্ষমতাবান এবং সর্বজ্ঞানী।
এই আয়াতে হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর উক্তি قالوابلي হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি এবং ولکن ليطمءن قلبي হচ্ছে বিজ্ঞানের ভিত্তি। কেননা,বিজ্ঞান এমনিতে বিশ্বাস করতে চায় না। বিজ্ঞান বাস্তবিকভাবেই দেখে বিশ্বাস করতে চায়।

দু’একটি উদাহরণ দেয়া যাক।

১) মি’রাজ ও মাধ্যাকর্ষণ

বিজ্ঞানী j.jeams বলেন A Bullet Fired From the Earths Surface With a speed of 6.90 miles a second or more will fly into space (The univeese Around us, J.Jeams.p.216)
অর্থাৎ যদি একটি বস্তুকে ৬.৯০ মেইল গতিতে(প্রতি সেকেন্ডে) উপরের দিকে ছুড়ে মারা যায়, তাহলে ঐ বস্তুটি স্পেস অতিক্রম করবে, আর পৃথিবীর দিকে ফিরে আসবেনা।
বৈজ্ঞানিকেরা হিসাব করে দেখেছেন যে, ঘন্টায় ২৫.০০০ মেইল বেগে উর্ধলোকে ছুটতে পারলে পৃথিবী হতে মুক্তি লাভ করা যায়। একে’মুক্তিগতি’ বলে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঘন্টায় ২৫.০০০ মাইল গতিতে চলা সম্ভব কি না?
আমরা জানি আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল। সুতরাং এটা অসম্ভব কিছু নয়। প্রশ্ন হচ্ছে নবীজীর নূরের গতি কত ছিল? সূর্যের আলোর গতির চেয়ে নবীজির নূরের গতি নিশ্চয় কম ছিল না। এ কারণে নবীজির পক্ষে মি’রাজ গমন সম্ভব হয়েছিল।

২. ভ্রুণ তত্ত্ব

ভ্রুণ সংক্রান্ত সকল তথ্য ইংরেজিতে একত্রিত করে মন্তব্যের জন্য কানাড়ার ট্ররন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রুণ তত্ত্ব এর অধ্যাপক ও এনাটমি বিভাগের প্রধান ডা:কেইথ

মুরের কাছে নেয়া হয়। তিনি বলেছেন কুরআন যা বলছে এর সাথে বিজ্ঞানের হুবহু মিল রয়েছে। ভ্রুণ বিজ্ঞান হচ্ছে মানুষের জন্মের পূর্বের বিকাশ সম্পর্কিত জ্ঞানালোচনা এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন -خلق الانسان من علق তিনি সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে (সূরা আলাক২) আরবী শব্দ আলাক এর অর্থ জমাট রক্ত ছাড়াপ আরেকটি অর্থ রয়েছে তা হল জোকের মত এক প্রকার বস্তু, যা দৃঢ় ভাবে আটকে থাকে। ডা. মূর একটি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি ভ্রুণের প্রাথমিক দশা পরীক্ষা করতে গবেষণা শুরু করেন এবং প্রাথমিক দশায় ভ্রুণের অাকৃতির সাথে একটি জোকের অাকৃতিক মিল রয়েছে দেখে তিনি অভিভূত হন। আল্লাহ বলেন ثم جعل نسله من سللله من ماء مهين অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন, তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে (সুরা সাজদাহ৮) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন انا خلقنا من نظفه امشاج আমি মানুষ কে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্র বিন্দু থেকে (আদ -দাহর-২) ভ্রুণের পর্যায় সম্পর্ক মহান আল্লাহ বলেন ولقد خلقنا الانسان من سللة من طين -ثم جعلنه نطفة من قرار مکين -ثم خلنا النطفة علقة فخلقنا العلقة مضغة فخلقنا المضغة عظما فکسونا العظام لحما -ثم انشانه خلقا اخر-فتبرک الله احسن الخالقين আমি মানুষ কে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্র বিন্দুরুপে এক সংরক্ষিত আধারস স্থাপন করেছি।এরপর আমি শুক্র বিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি,অত:পর অস্থিরকে মাংস দ্বারা অাবৃত করছি। অবশেষে তাকে নতুন রুপে দাড় করেছি।নিপুনতম সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। ( সূরা মুমিমুন১২-১৪) একজন নারীর জরায়ু সাধারণ ৭-১/২ সে.মি আকারের হয়। সন্তান বড় হতে থাকলে মায়ের জরায়ু ৩৫ সে.মি পর্যন্ত বেড়ে যায়।খ্যাতনামা মার্কিন বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্শাল জনসন এনাটমী বিভাগের প্রধান এবং আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার থমসন জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দানিয়েল ইনষ্টিটিউটের সম্মানিত পরিচালক। তাকে ভ্রূণ তত্ত্ব এর উপর মন্তব্য করতে বললে তিনি বলেন সম্ভবত মুহাম্মদ (দরুদ) এর কাছে কোন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল।মহানবী (দরুদ) এর কয়েক শতাব্দী পর অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি হাসেন এবং এটা যে আসমানি কিতাব স্বীকার করে নেন। ভ্রুণের লিঙ্গে নির্ধারণ চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে মাতৃগর্ভে শিশুটি ছেলে বা মেয়ে কি হবে তা “xx”বা “xy” জাতীয় ২৩ জোড়া cromosom এর উপর নির্ভর করে। “xx”হলে মেয়ে হবে এবং “xy”হলে ছেলে হবে। সৃষ্টিগত ভাবেই আল্লাহ তায়ালা মহিলাদের মাঝে Y cromoson দেননি। সুতরাং লিঙ্গ নির্ধারণে মহিলাদের কোন দায়িত্ব নেই। এই ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন الم يک نطفة من منی يمنی -ثم کان علقة فخلق فسوي -فجعل منه الزوجين الذکر والانثی সে কি স্তলিত শুক্র ছিল না? অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অত:পর (আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী (সূরা কিয়ামাহ৩৭-৭৯)হাজার হাজার উদাহরণ থেকে মাত্র কয়েকটি উদাহরণ। আর যা প্রমাণ করে কুরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানময় কুরআন।

Comments

comments