সুনানে আবু দাউদ শরীফে ১৪২৯ নম্বর হাদীস নিয়ে ২০রাকাত তারাবীহ নিয়ে আহলে হাদীসের মিথ্যাচার
সুনানে আবু দাউদ শরীফে ১৪২৯ নম্বর হাদীস শরীফে “ইশরীনা রাকায়াতান” পাল্টিয়ে “ইশরীনা লাইলাতান” করার রহস্য উম্মোচন
ভেবেছিলাম তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত এবিষয়ে অনেক দলীল পেশ করবো এবং সালাফীদের উদ্ভট আপত্তির জবাব দিবো। কিন্তু আজ এমন
এক জিনিস দেখলাম যে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। চুরিতো অনেক চোরই করে, তাই বলে হাদীস শরীফ চুরি??
হ্যাঁ, হাদীস শরীফই চুরি করেছে সালাফীরা। ঠিক যেমন ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাব হেরফের করতো। আবু দাউদ শরীফের বর্ণিত একটি হাদীস শরীফ যেখানে তারাবীহর নামাজের সহীহ একটি দলীল রয়েছে সেটার ইবারত সম্পূর্ণ বিকৃত করে ফেলেছে সালাফীরা। শুধু তাই নয় ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত আবু দাউদ শরীফেও একই কাজ করা হয়েছে। ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত আবু দাউদ শরীফের ১৪২৯ নম্বর হাদীস শরীফে ইবারতে “ইশরিনা লাইলাতান” বা বিশ রাত লেখা হয়েছে। বিষয়টা একটু ডিটেলস চেক করতে শামেলাতে সার্চ দিয়ে আবু দাউদ শরীফের ১৪৩১ নম্বর হাদীস শরীফেও ঠিক একই জিনিস দেখতে পেলাম। সাথে সাথে আবু দাউদ শরীফের পুরাতন ছাপা মূল কিতাব চেক করা হলো সেখানে ২০২ পৃষ্ঠায় পাওয়া গেলো সব ষড়যন্ত্রের জবাব। মূল কিতাবে রয়েছে “ইশরিনা রাকায়াতান” বা বিশ রাকায়াত।
এই “ইশরিনা রাকায়াতান” কে পরির্বতন করে “ইশরিনা লাইলাতান” শব্দের ইবারত কারচুপি করে ঢুকিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। এইবার ওহাবী সালাফীদের আসল চেহারাটা কেমন চিন্তা করুন।
আরো একটু ভালো ভাবে খোঁজ করতে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রকাশিত কুতুবে সিত্তা বা সিয়া সিত্তার ছয়টা কিতাব একত্রে যে কিতাবটা আছে সেটা দেখলাম। সেখানেও একই অবস্থা। সেখানেও “ইশরিনা লাইলাতান” বা বিশ রাত লেখা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। অর্থৎ বিশ রাকায়াতকে বিশ রাত বানিয়ে ফেলেছে।
হে মুসলমান সমাজ চিন্তা করুন কতটুকু ভয়ানক এই সালাফীরা নিজেদের মিথ্যা দাবী প্রমান করতে হাদীস শরীফ নিয়ে ছলচাতুরী করতেও কলিজা কাঁপছে না। আল্লাহ পাকের লা’নত পড়ুক তাদের উপর। আর এদের ব্যাপরে হাদীস শরীফে বর্ণিতে আছে,
عن زياد بن حد ير رحمة الله عليه قال قال لى عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه هل تعرف مايهدم الاسلام قال قلت لا قال قلت لا قال يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الا ئمة المضلين.
অর্থ : “হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাকে হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কি জানেন কোন্ জিনিস সম্মানিত দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করে? আমি বললাম- না, আমি জানিনা। তখন তিনি বললেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করে আলিমের পদস্খলন, মুনাফিকদের কিতাব সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক (ইবারত পরির্বতন) এবং গোমরাহ শাসকদের আদেশ-নির্দেশ।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আবু দাউদ শরীফ এর অনেক গুলো ছাপ চেক করলাম। শরাহ সমূহ দেখলাম। মজার বিষয় দেখলাম সালাফীরা প্রথম থেকেই কৌশলে “রাকয়াতের”পরিবর্তে “রাত”শব্দ ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখানেই শেষ হয়নি, বরং উপমহাদেশের হানাফীদের প্রতি অভিযোগ আরোপ করে বলেছে এই হানাফী আলেমরাই নাকি ২০ রাতকে ২০ রাকায়াত করেছে। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক।এ যেন চুরি করেও সিনা জুড়ি। নিজেরা চুরি করে তাদের প্রকাশনা থেকে ২০ রাকায়াতকে ২০ রাত বানিয়ে উল্টা হানাফীদের প্রতি মিথ্যা অভিযোগ।বাস্তবতা হল, স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে সুনানে আবু দাউদের একটি রেওয়ায়েতকে পরবর্তী যুগের হানাফী উলামারা বিকৃত করেছেন বলে যে অভিযোগটি করা হয়েছে, এই উগ্রপন্থীদের কাছে তার কোন প্রমাণ নেই। এটা শুধু দাবী নয় আমাদের পক্ষ থেকে, বরং এটি একটি বাস্তব সত্য যা হাদীসশাস্ত্রের বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ ২ জন ইমামের কিতাব, যা প্রায় ৬৫০ বছরেরও বেশী আগে লিখা হয়েছে, সেখান থেকে স্ক্যান সহকারে দেখানো হবে সামনে ইনশাআল্লাহ্। এবং সবচেয়ে বাস্তব সত্য হল, হাদীসের এই ২ জন হাফেয যাদের নাম পরে উল্লেখ করা হবে তারা দুজনই শাফী মাযহাবের !সালাফীরা দাবি করে, ১৩১৮ হিঃ পর্যন্ত ভারতে ছাপানো আবু দাউদের সমস্ত পাণ্ডুলিপিতে হাদীসে ‘২০ রাত্রি’ শব্দটি আছে এবং এর ব্যতিক্রমের কোন চিহ্ন নেই। অন্যদিকে, মাওলানা মাহমুদল হাসান (দেওবন্দী) তার ব্যাখ্যাসহ আবু দাউদ ছাপিয়েছেন, প্রকাশকরা নিজেরা অথবা অন্য কারও পরামর্শে হাদীসের ‘রাত্রি’ শব্দটির উপরে ‘নুন’ হরফটি অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন এবং এরপর এর পাদটীকায় লিখেছেন যে এই ‘নুন’ হরফটি দ্বারা পাণ্ডুলিপির পার্থক্য বুঝানো হচ্ছে এবং এই পার্থক্যটি হল ‘রাকাআত’। পরবর্তীতে মাওলানা ফাহার আল হাসান (দেওবন্দী) এর ব্যাখ্যাসহ যখন সুনানে আবু দাউদ ছাপানো হয়, তখন ‘রাকাআত’ শব্দটি হাদীসের মধ্যে লিখা হয় এবং ‘নুন’ হরফটি ‘রাকাআত’ শব্দের উপরে লিখা হয়। তারপর পাদটীকায় ‘রাত্রি’ শব্দটি লিখে উল্লেখ করা হয় যে, ‘নুন’ হরফটির মাধ্যমে পাণ্ডুলিপির পার্থক্য বুঝানো হয়েছে। অতএব সবকিছু পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য ছিল পাণ্ডুলিপির বিভিন্নতার চরিত্র অংকন করে বুঝানো। একইভাবে সুনানে আবু দাউদের সাথে ছাপানো ‘বাযাল মাজহুদ’ কিতাবেও হাদীসে ‘রাত্রি’ শব্দটি রয়েছে এবং এই ‘রাত্রি’ শব্দটির উপরে ‘নুন’ হরফটি লিখা হয়েছে এবং পাদটীকায় ‘রাকাআত’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। পাদটীকায় ‘রাকাআত’ শব্দটির সাথে এটি লিখা হয়েছে যে, ” শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক এর পাণ্ডুলিপিতে এমনই আছে। ” এগুলো এজন্যই লিখা হয়েছে যাতে এটি বুঝা যায় বা স্পষ্ট হয় যে কার কাছ থেকে এটি এসেছে, কে এই পাণ্ডুলিপিটি দেখেছে এবং এটি কোথায় আছে এখন?
সূতরাং তাদের কথা থেকেই বোঝা যায় পুরানো একটা পন্ডুলিপি ছিলো যেখানে “লাইলাতান”শব্দের পরিবর্তে “রাকায়াতান”শব্দটার অস্তিত্ব ছিলো। হ্যাঁ, বিষয়টা তাই, প্রায় ৬৫০ বছরেরও বেশী আগে এবং পরবর্তী যুগের হানাফী মুহাদ্দীস, শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী এর অনেক আগে, হাদীসশাস্ত্রের প্রধান ২ জন ইমাম সুনানে আবু দাউদের পাণ্ডুলিপিটি দেখেছেন এবং তাদের সেই পাণ্ডুলিপিতে ‘২০ রাকাআত’ শব্দটিই ছিল !হাদীসের এই ২ মহান হাফেজরা হলেন, হাফিয শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাতঃ ৭৪৮ হিঃ) এবং তাঁর সমসাময়িক হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাতঃ ৭৭৪ হিঃ)।
কোন হানাফীই সুনানে আবু দাউদে বিভ্রান্তিমূলকভাবে ‘রাত্রি’ শব্দটিকে ‘রাকাআত’ শব্দটিতে পরিবর্তন করে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়নি, তার প্রথম প্রমাণ ইমাম শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ কিতাব ১ম খন্ড ৪০০-৪০১ পৃষ্ঠা থেকে। নিচে স্ক্যান দেওয়া হয়েছে মুয়াসসাসা আর্ রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ প্রথম পাতা ও স্ক্যান কপি সমূহ দেয়া হলোঃ-
আয্ যাহাবী এর ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ কিতাব (১/৪০০-৪০১) থেকে স্ক্যানযেখানে সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতটি ‘২০ রাকাআত’ শব্দ সহকারে রয়েছে, ‘২০রাত্রি’ শব্দ সহকারে নয়।
উপরের স্ক্যানে উল্লেখযোগ্য অংশগুলোতে “ইশরিনা রাকায়াতান”শব্দটা রয়েছে, আবু দাউদ শরীফের রেফারেন্সে। যে হাদীস শরীফ খানা হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। সূতরাং প্রমান হলো পূর্ববর্তী কিতাব সমূহেও ‘২০ রাকাআত’ শব্দটি আছে।
কোন হানাফীই সুনানে আবু দাউদে বিভ্রান্তিমূলকভাবে ‘রাত্রি’ শব্দটিকে ‘রাকাআত’ শব্দটিতে পরিবর্তন করে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়নি, তার দ্বিতীয় প্রমাণইমাম ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ‘জামি’উল মাসানীদ’ কিতাব থেকে। এখানে দারুল ফিকর থেকে প্রকাশিত,
ইবনে কাসীর এর ‘জামি’উল মাসানীদ’ কিতাব ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা থেকে স্ক্যান যেখানে সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতটি’২০ রাকাআত’শব্দ সহকারে রয়েছে, ‘২০ রাত্রি’ শব্দ নেই।
এবার আপনারাই বলুন, সুনানে আবু দাউদের বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত আল হাসান আল বসরী এর এই রেওয়ায়েতটির সঠিক শব্দ কোনটি?
যাইহোক, এখন সত্য অনুসন্ধানকারীদের জন্য সুনানে আবু দাউদ শরীফের কিতাবুছ ছালাত এর ২০২ পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি দেয়া হলো। “ইশরিনা রাকায়াতান” বাক্যটার নিচে লাল আন্ডার লাইন করে দেয়া হয়েছে। বিশ রাকায়ত তারাবীহ অাছে কিনা নিজের চোখেই দেখে নিন। আল্লাহ পাক হেদায়েতের মালিক। ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ….
এখন ইনসাফের দৃষ্টিতে বলুন ১৩১৮ হিঃ এর অনেক আগেই ইমাম যাহাবী এবং ইবনে কাসীর এর কাছে ‘২০ রাকাআত’ শব্দ সম্বলিত সুনানে আবু দাউদের পাণ্ডুলিপি ছিলএবং সাথে সাথে পূর্বযুগের হানাফী উলামাদের বিরুদ্ধে আলোচ্য রেওয়ায়েতবিকৃতির যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তা কত জঘন্য মিথ্যা।মূলত সুনানে আবুদাউদে ইশরিনা রাকায়াতান ই ছিলো, সালাফীরা যাতে সিয়া সিত্তায় এমন অকাট্যদলীল না থাকতে পারে সে জন্য তারা বিভিন্ন ছাপা থেকে অত্যান্ত ঘৃণিত ভাবেবাদ দিয়েছে। যেমনটা ইহুদী ও নাছারারা করতো। ক্রেডিটসঃ ~*Noore Julfikar*~