খবরের বিস্তারিত...


‘আরব বসন্তঃ ইহুদি-নাসারাদের একটি গভীর ষড়যন্ত্র’-অধ্যক্ষ আল্লামা এস.এম.ফরিদ উদ্দিন

আরব বসন্তঃ ইহুদি-নাসারাদের একটি গভীর ষড়যন্ত্র

–অধ্যক্ষ আল্লামা এস.এম.ফরিদ উদ্দিন

ইহুদি-নাসারাগন মুসলিম উম্মাহর চির শত্রু। কেবল তারা নয়, সকল অমুসলিম জাতি ইসলাম বিরোধীতায় এক ও অভিন্ন। এ কারণে মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে দফায় দফায় তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে না তোলার জন্য কঠোর ভাবে সর্তক করেছেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ সেই বিষয়টি ভুলে গিয়ে ইসলামের চরম শত্রুদের আপন ভাবতে থাকে। পরিণতিতে তাদের ষড়যন্ত্রের চোরাবালিতে আটকে গিয়ে বারংবার খেসারত গুনতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় “আরব বসন্ত” নামে নতুন আরেক ষড়যন্ত্রের গ্যাড়াকলে আরব জাহানকে আটকিয়ে চিত্তাকর্ষক “আরব বসন্ত” শব্দের আবর্তে ফেলে আরব বিশ্বকে দারুণ ভাবে আলোড়িত করে সুকৌশলে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধন করে ইসরাইলকে নিরাপদ করার কর্মসূচী বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

 

আরব বিশ্বে “আরব বসন্ত” নামে খ্যাতি পাওয়া গণ-আন্দোলনের ঝড়ের কারণ প্রসঙ্গে যে ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে তা হল এই যে, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতি ও অশোভন আচরনের প্রতিবাদে মোহাম্মদ বোয়াজিজি নামক এক যুবকের আত্নহত্যার মধ্য দিয়ে ২০১০ সালে ১লা ডিসেম্বর তিউনিসিয়ায় গণ ক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়। যা পরবর্তিতে গণ বিদ্রোহে রুপ লাভ করলে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারী ২২ বছরের শাষক দেশটির প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলীর শাষনের পতন ঘটে। গণ-বিদ্রোহে একজন দীর্ঘ মেয়াদী রাষ্ট্র প্রধানের শাষনের পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিঃসন্দেহে। এ ঘটনায় সেই দেশের জনগণের বাক-স্বাধীনতার অধিকার অর্জনের ফলে তাদের পরম আনন্দের বিষয় যেমন রয়েছে; তেমনিভাবে তারই মধ্যে ইঙ্গ-মার্কিনীদের ষড়যন্ত্রের দূর্গন্ধও লক্ষ্য করার মত বিষয় নিহিত রয়েছে। যার বিষবাষ্পের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ক্রমাগতভাবে আশে-পাশের মুসলিম দেশগুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উদাহারণ স্বরুপ, উক্ত বসন্ত বায়ুর ঝাপটা তিউনিসিয়ার পর উত্তর আফ্রিকা আর আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন মিশর, লিবিয়া ও ইয়েমেনে ছড়িয়ে পড়লে সেই সব দেশের দীর্ঘকালের স্বৈরশাষকদের ক্ষমতার অবসান ঘটে।

 

২০১০-১১ সালে তিউনিসিয়ার শাষক প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলীকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে উৎখাতের ঘটনা প্রবাহের সাথে ইঙ্গ-মার্কিনীদের সরাসরি ইন্ধন ছিল কিনা প্রথম অবস্থায় বলা না গেলেও পরবর্তীতে যখন আরব বসন্তের ঢেউ পাশ্ববর্তী আরব দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, তখন কারো বুঝে উঠতে দেরি হয়নি যে, ইসলামের চির শত্রুদের পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা দিয়ে এবং উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইসলাম বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে পরস্পর ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এক জরিপে, ২০১১ সালের পর থেকে ৫ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আরব বসন্তের কারণে অর্থনীতিতে ৬১ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যা ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ঐ এলাকার মোট দেশজ উথপাদনের ৬ শতাংশ। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের লেবাসে জন্ম নেয়া তথাকথিত আরব বসন্ত নামে ইঙ্গ-মার্কিনীদের ষড়যন্ত্রের কবলে মধ্যপ্রাচ্যের অবশিষ্ট দেশগুলো পড়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায়না। ইতিমধ্যে তো মিশর, লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন দুমড়ে-মুচড়ে শেষ হয়ে গেছে, বর্তমানে সিরিয়াকেও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে শেষ করে দেয়া হচ্ছে, যার সঠিক ক্ষয়ক্ষতি হিসাবে নির্ণয় করা সম্ভবপর নয়। শেষ পর্যন্ত সিরিয়ার মূল ভূখন্ডকে বিভিন্ন নামে ছিন্ন-ভিন্ন করে মুসলিম শক্তির উথানকে ঠেকানোর জন্য ইসরাইলী স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে তারা এগুবার চেষ্টায় বিভোর। ইরাকের বেলায়ও একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে তারা ষড়যন্ত্রে সক্রিয় রয়েছে।

আরব বিশ্ব নিয়ে ইঙ্গ-মার্কিনী তথা ইহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্রের কথা নতুন কিছু নয়। এই সব ষড়যন্ত্রগুলো মোকাবেলা করে নিজেদের যাবতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি দেখার জন্য দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পর ২২ সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে আরব লীগ গঠিত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসলাম বিরোধী পরাশক্তি গুলোর মদদে আরব বিশ্বের বিষফোড়া হিসাবে অবৈধ ইসরাইল নামে ইহুদী রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু তারপরও আরব বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা আরব লীগ কার্যত; কোন ভূমিকাই পালন করতে পারেনি বরং অনেকেই নীরবে সহযোগিতা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

পরবর্তিতে ১৯৬৯ সালে মুসলিম রাষ্ট্র গুলোর সমন্ময়ে সর্ববৃহৎ মুসলিম উম্মাহ ভিত্তিক সংগঠন মরক্কোর রাজধানী রাবাতে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এর আত্ন প্রকাশ হয়। আরব লীগও এই সংস্থার সদস্য। এত শক্তিশালী দুইটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থাকা সত্তেও ফিলিস্তিনসহ মুসলিম দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় কী ভূমিকা পালন করতে পারছে; তা কার অজানা নয়। অপর দিকে মার্কিন সমর্থন নিয়ে আজ ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল ফিলিস্তিনকে প্রায় গ্রাস করে চলেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ভোটে যখন ফিলিস্তিন নিয়ে আনিত প্রস্তাব গৃহীত হয়, তখন ক্ষোভে ফেটে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দাম্ভিক রাষ্ট্রপতি মিঃ ট্রাম্প তাড়াহুড়া করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের দূতাবাস ওখানে স্থানান্তরিত করার ঘোষনা দিয়ে উত্তেজনায় ঘি ঢেলে দেয়। এভাবে শুরু থেকে সবসময় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে উসকে দিতে নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছে।

 

কিন্তু প্রশ্ন জাগে, মুসলিম উম্মাহর কাছে প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক এত শক্তি থাকা সত্বেও আরব লীগ ও ওআইসি নতুন বসন্তের জন্ম দিতে পারছেনা কেন?

 

লেখকঃ ভাইস চেয়ারম্যান, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ

Comments

comments