ইসলামী ছাত্রসেনাঃ কালের ক্রান্তি-লগ্নে ঐতিহাসিক ভূমিকায় এক আদর্শিক কাফেলা
এদেশের ১৬ কোটি মানুষের মাঝে অসংখ্য অগণিত আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ আছেন, যাদের অনুপম আদর্শে ইসলামের ভাবধারা পরিস্ফুটিত হয়। ইসলামের মহিমা অনুধাবন করা যায় যাঁদের দ্বারা এমন লক্ষ লক্ষ মুসলিম মনীষীর কথা আমরা জানি। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), হযরত ওমর ফারুক আজম (রাঃ), ইমাম হোসাইন (রাঃ), বড়পীর গাউছে পাক
আব্দু ল কাদের জিলানী (রহঃ), খাজা গরীবে নেওয়াজ আজমীরি (রহঃ), মুজাদ্দেদ আলফে সানী শেখ আহমদ ছারহিন্দী (রহঃ), আলা হযরত আহমদ রেজা খান বেরলভী (রহঃ), নঈম উদ্দীন মোরাদাবাদী (রহঃ), আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ (রহঃ) আল্মালা গাজী শেরে বাংলা আজিজু ল হক আল কাদেরী (রহঃ), আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রঃ), হাফেজ মুনিরুদ্দীন হালিশহরী (রহঃ), সুলতানুল আওলিয়া শাহ্ আমানত (রহঃ), শাহজালাল ইয়ামনী (রহঃ),হযরত আহমদ উল্লাহ শাহ্ মাইজভাণ্ডারী
(রহঃ), কবি আল্মালা ইকবাল (রহঃ), সাধক কবি আল্মালা শেখ সাদী (রহঃ), আল্মালা জালাল উদ্দীন রুমী (রহঃ) , ইমাম গাজ্জালী (রহঃ), ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম মসলিম (রহঃ) ও উম্মাহাতুল মুমেনীন (রাঃ) প্রমুখ, সে সকল মহান সত্ত্ব াদের মধ্যে অগ্রগণ্য।
ইসলামী ছাত্রসেনা যুগের প্রয়োজনে সৃষ্ট এ সকল মহামনীষীদের আদর্শের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সংগঠনের নাম। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শের অনুসারী আমরা। আমরা বিশ্বাস করি ‘‘আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি
বিকাল জিহাদ করা পৃ থিবী ও পার্থিব সমুদয় সম্পদ থেকে উত্তম।” (বুখারী ও মুসলিম) আমরা জানি ও মানি যে,
ব্যক্তিগত জীবনে দ্বীনের আহকাম প্রতিষ্ঠা করা ও দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে বাইরের শত্রু অপেক্ষা মানষের নিজের নফ্ছ বা মানসিক কুপ্রবৃত্তিই বড় শত্রু। কাজেই ‘‘নিজ প্রবৃত্তিকে দমন ও বশীভূত করবার অব্যাহত প্রচেষ্টা
হল সবচেয়ে বড় ও কঠিন জেহাদ।” ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ, বোমাবাজি, খুন ইত্যাদি যেমন অনৈসলামিকতার
নামান্তর, সে সাথে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানচর্চা করা এবং সামাজিক অনাচার ও অনৈসলামিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে
শরীয়ত প্রদর্শিত জিহাদের গুরুত্ব ও আমদের কাছে অত্যধিক এবং অনস্বীকার্য ।
সুন্নীয়তের মতাদর্শকে ধারণ করে এদেশের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে আন্দোলনের তিনটি যুগ পূর্ণ হয়েছে ইতিমধ্যে। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী অক্লান্ত-পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় আপামর জনসাধারনের মাঝে ইসলামী
ছাত্রসেনার প্রচার-প্রসার ও বিস্তৃতি ঘটেছে। এক্ষেত্রে কর্মী হওয়ার প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের নাম লিখনী
বন্ধনে আবদ্ধ করে তাঁদের মহান অবদানকে খাটো করব না, আন্দোলনের আত্মত্যাগী কর্মী ভাইদের হৃদয়ের অলিন্দে
তঁ াদের নাম আগামী দিনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোতে প্রেরণাদায়ী হিসেবে সোনার হরফে লেখা থাকবে অবশ্যই।
আমরা জানি যে, মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হচ্ছে শিক্ষা। আর ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে
সমসাময়িক কালে বিরাজিত ছাত্র সমাজের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে বা দাবীতে ছাত্র গণমত সৃষ্টি ও যথাযথ
কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে ইসলামী ছাত্রসেনা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট রয়েছে সব সময়। আমরা ধর্ম ীয় শিক্ষা
সংকোচনে যে কোন ব্যবস্তার জোরালো প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই, ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক প্র সার ঘটু ক। শুধু
মাদ্রাসা শিক্ষাই যে ইসলামী শিক্ষা-এ ধারণায় আমরা বিশ্ব াসী নই। একজন মুসলিম ছাত্র জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়
বিচরন করতে গিয়ে যদি বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন মতাবলম্ব ীদের ভাব ধারা সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে পারে, তাহলে সে
একই ছাত্র ইসলামী দর্শন কেমনতর, সেটা জানতে বাধা কেন? তুলনামূ লক পর্য ালোচনায় তাই ইসলামী শিক্ষার
প্রয়োজনীয়তা অনস্ব ীকার্য । এতে ধর্ম মত নির্বিশেষে সকলের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হবে নিঃসন্দেহে। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস’ া
একদেশদর্শ ী নয়, বরং সার্ব জনীন। আর এমনতর শিক্ষাগ্রহণে অপর্য াপ্ত ব্যবস্পতাপনা সমাজকেই ধীরে ধীরে ইসলামহীন
করে তু লবে। মৌলিক যে ইসলামী শিক্ষা, তার অর্জ ন তখন সুদূর পরাহত হয়ে উঠবে। জাহেলী জমানার বর্বরতা
অমানবিকতা মাথাচড়া দিয়ে উঠবে তখন। এদেশের ইসলাম প্রি য় মানু ষ সে সু যোগ দিতে পারে না কস্মিনকালেও।
শিক্ষা ব্যবস’ ার সংস্কার সাধন করতে গৃ হীত উদ্যোগের ধারায় আবশ্যকীয় অনু ষঙ্গ এটাই হওয়া চাই যে, এদেশের
ইসলামী ব্যক্তিত্ব , মু সলিম মনীষী এবং বিভিন্ন দ্বীনি শিক্ষা প্র তিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, মু হাদ্দিস, ফকীহগণের সাথে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হবে, আর পরিমার্জি ত বিশে- ষণে তার বাস-বায়নও করা হবে। এতে করে প্রনীত
নীতিমালা উত্থাপিত প্র স-বনার স’ ায়িত্ব নিশ্চিত হবে নিঃসন্দেহে।
গতানু গতিকভাবে গড্ডলিকা প্র বাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে আমরা অনেকেই ছাত্র রাজনীতিকে সংজ্ঞায়িত করি, জাতীয়
রাজনীতিকেও। সুসভ্য ভাল ছেলে, মেধাবী, সচ্চরিত্রবান কারো পথ বলে একে মানতে পারি না। এ বলয়ে বিচরণকারী
অধিকাংশের নীচতা-হীনমন্যতা ও কলুষতার কারণেই কিন্তু এমন বিশ্ব াস জন্মেছে সবার। আসলে পথ খারাপ নয়, খারাপ হচ্ছে সে পথের পথিকরা। কারণ তাদের অনেকেই পথচ্যুত গোমরাহ। ইসলামী ছাত্রসেনা এখানে ব্যতিক্রমী
চিন-াধারা নিয়ে অগ্র সর হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনসহ বিভ্রান- সমাজের সর্বত্র ইসলামের সত্যিকার মূ ল্যবোধ প্র তিষ্ঠার প্রত্যয়ে
অগ্রসরমান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শে র অনু সারী এই সংগঠন। ইহ-পারলৌকিক জীবনে সার্বিক মু ক্তির
নিশ্চয়তায় ইসলামের বিকল্প আর কিছু নেই। যু গোপযোগী-বিজ্ঞানসম্মত পন’ ায় ইসলামী মূ ল্যবোধ সম্ব লিত শিক্ষা
ব্যবস’ ার প্র বর্ত ন করে তাই সামগ্রিকভাবে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার উপযু ক্ত পরিবেশ গড়ে তু লতে হবে। এক্ষেত্রে জাতির ভাগ্য
পরিবর্ত নে অন্যান্য অনেকবারের মত ছাত্রসমাজের দায়িত্ব এখনও অনেক বেশী। সংগঠনের প্র তিজন নেতা-কর্ম ী তাই
সদা প্রস্তুত। মূলতঃ কালের ক্রানি-লগ্নে ঐতিহাসিক ভূমিকায় আদর্শিক এক কাফেলা-ইসলামী ছাত্রসেনা।
নিয়্যতের পরিশুদ্ধি, স্বচ্ছতা, দৃঢ় সংকল্প, রেজায়ে ইলাহী হাসিলের অদম্য প্রেরণা, অনুপম চরিত্র, সমসাময়িককালে
নেতত্ব প্রদানের যোগ্যতা, সর্বোপরি তাকওয়াই হোক এই আন্দোলনের কর্মী তথা জিন্দাদীল মর্দে মুমীন ভাই ও
বন্ধুদের পাথেয়।
লেখকঃ রিয়াজ মাহমুদ, সাবেক সভাপতি,
ইসলামী ছাত্রসেনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।