জনাব মৌলভি শাঁহ আবু বকর সিদ্দিক সাহেব নকশেবন্দী মুজাদ্দেদি (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
জন্ম নোয়াখালী সেনবাগে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে । প্রান প্রিয় মা জননী ইনতেকাল করলে শোকে দেশ ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতায় কৈশোর বয়সে নানা মুখি সংগ্রাম করার পাশাপশি পড়াশুনা করতেন বিভিন্ন উস্তাদ্ গণের কাছে । তার আগ্রহের কারনে কলকাতা থেকে লাখনোউ,লাখনোউ থেকে সেরহিন্দ পর্যন্ত তিনি কাজের পাশাপশি ইলম বিশেষ করে ইলমে দ্বীন শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। পরবর্তিতে তিনি কলকাতায় আন্তজাতিক কম্পানি বাটাতে উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে দৈর্ঘ্য সময় নিয়োজিত ছিলেন ।এর পর বাংলাদেশে এসে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আত্বনিয়োগ করেন।এক সময় তিনি ঢাকা শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন । হিন্দুস্থান থাকতেই হজরত শাঁহ মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ খান রামপুরী (রহঃ) হুজুরের সাক্ষাত লাভ করেন এবং বায়াত গ্রহন করেন ।সিদ্দিক সাহেব হযরত সাহেবের খুব প্রিয় শাগরেদ ছিলেন ।ফানাফিশ শাঈখ ছিলেন ।হযরত সাহেব হইতে তরিকতের গভীর শিক্ষা নেন । প্রিয় নবীজী (সঃ) এর সুন্নত প্রতিপালন , কম কথা বলা , হামাওয়াক্ত জিকির আজকার তার চরিত্রর মহৎ গুন ছিল। তিনি হজরত কিবলার পরামর্শে ও ইজাজতেই গাছতলা দরবার শরিফের পীর সাহেব মাওলানা খাজা তৈয়বুল ইসলাম (রহঃ) হুজুর কে তার প্রান প্রিয় কন্যার সহিত বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মৌলভি শাঁহ আবু বকর সিদ্দিক সাহেব তাঁর মুর্শিদকে খুব ভালবাসতেন । কিছুটা দিওয়ানাপন ছিল। হজরত শাহ মোহাম্মাদুল্লাহ খাঁন রামপুরী (রহঃ) ঢাকায় সিদ্দিক সাহেবের বাসা মগবাজার নয়াটোলায় উঠতেন এবং প্রায় দীর্ঘ ৩০ বৎসর সিদ্দিক সাহেবের বাসাই ছিল ঢাকা খানকা ।ঢাকার খানকা পরিচালনা এবং পীর ভাইদের খানা পিনা হজরত কেবলার বাংলাদেশ সফরের যাবতীয় ব্যাবস্থা বিষয়ে সিদ্দিক সাহেব অত্যন্ত যত্নবান্ ছিলেন । সিদ্দিক সাহেবের বাড়ী সে সময় ওলি আউলিদের দরবারে পরিনত হয়েছিল ।বিভিন্ন দরবারের পীর দরবেশ মুফতি সাহেবদের সমাগম জমতো । ঢাকা শহরের বড় বড় আলেম গন যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শ করতে সব সময় উপস্থিত থাকতেন ।এখানে বিশেষকরে মুফতি আমিনুল ইসলাম সাহেব (রাঃ) সে সময়ের ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা অধ্যাক্ষ । মাওলানা ইমাদউদ্দিন (বর্তমান পীর সাহেব ফুলতলী) সহ নানা গুরত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গের সমাগম ঘটতো ।এক অনন্য আসাধারন পরিবেশ তিনি তৈরি করে ছিলেন । সিদ্দিক সাহেব একজন দানশীল মানুষ ছিলেন ।বিশেষ করে পরহেজগার হুজুরদের খুব পছন্দ করতেন ।কিছু দিন পরপরই তিনি কোন না উছিলায় বাসায় মিলাদের আয়োজন করতেন । শহরের নামিদামী মাশায়েখ গনের উপস্থিতিতে আলীশান মিলাদ শরিফের আয়োজন হতো । পোলাও -কোরমা নিজে আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে খেতে খুব পছন্দ করতেন । তিনি আনেক মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মানে ভূমি সহ নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন সব সময়। নয়াটোলা নোমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও চেয়ারম্যান বাড়ী মসজিদ নির্মানে তিনি বিশেষ ভুমিকা রাখেন । সিদ্দিক সাহেব দরবেশ হুজুর কে অত্যন্ত সমিহ করতেন ভালবাসতেন। সকল সময় সম্মান করে আব্বা বলে সম্মোধন করতে । তিনি দরবেশ হুজুরের সম্মানে তার পরিবারের ছেলে মেয়েকে নিজ সন্তানের মত লালন পালন করেছেন । কিছু ক্ষেত্রে বেশি করেছেন । অত্যন্ত শিক্ষিত ও তরিকতের একজন পন্ডিত হওয়ার কারনে এলাকায় ও সমাজে সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন। হজরত কেবলা ঢাকা থেকে বিদায়ের সময় সিদ্দিক সাহেব বুজুর্গ বয়সেও শিশুর মত কাঁদতেন। হজরত কেবলা সকল সময় সিদ্দিক সাহেবের ব্যাপারে খুব পেরেশান থাকতেন । পীরের ভালবাসায় সিক্ত মুরীদের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক সাহেব (রহঃ) । সিদ্দিক সাহেবের বেসালতের সময় হজরত কেবলা সহ শাজারার তামাম মাশায়েখ গন উপস্থিত হয়ে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন কর বেসালত প্রাপ্ত করান । আল্লাহ আমার নানাজান হুজরের দারাজাত ও মাকামাত আরো বুলন্দ করুন । জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন । আমিন । ঢাকা বনানী কবর স্থানে পারিবারিক কবর স্থানে তিনি শায়িত আছেন । সিদ্দিক সাহেব জনাব হযরত শাহ মোহাম্মাদুল্লাহ খান রামপুরী (রহঃ) একজন বিশিষ্ট খলিফা ছিলেন । তবে তিনি কাউকে মুরিদ করেন নাই ।
ছবিঃ মৌলভি শাঁহ আবু বকর সিদ্দিক সাহেব নকশেবন্দী মুজাদ্দেদি (রহঃ)
লেখকঃ সাহেবজাদা খাজা মুহাম্মদ মাসুম , গাছতলা দরবার শরীফ
পিতাঃ গাছতলা দরবার শরিফের পীর সাহেব মাওলানা খাজা তৈয়বুল ইসলাম (রহঃ)