কোরআন ও হাদিসের আলোকে পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য ও বিরুদ্ধবাদীদের জবাব
بسم اللّه الرّحمن الرّحيم.
শবে বরাত ফার্সী ভাষা, ফার্সী শব অর্থ রাত্রি
এবংবরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে
হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।কোরআনে শবে কদর
নাই,লাইলাতুল কদর আছে,শবে বরাত নাই,লাইলাতুল
মোবারাকা আছে।কুরআন শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুম
মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন
শা’বান বা শা’বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা
হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴﻦِ
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ
ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ
ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣِّﻦْ ﻋِﻨﺪِﻧَﺎ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﺮْﺳِﻠِﻴﻦَ
অর্থঃ
” শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে
কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই
নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো
ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।”
(সূরা দু’খানঃ ২-৫)
কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সূরা দু’খানের উল্লেখিত আয়াত
শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত
আয়াত শরীফে সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই আমি
বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি……..। আর কুরআন
শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা
ক্বদরেও উল্লেখ আছে ।”
এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ” উক্ত আয়াতের দুটি ব্যাখ্য
দিয়েছেন ১ লাইলাতুল কদর ২, লাইলাতুল বারায়াত।
প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (), হযরত
আবু হুরায়রা () এবং হযরত ইকরামা () সহ বহু সংখ্যক সাহাবী
তাবেয়ীনদের মতে উক্ত আয়াতে লাইলাতুল মুবারাকা
দ্বারা চৌদ্দ-ই শাবান দিবাগত রাত বা শবে বারাআত
বুঝানো হয়েছে।
যেমন কয়েকজন মুফাসসিরদের মতামত দেয়া হল-
(১) ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺣﻢ ﻳﻌﻨﻰ ﻗﻀﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻛﺎﺋﻦ ﺍﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﻭﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ
ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ –‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস () বলেন, হা-মীম
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেন কিয়ামত
পর্যন্ত যা ঘটবে, সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ অর্থাৎ- আল কুরআন,
লাইলাতুল মুবারাকা অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ
দিবাগত রাত তা হল লাইলাতুল বারাআত।’’
# ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তাফসীরে দুররে মানসুর :
৭/৪০১পৃ
(২), ﻋﻦ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﺒﺮﺍﺋﻴﻞ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻰ ﺗﻠﻚ
ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺣﺘﻰ ﺍﻣﻠﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﺘﺒﺔ ﻭﺳﻤﺎﻫﺎ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻻﻧﻬﺎ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ
ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻳﺠﺎﺏ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﻮﺓ –
-‘‘হযরত ইকরামা () বলেন, “লাইলাতুল মুবারাকা” দ্বারা
শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝানো
হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল () কে ঐ রাতে
প্রথম আবৃত্তি করতে পারেন। এই রাতকে মুবারক নাম রাখার
কারণ হলো এতে কল্যাণ, বরকত ও আল্লাহর রহমত নাযিল হয়
এবং রাতে দোয়া কবুল হয়।’’
# তাফসীরে কাশফুল আসরার, ৯/৯৮.পৃ.
৩,মুবারাকা বা বরকতময় বলার কারণ কি এ প্রসঙ্গে
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী () বলেছেন,
ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺧﻴﺮﻫﺎ ﻭﺑﺮﻛﺘﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺑﺮﻛﺎﺕ ﺟﻤﺎﻟﺔ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺗﺼﻞ ﺍﻟﻰ
ﻛﻞ ﺫﺭﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺜﺮﻯ ﻛﻤﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –
-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা বলা হয় এ রাতে অনেক খায়ের ও
বরকত নাযিল হয়। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত
আরশের প্রতি কণা থেকে ভূতলের গভীরে পৌঁছে যেমনটি
শবে কদরের মধ্যে হয়ে থাকে।’’
# আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৮/১০১
পৃ.
(৪) আল্লামা ইমাম সুয়ূতি (রহ.) আরও বলছেন,
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻗﻄﻊ
ﺍﻻﺟﺎﻝ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﺍﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻨﻜﺢ ﻭﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ ﻭﻗﺪ ﺧﺮﺝ ﺍﺳﻤﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ –
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা () হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ () ইরশাদ
করেছেন, এক শাবান থেকে অপর শাবান পর্যন্ত মানুষের
হায়াত চূড়ান্ত করা হয়। এমনকি একজন মানুষ বিবাহ করে
এবং তার সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃতের তালিকায় উঠে
যায়।’’
# আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : তাফসীরে দুররে
মানসুর : ৭/৪০১ পৃ
(৫) আল্লামা ইমাম কুরতুবী () তাফসীরে কুরতুবীতে এই
আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন-
ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻟﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻭﻭﺻﻔﻬﺎ
ﺑﺎﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﻳﻨﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺮﻛﺎﺕ ﻭﺍﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺍﻟﺜﻮﺍﺏ –
-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শাবান (শবে বরাত) এর
রাতকে বুঝানো হয়েছে। এই ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে
বরাতের চারটি নাম রয়েছে, যেমন. ১. লাইলাতুল মুবারাকা
বা বরকত পূর্ণ রাত, ২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা
ভাগ্যের রাত. ৩। লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি
দানের রাত ৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’’
আর শবে বরাতকে বরকতের সঙ্গে এই জন্য সম্বন্ধ করা হয়েছে
যেহেতু আল্লাহ পাক এই শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি
বরকত, কল্যাণ এবং পূণ্য দানের জন্য দুনিয়ায় কুদরতীভাবে
নেমে আসেন অর্থাৎ- খাস রহমত নাযিল করেন।
(৬) ইমাম কুরতবী () আরও বলেন,
ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﻬﻨﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ –
-‘‘বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইকরামা () তিনি বলেন,
লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা এখানে অর্ধ শাবান (শবে
বরাতকে) এর রাতকেই বুঝানো হয়েছে।’’
প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (), হযরত
আবু হুরায়রা () এবং হযরত ইকরামা () সহ বহু সংখ্যক সাহাবী
তাবেয়ীনদের মতে উক্ত আয়াতে লাইলাতুল মুবারাকা
দ্বারা চৌদ্দ-ই শাবান দিবাগত রাত বা শবে বারাআত
বুঝানো হয়েছে।
# ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতবী : ৮/১২৬ পৃ.
৭) ইমাম কুরতুবী () আরও বলেন, ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ
ﺍﻳﻀﺎ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻘﻀﻰ ﺍﻻﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﺭﺑﺎ ﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –
-‘‘প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস () থেকে
বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা অর্ধ
শাবান (শবে বরাতে) এর রাত্রিতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য
তালিকা প্রস্তুত করেন। আর কদরের রাত্রিতে ঐ ভাগ্য
তালিকা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে পেশ
করেন।’’
#ইমাম কুরতুবী: তাফসীরে কুরতুবী : ৯/১৩০ : পৃ:
(৮) আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী () “তাফসীরে রুহুল
মায়ানীতে’’ সূরা দুখানের উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
ﻭﻭﺻﻒ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺑﺎﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﺍﻥ ﺍﻧﺰﺍﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻣﺴﺘﺘﺒﻊ ﻟﻠﻤﻨﺎﻓﻊ ﺍﻟﺪﻳﻨﻴﺔ ﻭﺍﻟﺪﻧﻮﻳﺔ ﺑﺄﺟﻤﻌﻬﺎ ﺍﻭ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ
ﻧﻨﺰﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻭﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﺍﺟﺎﺑﺔ ﺍﻟﺪﻋﻮﺓ ﻭﻓﻀﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺒﺎﺩﺓ ﺍﻭ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ﻭﺗﻘﺪﻳﺮ ﺍﻻﺭﺯﺍﻕ ﻭﻓﻀﻞ
ﺍﻻﻗﻀﻴﺔ ﻻﺟﺎﻝ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻭﺍﻋﻄﺎﺀ ﺗﻤﺎﻡ ﺍﻟﺸﻔﺎﻋﺔ ﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﻫﺬﺍ ﺑﻨﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻧﻬﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻓﻘﺪ
ﺭﻭﻯ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳﺄﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻰ ﺃﻣﺘﻪ ﻓﺄﻋﻄﻰ ﺍﻟﺜﻠﺚ ﻣﻨﻬﺎ ﺛﻢ
ﺳﺄﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﻋﺸﺮ ﻓﺄﻋﻄﻰ ﺍﻟﺜﻠﺜﻴﻦ ﺛﻢ ﺳﺄﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ ﻓﺄﻋﻄﻰ ﺍﻟﺠﻤﻴﻊ ﺍﻻ ﻣﻦ ﺷﺮﺩ ﻋﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺷﺮﺍﺩ ﺍﻟﺒﻌﻴﺮ –
-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা বরকতের রাত হিসেবে এবং
দুনিয়াবী বহুবিদ কল্যাণের জন্য নাযিলের সিদ্ধান্ত দেয়া
হয়েছে। ঐ রাতে সমস্ত ফেরেশতারা অবতরণ করেন এবং
রহমত নাযিল হয়, বান্দাদের দোয়াকবুল করা হয়। বান্দাদের
রিযিক বন্টন করা হয় এবং সমস্ত কিছুর ভাগ্য সমূহ পৃথক করা
হয়। যেমন মৃত্যু এবং অন্যান্য সব বিষয়ের। এবং রাসূল () এর
সমস্ত বিষয়ের সুপারিশ কবুল করা হয়। আর এই বরকতের
রাতকে বরাতের রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়। যেহেতু
এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রাসূল
() তিনি শাবান মাসের ১৩ তারিখ রাতে স্বীয় উম্মতের
ক্ষমার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করেন। অতঃপর
অনুরূপভাবে ১৪ই শাবান তথা শবে বরাতেও মহান আল্লাহ
পাকের কাছে হুযুর পাক () স্বীয় উম্মতের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি শবে
বরাতে তার উম্মতের দুই তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করেন।
অতঃপর অনুরূপভাবে ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতেও মহান
আল্লাহ পাকের কাছে হুযুর পাক () স্বীয় উম্মতের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই শবে
বরাতে তার সমস্ত উম্মতগণকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই
সমস্ত উম্মত ব্যতীত যারা মহান আল্লাহ পাক এর ব্যাপারে
চরম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে।’’
#আল্লামা আলুসী বাগদাদী: তাফসীরে রুহুল মায়ানী :
১৩/১১২ পৃ:
(৯) ইমাম খাযেন () রচিত তাফসীরে লুবাবুত তাভীল” এ উক্ত
আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ আছে-
( ﻓﻴﻬﺎ ) ﺍﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ (ﻳﻔﺮﻕ ) ﻳﻔﺼﻞ ( ﻛﻞ ﺍﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ ) —— ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ
ﻋﻨﻪ ﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻳﻘﻮﻡ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻣﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺗﻨﺴﺦ ﺍﻻﺣﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻻﻣﻮﺍﺕ ﻓﻼ ﻳﺰﺍﺩ ﻓﻴﻬﻢ ﻭﻻ
ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻨﻬﻢ ﺍﺣﺪ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺗﻘﻄﻊ ﺍﻻﺟﺎﻝ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﺍﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻨﻜﺢ
ﻭﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ ﻭﻟﻘﺪ ﺍﺧﺮﺝ ﺍﺳﻤﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻀﻰ
ﺍﻻﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –
-‘‘ওই মুবারক তথা বরকত পূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ- শবে বরাতের
প্রত্যেক হিকমত পূর্ণ যাবতীয় বিষয় সমূহের ফায়সালা করা
হয়। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইকরামা () তিনি বলেন,
লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবান
তথা (শবে বরাত) এর রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক
বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়
এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবীতদের। ওই
তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয় না অর্থাৎ-
পরিবর্তন হয় না।
#ইমাম খাজেন: তাফসীরে লুবাবুত তাভীল : ১৭/৩১০-৩১১পৃ
১০, মালেকী মাযহাবের আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী বলেন,
( ﻗﻮﻟﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ) ﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﻭﻃﺎﺋﻔﺔ ﻭﻭﺟﻪ ﺑﺎﻣﻮﺭ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ
ﻟﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ ﻭﻣﻨﻬﺎ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ﻓﻴﻬﺎ –
অর্থঃ ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি
(মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট
তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)ও অন্যান্য
তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি
কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের
দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১।
লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল
বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর
রহমাহ- রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির
রাত্রি ইত্যাদি।
#(তাফসীরে ছাভী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০)
১১, তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে,…
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻀﻰ ﺍﻷﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ, ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺇﻟﻰ
ﺃﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –
অর্থঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল
বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা
সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন ।
# (তাফসীরে বাগভী, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)
= অনেকেই বলে থাকে পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ
হয়েছে রমাদ্বান শরীফ-এর মাসে লাইলাতুল ক্বদরে। এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা বাক্বারায় উল্লেখ
করেন-
(১২৯) ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻟﺬﻯ ﺍﻧﺰﻝ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ
পবিত্র কুরআন শরীফ রমাদ্বান মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে।
আর সূরা আদ দুখানেও আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
(১৩০)
ﺍﻧﺎ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ
নিশ্চয়ই আমি উহা তথা কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি
মুবারকময় রজনীতে। এখানে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা
যদি শবে বরাতের রাতকে গণনা করা হয় তাহলে উভয়
রাতের সমাধান কি?
উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে অসংখ্য তাফসীর ও হাদীছ শরীফ-
এর উদ্ধৃতির মাধ্যমে সমাধান দেয়া হয়েছে যে, লাইলাতুম
মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকেই
বুঝানো হয়েছে। আর এই রাতে কুরআন শরীফ অবতীর্ণের
কথা যে বলা হয়েছে তা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি
প্রথম যখন পবিত্র কুরআন শরীফ লওহে মাহফূযে অবতীর্ণ
করেন সেই রাতটি ছিলো লাইলাতুম মুবারাকা তথা অর্ধ
শাবানের রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাতের রাত্রি। আর লওহে
মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে একই সঙ্গে অবতীর্ণ করা
হয়। সেখান থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার
মাধ্যমে সুদীর্ঘ তেইশ বৎসরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে
খ- খ-ভাবে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-উনার উপর নাযিল করা হয়।
===> বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে খাযিন-এর ৪র্থ খ-ে
র (সূরা ক্বদরের তাফসীরে) ২৯৫ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৩১-১৩৫)
ﺍﻧﺎ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ (ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ ﺟﻤﻠﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻣﻦ
ﺍﻟﻠﻮﺡ ﺍﻟﻤﺤﻔﻮﻅ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻓﻮﺿﻌﻪ ﻓﻰ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﻌﺰﺓ ﺛﻢ ﻧﺰﻝ ﺑﻪ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻧﺠﻮﻣﺎ ﻣﺘﻔﺮﻗﺔ ﻓﻰ ﻣﺪﺓ ﺛﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻨﺔ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﻨﺰﻝ ﺑﺤﺴﺐ
ﺍﻟﻮﻓﺎﺋﻊ ﻭﺍﻟﺤﺎﺟﺔ ﺍﻟﻴﻪ .
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি উহা তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ক্বদরের
রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। এই বাণী মুবারক-এর দ্বারা
ইহা বুঝানো হয়েছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা
পবিত্র কুরআনুল কারীম একই সঙ্গে লাওহে মাহফূয থেকে
দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করেন লাইলাতুল ক্বদরে। অতঃপর
ওই পবিত্র কুরআন শরীফ বাইতুল ইযযতে রাখা হয়। সেখান
থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে
আস্তে আস্তে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে বিভিন্ন অবস্থার
প্রেক্ষিতে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে খ- খ-ভাবে হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর অবতীর্ণ
করেন।
(সূরা আদ দুখান এর তাফসীরে তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খন্ড
১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৪র্থ/১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রহুল
মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, দুররুল মানছুর, ইত্যাদি
তাফসীরে সমূহ)
তাছাড়াও সমাধানে আরো উল্লেখ আছে যে, লাইলাতুম
মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকে
আর নির্ধারিত ভাগ্যসমূহ চালুকরণের রাতকে লাইলাতুল
ক্বদর তথা শবে ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে রুহুল
মায়ানী ১৫তম খ-ের ২২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৩৬) ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻰ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻤﻘﺎﺩﻳﺮ ﻟﻠﻤﻼﺋﻜﺔ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺗﻜﺘﺐ ﻓﻰ ﺍﻟﻠﻮﺡ ﺍﻟﻤﺤﻔﻮﻅ ﻭﺫﻟﻚ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ
ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻨﺸﻌﺒﺎﻥ ﻭﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﺍﺛﺒﺎﺕ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻤﻘﺎﺩﻳﺮ ﻓﻰ ﻧﺴﺦ ﻭﺗﺴﻠﻴﻤﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺪﺑﺮﺍﺕ
অর্থ: লাইলাতুল ক্বদরের অনেক অর্থ রয়েছে তন্মধ্যে
দ্বিতীয় একটি অর্থ হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে
বরাতে যেসব বিষয়ের তালিকা লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ
করা হয়েছে সেসব ভাগ্য তালিকা ফেরেশ্তা আলাইহিমুস
সালামগণ উনাদের মাধ্যমে যে রাত্রিতে প্রকাশ তথা চালু
করা হয় সেই রাতকেই লাইলাতুল ক্বদর তথা ভাগ্য
নির্ধারণের রাত বা মহান মর্যাদাবান রাতও বলে।
তৃতীয়ত: অপর একটি অর্থ হচ্ছে নির্ধারিত ভাগ্যসমূহ যা
তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তা চালু করার জন্য কার্যকারী
ফেরেশতাদের হাতে যে রাতে পেশ করা হয় সেই রাতকে
লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর বলে।
==মাওলানা মাহিউদ্দীন খান তার মাসিক মদীনায়
জুলাই/২০১১ এর ৪১পৃষ্ঠায় “আল-কুরআনে শব-ই-বরাত: একটি
বিশ্লেষন” শিরোনামে লিখেছে-
সুরা দুখানের লাইলাতুম মুবারকা শব্দের সংখ্যাতাত্ত্বিক
বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, সুরা দুখান কুরআনের ১ম
থেকে ৪৪নং সুরা। ৪৪ এর অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ৪+৪=৮; ৮দ্বারা
বুঝায় ৮ম মাস অর্থাৎ শাবান মাসে লাইলাতুম মুবারকা
অবস্থিত। আবার কুরআনের শেষ থেকেও সুরা দুখান ৭১ নং
সুরা। ৭১ অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ৭+১=৮, পুনরায় ৮ম মাসের দিকেই
ইঙ্গিত করে। আবার এ সুরার প্রথম থেকে ১৪টি হরফ শেষ
করে ১৫তম হরফ থেকে লাইলাতুম মুবারকায় কুরআন নাযিল
সংক্রান্ত আয়াত শুরু হয়েছে। এটা ইঙ্গিত করে যে, ঐ ৮ম
মাসের ১৪ তারিখ শেষ হয়ে ১৫তারিখ রাতেই লাইলাতুম
মুবারকা। এই সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষন প্রমান করে, সুরা
দুখানে বর্নিত লাইলাতুম মুবারকা ১৪ই শাবান দিবাগত ১৫ই
শাবানের রাত। অর্থাৎ লাইলাতুল বারাআত বা শব-ই-
বারাআত। এছাড়া মুফাসিসরীনদের বিশাল এক জামাত
দাবী করেছেন, সুরা দুখানে বর্নিত যে রাতকে লাইলাতুম
মুবারকা বলা হয়েছে তা অবশ্যই শব-ই-বরাত। (ইমাম কুরতবী,
মোল্লা আলী কারী (রহ), বুখারী শরীফের সর্বশ্রেষ্ঠ
ভাষ্যকার হাফিজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার
আসকালানী রহ; এবং হাম্বলী মাজহাবের অন্যতম ইমাম
বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি সহ আরো
অনেকে এ বিষয়ে একমত)
কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো,
“আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে
বরাতে” কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে
ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন। এজন্যে মুফাসসিরীনে
কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ﻟﻴﻠﺔ
ﺍﻟﺘﺠﻮﻳﺰ অর্থাৎ ‘ফায়সালার রাত।’ আর শবে ক্বদরকে ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺘﻨﻔﻴﺬ
অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা
শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা
দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ
হয়েছে-
ﻓﻴﻬﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺍﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ
অর্থাৎ- “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের
ফায়সালা করা হয়।”
হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়।
যেমন ইরশাদ হয়েছে-
ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ ﻣﻮﻟﻮﺩ ﻣﻦ ﺑﻨﻰ ﺍﺩﻡ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺍﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ ﻫﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﺑﻨﻰ ﺍﺩﻡ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ
ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﻨﺰﻝ ﺍﺭﺯﺍﻗﻬﻢ
অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন
সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান
মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে
উঠানো হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার দরবারে পেশ করা হয়
এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা
হয়।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)
===> লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো
হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু’খানের ৪ নম্বর আয়াত
শরীফ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ । এই আয়াত শরীফের ﻳُﻔْﺮَﻕُ শব্দের অর্থ
ফায়সালা করা।প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে
কিরামগণ ﻳُﻔْﺮَﻕُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু
অর্থাৎলেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়,
ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়,
ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ
নির্দেশনা দেওয়া হয়
কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো
স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুম মুবারাকাহদ্বারা শবে
বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে
সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য
লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান
মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য
শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার
রাত্র এবং শবে ক্বদরকেলাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ
নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়।
(তাফসীরে মাযহারী,তাফসীরে খাযীন,তাফসীরে ইবনে
কাছীর,বাগবী, কুরতুবী,রুহুল বয়ান,লুবাব)
==যে বিষয় টি লক্ষ্যনীয়- শবে কদর হাজার বছরের চেয়ে
শ্রেষ্টরাত এবং সেইদিন হল বন্ঠনের রাত কিন্তু শবে বরাত
হল ফয়সালার রাত,সেহেতু সুরা দুখুানে এসছে—“ আমারই
নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো
ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সুরা
দুখান-৫)এবং হাদিসেও ১৫ই শাবান কে ফয়সালার রাত
হিসেবে উল্লেখ অাছে যেটি শবে কদর সর্ম্পকে নাই।
*** হাদিসের আলোকে পবিত্র শবে বরাত —
শবে বরাত সম্পর্কীয় বহু বর্ণনা হাদীসের কিতাবে
বিদ্যমান। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাদীস নিম্নে
পেশ করছি-
*প্রথম হাদীস
হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. রাসূল স. থেকে বর্ণনা করেন,
আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে
সমস্ত সৃষ্টি কুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে সকলকে
ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া। (দেখুন:
শুয়াবুল ঈমান-৫/২২৭ , আল-মু‘জামূল কাবীর-২০/১০৮)
░▒▓█►হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের অভিমত
ক. হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী র. মুয়ায রা. এর হাদীসটি
বর্ণনা করে বলেন, ইবনে হিবক্ষান হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন। আর নির্ভরযোগ্যতার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
*দ্বিতীয় হাদীস
হযরত আয়েশা রা. বলেন, একরাতে আমি রাসূল স.কে
বিছানায় পেলাম না। তাই (খোজার উদ্দেশ্যে) বের হলাম।
তখন দেখতে পেলাম,তিনি জান্নাতুল বাকীতে আছেন।
আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এ আশঙ্কা
করছো যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার
করবেন ? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল ! আমি ধারণা
করছিলাম, আপনি আপনার অন্য স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ
নিয়েছেন। রাসূল স. বলেন শাবানের পনের তারিখ রাতে
আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং ‘বনু
কালব’ গোত্রের ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক
লোককে মাফ করে দেন। (তিরমিযী শরীফ: ১/১৫৬)
░▒▓█►হাদীসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের অভিমত
ইবনে হিবক্ষান র. আয়েশা রা. এর হাদীসটিকে হাসান
বলেছেন। (শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ: ৭/৪৪১
*তৃতীয় হাদীস
হযরত আবী সা’লাবা আল খুশানী রা. থেকে বর্ণিত হুজুর স.
ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা শা’বান মাসের পনের
তারিখ রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন।
অতঃপর মুমিনদেরকে ক্ষমা করেন এবং কাফেরদেকে সুযোগ
দেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে বিদ্বেষ পরিত্যাগ
করা পযর্ন্ত অবকাশ দেন। (শুয়াবুল ঈমান: ৩/৩৮১ , মু‘জামূল
কাবীর: ২২/২২৩)
*চতুথ হাদীস:-
আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের
মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত
ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে
দেন। হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫,
হাদীস নং ১৩৯০),এবং তাবরানী তার মু’জামুল কাবীর
(২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
░▒▓█► আল্লামা বূছীরি বলেন: ইবনে মাজাহ বর্ণিত
হাদীসটির সনদ দুর্বল। তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে
আল্লামা হাইসামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাজমা‘
আয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেনঃ ত্বাবরানী বর্ণিত
হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালী।
হাদীসটি ইবনে হিব্বানও তার সহীহতে বর্ণনা করেছেন। এ
ব্যাপারে দেখুন, মাওয়ারেদুজ জাম‘আন, হাদীস নং (১৯৮০),
পৃঃ (৪৮৬)।
*৫ম হাদীস:-
আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন শা‘বানের মধ্যরাত্রি আসবে
তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে,
আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের
সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ
করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি
ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি
রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে
পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন
এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত
তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।
░▒▓█►সনদ পর্যালোচনা ঃ
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস
নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বূছীরি
(রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ
(২/১০) গ্রন্থে বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবনে
আবি সুবরাহ রয়েছেন।যদি তিনি দুর্বল রাবী হন তাহলে
হাদীস টি হাসান।
*৬ষ্ট হাদীস:-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন : ১৫ই শা’বানের রাত্রে আল্লাহ পাক তার
বান্দাদের ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। এক.
পরশ্রীকাতর। দুই. অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যাকারী।
মুসনাদে আহমদ-৬/১৯৭, হাদীস-৬৬৪২, মাজমাউস
জাওয়ায়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব
লিল মুনজেরী-৩/৩০৮, হাদীস-৪৮৯২। ইত্যাদি অসংখ্য
কিতাব..।
░▒▓█►সনদ পর্যালোচনা ঃ
হাদীসটির মান : উক্ত হাদীসটি হাসান তথা প্রমাণযোগ্য।
*৭ম হাদীস:-
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা () হতে বর্ণিত, আঁকা () ইরশাদ ফরমান,
যখন শাবানের ১৫ই তারিখের রাত আগমন করে তখন আল্লাহ
তা‘য়ালা ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, শুধু
মুশরিক (আল্লাহর সাথে শরীককারী) ও হিংসুক ব্যতীত।’
░▒▓█►সনদ পর্যালোচনা ঃ
আল্লামা হাইসামী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন-
ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒَﺰَّﺍﺭُ، ﻭَﻓِﻴﻪِ ﻫِﺸَﺎﻡُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﻋْﺮِﻓْﻪُ، ﻭَﺑَﻘِﻴَّﺔُ ﺭِﺟَﺎﻟِﻪِ ﺛِﻘَﺎﺕٌ .-
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বায্যার () ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা
করেন, তার বর্ণনাকারীদের একজন “হিশাম ইবনে আব্দুর
রহমান’’ তার সম্পর্কে আমি পরিচিত বা অবগত নই, বাকী সব
রাবী মজবুত ও সিকাহ বা বিশ্বস্ত। অতএব একজনের জন্য
হাদিস যঈফ হবে না; বরং “হাসান”।ইমাম বায্যার : আল
মুসনাদ : ১৬/১৬১পৃ. : হাদিস :৯২৬৮ (২) ইবনে হাজার
হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ,হাদিস, ৮/৬৫পৃ.
হাদিস,১২৯৫৮ (৩) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৩/৪৮৪পৃ.
হাদিস,২৬২৩, (৪) খতিবে বাগদাদ, তারীখে বাগদাদ,
১৪/২৮৫পৃ. (৫) ইবনে যওজী, আল-ইল্ললুল মুতনাহিয়্যাহ, ২/৫৬০পৃ.
হাদিস,৯২১ (৬) ইমাম তবারী, শরহে উসূলুল আকায়েদ, ৩/৪৯৫পৃ.
হাদিস,৭৬৩, হাইসামী, কাশফুল আশতার, ২/৪৩৬পৃ.
হাদিস,২০৪৬
*৮নং হাদিস ঃ
-‘‘হযরত আওফ বিন মালেক আশজারী () হতে বর্ণিত, রাসূলে
খোদা () ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাবারাকা ও তায়ালা ১৫ই
শাবানের রাত্রে (শবে বরাত) সকল ঈমানদার বান্দাদেরকে
ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতীত সবাইকে।
’░▒▓█►সনদ পর্যালোচনা ঃ
আল্লামা হাইসামী উক্ত হাদিসটি সংকলন করে বলেন-
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম বায্যার তার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা
করেছেন, উক্ত সনদে “আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনআম”
ইমাম আহমদ বিন সালেহ এর মত তিনি সিকাহ আবার কিছু
মুহাদ্দিসের কাছে তিনি দুর্বল রাবী এবং ইবনে লাহিয়া
হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে নরম প্রকৃতির।’ একজন রাবী দ্বঈফ
হওয়াতে হাদিসটির সম্পূর্ণ সনদটি দুর্বল হবে না বরং
“হাসান”।
ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ :৭/১৮৬পৃ.হাদিস,২৭৫৪ (২) ইবনে
হাজার হায়সামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/৬৫পৃ. (৩) খতিব
তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : হাদিস : ১৩০৬ : কিয়ামে
রামাদ্বান (৪) ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানীদ ওয়াল
সুনান, ৬/৬৯১পৃ. হাদিস,৮৫৩৯
* ৯নংহাদীস:-
-‘‘হযরত কাসীর ইবনে হাদ্বরামী () হতে বর্ণিত, রাসূল ()
ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা শাবানের ১৫ই তারিখ
রাতে ঈমানদার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তবে হ্যা দুই
ধরনের ব্যক্তি ছাড়া, তারা হল মুশরিক ও হিংসুক।’’
░▒▓█►সনদ পর্যালোচনা ঃ
উক্ত হাদীসের সনদ প্রসঙ্গে আহলে হাদীসের মুহাদ্দিস
মোবারকপুরী এবং ইমাম মুনযির বলেন- ﻗﺎﻝ ﻣﻨﺬﺭﻯ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻭ ﻗﺎﻝ
ﻫﺬﺍ ﻣﺮﺳﻞ ﺟﻴﺪ
-‘‘ইমাম মুনযির বলেন, উক্ত হাদিসটি ইমাম বায়হাকী
বর্ণনা করেছেন। আর বলেছেন, উক্ত হাদিসটি মুরসাল, তবে
সনদ শক্তিশালী।’’ এ হাদিসটির ইমাম আবদুর রাজ্জাকের
সূত্রটি খুবই সংক্ষিপ্ত;অনেক শক্তিশালী।
ইবনে আবী শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ৬/১০৮পৃ.হাদিস :২৯৮৫৯
(২) ইমাম আব্দুর রাজ্জাক : আল মুসান্নাফ : ৪/৩১৭ : হাদিস :
৭৯২৩(৩) ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৫/৩৫৯পৃ.হাদিস :
৩৫৫০
*১০ নং হাদীস:-
-‘‘হযরত আতা ইবনে ইয়াসার () হতে বর্ণিত, রাসূল () ইরশাদ
করেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আয়ূ নির্ধারণ করা হয়। ফলে
দেখা যায় কেউ সফরে বের হয়েছে অথচ তার নাম মৃতদের
তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আবার কেউ বিয়ে করছে
অথচ তার নাম জীবিতের খাতা থেকে মৃত্যুর খাতায় লিখা
হয়ে গেছে।’’
░▒▓█►সনদ পর্যালোচনা ঃ রাবী ‘‘ইবনে লাহিয়াহ’ সম্পর্কে
মোটামুটি তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত ছিলেন। তাছাড়া
মোবারকপুরী বলেন,
ﻗﺎﻝ ﻣﻨﺬﺭﻯ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﺑﺎﺳﻨﺎﺩ ﻟﻴﻦ- ﺗﺤﻔﺔ ﺍﻻﺣﻮﺫﻯ : ৪৪১/৩
-‘‘ইমাম মুনযিরী () বলেন, ইমাম আহমদ উক্ত হাদিসটি বর্ণনা
করেছেন এবং বলেন, উক্ত হাদীসের সনদটি ইবনে লাহিয়ার
কারণে লীন বা নরম প্রকৃতির।’’
ইমাম বায্যার : আল মুসনাদ :৩ পৃ- ১৫৮, হাদিস : ৭৯২৫(২)
সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ৪১/৬৯পৃ. হাদিস,৪৪৩১৪, (৩) ইবনে
রাহবিয়্যাহ, মুসনাদ, ৩/৯৮১পৃ. হাদিস,১৭০২ (৪) তবারী, শরহে
উসূলুল আকায়েদ, ৩/৪৯৯পৃ. হাদিস,৭৬৯
*১১ নং হাদীস:-
আয়শা (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ আমার ঘরে প্রবেশ করলেন
এবং তাঁর পোশাকটি খুলে রাখলেন। কিন্তু তত্ক্ষণাত্
আবার তা পরিধান করলেন। এতে আমার মনে কঠিন
ক্রোধের উদ্রেক হয়। কারণ আমার মনে হলো যে, তিনি
আমার কোন সতীনের নিকট গমন করেছেন। তখন আমি
বেরিয়ে তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং দেখতে পেলাম যে,
তিনি বাক্বী গোরস্থানে মুমিন নরনারী ও শহীদদের পাপ
মার্জনার জন্য দোয়া করছেন। আমি (মনে মনে) বললাম,
আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবানী হউন, আমি আমার
জাগতিক প্রয়োজন নিয়ে ব্যস্ত আর আপনি আপনার রবের
কাছে ব্যস্ত। অত:পর আমি ফিরে গিয়ে আমার কক্ষে প্রবেশ
করলাম, তখন আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁপাচ্ছিলাম।
এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (স.) আমার নিকট আগমন করে
বললেন, আয়শা, তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন? আয়শা বললেন,
আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবানী হউন, আপনি
আমার কাছে আসলেন এবং কাপড় খুলতে শুরু করে তা আবার
পরিধান করলেন। ব্যাপারটি আমাকে খুব আহত করল। কারণ
আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আমার কোন সতীনের
সংস্পর্শে গিয়েছেন। পরে আপনাকে বাক্বী’তে দোয়া
করতে দেখলাম। তিনি বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি
আশংকা করেছিলে যে, আল্লাহ ও তদীয় রাসুল তোমার
উপর অবিচার করবেন? বরং আমার কাছে জিবরাঈল (আ.)
আসলেন এবং বললেন, এ রাত্রটি মধ্য শাবানের রাত।
আল্লাহ তা’য়ালা এ রাতে ‘কালব’ সম্পদায়ের মেষপালের
পশমের চাইতে অধিক সংখ্যককে ক্ষমা করেন। তবে তিনি
শিরকে লিপ্ত, বিদ্বেষী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী,
কাপড় ঝুলিয়ে (টাখনু আবৃত করে) পরিধানকারী, পিতা
মাতার অবাধ্য সন্তান ও মদ্যপায়ীদের প্রতি দৃষ্টি দেন না।
অত:পর তিনি কাপড় খুললেন এবং আমাকে বললেন, হে
আয়শা, আমাকে কি এ রাতে ইবাদত করার অনুমতি দিবে?
আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উত্সর্গিত
হোন! অবশ্যই। অত:পর তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন
এবং এমন দীর্ঘ সিজদা করলেন আমার মনে হলো যে, তিনি
মৃত্যুবরণ করেছেন। অত:পর আমি (অন্ধকার ঘরে) তাকে
খুঁজলাম এবং তাঁর পদদ্বয়ের তালুতে হাত রাখলাম। তখন
তিনি নড়াচড়া করলেন। ফলে দুশ্চিন্তা-মুক্ত হলাম। আমি
শুনলাম, তিনি সিজদারত অবস্থায় বলছেন: ‘আমি আপনার
কাছে শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমা চাই, অসন্তুষ্টির পরিবর্তে
সন্তুষ্টি চাই। আপনার কাছে আপনার (আজাব ও গজব) থেকে
আশ্রয় চাই। আপনি সুমহান। আপনার প্রশংসা করে আমি
শেষ করতে পারি না। আপনি তেমনই যেমন আপনি আপনার
প্রসংশা করেছেন। আয়শা (রা.) বলেন, সকালে আমি এ
দোয়াটি তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, হে
আয়শা, তুমি কি এগুলো শিখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন
তিনি বললেন, হে আয়শা তুমি এগুলো ভাল করে শিখ এবং
অন্যকে শিক্ষা দাও। জিবরাঈল (আ.) আমাকে এগুলো
শিক্ষা দিয়েছেন এবং সিজদার ভিতরে বারবার বলতে
বলেছেন।
(বায়হাকীর শুয়াবুল ইমান ২/৩৮৩)।
░▒▓█► হাদীসটির মান :
ইমাম বায়হাকী নিজেই উক্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন-
ﻗُﻠْﺖُ : ﻫَﺬَﺍ ﻣُﺮْﺳَﻞٌ ﺟَﻴِّﺪٌ ﻭَﻳُﺤْﺘَﻤَﻞُ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺃَﺧَﺬَﻩُ ﻣِﻦْ ﻣَﻜْﺤُﻮﻝٍ ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ،
অর্থাৎ : উক্ত হাদীসটি (মুরসাল) সনদ অনেক উত্তম। অতএব
হাদীসটি প্রমাণযোগ্য।
*** পবিত্র শবে বরাতের তাৎপর্য ও বিরুদ্ধবাদীদের জবাব —
★ নামকরণের তাৎপর্যঃ….
হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী আল হাম্বলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, “লাইলাতুল বারাআত নামকরণের তাৎপর্য হল এ রাতে দু’ধরনের বারাআত বা সম্পর্কচ্ছেদ হয়।অপরাধীরা আল্লাহ তা’য়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।আর আল্লাহর অলীগণ (প্রিয়বান্দা) পার্থিব অপমান লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত হয়ে যান।
(গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ. ৩৬৫)
যেহেতু এ রাতে মানুষের জন্ম মৃত্যু ও রিযিকের বার্ষিক বাজেট নির্ধারিত হয় এ অর্থে এ রাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয়।
পারিভাষিক অর্থে শবে বারাআত বলতে বুঝায়ঃ
شب پانز ھم شعبان که دران شب ملاىٔكه بحكم الهى حساب عمر وتقسيم.
অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত যে রাতে ফিরিশতাগণ আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশে মানুষের বয়স ও রিযিক বন্টন করে থাকেন।
(গিয়াসুল লুগাত দ্রষ্টব্য)
শবে বারাআতকে হাদীস শরীফে নিফসে শা’বান বলা হয়েছে। শা’বান (شعبن) শব্দটি আরবী। শা’বান নামকরণের তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ” হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শা’বানকে এজন্য শা’বান নাম দেয়া হয়েছে।যেহেতু এ মাসে রমযানের অবধারিত কল্যাণ ও বরকত হাসিলের বিভিন্নমুখী দ্বার খুলে দেয়া হয়,আর রমযানকে রমযান নাম রাখার কারন হল এ মাসে গুনাহসমূহ জালিয়ে ভস্মিভূত করে দেয়া হয়।
(হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী রহ. কৃতঃ গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ. ৪৪৫)
এ পবিত্র রজনীকে ১২ টি নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন—
১. লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রাত।
২. লাইলাতুল রহমাহ বা রহমত পাওয়ার রাত।
৩. লাইলাতুল বারাআতে বা পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের রাত।
৪. লাইলাতুল চেক বা ছাড়পত্রের রাত।
৫. লাইলাতুল কিসমত বা বন্টনের রাত।
৬. লাইলাতুল তাকফীর বা গুনাহের কাফফারার রাত।
৭. লাইলাতুল ইযাবত বা দোয়া কবুলের রাত।
৮. লাইলাতুল ঈদিল মালাইকা বা ফিরিশতাদের ঈদের রাত।
৯. লাইলাতুল জায়েযা বা পুরস্কারের রাত।
১০. লাইলাতুল শাফায়া বা সুপারিশের রাত।
১১. লাইলাতুল গুফরান বা মার্জনার রাত।
১২. লাইলাতুল ইতেকেলে মিনান নীরান বা দোযখ হতে মুক্তির রাত।
(ফতোয়ায়ে দারুস সুন্নাত,পৃ. ১৪৭)
★ আল কুরআনের আলোকে শবে বারাআতঃ
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “আমি একে (কুরআনকে) নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে,নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।এ রাতে প্রত্যেকে প্রজ্ঞাময় বিষয় স্থিরকৃত হয় আমারই আদেশে।আমি (ফেরেশতাদের) প্রেরণকারী। আপনার লালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ তিঁনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (সূরা দুখান, আয়াত ৩-৬)
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস,হযরত আবু হুরায়রা,হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন) সহ বহু সংখ্যক সাহাবী এবং তাবেয়ীর মতে, লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা চৌদ্দ শা’বান দিবাগত রাত বা শবে বারাআত বুঝানো হয়েছে যেমন—
قال ابن عبّاس رضى اللّه عنهما حٓمٓ يعنى قضى اللّه ماهو كاىٔنٌ الى يوم القيا مة والكتاب المبين يعنى القران فى ليلة مبركة هى ليلة النصف من شعبان وهى ليلة البرأة.
অর্থাৎ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু বলেন, “হামীম অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা নির্ধারণ করেছেন কিয়ামত পর্যন্ত যা ঘটবে।সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ অর্থাৎ আল কুরআন, লাইলাতুল মুবারাকা হল শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত আর তা-ই ‘লাইলাতুল বারাআত।
(ইমাম জালালউদ্দীন সুয়ুতী কৃতঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, খন্ড- ০৭, পৃ. ৪০১)
* হযরত ইকরামা (রা.) বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে ঐ রাতে প্রথম আকাশে প্রেরণ করেন যেন লিখিত কুরআন পুনরায় আবৃতি করতে পারেন।এই রাতকে মুবারক নাম রাখার কারন হল এতে রয়েছে কল্যাণ ও বরকত এতে নাযিল হয় আল্লাহর রহমত এবং এ রাতে দোয়া কবুল হয়।
(তাফসীরে কাশফুল আসরার, খন্ড- ০৯, পৃ. ৯৮)
* আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রহ.) বলেন, ” লাইলাতুল মুবারাকা বলা হয় কারন এ রাতে খায়ের ও বরকত নাযিল হয়।সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত আরশের প্রতি কণা থেকে ভূতলের গভীরে পৌছে শবে কদরের মত।
(তাফসীরে রুহুল বয়ান, খন্ড- ০৮, পৃ. ৪০১)
* হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— এক শা’বান থেকে অপর শা’বান পর্যন্ত মানুষের হায়াত চূড়ান্ত করা হয়। এমনকি একজন মানুষ বিবাহ করে এবং তার সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃতের তালিকায় উঠে যায়।
(তাফসীরে দুররে মানসুর, খন্ড- ০৭, পৃ. ৪০১)
হাদীস শরীফে এ রাতের যে মর্যাদা আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়েছে এতে এ রাত যে মুবারক তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কুরআন মাজীদের এ আয়াত— فيها يفرق كلّ امر حكيم অর্থাৎ, এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।” এ ঘোষনা থেকে সহজেই অনুমেয় যে, এ রাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
★ হাদীস শরীফের আলোকে শবে বারাআত:
১. ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﻳﺨﺎﻣﺮ ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ ﻭﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﻣﺘﺼﻞ ﻋﻠﻰ ﻣﺬﻫﺐ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﻣﺬﻫﺐ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﻨﻌﻦ ﻭﻟﻢ ﻳﺠﺰﻡ ﺍﻟﺬﻫﺒﻲ ﺑﺄﻥ ﻣﻜﺤﻮﻻ ﻟﻢ ﻳﻠﻖ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﻳﺨﺎﻣﺮ ﻛﻤﺎ ﺯﻋﻢ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻗﺎﻟﻪ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺤﺴﺒﺎﻥ، ﺭﺍﺟﻊ : ﺳﻴﺮ ﺃﻋﻼﻡ ﺍﻟﺒﻼﺀ .
মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’
(সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫)
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-
ﻫﺬﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﻄﻠﻊ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻠﻤﺴﺘﻐﻔﺮﻳﻦ ﻭﻳﺮﺣﻢ ﺍﻟﻤﺴﺘﺮﺣﻤﻴﻦ ﻭﻳﺆﺧﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﻘﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻢ .
‘‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’’
(-শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৩)
৩.
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻓَﻘَﺪْﺕُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺫَﺍﺕَ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﻓَﺨَﺮَﺟْﺖُ ﺃَﻃْﻠُﺒُﻪُ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻮَ ﺑِﺎﻟْﺒَﻘِﻴﻊِ ﺭَﺍﻓِﻊٌ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ . ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﺃَﻛُﻨْﺖِ ﺗَﺨَﺎﻓِﻴﻦَ ﺃَﻥْ ﻳَﺤِﻴﻒَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ، ﻗَﺪْ ﻗُﻠْﺖُ : ﻭَﻣَﺎ ﺑِﻲ ﺫَﻟِﻚَ، ﻭَﻟَﻜِﻨِّﻲ ﻇَﻨَﻨْﺖُ ﺃَﻧَّﻚَ ﺃَﺗَﻴْﺖَ ﺑَﻌْﺾَ ﻧِﺴَﺎﺋِﻚَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺄَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﻋَﺪَﺩِ ﺷَﻌَﺮِ ﻏَﻨَﻢِ ﻛَﻠْﺐٍ
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেনন, একরাতে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ঘরে পেলামনা বা তাঁর খোঁজে বের হলাম। তখন দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে আসমানেকে মাথা মুবারক উত্তোলন করে অবস্থান করছেন। আমাকে সেখানে দেখে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন- হে আয়েশা! তুমি কি এ ভয় করছ যে, আল্লাহ তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমার প্রতি অবিচার করবে? তিনি আরজ করলেন আপনি বলছেন, এমন কিছু আসলে আমার মনে নেই বরং; আমি ধারণা করেছি যে, আপনি আপনার কোন স্ত্রীর হুজরায় তাশরীফ নিয়েছেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শা’বানের পনেরতম রাতে প্রথম আসমানে তাশরীফ আনেন। অতঃপর বনী ক্বলব এর মেষগুলোর লোম এর সংখ্যার চেয়েও অধিক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
[ইবনে মাজা শরীফ,হাদীস নং-১৩৮৯; জামে আত তিরমিযি-৭৩৯; মুসান্নাফে আবী শায়বাহ-২৯৮৫৮; মুসনাদে আহমদ-২৬০১৮,২৬০৬০]
(৪)
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻓَﻘُﻮﻣُﻮﺍ ﻟَﻴْﻠَﻬَﺎ ﻭَﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻧَﻬَﺎﺭَﻫَﺎ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟِﻐُﺮُﻭﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ : ﺃَﻟَﺎ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﺘَﻐْﻔِﺮٍ ﻟِﻲ ﻓَﺄَﻏْﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﺃَﻟَﺎ ﻣُﺴْﺘَﺮْﺯِﻕٌ ﻓَﺄَﺭْﺯُﻗَﻪُ ﺃَﻟَﺎ ﻣُﺒْﺘَﻠًﻰ ﻓَﺄُﻋَﺎﻓِﻴَﻪُ ﺃَﻟَﺎ ﻛَﺬَﺍ ﺃَﻟَﺎ ﻛَﺬَﺍ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রাদ্বিল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি অয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,যখন শাবানের পনেরতম রাত হয়, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড় এবং রোজা রাখ। কেননা ঐ দিন সূর্যাস্তের সময় আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে তাশরীফ এনে বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন- ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেও আছ, আমি তাকে ক্ষমা করব, রিজিক আন্বেষণকারী কেও আছ, আমি তাকে রিজিক দিব, আসুস্থ কেও আছ আমি তাকে সুস্থতা দান করব, এভাবে অন্যান্য বিষয়েও বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।
[ইবনে মাজাহ ,হাদীস নং-১৩৮৮; ফাকেহী আখবারে মক্কা-১৮৩৭,৩:৮৪; বায়হাক্বী ফাজায়িলুল আওকাত-২৪; শো’আবুল ঈমান-৩৫৪২; মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃঃ, হাদীস নং-১৩০৮]
(৫)
ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহ তায়ালা শ’বানের পনেরতম রাতে সিদ্ধান্তসমুহ চুড়ান্ত করেন এবং শবে ক্বদরে তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের সোপর্দ করেন।
[তাফসীরে খাজিন ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠাঃ১১২/১১৬; তাফসীরে বগভী আল ইহিয়ায়ুত তুরাস, ৪:১৭৪, সুরা দুখান; তাফসীরে ক্বুরতুবী, ১৬:১২৭, সুরা দুখান; ইবনে আ’দিল আল লুবাব ফি উলুমিল কিতাব-১৭:৩১১]
(৬)
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﺧَﻤْﺲُ ﻟَﻴَﺎﻝٍ ﻟَﺎ ﺗُﺮَﺩُّ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ : ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻭَﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺭَﺟَﺐٍ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺘَﻲِ ﺍﻟْﻌِﻴﺪَﻳْﻦِ ”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দু’আ ফেরত হয়না। ওইগুলো হল- জুমু’আর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শ’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।
[মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সিয়াম হাদীস নং-৭৯২৭; বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান-৩৪৪০; ফাজায়িলুল আওকাত-১৪৯]
(৭)
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﻳَﻄَّﻠِﻊُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻌِﺒَﺎﺩِﻩِ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ : ﻣُﺸَﺎﺣِﻦٍ، ﻭَﻗَﺎﺗِﻞِ ﻧَﻔْﺲٍ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি অয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে স্বীয় মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। অতঃপর দু শ্রেণীর বান্দা ব্যতীত সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তারা হল মুসলমান ভাইয়ের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী এবং অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকারী।
[মুসনাদে আহমদ-৬৬৪২; আত তাগরীব; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়ায়িদ-১২৯৬১; তাফসীরে রূহুল মা’আনী, সুরা দুখান, ১৮:৪২৩/১৩:১১০]
(৮)
ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﻳَﺴَﺎﺭٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺗُﻨْﺴَﺦُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺍﻟْﺂﺟَﺎﻝُ، ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻟﻴَﺨْﺮُﺝُ ﻣُﺴَﺎﻓِﺮًﺍ، ﻭَﻗَﺪْ ﻧُﺴِﺦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺣْﻴَﺎﺀِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﻣْﻮَﺍﺕِ، ﻭَﻳَﺘَﺰَﻭَّﺝُ ﻭَﻗَﺪْ ﻧُﺴِﺦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺣْﻴَﺎﺀِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﻣْﻮَﺍﺕِ
আতা বিন ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শা’বানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) মানুষের হায়াত পূর্ণ করা হয়। অথচ লোকটি ভ্রমণকারী হিসেবে বের হয়েছে, এমতাবস্থায় তার হায়াত পূর্ণ করা হয়েছে এবং মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং বিবাহ করেছে এমতাবস্থায় তার হায়াত শেষ করা হয়েছে ও মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ জীবন, মৃত্যু ইত্যাদি এ রাতে নির্ধারিত হয়।
[মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সাওম-৭৯২৫; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩]
(৯)
ﻋَﻦ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔ } ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺃَﻣﺮ ﺣَﻜِﻴﻢ { ﻗَﺎﻝَ : ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﻣﻦ ﺷﻌْﺒَﺎﻥ ﻳﺒﺮﻡ ﺃَﻣﺮ ﺍﻟﺴّﻨﺔ ﻭﻳﻨﺴﺦ ﺍﻟْﺄَﺣْﻴَﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟْﺄَﻣْﻮَﺍﺕ ﻭَﻳﻜْﺘﺐ ﺍﻟْﺤَﺎﺝ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺰَﺍﺩ ﻓﻴﻬﻢ ﻭَﻟَﺎ ﻳﻨﻘﺺ ﻣِﻨْﻬُﻢ ﺃﺣﺪ
হযরত ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি সুরা দুখানের আয়াত (এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজের ফয়সালা দেওয়া হয়। আয়াত-৪)এর তাফসীরে বলেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী বছরে যে সকল ঘটনা সংগঠিত হবে (বাজেট) তা লিপিবদ্ধ করবেন যারা মৃত্যু বরণ করবে তাদের মধ্য থেকে কারো কারো হায়াত বৃদ্ধি করা হবে এবং যারা আল্লাহর পবিত্র গৃহের তাওয়াফ করবে অর্থাৎ হজ্জ্ব আদায় করবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। অতঃপর এদের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি পাবে না এবং তাদের মধ্য হতে কমতিও হবে না।
[সুয়ুতী আদ দুররুল মান্সুর,সুরা দুখান,৭:৪০১; শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মা’আনী, সুরা দুখান,১৩:১১২/১৮:৪২৭; ইবনে জারীর তাবারী তাফসীরে ত্ববারী জামেউল বয়ান, সুরা দুখান,২২:১০; তাফসীরে সা’লাবী ৮:৩৪৯; তাফসীরে বগভী, সুরা দুখান ৪:১৭৩; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮]
(১০)
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺟﺎﺀﻧﻲ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻗﺎﻝ ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﺭﻓﻊ ﺭﺃﺳﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻓﻘﻠﺖ ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﻗﺎﻝ ﻫﺬﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﻳﻔﺘﺢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﺛﻠﺜﻤﺎﺋﺔ ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻳﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﻣﻦ ﻻ ﻳﺸﺮﻙ ﺑﻪ ﺷﻴﺌﺎ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺳﺎﺣﺮﺍ ﺃﻭ ﻛﺎﻫﻨﺎ ﺃﻭ ﻣﺼﺮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻧﺎ ﺃﻭ ﻣﺪﻣﻦ ﺧﻤﺮ
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা’বান মাসের অর্ধ রাতে (শবে বরাতে) জিবরাইল ফেরেশতা এসে আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম! আকাশের দিকে মস্তক উত্তোলন করুন। আমি বললাম এ রাত্রির বৈশিষ্ট্য কি? তদুত্তরে জিবরাইল আলাইহিস সালাম বলেন, এ রাতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তিনশ রহমতের দরজা খুলে দিয়ে থাকেন, যারা আল্লাহ্ পাকের সাথে শিরক করে না, যাদুকর নয়, গণক নয়, যেনা করেনা ও মদ পান করেনা এসব বান্দাকে আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দেন।
[নুজহাতুল মাজালিস ওয়া মুনতাখাবুন নাফাইস, বাব, ফাদলু শ’বান ওয়া ফাদলু সালাতুত তাসবীহ, ১:১৪৬/১:১৬১]
(১১)
ﻋَﻦ ﺭَﺍﺷﺪ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﺃَﻥ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ : ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﻣﻦ ﺷﻌْﺒَﺎﻥ ﻳﻮﺣﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺇِﻟَﻰ ﻣﻠﻚ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕ ﺑِﻘَﺒﺾ ﻛﻞ ﻧﻔﺲ ﻳُﺮِﻳﺪ ﻗﺒﻀﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺴّﻨﺔ
রাশিদ বিন সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা’বানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) আল্লাহ্ তা’য়ালা মালাকুল মওতকে এ বছরে যে সকল লোকদের রুহ কবজ করা হবে তাদের নাম অবহিত করেন।
[সুয়ুতী আদ দুররুল মানসুর, সুরা দুখান,৭:৪০১; মাজালিসাতুল দায়নুরী ৩:৩০৩; কানযুল উম্মাল-৩৫১৭৬]
শবে বারাআত-এর রোযাঃ
ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻛُﻠَّﻪ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা অন্য কোন মাসে রাখতেননা, এমনকি তিনি পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন।
[সহিহ বুখারী, হাদীস নং-১৯৭0, সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম, হাদীস নং-১১৫৭]
★ রহমত থেকে বঞ্চিত হবে কারা?
৬ প্রকার ব্যক্তিকে এদিনে ক্ষমা করা হবে না, তারা হল—
(১) মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি।
(২) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান।
(৩) ব্যভিচারী।
(৪) আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্নকারী।
(৫) ছবি প্রস্তুতকারী।
(৬) চোগলখোর।
(ফাযায়েলুল আওকাত কৃত ইমাম বায়হাকী, ১ম খন্ড, হাদীস নং— ২৭)
অনুরূপ, গনক,যাদুকর,অহংকার সহকারে পায়জামা অথবা লুঙ্গি পায়ের গোড়ালীর নিচে পরিধানকারী ও কোন মুসলমানের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষনকারীও এ রাতে ক্ষমার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকার অঙ্গিকার রয়েছে।
★ আমাদের করণীয় কাজসমূহঃ
পবিত্র শবে বরাত পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে পরবর্তী দিনে পবিত্র রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক তাঁহার ও তঁহার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র শবে বরাতে কোন কোন ইবাদত- বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তাঁহাদের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য তাকীদ ও নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন-
* পবিত্র শবে বরাতের নামায পড়বে। ৪, ৮, ১২ রাকায়াত। দুই দুই রাকায়াত করে।
* পবিত্র ছলাতুত তাসবীহ এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের গুনাহখাতা ক্ষমা হয়।
* পবিত্র তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক এর নৈকট্য হাছিল হয়।
* পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
* মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হযরত মুহাম্মদ [সঃ] এর খাছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
* পবিত্র যিকির-আযকার করা, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।
* কবরস্থান যিয়ারত করা, যার দ্বারা মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় এবং পবিত্র সুন্নত আদায় হয়।
* গরিব-মিসকীনকে দান ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়ানো।
সর্বোপরি পুরো রাত্রিই অতিবাহিত করতে হবে পবিত্র যিকির-ফিকির, তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে। যাতে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হযরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
★ বর্জনীয় কাজসমূহঃ
(১) আতশবাজী করা হারাম। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ব্রেলভী (আলাইহির রাহমা) বলেন, আতশবাজী যেভাবে বিবাহ ও শবে বারাআতে প্রচলিত রয়েছে নিঃসন্দেহে তা হারাম ও সম্পূর্ণ অপরাধ।কেননা এর মাধ্যমে সম্পদ নষ্ট হয়। (ফতোয়ায়ে রযভীয়াহ, ২৩ তম খন্ড, ২৭৯ পৃ)
এর মাধ্যমে অপব্যয় হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।
(সূরা ইসরা, আয়াত নং— ২৭)
(২) অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী করা যেতে পারে।
(৩) কবরস্থানে মোমবাতি জ্বালানো। তবে শর্ত সাপেক্ষে জ্বালানো যাবে। যদি কেউ কবরে কুরআন তিলাওয়াত করে কিন্তু আলো না থাকে। অথবা যিয়ারতে সমস্যা হলে জ্বালানো যাবে।
(৪) মাযার যিয়ারতের নামে শরীয়ত বিরোধী কাজ না করা।
(৫) ইবাদত না করে মাযারে মাযারে ঘুড়ে বেঁড়ানো।
সুতরাং আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে ইবাদত করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার সৌভাগ্য নসিব করুন। আমিন…
[বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন]
(সংগৃহীত)