বাংলাদেশের কওমী-দেওবন্দ ধারার মুসলিমদের প্রতি একটি জরুরি বার্তা !!
*** বাংলাদেশের কওমী-দেওবন্দ ধারার মুসলিমদের প্রতি একটি জরুরি বার্তা ***
~~ গোলাম দস্তগীর লিসানী
সালামুন আলা মান্ আতিউল্লাহি তাআলা ওয়া রাসূলিহি সালাওয়াতুল্লাহি আলাইক।
যদিও আমরা সূফিপন্থী হানাফিরা কওমী মতাদর্শের নই,
কিন্তু কওমী ফিক্বাহ্ হানাফী থেকে উৎসরিত-
এ সত্য অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।
এর বাইরে, মিল রয়েছে আরো একটা ক্ষেত্রে, কওমী ধারাও বহুলাংশে তাসাউউফকে স্বীকৃতি দেয়- যদিও তার প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন।
বাংলা-ভারত-পাকিস্তানের কওমীরা যেহেতু-
১. হানাফি ফিক্বাহ্ অনুসরণ করেন
২. কোনও একটা ফর্মে তাসাউউফ/তরিক্বাহ্ অনুসরণ করাকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন
৩. এবং অপরাপর তিন মাযহাবকে গ্রহণযোগ্যতায় সম্মান জানান সেহেতু এ আলাপচারিতার সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। ‘বাইনা ওয়া বাইনাকুম’ নীতির আলোকে তাই মিলগুলো নিয়ে এ লেখা।
আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন,
অনলাইনে-অফলাইনে আইসিসের (দায়েশ, আইএস বা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট) পক্ষ নিয়ে অনেকে প্রচারণা করছে যারা ছদ্মবেশে মূলত কওমী ঘরানায় চলাফেরা করে? তারা ‘পাঠচক্রে’র হোতা, বিভিন্ন ‘উন্নয়নমূলক জাগরণকারী সম্মেলন’এর উদ্যোক্তা, নব্য ‘দার্শনিক’ও। এদের আমতা আমতা করে প্রতিরোধ করতে গেলে আপনার ঘর প্রতিনিয়ত দুর্বল হতে থাকবে। এদের মধ্যে কেউ কেউ কওমী ঘরানায় শিক্ষকের মর্যাদায় বসে আছে এবং শিক্ষকদের মধ্যে নব্য মতবাদ প্রবেশ করাচ্ছে।
অনলাইনে-অফলাইনে কওমী ধারায় প্রবহমান কিছু মানুষ একটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খেলা খেলছে। এই খেলাটা চলছে অন্তত তিনটা ধারা নিয়ে।
১. আইসিস (দায়েশ, আইএস বা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট)
২. আল কায়েদা
৩. জামাতে ইসলামের মত বাংলাদেশী উগ্র গোষ্ঠী
অতীতে উগ্র জঙ্গী সালাফিতে রূপান্তরিত হওয়া বেশিরভাগ দেশি ‘শায়খ’ কওমী ঘরানা থেকে উদ্ভুত হয়েছে। কওমীদের মধ্যে কিছু সরলমনা মানুষ এদেরকে আপন মনে করে শুধু এ জন্য যে, তারা কওমী থেকে এসেছে! পরিতৃপ্তির বিষয় হল, তারা কওমী ঘরানা থেকে উদ্ভুত হলেও কওমী ঘরানা থেকে বেরিয়ে গেছে।
এ নিয়ে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি, কেননা, কওমী ঘরানার বড় বড় উস্তাদরা তাঁদের সন্তানদের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সালাফি মাদ্রাসায় প্রেরণ করেছেন- ফলাফল দৃশ্যমান।
এখন দৃশ্যপট খুবই বাজেভাবে পাল্টে যাচ্ছে। এখন কওমী ঘরানায় থেকে, কওমী ঘরানায় বসবাস করে কিছু মানুষ আইসিসের মত উন্মাদ সালাফিস্ট গোষ্ঠীকে সরাসরি বা আকারে ইঙ্গিতে প্রতিনিয়ত প্রমোট করছে।
একটা বিষয় লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরি।
আশআরী বা মাথুরিদি আক্বাঈদের সাথে সালাফি আক্বাঈদের কোনও মিল নেই। আপনারা আশআরী ও মাথুরিদি আক্বাঈদের ধারাবাহিকতার অনুসারী।
অপরদিকে হানাফি শাফিয়ি হাম্বলি মালিকি ফিক্বাহ্ ও উসুলুল ফিক্বাহ্’র সাথে সালাফিদের কোনও মিল নেই। আপনারা হানাফি ফিক্বাহ্’র ধারাবাহিকতার অনুসারী এবং বাকী ফিক্বাহর সত্যায়নকারী।
এর বাইরে, উসুলুল হাদীসে আপনারা ও আমরা উভয়ে শর্তসাপেক্ষে হাসান, গরিব, দ্বঈফ ও খবরে ওয়াহিদ হাদীসকে গ্রহণযোগ্য হাদীস মনে করি এবং কিছুতেই এই হাদীসগুলোকে গড়পড়তা মাওদু বা জাল হাদীস এর মধ্যে ফেলি না।
এই সমস্তকিছুর পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের সহাবস্থানে আস্থা রাখি। অপর বিশ্বাসের মানুষ মাত্রই কতল ফরজ- এমনটা মনে করি না।
যে বিশ্বাস আপনার আক্বিদাহ্ ধ্বংস করবে,
আপনার ফিক্বাহ্ ধ্বংস করবে,
আপনার উসুলুল হাদীস ধ্বংস করবে,
আপনার সামাজিক অবস্থানের বিশ্বাসকে ধ্বংস করবে-
এমনকি যে বিশ্বাস খোদ আপনাকেই বিদআতী এবং ওয়াযিবুল ক্বতল মনে করবে সে বিশ্বাসকে আপনার নাম নিয়ে যে প্রমোট করে, তাকে আলাদা করা ছাড়া আপনার কোনও উপায় নেই।
আমরা মুতাসাইয়্যিফ হানাফিরা কিন্তু তাদের বিন্দুমাত্র অ্যাকসেস দিইনি।
তাদের সক্রিয় থাকতে দিলে একদিন কওমী ঘরানা ভিতর এবং বাইরে থেকে ছিন্নভিন্ন হবে-
ভিতর থেকে ছিন্নভিন্ন হবে, কারণ ছাত্ররা তাদের উস্তাদদের সাথে আল্লাহর মুজাসসিম হওয়া নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হবে। এজিদের ইমাম হুসাইন রা.’র উপর সঠিক হওয়া নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হবে। ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের মুশরিক বলবে কারণ শিক্ষকরা হানাফী। মুশরিক বলবে কারণ শিক্ষকরা ক্বাদিরি-চিশতি-নক্শবন্দি-মুজাদ্দিদি ধারায় তাসাউউফ চর্চায় বিশ্বাস করেন। ছাত্ররা শিক্ষকদের বিদআতি বলবে কারণ শিক্ষকরা ফিক্বাহ্ অনুসরণ করেন। শিক্ষকদের রাজিম বলবে কারণ তাঁরা হাদীসের গ্রহণযোগ্যতায় বিশ্বাস করেন।
বাইরে থেকে ছিন্নভিন্ন হবে- কারণ, তাকফিরি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী যেসব দোষ দেখিয়ে শিয়াদের কাফির বলে, হানাফিদের কাফির বলে, মালিকি-শাফিয়ি-হাম্বলিদের কাফির বলে, ক্বাদরি-চিশতি-নক্শবন্দিদের কাফির বলে- সেই একই কারণ দেখিয়ে তারা কওমীদেরও কাফির বলবে এবং ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে টেলিভিশন-ইউটিউব ভিডিওতে তা বলেছে।
আর তাদের আক্বিদা হল, যে কাফির তাকে ক্বতল করো।
এর পাশাপাশি বাইরে থেকে ছিন্নভিন্ন হবে কারণ কোন রাষ্ট্র ও সরকারই চাইবে না, একজন মানুষ তার পাশেরজনকে কোন কারণ ছাড়া হত্যা করুক কাফির বলে।
উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী আইসিস সিম্প্যাথাইজারদের তাই কওমী ঘরানার ভিতরে বাইরে প্রতিহত করুন। আক্বিদা যদি আপনার দ্বীন হয়, ফিক্বাহ্ যদি দ্বীন হয়, উসুলুল হাদীস যদি দ্বীন হয়, জীবনযাপনের নীতি যদি দ্বীন হয়- আপনার দ্বীন রক্ষা করুন।