খবরের বিস্তারিত...


রাসূলনোমা পীর হযরত শাহ সূফী  সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর কর্ম জীবন

 

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর প্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন পীরে কামেল রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ। নবী করীম সাঃ এর প্রতি অগাধ প্রেম ও ভালবাসার কারণেই তিনি সম্পূর্ণ বিরল রাসূলনোমা’উপাধি লাভ করিয়াছেন। আর দিওয়ানে ওয়াইসী’ নামক অনন্য অসাধারণ ফারসী ভাষায় মহাকাব্য (কিতাব) রচনা করিয়া জগতের বুকে অমর হইয়া আছেন বিশ্ব বরেণ্য সুবিখ্যাত বাঙ্গালী ফার্সী মহাকবি হিসাবে।

হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পূর্ব্ব পুরুষগণের আদি নিবাস ছিল আরব দেশের পবিত্র মক্কা নগরীতে। তিনি সাইয়্যেদানা হযরত আলী রাঃ ও গাউসুল আজম হযরত বড়পীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদির জিলানী রাঃ এর বংশধর। তাঁহার প্রথম পুরুষ ছিলেন কুরাইশ সম্প্রদায়ের হাসেমী গোত্র ভুক্ত। কালের প্রবাহে তাঁহার পূর্ব্ব পুরুষের প্রধান শাখা আরব হইতে ইরাকে এবং সেখান হইতে ইরানে হিজরত করেন। সেখানে কয়েক পুরুষ বসবাস করিবার পর মুখ্য একটি শাখা প্রথমে গজনী, অতঃপর দিল্লীতে বসতি স্থাপন করেন। প্র-পিতামহের ইহধাম হইতে বিদায় গ্রহণের পর হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর পিতামহ দিল্লী পরিত্যাগ পূর্ব্বক বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান-হাজি পাড়া নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এই গ্রামেই তাঁহার পিতা কেবলা জন্ম গ্রহণ করেন।

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর প্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন পীরে কামেল রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ। নবী করীম সাঃ এর প্রতি অগাধ প্রেম ও ভালবাসার কারণেই তিনি সম্পূর্ণ বিরল রাসূলনোমা’উপাধি লাভ করিয়াছেন। আর দিওয়ানে ওয়াইসী’ নামক অনন্য অসাধারণ ফারসী ভাষায় মহাকাব্য (কিতাব) রচনা করিয়া জগতের বুকে অমর হইয়া আছেন বিশ্ব বরেণ্য সুবিখ্যাত বাঙ্গালী ফার্সী মহাকবি হিসাবে।

হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পূর্ব্ব পুরুষগণের আদি নিবাস ছিল আরব দেশের পবিত্র মক্কা নগরীতে। তিনি সাইয়্যেদানা হযরত আলী রাঃ ও গাউসুল আজম হযরত বড়পীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদির জিলানী রাঃ এর বংশধর। তাঁহার প্রথম পুরুষ ছিলেন কুরাইশ সম্প্রদায়ের হাসেমী গোত্র ভুক্ত। কালের প্রবাহে তাঁহার পূর্ব্ব পুরুষের প্রধান শাখা আরব হইতে ইরাকে এবং সেখান হইতে ইরানে হিজরত করেন। সেখানে কয়েক পুরুষ বসবাস করিবার পর মুখ্য একটি শাখা প্রথমে গজনী, অতঃপর দিল্লীতে বসতি স্থাপন করেন। প্র-পিতামহের ইহধাম হইতে বিদায় গ্রহণের পর হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর পিতামহ দিল্লী পরিত্যাগ পূর্ব্বক বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান-হাজি পাড়া নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এই গ্রামেই তাঁহার পিতা কেবলা জন্ম গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার বর্ত্তমান লোহাগড়া থানা প্রাক্তন সাতকানিয়া থানা, গ্রামের নাম- পুরাতন আঞ্চলিক ভাষায় -মল্লিক  ছোয়াং’নামে পরিচিত ছিল। বর্ত্তমানে এই গ্রামটির নামকরণ হইয়াছে মল্লিক সোবহানÑহাজি পাড়া’, ইউনিয়ন-আমিরাবাদ, পোঃ- পদুয়া, জেলা- চট্টগ্রাম।

এই গ্রামেই হযরত ওয়াইসী রাঃ ১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দে শুভ জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ ওয়ারেস আলী রাঃ এবং মাতার নাম হযরত হাফেজা সৈয়্যেদা সাঈদা খাতুন রাঃ। মাতার পূর্ব্ব পুরুষগণ ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বংশধর। হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর জন্ম গ্রহণের পূর্ব্বের চল্লিশ দিবাগত রাত্রে তাঁহার পিতা-মাতাকে হযরত আলী রাঃ ও স্বর্গরাণী মা ফাতেমা যাহরা রাঃ স্বপ্নে দর্শন দান করিয়া এরশাদ করিলেন যে, নব প্রসূতের নাম যেন ফতেহ আলী’ রাখা হয়। নিজের পবিত্র নামের সহিত মিল রাখিয়া হযরত আলী রাঃ এই নামকরণের নির্দেশ দিয়াছিলেন।

অতি শৈশব হইতেই হযরত ওয়াইসী হুজুর রাঃ সর্ব্বদা সহাস্য বদনে থাকিতেন। নীরবে একাকী যেন কোন অদৃশ্য বন্ধুকে নিয়া আপন মনে খেলা করিতেন। আজানের সময় নীরব হইয়া হাত-পা নাড়া-চাড়া বন্ধ করিয়া আজানের সুমধুর ধ্বনি শ্রবণ করিতেন। রমজানের দিবাভাগে দুধ বা অন্য কিছু পান করিতেন না। কোন আহার গ্রহণ করিতেন না। তাহাতে সকলেই বুঝিতে পারিলেন যে, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনিও রোজা পালন করিতেছেন। শৈশবে তিনি কখনো উলঙ্গ হইতে চাহিতেন না। যখন তখন মলমূত্র ত্যাগ করিয়া মায়ের পরিধানের কাপড় ও বিছানা অপবিত্র করিতেন না। জন্মলগ্ন হইতেই তাঁহার সুষমামণ্ডিত সুনিয়ন্ত্রিত ও রীতিসিদ্ধ আচরণে সকলে অত্যন্ত মোহিত ছিলেন।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ কৈশোরে পদার্পণ করিবার পূর্ব্বে তাঁহার বীর পিতা তাঁহাদেরকে আল্লাহর হেফাজতে রাখিয়া বালাকোট শিখ সমরে যোগদান করিয়া ধর্ম্ম যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। ইহার কিছু দিন পরেই তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সহিত আধ্যাত্মিক সিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের পার্ব্বত্য অঞ্চলের অরণ্যে গমন করেন। আল্লাহ পাকের ধ্যানে তাঁহারা দিন অতিবাহিত করিতে থাকেন। ক্ষুধা পাইলে গাছের পাতা বা ফলমূল খাইতেন এবং তৃষ্ণা নিবারণে ঝর্ণার স্বচ্ছ সুপেয় পানি পান করিতেন। কখনো তাঁহাদের জন্য আসিত স্বর্গের খাদ্য পানীয় ভরা খানচা।

হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ গৃহে প্রত্যাবর্ত্তনের কয়েক মাস পরে তাঁহার মাতা তাঁহাকে নিয়া মক্কা শরীফে হিজরত করিবার মানসে চট্টগ্রাম হইতে কলিকাতা অভিমুখে জলপথে যাত্রা করেন। কিন্তু অতি মর্মন্তুদ যে, কলিকাতার অনতি দূরে হুগলী নদীর মোহনার নিকটবর্ত্তী এলাকায় জাহাজ ডুবি হইয়া তাঁহার মাতা পরলোক গমন করেন। আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে হযরত খাজা খিজির আঃ আসিয়া হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃকে অলৌকিক ভাবে উদ্ধার করিয়া হুগলী নদীর মোহনার তীরবর্ত্তী লোকালয়ে রাখিয়া যান।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কোন বিষয় একবারের বেশি দ্বিতীয় বার পড়িবার প্রয়োজন হইত না। মাত্র দশ বৎসর বয়সে তিনি পবিত্র কুরআনে ক্বারী হইয়াছিলেন। তাঁহার আধ্যাত্মিক শিক্ষার হাতে খড়ি হইয়াছিল নিজ পিতা কেবলা কামেল অলি হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ ওয়ারেস আলী রাঃ এর সান্নিধ্যে। মাত্র চার হইতে সাত বৎসরের মধ্যে তিনি কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দীয়া, মোজাদ্দেদিয়া তরীকায় প্রাথমিক ভাবে দীক্ষা প্রাপ্ত হইয়া হৃদয়কাড়া পুষ্পের ন্যায় আকর্ষণীয় হৃদয়গ্রাহী সুগন্ধি বিলাইতে শুরু করেন।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ প্রথমে হুগলী শহরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন মাদ্রাসায় বিদ্যা শিক্ষা করেন। তিনি অতিশয় মেধাবী ছিলেন বলিয়া সরকারী বৃত্তি সহকারে উক্ত মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন। এখানে তিনি পবিত্র কুরআনের তাফসীর, হাদীস শরীফ, ফেকাহ, অসুল, মান্তেক প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি আরবী, উর্দু ও ফার্সী সাহিত্যে প্রভূত পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।

তিনি প্রকাশ্য ভাবে যাবতীয় নিসবত অর্জন করিবার মানসে হাজী গাজী হযরত শাহ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ এর নিকট গমন করেন। তিনি তাঁহার পবিত্র হস্ত মোবারকে বয়াত গ্রহণ করিয়া তাঁহার শিষ্যত্ব বরণ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দীয়া ও মোজাদ্দেদিয়া তরীকার খেলাফত অর্জন করেন।

হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ কৃচ্ছ সাধন ও মোরাকাবা মোশাহাদার মাধ্যমে দিনাতিপাত করিতেন। তাঁহার প্র্রাত্যহিক ইবাদত-বন্দেগীর বিবরণ তুলিয়া ধরা কাহারো পক্ষে সম্ভব নয়। বাহ্যিক ভাবে যতটুকু জানা যায় তাহা তুলিয়া ধরিলাম-

তিনি ফজরের নামাজান্তে ওজিফা, দরূদ শরীফ পাঠ ও কুরআন তেলাওয়াত করিতেন। সারারাত জাগিয়া ইবাদত করিতেন। তিনি দরূদ শরীফকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। সমস্ত ইবাদতের মধ্যেই তিনি রাসূল পাক সাঃ এর মহব্বতে বেকারার থাকিতেন। প্রাত্যহিক ওয়াক্তের নামাজের ন্যায় এশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করিতেন। রমজানে রোজা রাখিতেন, শবে কদরে এতেকাফে বসিতেন, শবে বরাত ও আশুরায় রোজা পালন করিতেন। আশুরা, শবে বরাত, শবে মিরাজ, আখেরী চাহার শোম্বা, ফাতেহা-ই-দোয়াজ দাহম, ফাতেহা-ই-ইয়াজ দাহমে বিশাল আয়োজনে মিলাদ মাহফিল করিতেন। ইহা তাঁহার চিরাচরিত, যথারীতি নিয়ম ও অভ্যাস ছিল।

তিনি ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার পুনাশিতে বসত বাড়ী নির্মাণ করিয়া স্ব-পরিবারে বসবাস করিতেন এবং কলিকাতা হইতে মাঝে মধ্যে সেখানে যাইয়া থাকিতেন। তিনি কলিকাতা শিয়ালদহের নিকটবর্ত্তী মির্জাপুর পার্কের উত্তর দিকে মির্জাপুর ষ্ট্রীট ও আমহার্স্ট ষ্ট্রীটের সংযোগ স্থলের উপর একটি মঠ কোঠাতে বসবাস করিতেন। সে সময়ে হযরত খাজা খিজির আঃ, হযরত মা ফাতেমা রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত ওসমান গণি রাঃ, হযরত আবু বকর রাঃ ও হযরত উমর রাঃ আগমন পূর্ব্বক তাঁহাকে আপন আপন অমূল্য নিসবত ব্যক্তিগত ভাবে দান করিয়া যান।

ইহার পর নূরনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা  সাঃ তাঁহার নিকট তশরীফ আনেন এবং তাঁহাকে অসীম স্নেহে নিজ পুত্র সম্ভাষণে আপন পূতবক্ষে জড়াইয়া ব্যক্তিগত ভাবে আপন পবিত্র ও মহার্ঘ্য নিসবত দান করিয়া উভয় জগতে মহাভাগ্যবান করেন। পরবর্ত্তী সময়ে নবীজী সাঃ পুনঃ আবির্ভূত হইয়া এরশাদ করেন যে, যখনই তিনি ইচ্ছা করিবেন তখনই নিদ্রা ও জাগরণে নবী পাক সাঃ এর জেয়ারত লাভ করিবেন। সে অবধি তিনি রাসূলনোমা’উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। সব সময় তিনি রাসূলপাক সাঃ এর দর্শন লাভ করিতেন। তিনি তাঁহার বহু মুরিদকে রাসূল পাক সাঃ এর দর্শন লাভ করাইয়া দিয়াছেন। হযরত রাসূলে করীম সাঃ এর দর্শন লাভের মানসে তাঁহার নিকট আরজ পেশ করিলে তিনি দয়াপরবশ হইয়া তাহাদের মনোবাসনা পূর্ণ করিতেন।

আধ্যাত্মিক বা রূহানী জগতে ওয়াইসিয়া নামে অতিশয় মর্যাদা পূর্ণ ও প্রবলতম আধ্যাত্মিক রূহানী শক্তি সম্পন্ন খোদা প্রাপ্তির একটি অতি উত্তম তরীকা রহিয়াছে। অতি অল্প সংখ্যক আউলিয়া ইহা লাভ করিয়াছেন। কেহ স্বেচ্ছায়, আকাক্সক্ষা বা প্রার্থনা করিয়া ইহা লাভ করিতে পারে না। ইহা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার এনায়েত, ফজল ও রহমতের দ্বারা লাভ করা যায়। সম্পূর্ণ রূপেই তাহা আজলী ও তকদীরী রূহানী সম্পর্ক। রাসূলনোমা হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ হযরত ওয়ায়েস করণী রাঃ হইতে রূহানী দীক্ষা ও শক্তি লাভ করিয়া ওয়াইসিয়া তরীকার ফয়েজ, নেজবত ও  খেলাফত লাভ করিয়াছিলেন।

ইহা ব্যতীত তিনি মাসুমিয়া ও সোহরাওয়ার্দীয়া তরীকার ফয়েজ-নেসবত, ও খেলাফত লাভ করিয়াছেন। তিনি সর্ব্বমোট ৭টি তরীকা যথা- কাদেরিয়া, চিশতিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দীয়া, ওয়াইসিয়া, মাসুমিয়া ও সোহরাওয়ার্দিয়া তরীকার খেলাফত লাভ করিয়া পীর-মোর্শেদের মর্যাদা লাভ করিয়াছেন এবং এই সাতটি তরীকাতেই তিনি মুরিদ করিতেন।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ মারেফাতের উচ্চ শিখরে উন্নীত হইয়া খোদাতায়ালার অসীম রহমতে প্রথমত কুতুবুল এরশাদ নামক উচ্চ পদটি লাভ করিয়াছিলেন। অতঃপর ক্রমশঃ আধ্যাত্মিকতার আরও উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়া ফরদিয়াতের মোকামে উন্নীত হইয়া ফরদ হইয়াছিলেন। পরে তিনি সমধিক উন্নত হইয়া কুতুবুল ওয়াহদত নামক অতি সুউচ্চ পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। একদা রমজান মাসে হযরত রাসূলুল্লাহ সাঃ কর্ত্তৃক তিনি বঙ্গ, আসাম ও বিহারের প্রধান কুতুবুল আলম পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ইহার পর তিনি গাউসে জামান পদ প্রাপ্ত হন। তিনি মুহূর্ত্তের মধ্যে আপন অস্তিত্ব ভুলিয়া হযরত রাসূলে পাক সাঃ এর মধ্যে একাকার হইয়া যাইতেন বলিয়া তাঁহাকে ফানা ফির-রাসূল’উপাধিতে অলংকৃত করা হয়।

কর্মময় জীবনে তিনি কলিকাতা হাইকোর্টের ফার্ম বিভাগের প্রধান কর্ম্মকর্ত্তা পদে চাকরি নেন। তখন হইতে তিনি জন সাধারণকে ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা দিতে থাকেন এবং মুরিদ করিতে আরম্ভ করেন। ইহার পর তিনি পার্ক সার্কাসের কড়েয়া রোডের আহমদ কসাইয়ের মসজিদের নিকটবর্ত্তী জনাব বেগ সাহেবের বেগ বাগান রো’ কুটিরে স্বপরিবারে বাস করিতেন। পরবর্ত্তীতে তিনি কলিকাতা মেটিয়া বুরুজে অবস্থানকারী অযোধ্যার পদচ্যুত বিখ্যাত নওয়াব শাহ ওয়াজেদ আলীর প্রাইভেট সেক্রেটারী পদে নিযুক্ত হন। অতঃপর তিনি পলিটিক্যাল পেনশন অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট এর পদে যোগদান করেন। এই সময় হইতে তিনি বিবি সালেটের মসজিদ সংলগ্ন কুঠিতে বসবাস করিতে থাকেন। অতিশয় দায়িত্ব পূর্ণ ও সম্মানের সহিত চাকরি জীবন সমাপ্ত পূর্ব্বক তিনি জন সাধারণকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা প্রদানের জন্য সম্পূর্ণ রূপে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

কীট-পতঙ্গ যেমন মরিয়া হইয়া আলোক শিখার পানে ধাবিত হয়, তেমনি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্য প্রদেশ, যুক্ত প্রদেশ, পাঞ্জাব, ভূপাল এমন কি সুদূর বলখ, বদাখশান, খোরাশান ও মদিনা শরীফ হইতে সত্য সন্ধানীগণ সমাগম হইয়া সিরাতুল মুস্তাকিম’ পাওয়ার আশায় তাঁহার পবিত্র হাতে বায়াত হইতে লাগিল।

তাঁহার পঁয়ত্রিশ জন মুরিদ খলিফার প্রত্যেককেই রাসূল করীম সাঃ এর প্রেম, ভালবাসা, আনুগত্য ও আধ্যাত্মিক জগতের পূর্ণ শিক্ষা-দীক্ষা দান করিয়া পরিপূর্ণ ভাবে কামেল পীরের মর্যাদা দান করিয়াছেন। তাঁহার পঁয়ত্রিশ জন বিশিষ্ট মুরিদ ও খলিফার নাম পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী’কিতাবে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।

তাঁহাদের মধ্যে কয়েক জন বিশিষ্ট মুরিদ ও খলিফা হইলেন হযরত মাওলানা শাহ সূফী আকবর আলী রাঃ, হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ আমজাদ আলী রাঃ, শামসুল উলামা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ, হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকী রাঃ, শামসুল উলামা হযরত মাওলানা শাহ সূফী গোলাম সালমানী রাঃ, শামসুল উলামা মাওলানা মির্জা আশরাফ আলী রাঃ, হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ওয়াজেদ আলী রাঃ, হযরত মাওলানা সৈয়্যেদ আজম হুসাইন রাঃ প্রমুখ। ইহা ব্যতীত ঝাঁকে ঝাঁকে লাখে লাখে জ্বীনও তাঁহার পদ প্রান্তে নিজেদের সঁপিয়া দিয়াছিলেন।

বেগ বাগান রো’কুটিরে অবস্থান কালে রাসূলনোমা হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ ফার্সী ভাষায় দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাব খানি রচনা করেন। অতি উচ্চাঙ্গের মৌলিক এই মহাকাব্যে হযরত রাসূলে করীম সাঃ এর এশ্কে মধুর প্রেম পূর্ণ, ঝংকার সম্পন্ন আধ্যাত্মিক লহরীময় গযল ও কাসিদা রহিয়াছে। মহাকাব্যটি রচনা করিয়া তিনি ফার্সী মহাকবি হিসাবে সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করিয়াছেন। তাসাউফ পন্থী আশেকে রাসূল সাঃ গণের জন্য এই কিতাব খানি মহামূল্যবান ও অত্যন্ত জরুরি।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী’ মহাকাব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে যে, নবী করীম সাঃ এর প্রতি প্রেম-ভালবাসাই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন ও নাজাত পাওয়ার একমাত্র পথ। তিনি তাঁহার ভক্ত অনুসারী গণকে সর্ব্বদা নবী করীম সাঃ এর প্রেম ভালবাসা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিতেন।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ নিজ আয়ের এক-তৃতীয়াংশ সংসার পরিচালনার জন্য ব্যয় করিতেন। বাকি টাকা অসহায় নিরন্ন, দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করিতেন। তিনি খুব সামান্য আহার করিতেন শুধু জীবন রক্ষার নিমিত্তে যতটুকু প্রয়োজন। রসনা বিলাসের নিমিত্তে কখনো আহার করিতেন না। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নয়নমণি হযরত ইমাম হাসান রাঃ ও হযরত ইমাম হোসাইন রাঃ এর কথা স্মরণ করিয়া তিনি কখনো তিন চুমুকের অধিক পানি পান করিতেন না। কারবালার কথা স্মরণ করিয়া তিনি আহাজারি ও রোদন করিতেন।

হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর ওফাতের দুই মাস পূর্ব্বেই তাঁহার অন্যতম প্রিয় মুরিদ ও খলিফা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী সুরেশ্বরী রাঃ ২০শে আশ্বিন কাশফের মাধ্যমে জানিতে পারিলেন যে, সমস্ত আকাশ জুড়িয়া লক্ষ লক্ষ তারকা আনন্দে মুখরিত। এই সম্পর্কে অন্য একটি অধ্যায়ে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। এই ঘটনার পরেই হযরত সুরেশ্বরী রাঃ হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর আদেশে তাঁহার জাহেরান অবস্থায় দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ নির্মাণ করিয়াছিলেন।

হযরত সুরেশ্বরী রাঃ নিজ মোর্র্শেদ কেবলার ওফাতের আলামত জানিতে পারিয়া রোদনরত অবস্থায় নিজ পীর-মোর্র্শেদের নিকট বলিলেন, বাবা! আপনার পর্দা গ্রহণ করিবার পর আমি কেমনে থাকিব ? তখন হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ তাঁহার নিজের জন্য সুরেশ্বর দরবার শরীফে মাজার শরীফ নির্মাণের আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন। নিজ পীর-মোর্র্শেদ কেবলার জীবদ্দশায় হযরত সুরেশ্বরী রাঃ সুরেশ্বর দরবার শরীফে মাজার শরীফ নির্মাণ করিয়াছিলেন।

ইহার দুই মাস পরে, হুগলী জেলার তারকেশ্বর রেল লাইনের নসিপুর ষ্টেশনের নিকটবর্ত্তী মোল্লা সিমলা গ্রামে দাওয়াতে অবস্থানকালে হযরত ওয়াইসী কেবলা অসুস্থ্যতা বোধ করেন এবং তিরোধানের আলামত বুঝিতে পারিয়া সাহাবীগণকে নির্দেশ দিলেন তাঁহাকে কলিকাতায় নিয়া যাওয়ার জন্য। অন্যান্য মুরিদ সহ হযরত শাহ আহমদ আলী সুরেশ্বরী রাঃ তাঁহাকে নিয়া কলিকাতার পথে যাত্রা করিয়াছিলেন। ট্রেন হাওড়া ষ্টেশনের নিকটবর্ত্তী হইলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আকাশে রক্ত মেঘের আবির্ভাব হইয়াছে কিনা? সকলে গগন পানে দৃষ্টিপাত করিয়া আশ্চর্য্য হইয়া অবলোকন করেন, যথার্থই আসমানে রুধির মেঘের সঞ্চার হইয়াছে। এই বিষয় তাঁহার কর্ণ গোচর করিলে তিনি বলিলেন, অল্পক্ষণ পরেই তিনি বেসালে হক্ক লাভ করিবেন। ইহা তারই ইঙ্গিত। এই সময় তিনি বেশ অসুস্থ্যতাবোধ করেন এবং হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী সুরেশ্বরী রাঃকে আগাইয়া আসিতে বলিলেন। হযরত সুরেশ্বরী রাঃ তাঁহার নিকট আসিলে হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ বুকে বুক মিলাইয়া দোয়া করিলেন। তৎপর মহব্বতের সহিত তাঁহার ছের মোবারক হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর কাঁধের উপর রাখিয়া বুকে হেলান দিয়া আরাম অনুভব করিতেছিলেন। এই সময় তিনি মহাপ্রভুর ধ্যানে সম্পূর্ণ আত্মস্থ হইয়া যান।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ ৮ই রবিউল আউয়াল ১৩০৪ হিজরী মোতাবেক ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা ১২৯৩ সনের ২০শে অগ্রহায়ণ বিকাল ৪ টার সময় ট্রেন হাওড়া ষ্টেশনের প্লাটফর্মে প্রবেশ করা মাত্রই তিনি কলেমা শাহাদত স্নিগ্ধস্বরে উচ্চারণ করিয়া সারা জাহানের আপন জন পরিবারবর্গ ও ভক্ত মুরিদ অনুসারীগণকে শোক সাগরে ভাসাইয়া চির অমরালোকে আপন মাবুদের সান্নিধ্যে গমন করেন। তিনি ৬৩ বৎসর হায়াত শরীফে জাহেরান ছিলেন।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী রাঃ ইন্তেকালের পরে যথারীতি গোসল করাইয়া কাফন পরাইয়া কলিকাতা ১নং শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ লেনের বিবি সালেটের মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে আত্মীয়-স্বজন, অসংখ্য ভক্ত, মুরিদান ও জনগণ তাঁহাকে শেষবারের মত এক নজর দেখেন এবং জানাজায় শরীক হন। অতঃপর কলিকাতা মানিকতলার দিল্লীওয়ালা গোরস্থানে তাঁহাকে যথারীতি দাফন করা হয়। ঠিক একই সময়ে বহু লোকের উপস্থিতিতে বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর পবিত্র দেহ মোবারক যথাযোগ্য মর্যাদায় দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে জানাজা হওয়ার পর পূর্ব্বাহ্নে নির্মিত মাজার শরীফে সমাহিত করা হয়। সেই হইতে আজ পর্য্যন্ত দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে তাঁহার মাজার শরীফ সুন্দর ভাবে বিদ্যমান ও যথারীতি পরিচর্যা হইয়া আসিতেছে এবং ভক্তগণ উপস্থিত হইয়া জেয়ারত করিয়া ফয়েজ প্রাপ্ত হইতেছেন।

সন্তান-সন্ততি : হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর দুই পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে শৈশবেই বেলায়েত ও কামালিয়ত প্রাপ্ত হইয়া তাঁহার দ্বিতীয় পুত্র হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল্লাহ আলী রাঃ সাত বৎসর বয়সে এবং দ্বিতীয়া কন্যা হযরত সৈয়্যেদা জোবেদা খাতুন রাঃ যিনি কুরআনে হাফেজা এবং আধ্যাত্মিক গুণ কারামতে অতুলনীয়া হইয়া মাত্র বার বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। তাঁহাদের মধ্যে জীবিত প্রথম পুত্র হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ গোলাম মোস্তফা আলী রাঃ সাহেব উচ্চ শিক্ষিত বেলায়েত প্রাপ্ত কামেল অলি ছিলেন। তাঁহার দুই পুত্র ও দুই কন্যা জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের প্রথম সন্তান হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ মাসউদুর রহমান রাঃ। দ্বিতীয় সন্তান হযরত সৈয়্যেদা তামান্না খাতুন, তৃতীয় সন্তান আলহাজ্জ্ব হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ জানে আলম রাঃ যিনি দিওয়ানে ওয়াইসী’কিতাবের সার্থক অনুবাদক। সর্ব্ব কনিষ্ঠা কন্যা সন্তান হযরত সৈয়্যেদা ফাতেমা খাতুন রাঃ অতি অল্প বয়সেই বেলায়েত ও কামালিয়ত প্রাপ্ত হন।

আল্লাহ পাকের রহমতে আমার (লেখকের) সহিত আলহাজ্জ্ব শাহ সূফী সৈয়্যেদ জানে আলম রাঃ ও তাঁহার কনিষ্ঠ ভগ্নি হযরত সৈয়্যেদা ফাতেমা খাতুন রাঃ এর সহিত সাক্ষাৎ হইয়াছে। তাঁহারা সুনজরে আমাকে স্নেহ ও দোয়া করিয়াছেন। এই জন্য আমি ধন্য মনে করিতেছি।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর সন্তানদের মধ্যে প্রথমা কন্যা হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন মুর্শিদাবাদ জেলার শাহপুরে বসবাস করিতেন। তাঁহাকে রাবেয়া-ই-বাংলা’বা বাংলার রাবেয়া বসরী’ বলা হইত। তিনি দোর্রে মকমুম’বা গুপ্ত মতি’নামেও অভিহিত হন। তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ শাহপুরে নিজ বাড়ীতে অবস্থিত। তাঁহার দুই কন্যা হযরত সৈয়্যেদা সিদ্দিকা খাতুন রাঃ, হযরত সৈয়্যেদা হাজেরা খাতুন রাঃ ও একমাত্র পুত্র হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ এহসান আহমদ মাসুম রাঃ।

হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ এহসান আহমদ মাসুম রাঃ এর চার পুত্র ও পাঁচ কন্যা। তন্মধ্যে প্রথম পুত্র শৈশবে ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় পুত্র মরহুম শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল মতিন জাহাঁগীর রাঃ এর চার পুত্র ও তিন কন্যা। তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ শেরখালী, শাহাজাদপুর, জেলা- সিরাজগঞ্জ। তাঁহার পরিবারবর্গ মাজার শরীফ সংলগ্ন নিজ বাড়ীতে বসবাস করিতেছেন। তৃতীয় পুত্র শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফেরদৌস আহমেদ মাঃজিঃআঃ এর এক পুত্র ও এক কন্যা। তিনি স্বপরিবারে বাড়ী নং- ৫, কিংশুক হার্ট এপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট নং- ২বি পূর্ব্ব, চতুর্থ তলা, সেকশন-২, ব্লক-সি, রাস্তা নং- ১, মীরপুর, ঢাকা-১২১৬ তে বসবাস করিতেছেন। চতুর্থ পুত্র শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবুল বাশার মাঃজিঃআঃ এর দুই পুত্র, তিনি শেরখালী, শাহাজাদপুর, জেলা- সিরাজগঞ্জে বসবাস করিতেছেন। তাঁহারা সকলেই হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর তরীকার সিলসিলা অনুযায়ী কার্য্যক্রম চালাইয়া আসিতেছেন। হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ এর প্রথমা কন্যা সৈয়্যেদা সালেহা বেগম রাঃ, দ্বিতীয়া কন্যা সৈয়্যেদা এলডিস বেগম রাঃ, তৃতীয়া কন্যা সৈয়্যেদা হালিমা বেগম রাঃ, চতুর্থী কন্যা সৈয়্যেদা নাসিমা রাঃ, পঞ্চমা কন্যা আঙ্গুরা বেগম রাঃ।

দেশ বিভাগের কারণে মানিকতলা মুসলমানদের পরিত্যক্ত এলাকায় পরিণত হয়।  হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর মাজার শরীফ অযত্ন ও অবহেলায় পড়িয়া থাকে। দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের বর্তমান গদিনশীন পীর আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী গত ১৯৭২ সালে প্রথম কলিকাতা মানিকতলায় যায়। সেই সময়ে মাজার শরীফের অবস্থা দেখিয়া তিনি সুন্দর মাজার শরীফ নির্মাণ করিবার পরিকল্পনা করেন। তখন হযরত ওয়াইসী পাক রহ. তাঁহার অন্তরে জানাইয়া দেন যে মাজার শরীফ নির্মাণ হইবে বায়তুল মুকাদ্দাস সদৃশ। অতঃপর তিনি ওয়াইসী পাকের মাজার শরীফের রাস্তা পাকা, তাঁহার স্মরণে ওয়াইসী তোরণ নির্মাণ এবং ওয়াইসী পাকের পঁয়ত্রিশ জন খলিফা হুজুরগণের নামফলক নির্মাণ করিয়া দেন। রওজা শরীফের বারান্দাও চতুর্দিকে বর্ধিতকরণ এবং বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা হুজুরের রওজা পাকের উত্তর পশ্চিম কোণে দুই মিনারের মধ্যে গম্বুজে শ্বেত পাথরে রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী হুজুরের ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবে উল্লেখিত ক্রমিক অনুসারে তাঁহার পঁয়ত্রিশ জন মুরিদ ও খলিফাগণের নাম সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করিয়া নামফলক স্থাপন করেন।

হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ দরবার শরীফের ঐতিহাসিক, নৈপূণ্যময় কারুকার্য্যের অবদানের জন্য ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশন, কলিকাতার পক্ষ হইতে হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ.কে ১৯৯৬ খ্রীষ্টাব্দের ২০শে অগ্রহায়ণ পবিত্র ওরোছ শরীফ উপলক্ষে ওয়াইসী (এ্যাওয়ার্ড) পুরস্কার দান করেন। হযরত ওয়াইসী পাক হুজুরের খলিফাগণের সকল আওলাদগণের মধ্যে তিনি প্রথম সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যিনি এই দুর্লভ পুরস্কারে সম্মানিত হন।

অতঃপর হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. হযরত ওয়াইসী কেবলা রহ. এর মাজার শরীফ নির্মানের উদ্দেশ্যে ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ তারিখে ভক্ত-মুরিদ সহকারে কলিকাতায় হযরত ওয়াইসী কেবলার দরবার শরীফে উপস্থিত হন। তাঁহাদের আগমন উপলক্ষে কলিকাতার ওয়াইসী মেমোরিয়ালের উদ্যোগে ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংশ্লিষ্ট সকলকে বাদ আসর এক বিশেষ আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে হাজির হওয়ার দাওয়াত দেয়া হয়। বিকালে একসঙ্গে বসিয়া মাজার শরীফ নির্মাণ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান সকল জনগণ ঐক্যমত পোষণ করে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী হইতে প্রচুর সাড়া পাওয়া যায়। ধর্ম্মীয় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবী মহল এই মহতী কার্য্যে তাহাদের সম্মতি জানান এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

স্থানীয় জনসাধারণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় গত ১২ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ অনানুষ্ঠানিক ভাবে ওয়াইসী কেবলার মাজার শরীফের কাজ শুরু করা হয়। ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ রোজ বৃহস্পতিবার হযরত ওয়াইসী কেবলার পৌত্র ব্যারিষ্টার শাহীদ আলম মানিকতলায় উপস্থিত হইয়া স্বহস্তে ভিত্তি গাঁথিয়া এই মহতী কার্য্যে পূর্ণ উৎসাহ ও সম্মতি জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি লিখিত পত্রে মাজার শরীফের কাজ শুরু করিবার এজাজত প্রদান করেন। তাঁহার এজাজত নামা এই কাজের গতি শতগুণে বাড়াইয়া দেয়। আরও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়া কাজ চলিতেছিল। কিন্তু কতিপয় ভ্রান্তপন্থী বিরুদ্ধবাদীর কারণে নির্মান কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি।

হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৮০ খ্রীষ্টাব্দে ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার পর হইতে তাঁহাদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত প্রতি বৎসর ২০শে অগ্রহায়ণ পবিত্র ওরোছ মোবারক ও আলোচনা সভা কলিকাতা মানিকতলায় তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ ২৪/১, মুন্সীপাড়া লেনে যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত পালিত হইয়া আসিতেছে। উল্লেখযোগ্য অবদান ও কাজের জন্য এই অনুষ্ঠানে ওয়াইসী পুরস্কারও প্রদান করা হয়। পবিত্র ওরোছ শরীফে ওয়াজ, জিকির, মিলাদ শরীফ, স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এমন ধরনের সুস্বাদু তাবাররুক তৈয়ারী করা হয় যেন সকল ধর্ম্মের লোক তাহা গ্রহণ করিতে পারেন।

একই সঙ্গে প্রতি বৎসর ২০শে অগ্রহায়ণ যথাযোগ্য মর্যাদায় রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর ওফাত দিবস উপলক্ষে ঢাকার খানকায়ে সুরেশ্বরী’৩৮৫/সি, মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় পবিত্র ওরোছ শরীফ উদযাপন করা হয়। সেখানে রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর কর্ম্মময় জীবন ও দিওয়ানে ওয়াইসীর পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হয়।

পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ নবী পাক সাঃ এর প্রেম ভালবাসায় সব সময় অধীর থাকিতেন। আর তারই সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটিয়াছে তাঁহার দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবের প্রতিটি ছত্রে, প্রতিটি লাইনে, প্রতিটি চরণে। তিনি ব্যক্তি জীবনে রাসূল সাঃ এর প্রেমের অনুসারী ছিলেন একই সঙ্গে তিনি নিজের আওলাদ ও মুরিদ-খলিফাগণকে সেই পথে পরিচালিত করিয়াছিলেন। দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবে তিনি একই নির্দেশনা দান করিয়াছেন পরবর্ত্তী ভক্ত-অনুসারীদিগকে অনুসরণ করিবার জন্য। তিনি রাসূল সাঃ এর নিগূঢ় প্রেমমালা দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবে বর্ণনা করিলেও এই কিতাবখানা তাঁহার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় নাই।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর জ্যেষ্ঠ কন্যা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন (পীর দাদী আম্মা) রাঃ এর স্বামী ছিলেন মুর্শিদাবাদের জমিদার হযরত মীর হোসেন আলী রাঃ। তাঁহার প্রথমা স্ত্রী বিয়োগ হওয়ায় তিনি সৈয়্যেদা জোহরা খাতুনকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। তাঁহার প্রথমা স্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র মীর হাসান আলী রাঃ। হযরত জোহরা খাতুন রাঃ তাঁহাকে নিজের গর্ভজাত পুত্রের ন্যায় আদর-স্নেহে লালন-পালন করেন। একই ভাবে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃও তাঁহাকে স্বীয় দৌহিত্রের ন্যায় ভালবাসিতেন। ফলে তিনি হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর সান্নিধ্য লাভ করিয়া প্রভূত আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধন করিতে সক্ষম হন।

হযরত ওয়াইসী কেবলার ইন্তেকালের পর তাঁহার রচিত পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী’কিতাবের পাণ্ডুলিপি তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যা কুতুবুল আকতাব হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ এর নিকট পরম যতেœ রক্ষিত ছিল। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর ওফাতের ১২ বৎসর পর ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে হযরত মা জোহরা খাতুনের অনুগ্রহ ও এজাজতক্রমে হযরত মীর হাসান আলী দিওয়ানে ওয়াইসী’কিতাবের পাণ্ডুলিপি প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিতাবখানা কলিকাতা গাউসিয়া প্রেস হইতে প্রথম প্রকাশিত হয়। সেই সময় এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ২০৮। উল্লেখ্য, সেই সময়ে হযরত মা জোহরা খাতুনের গর্ভজাত প্রথম পুত্র হযরত এহসান আহমদ মাসুম ছিলেন কিশোর বয়সের।

‘দিওয়ানে ওয়াইসী’কাব্য গ্রন্থে মোট ১৭৯টি গজল ও ২৩টি কাসিদা আছে। দিওয়ানে ওয়াইসীর পরবর্ত্তী বর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩১ নিয়ে কলিকাতার পুস্তক প্রকাশক হাজী আবদুল কাইয়ুম দ্বারা কানপুর কাইয়ুমী প্রেস হইতে দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হয়।

উক্ত কাব্য গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণ ১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে হাজী আবদুল কাইয়ুম কর্তৃক উক্ত কানপুর কাইয়ুমী প্রেস হতে তৃতীয়বার মুদ্রিত হইয়াছে।

রাসূল সাঃকে নিবেদিত ফার্সী ভাষায় রচিত হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবখানি তিনবার প্রকাশিত হইলেও ইহার সম্পূর্ণ বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয় অনেক দেরিতে। অনেক মহামনীষী এই কিতাব বঙ্গানুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের অনেকের অবদান স্মরণযোগ্য।

বঙ্গানুবাদ কার্য্যে যে সকল মহামনীষী বিশেষ অবদান রাখিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে প্রথমেই আসে বাবা ওয়াইসী পীর কেবলার পৌত্র হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ জানে আলম রাঃ হুজুরের নাম। তিনি পূর্ণাঙ্গ দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবের সার্থক বঙ্গানুবাদ করেন। যাহা দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের বর্তমান গদিনশীন পীর আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী ২০০১ খ্রীষ্টাব্দের ৬ ই ডিসেম্বর মোতাবেক ২০ শে অগ্রহায়ণ, ১৪০৮ বাংলা সনে হযরত ওয়াইসী কেবলার পবিত্র ফাতেহা শরীফের দিনে প্রথম প্রকাশ করেন।

হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ জানে আলম রাঃ অনূদিত দিওয়ানে ওয়াইসীর প্রথম গজলটি এখানে তুলিয়া ধরা হইল :

গযল 

আমার দিওয়ানের প্রথম ছন্দ মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রেম হইতে উদ্ভূত

তাঁহার ছন্দের প্রেমের সূর্য আমার বুকে আগুন জ্বালাইয়া দিয়াছে।

প্রত্যেক শব্দের তলে আমার প্রাণ দগ্ধকারী ক্রন্দন লুকায়িত আছে।

প্রত্যেকটি অক্ষরের নীচে সুপ্ত আগুন নিহিত আছে।

প্রতি গজল অগ্নিকুণ্ড প্রতি ছন্দ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ

আমার ছন্দের প্রতিটি ছত্র প্রজ্বলিত অগ্নিসম।

হে আমার প্রেমের রাজ্যের বাদশাহ্ পাগলামিই আমার স্বভাব।

তোমার গলির ধূলিই আমার সিংহাসন তোমার গলিই আমার প্রাসাদ।

আমার বুকের সর্ব্বত্র তোমার প্রেমের ফুলের আঘাতে জর্জরিত হইয়া আছে।

আমার ধ্বংস প্রাপ্ত প্রাণ পুষ্পোদ্যানে পরিণত হইয়াছে।

বন্ধুর মুখের চেহারা আদি সৃষ্টির সৌন্দর্যের বিকাশ।

বন্ধুর চেহারায় আদি নূরের উদয় দেখা যায়।

সে যে আমার বন্ধু তাহাতে আমার প্রাণ উৎসর্গীকৃত।

খোদা যাহারে চায় সে আমার প্রাণের আরাধনা।

আমার জীবন সন্ধ্যা শুভ হইবে যদি মৃত্যুকালে

আমি হয়রান হই এবং চক্ষু ক্রন্দন রত হয়।

ওয়াইসী তাঁহার ধর্ম্ম ও ঈমান সম্বন্ধে এইটুকু মাত্র জানে যে

মুহাম্মদের (সঃ) প্রেমেই তাঁহার ধর্ম্ম এবং তাঁহার ভালবাসাই আমার ঈমান।

দিওয়ানে ওয়াইসীর ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশ

নবী প্রেমের অফুরন্ত ভাণ্ডার পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী কাব্য গ্রন্থটি মোর্শেদে আলম হযরত ওয়াইসী পীর রহ.-এর ইন্তেকালের দীর্ঘ ১২ বৎসর পর ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের কলিকাতার গাউসিয়া প্রেস হতে প্রথম প্রকাশ করা হয়। ১৯২২ এবং ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার কিতাব খানি প্রকাশিত হয়। পরবর্তী দীর্ঘ ৮০ বৎসর গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশ না হওয়ার একটি কপিও অবশিষ্ট ছিল না। অতঃপর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর হযরত ওয়াইসী রহ. এর ফাতেহা শরীফের পবিত্রতম দিবসে গ্রন্থটির ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সুন্দর আঙ্গিকে ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশ করেন বিশিষ্ট আশেকে ওয়াইসী আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী, গদিনশীন পীর ও মোন্তাজেমে দরবার, দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফ।

হযরতসৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর তৃতীয়া কন্যা হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ ১২২৮ বঙ্গাব্দের এক সকালে কলিকাতায় জন্ম  গ্রহণ করেন। কলিকাতা শহরেই তিনি বড় হন। ফার্সী, আরবী, উর্দু প্রভৃতি ভাষায় তিনি ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। হাদীস শরীফের অসাধারণ ব্যাখ্যা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দিতে পারিতেন। তাঁহার আবির্ভাব মানব হৃদয় বিশেষ ভাবে স্পর্শ করিয়াছিল। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে তাঁহার কোন জ্ঞান ছিল না, কিন্তু বাংলা বলিতে ও বুঝিতে পারিতেন সহজেই। তিনি সমস্ত চিঠি-পত্র ফার্সী অথবা উর্দুতে লিখিতেন। তিনি পিতা হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর একান্ত ভক্ত ছিলেন। তিনি তাঁহার নিকট হইতে সমস্ত তরীকার আধ্যাত্মিক শক্তি বিষয়ক সর্ব্বোচ্চ জ্ঞান লাভ করেন। পিতা কেবলা তাঁহাকে নিজের মত যোগ্য করিয়া তোলেন। তাঁহার সমকক্ষ কেহ ছিলেন না।

আমার মনে হয় এই কারণেই তিনি তাঁহার পুত্র দ্বারা যখন দিওয়ান-ই-ওয়াইসী’ গ্রন্থ প্রকাশ করেন, তখন খলিফাগণের নামের তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন নাই। আধ্যাত্মিক বিধি অনুযায়ী তিনি পিতার খলিফাগণের নামের উপর নিজের নাম প্রকাশ করিতে চান নাই। তাই তিনি পিতার খলিফাগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অভিপ্রায়ে নিজের নাম পৃথক ভাবে রাখেন। তিনি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া আধ্যাত্মিক জগৎ হইতে নিজের নাম গোপন করিয়া রাখেন।

তাঁহার দেহের বর্ণ ছিল হলুদ এবং তিনি দীর্ঘকায় ছিলেন। কেশ ছিল অতি ঘন। চোখ ছিল উজ্জ্বল, এমন কি বৃদ্ধ বয়সেও ছিল একই রকম। তিনি ধীরে ধীরে কথা বলিতেন। তাঁহাকে বলা হইত দুররে মাকমুম’ অর্থাৎ গুপ্তমতি’। তিনি রাবেয়া-ই-বাংলা’ বা বাংলার রাবেয়া বসরী খেতাবে ভূষিত হন। পিতা হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ এর মত তিনিও ছিলেন প্রচার বিমুখ। তিনি জীবন নির্ব্বাহ করিতেন অবিকল পিতার মতই।

হযরত জোহরা খাতুন রাঃ কঠোর সাধনা ও রেয়াজতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার সুউচ্চ অবস্থানে উন্নীত হন। তিনি অসাধারণ চরিত্রবলে হযরত ওয়াইসী কেবলার নেক দৃষ্টি লাভ করিতে সমর্থ হন। এক দিন হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ তাঁহার কন্যা হযরত জোহরা খাতুনকে পিকদানি পরিষ্কার করিতে বলিলেন। জোহরা খাতুন সেই পিকদানি পরিষ্কার করিতে গিয়া দেখেন থুথুর পরিবর্ত্তে পিকদানি কীট পূর্ণ। কীট গুলি আল্লাহু’আল্লাহু’রবে জিকির করিতেছিল। এই দৃশ্য দেখিয়া তিনি কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হইয়া যান। অতঃপর তিনি সব কীট ভক্ষণ করেন এবং পিকদানি জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করিয়া পিতার সামনে রাখেন। হযরত ওয়াইসী রাঃ ঐশ্বরিক শক্তি বলে সব কিছুই উপলব্ধি করিতে পারিলেন। তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং বলেন, “আমি এই ভাবেই তোমাকে পরীক্ষা করিলাম। আমি আশীর্ব্বাদ করিতেছি, সর্ব্ব শক্তিমান আল্লাহ তোমাকে সর্ব্বদা সাহায্য করিবে। তুমি আমার প্রদত্ত সকল ক্ষমতা আয়ত্ত করিয়াছ, এই পরীক্ষাই তাহা প্রমাণ করে। আমার ইন্তেকালের পর তুমি হইবে আমার যথার্থ উত্তরাধিকারী। তোমার আধ্যাত্ম শক্তি সাহায্য ব্যতীত আমার কোন শিষ্যই নেসবাতে জামিয়া’ অর্জন করিতে পারিবে না।”

তাঁহার ও পিতা কেবলা হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ এর অনেক জ্বীন শিষ্য ছিল। একদিন মধ্য রাত্রে কয়েকজন জ্বীন তাঁহাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তাহাদের (জ্বীন দেশে) পদার্পণ করেন। জোহরা খাতুন রাঃ সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। অজু ও তাহাজ্জুত নামাজ শেষে তাহারা নিজেদের সিংহাসনে বসাইয়া তাঁহাকে নিজেদের দেশে নিয়া গেলেন। সেখানে তাঁহার জ্বীন শিষ্যরা অনেক প্রাতঃরাশ দিলে তিনি তাহা হইতে সামান্য গ্রহণ করিলেন। অতঃপর নিজের দেশে ফিরিতে চাহিলে তাহারা তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে শাহপুর গ্রামে জোহরা শরীফে পৌঁছাইয়া দিলেন।

মুর্শিদাবাদের জমিদার হযরত সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ সাইদ হাসানের সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশের সহিত তাঁহাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হযরত সৈয়্যেদ হাসান এর ফার্সী, আরবী ও উর্দু ভাষায় পাণ্ডিত্য ছিল। প্রথম স্ত্রীর ইন্তেকালের পর তাঁহার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ছিলেন হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ। তাঁহার দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান ছিল। তাঁহাদের নাম হযরত সৈয়্যেদা সিদ্দিকা খাতুন ও হযরত সৈয়্যেদা হাফেজা খাতুন। তাঁহার শেষ সন্তান হযরত সূফী সৈয়্যেদ এহসান আহমদ মাসুম।

হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ এহসান আহমদ মাসুম রাঃ এর চার পুত্র ও পাঁচ কন্যা। তম্মধ্যে প্রথম পুত্র শৈশবে ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় পুত্র শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল মতিন জাহাঁগীর রাঃ এর চার পুত্র ও তিন কন্যা। তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ শেরখালী, শাহাজাদপুর, জেলা সিরাজগঞ্জ। তাঁহার পরিবারবর্গ মাজার শরীফ সংলগ্ন নিজ বাড়ীতে বসবাস করিতেছেন। তৃতীয় পুত্র হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফেরদৌস আহমেদ মাঃজিঃআঃ এর এক পুত্র ও এক কন্যা। তিনি স্বপরিবারে রামচন্দ্রপুর, মিরেরচক মসজিদের দক্ষিণে,  জেলা- রাজশাহীতে বসবাস করিতেন। বর্ত্তমানে তিনি ঢাকা শহরের মিরপুর এলাকায় কিংশুক হার্ট এপার্টমেন্ট, বাড়ী নং-৫, ফ্লাট-২বি পূর্ব্ব, চতুর্থ তলা সেকশন-২, ব্লক-সি, রোড নং-১, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ তে বসবাস করিতেছেন।

চতুর্থ পুত্র শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবুল বাশার মাঃজিঃআঃ এর দুই পুত্র, তিনি শেরখালী, শাহাজাদপুর, জেলা- সিরাজগঞ্জে বসবাস করিতেছেন। তাঁহারা সকলেই হযরত বাবা ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর তরীকার সিলসিলা অনুযায়ী কার্য্যক্রম চালাইয়া আসিতেছেন। হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ এর প্রথমা কন্যা সৈয়্যেদা সালেহা বেগম রাঃ, দ্বিতীয়া কন্যা সৈয়্যেদা এলডিস বেগম রাঃ, তৃতীয়া কন্যা সৈয়্যেদা হালিমা বেগম রাঃ, চতুর্থী কন্যা সৈয়্যেদা নাসিমা রাঃ, পঞ্চমা কন্যা আঙ্গুরা বেগম রাঃ।

মৃত্যুর আট দিন পূর্ব্বে হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন পুত্রকে জিজ্ঞাসা করেন, আজকের তারিখ ও বার কি? সে কথা জানিবার পর তিনি বলিলেন, জীবনের আর মাত্র আট দিন আছে। তিনি আদেশ দেন এখন হইতে তাঁহার শয়ন কক্ষের দরজা সর্ব্বদা যেন খোলা থাকে। এই বলিয়া সকলের সহিত কথা শেষ করিয়া তিনি চির কালের মত কথা বলা বন্ধ করিয়া দেন। শেষের এই ৮ দিন তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর প্রার্থনায় নিজেকে সমর্পণ করিয়াছিলেন। অবশেষে ১৭ই আষাঢ় ১৩৪৮ বাংলা সন মোতাবেক ২রা জুলাই ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দ রোজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে তাঁহার মহান আত্মা চির কালের মত বিদায় নিয়া চলিয়া যায়। তাঁহার মাজার শরীফ মুর্শিদাবাদের সালার শাহপুর গ্রামের অন্দপুকুর কবর স্থানে আজও বর্ত্তমান। তাঁহার বাড়ীতে পূর্ব্বপুরুষগণের বহু পুরান ইতিহাস আজও রক্ষিত আছে।

হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার কন্যা হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ এর পরলোক গমন সম্বন্ধে বর্ধমান জেলার অন্তর্গত মঙ্গলকোর্টের হযরত হামিদ বাঙালির মাজার শরীফের খাদেম জনাব শেখ আবদুল জব্বার, দুঃসংবাদ’ শীর্ষক একটি ইশতেহার প্রকাশ করেন।

যোগাযোগ : কলিকাতা এয়ারপোর্ট ভিআইপি রোড ধরিয়া বারাসাত হইয়া বসিরহাঁটে যাইতে হইবে। সেখান হইতে রাণীঘাটা হইয়া কৃষ্ণ নগর যাইতে হইবে। সেখান হইতে নবধিবধাম হইয়া কাটুয়া পাড়ি দিয়া শাসন্দী মোড়ে যাইতে হইবে। সেখান হইতে দক্ষিণ খন্ড হইয়া পুনাসী যাইতে হয়। পুনাসী সালার থানায় অবস্থিত। সেখান হইতে বিনোদিয়া ও ভরতপুর হইয়া শাহপুরে পীর দাদী আম্মার মাজার শরীফে যাইতে হয়।

ফয়েজে নেসবতে জামিয়া

ফয়েজে নেসবতে জামিয়া। এখানে তিনটি শব্দ রহিয়াছে। ফয়েজ’ অর্থ- অনুগ্রহ, অনুকম্পা। নেসবত’ অর্থ- সম্পর্ক। জামিয়া’অর্থ- সমগ্র। একসঙ্গে ফয়েজে নেসবতে জামিয়ার অর্থ হইবে- সামগ্রিক ফয়েজ বা অনুগ্রহ। অর্থাৎ মুরিদ ও মোর্শেদের সুসম্পর্কের কারণে মোর্শেদের পক্ষ হইতে সামগ্রিক অনুগ্রহ লাভ করা। যেমন একজন মোর্শেদ একাধিক তরীকার ফয়েজপ্রাপ্ত হইলে তাঁহার নিকট কেহ তরীকত গ্রহণ করিলে তিনি তাঁহাকে কোন তরীকায় মুরিদ করিলেন তাহা জানাইয়া দিবেন। মুরিদ তখন অনবরত সেই তরীকার অজিফা সমূহ আমল করিতে করিতে সেই তরীকার পূর্ণাঙ্গ ফয়েজ লাভ করিতে পারে। এই ভাবে বিভিন্ন তরীকার ফয়েজ অর্জন করা একজন প্রকৃত মুরিদের কাম্য।

রাসূলনোমা পীর আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ ওফাত গ্রহণের পূর্ব্বে তাঁহার সকল মুরিদ ও খলিফার প্রতি নির্দেশ করিয়াছিলেন, স্বীয় কন্যা দুররে মাকমুম হযরত সৈয়্যেদা জহুরা খাতুনের নিকট হইতে ফয়েজে নেসবতে জামিয়া অর্জন করিতে। তখন তাঁহার পঁয়ত্রিশ জন মুরিদ-খলিফার মধ্যে কেবল হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আবু বকর সিদ্দিক রাঃ ব্যতীত অন্য সকলেই তাঁহার নিকট গিয়াছিলেন। ফলে, তাঁহারা তাঁহার নিকট হইতে ফয়েজে নেসবতে জামিয়া তথা সামগ্রিক অনুকম্পা অর্জন করিয়াছেন। অবশ্য পরবর্ত্তীতে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ তাঁহার খেদমতে থাকিয়া তাহা অর্জন করিয়াছিলেন।

হযরত ওয়াইসী রাঃ এর এই অমোঘ অসিয়ত চিরকালীন। তাঁহার সকল মুরিদ ও খলিফার ক্ষেত্রে এই অসিয়ত যেমন কার্য্যকরী ছিল, একই ভাবে তাঁহাদের আওলাদ, আশেকানে ওয়াইসী রাঃ এর সকলের ক্ষেত্রেই এই অসিয়ত প্রযোজ্য। কেবল স্বীয় পীর-মোর্শেদ ও হযরত ওয়াইসী পাকের মাজার শরীফ জেয়ারত এবং খেদমতের মাধ্যমে ফয়েজে নিসবতে জামিয়া লাভ করা সম্ভব নহে। কারণ, হযরত ওয়াইসী পাক তাঁহাকে এই সম্মান ও ক্ষমতা প্রদান করিয়াছেন।

 

হযরত গোলাম মোস্তফা রাঃ

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর প্রথম পুত্রের নাম হযরত মাওলানা সূফী সৈয়্যেদ গোলাম মোস্তফা রাঃ। তিনি ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত ও গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী। তিনি সাবলীল ভাবে আরবী, উর্দু ও ইংরেজীতে কথা বলিতে বা লিখিতে পারিতেন। ইংরেজী সাহিত্যে তাঁহার ব্যুৎপত্তি ছিল অসাধারণ। পিতা হযরত ওয়াইসী রাঃ যখন পলিটিক্যাল পেনশন অফিস হইতে অবসর গ্রহণ করেন, তখন সেই পদ অলঙ্কৃত করেন পুত্র গোলাম মোস্তফা রাঃ। তিনি মুসলিম ক্রনিক্যাল বুলেটিন’-এ ইংরেজীতে নানা প্রবন্ধ-রচনা করিতেন। মুর্শিদাবাদ জেলার পুনাশীতে তিনি পরলোক গমন করেন। তাঁহাকে পুনাশীর (দিঘীর পাড়ে) সমাধিস্থ করা হয়।

হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ গোলাম মোস্তফা সাহেবের প্রথম পুত্র হলেন হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ মশিয়ার রহমান রাঃ। তিনি ক্যালকাটা মুসলিম জ্যুডিশিয়াল বোর্ড’-এ চাকুরি করিতেন। মুর্শিদাবাদের পুনাশি (পিতামহ হযরত ওয়াইসী রাঃ এর গৃহ) গ্রামে তাঁহার বাসস্থান ছিল। হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ মোস্তফা আলীর দ্বিতীয় সন্তান অর্থাৎ কনিষ্ঠ পুত্রের নাম আলহাজ্জ্ব সৈয়্যেদ জানে আলম রাঃ। তিনি বাংলাদেশের ঢাকা হাইকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট ছিলেন।

তিনি দিওয়ান-ই-ওয়াইসী’র সমস্ত গজল বাংলায় অনুবাদ করিয়াছেন। তাঁহার হস্তাক্ষর ছিল খুব ছোট আকারের। এই জন্য তাঁহার পুত্র ব্যারিষ্টার শাহিদ আলম হস্তাক্ষর উদ্ধার করিতে না পারায় ১৭৯ গজল ও ২৩টি কাসিদা’র মধ্যে মাত্র ২৫টি গজলের সমন্বয়ে একটি গ্রন্থ ১৯৮৬ সালে হযরত ওয়াইসী রাঃ এর শত বর্ষ ইন্তেকাল দিবস উৎসবে প্রকাশ করেন।

পীর মোর্শেদ হযরত শাহ সূফীসৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ

রাসূলনোমা পীর হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পীর মোর্শেদ চট্টগ্রামের কুতুবুল আকতাব গাজীয়ে বালাকোট আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ। তিনি অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন মহাপুরুষ ছিলেন। তিনি হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ বেরলভী রাঃ এর মুরিদ ও খলিফা। তিনি তাঁহার পীর হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ বেরলভী রাঃ এর সঙ্গে বালাকোটের জিহাদে অংশ নেন। তৎকালে ব্রিটিশ শাসনে ভারত উপ-মহাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় অত্যন্ত দুরাবস্থায় ছিল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করিতে তাহারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হইত। ক্রমান্বয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবমূর্ত্তি নানা ভাবে ক্ষুণ্ন হইতে থাকে। সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ বেরলভী রাঃ ও তাঁহার ভক্ত-আশেকানগণ মানসিক অশান্তি ভোগ করিতেছিলেন। ফলে তাঁহারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। ঊনবিংশ শতকের কৃষক বিদ্রোহ ও বারাসাত বিদ্রোহ ছিল সেই জিহাদেরই বহিঃ প্রকাশ।

ক্রমবর্ধমান নির্যাতন-নিষ্পেষণের শিকার সকল সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রয়াসে এই উপ-মহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এই আন্দোলনের এক শার্দূল বীরপুরুষ ছিলেন হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ। তাঁহার জীবন আধ্যাত্ম সাধনা ও দেশের মুক্তি কামনা এই উভয় প্রকার সত্তায় সমন্বি^ত।

হযরত শাহ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ এর পূর্ব্ব পুরুষগণ আফগানিস্তানের গজনীর বাসিন্দা ছিলেন। কিভাবে তাঁহারা গজনী হইতে বাংলাদেশে আসিয়াছেন, তাহা সম্পর্কে জনমনে অদ্যাবধি এক সুন্দর কাহিনী বিধৃত আছে। আমরা এখানে তাহা খুব সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করিব।

হযরত শাহ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ গজনীর সুলতানের একমাত্র পুত্র যুবরাজ বখতিয়ার কুতুবে আলমের সপ্তম পুরুষের বংশধর। অতি অল্প বয়সে বখতিয়ার কুতুবে আলম পিতা-মাতাকে হারান। মৃত্যুকালে তাঁহার পিতা সমস্ত সম্পত্তি পুত্র বখতিয়ার কুতুবে আলম স্বাবালক না হওয়া পর্য্যন্ত তাঁহার দায়িত্ব আপন হাতে তাঁহার মামার নিকট তুলিয়া দিয়া যান। পরে স্বাবালক বখতিয়ার কুতুবে আলম যখন পিতার সম্পত্তি তাঁহাকে প্রত্যর্পণ করিবার জন্য মামাকে অনুরোধ করিলেন, তিনি উহা তাহাকে প্রদান করিতে অস্বীকৃতি জানাইলেন। আরও পরিতাপের বিষয় এই যে, মামা তাঁহাকে কেবল সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিলেন না, বরং দেশ হইতেও বলপূর্ব্বক বহিষ্কার করিয়া দেন। ভগ্ন হৃদয়ে হযরত বখতিয়ার কুতুবে আলম নিজ পুত্র ফিরোজ শাহ, কন্যা ময়মুনা খাতুন এবং দেশের কতিপয় সম্মানীয় ব্যক্তিসহ দিল্লীর দরবারে চলিয়া আসেন। সম্রাট তাঁহাকে সর্ব্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিলেন। সম্রাট তাঁহাকে গৌড়ের অধিপতি করিয়া দিলেন। হযরত বখতিয়ার কুতুবে আলম তথায় মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখেন। হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ এই বংশেই জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন। তাঁহার পিতা ছিলেন হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ শেখ মুহাম্মদ পানাহ রাঃ।

হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ ১২০৫ হিজরী মোতাবেক ১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার মালিয়াসের নিজামপুরের অন্তর্গত মিরেশ্বরাই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পিতার নিকট শিক্ষা জীবন শুরু করেন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সময় তিনি হযরত শাহ সূফী শেখ জায়েদ রহমান পারগণসের নিকট আধ্যাত্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি কলিকাতায় আসেন। অতঃপর তিনি কলিকাতা আলিয়ায় মাদ্রাসা ভর্ত্তি হন। তিনি এই শিক্ষালয় হইতেই তাফসীর ও হাদীস সম্পর্কিত উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। মাদ্রাসার উচ্চতর শিক্ষা পাস করিবার পর তিনি এখানেই মাদ্রাসা শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। তৎকালে হেড মাওলানা ছিলেন হযরত ওজিউল্লাহ সাহেব।

হযরত নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ জাতি-ধর্ম্ম নির্ব্বিশেষে সকলকে শ্রদ্ধা করিতেন। সর্ব্ব শক্তিমান আল্লাহর সেবায় নিজেকে সমর্পণ করেন। এক নামাজের পর তিনি অপেক্ষা করিয়া থাকিতেন পরবর্ত্তী নামাজের জন্য। তিনি সময়ানুযায়ী সকল কাজ করিবার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি সারা জীবনে কখনও জুমার নামাজের আগে মধ্যাহ্ন ভোজ করেন নাই। হাসিমাখা মুখে সকলের সহিত সদ্ব্যবহার করিতেন। জীবনে একাধিক বার তিনি পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন। মানুষের প্রতি তিনি ছিলেন উদার ও দয়াশীল। আল্লাহর ধ্যানে সর্ব্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিতেন। অসুস্থ্য ব্যক্তিদের সেবা যতœ করাই ছিল তাঁহার জীবনের মহান ব্রত। প্রয়াতদের জানাজায় তিনি যথোপযুক্ত যোগ দিতেন। এই কাজকে মহান কর্ত্তব্য বলিয়া মনে করিতেন। তিনি সব মানুষের সঙ্গে খুশি মনে হাসি মুখে মিশিতেন। তখন তাঁহার পরিধানে থাকিত সাদা চাদর ও সাদা পাগড়ি।

‘মোর্শেদে বরহক্ক’ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ নিশিতে যে স্বর্গীয় স্বপ্ন দেখিতেন ইহার বর্ণনা রহিয়াছে। হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাঁহাকে এক শুভ সংবাদ দেন। তিনি তাঁহাকে আদেশ প্রদান করিয়া বলেন, তাঁহার আওলাদ সৈয়্যেদ আহমদ কলিকাতায় আসিবে। তাঁহার হাতে তাহার বায়াত হইতে হইবে। তিনি তাঁহার পীর-মোর্শেদের নিকট হইতে সর্ব্বোচ্চ খলিফার সম্মান লাভ করেন।

অতঃপর তিনি তাঁহার পীর হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ বেরলভী রাঃ এর সান্নিধ্যে দীর্ঘকাল থাকেন। রাজা রঞ্জিৎ সিং ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হযরত সৈয়্যেদ শহীদ আহমদ বেরলভী রাঃ জিহাদ করেন। সর্ব্বশক্তিমান আল্লাহর কৃপায় তিনি প্রভূত শক্তির অধিকারী হন। ফলে, চতুর্দিক হইতে প্রাপ্ত অস্ত্রে তিনি হইয়া ওঠেন বলীয়ান। শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁহার হাতের অস্ত্র তিনি প্রয়োগ করিয়াছেন। ইন্তেকালের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত তিনি সব্যসাচীর মত নিজের জায়গায় স্থির ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ সেই জিহাদে তাঁহার বাম হাত পঙ্গু হইয়া যায়। তাঁহার পীর হযরত সৈয়্যেদ আহমদ বেরলভী রাঃ পাঞ্জাবের যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁহার সহিত রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পিতা হযরত ওয়ারেস আলী রাঃও শহীদ হন। পীরের সহযোগী হিসাবে হযরত নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ জীবনের অধিকাংশ সময় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জিহাদে অতিবাহিত করিয়াছেন। এই জন্য তিনি বিবাহ করিবার অবকাশ পান নাই। জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত তিনি চিরকুমার থাকিয়া যান।

ব্রিটিশ সরকার হযরত সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃকে বহুবার গ্রেফতার করিতে স্বচেষ্ট হয়। কিন্তু অলৌকিক ঐশ্বরিক শক্তি বলে প্রতি বারই তিনি রক্ষা পান।  অলৌকিক শক্তিতে ইংরেজ সরকার ভীত হইয়া পড়ে। জুমা মসজিদে খুতবায় তিনি জনসাধারণকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজ সরকারের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি প্রায়ই গৃহ বদল করিতেন। তাঁহার এক দত্তক পুত্র ছিল। তাঁহার নাম ছিল আবদুল্লাহ।

হযরত শাহ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ ইন্তেকাল করেন ১২৭৫ হিজরী মোতাবেক ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ই কার্ত্তিক ১২৬৬ বঙ্গাব্দে। হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রাঃ এর মাজার শরীফ চট্টগ্রাম জেলার মালিয়াস থানার অন্তর্গত মিরেশ্বরাই গ্রামে। প্রতি বৎসর ১৩ই কার্ত্তিক তাঁহার ইসালে সওয়াব উদযাপিত হইয়া থাকে। তাঁহার নামানুসারে মাজার শরীফের রাস্তা বর্ত্তমানে সুফিয়া রোড’ নামে পরিচিত। ঢাকা হইতে চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক ধরিয়া মিরেশ্বরাই হইয়া মাজার শরীফের সঙ্গে মিলিয়াছে। মিরেশ্বরাইতে বাংলাদেশ সরকার ৭ই মার্চ ১৯৯১ খ্রীষ্টাব্দে তাঁহার নামে একটি সুন্দর তোরণ নির্মাণ করিয়াছে। ঢাকা হইতে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে মিরেশ্বরাইতে এই তোরণটি দেখা যায়।

হযরত ওয়াইসী রাঃ এর

মুরিদখলিফাগণ

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ হুজুরের রচিত সুবিখ্যাত ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবে তাঁহার উল্লেখযোগ্য ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) জন খলিফার নাম যে ভাবে বর্ণিত হইয়াছে; এখানে হুবহু সেই তালিকা প্রদান করা হইল :-

১. মাওলানা আবদুল হক সাহেব রাঃ, গ্রাম ও পোঃ-সিজগ্রাম,  জেলা- মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

২. মৌলভী আইয়াজ উদ্দীন সাহেব রাঃ, আলীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

৩. সূফী নিয়াজ আহমদ সাহেব রাঃ, কাতরাপোতা, জেলা- বর্ধমান, ভারত।

৪. সূফী একরামুল হক সাহেব রাঃ, পুনাসী, জেলা- মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ।

৫. মৌলভী মতিয়ুর রহমান সাহেব রাঃ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।

৬. হাফেজ মোঃ ইব্রাহীম সাহেব রাঃ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।

৭. মৌলভী আবদুল আজিজ সাহেব রাঃ, চন্দ্র জাহানাবাদ, জেলা- হুগলী।

৮. মৌলভী আকবর আলী সাহেব রাঃ, সিলেট, বাংলাদেশ।

৯. মৌলভী আমজাদ আলী সাহেব রাঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

            ১০. মৌলভী আহমদ আলী সাহেব রাঃ, ফরিদপুর, বাংলাদেশ।

১১. শাহ্ দিদার বখস সাহেব রাঃ, পদ্মপুকুর, জেলা- হাওড়া, ভারত।

১২. শাহ্ বাকিউল্লাহ সাহেব রাঃ, কানপুর, জেলা- হুগলী, ভারত।

১৩. মৌলভী আবু বকর সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, জেলা- হুগলী, ভারত।

১৪. মাওলানা শাহ্ সূফী গোলাম সালমানী রাঃ, ফুরফুরা, ভারত।

১৫. মৌলভী গনিমত উল্লাহ সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, ভারত।

১৬. মুন্সী সাদাকাত উল্লাহ সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, ভারত।

১৭. মুন্সী শারাফাত উল্লাহ সাহেব রাঃ, খাতুন, জেলা- হুগলী, ভারত।

১৮. শায়খ কোরবান আলী সাহেব রাঃ, বানিয়া তালাব, কলিকাতা, ভারত।

১৯. শামসুল উলামা মৌলভী মির্জা আশরাফ আলী সাহেব রাঃ, কলিকাতা।

২০. সৈয়্যেদ ওয়াজেদ আলী সাহেব রাঃ, মেহ্দীবাগ, কলিকাতা।

২১. মৌলভী গুল হুসাইন সাহেব রাঃ, খোরাসান, আফগানিস্তান।

২২. মৌলভী আতাউর রহমান সাহেব রাঃ, চব্বিশ পরগনা, ভারত।

২৩. মৌলভী মুবিনুল্লাহ সাহেব রাঃ, রামপাড়া, জেলা- হুগলী, ভারত।

২৪. মৌলভী সৈয়্যেদ যুলফিকার আলী সাহেব রাঃ, টিটাগড়, জেলা- চব্বিশ পরগনা, ভারত।

২৫. মৌলভী আতায়ে এলাহি সাহেব রাঃ, মঙ্গলকোট, জেলা- বর্ধমান, ভারত।

২৬. মুন্সী সুলায়মান সাহেব রাঃ, বারাসাত, জেলা- চব্বিশ পরগনা, ভারত।

২৭. মৌলভী নাছিরুদ্দীন সাহেব রাঃ, জেলা- নদিয়া, ভারত।

২৮. মৌলভী আবদুল কাদির সাহেব রাঃ, ফরিদপুর, বাংলাদেশ।

২৯. মৌলভী কাজী খোদা নাওয়াজ সাহেব রাঃ, দাহসা, জেলা- হুগলী, ভারত।

৩০. মৌলভী আবদুল কাদির সাহেব রাঃ, বৈদ্যবাটি, জেলা- হুগলী, ভারত।

৩১. কাজী ফাসাহতুল্লাহ সাহেব রাঃ, চব্বিশ পরগনা, ভারত।

৩২. শায়খ লাল মোহাম্মাদ সাহেব রাঃ, চুচুড়া, জেলা- হুগলী, ভারত।

৩৩. মৌলভী সৈয়্যেদ আজম হুসাইন সাহেব রাঃ, বর্ত্তমান অবস্থান- মদিনা শরীফ।

৩৪. মৌলভী মুহাম্মদ সৈয়্যেদ ওবায়দুল্লাহ সাহেব রাঃ, শান্তিপুর, জেলা- নদিয়া, ভারত।

৩৫. মৌলভী হাফেজ মোঃ ইব্রাহীম সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, জেলা- হুগলী।

তাঁহাদের মধ্যে শাহে কদমী পাউসার দরবার শরীফের মহিউল কুলুব আল্লামা হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ আমজাদ আলী হুজুর, সিলেটের হযরত মাওলানা শাহ সূফী আকবর আলী সাহেব এবং ফুরফুরা শরীফের হযরত মাওলানা শাহ সূফী সৈয়্যেদ গোলাম সালমানী সাহেব বিশেষ সম্পর্কের কারণে হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন। এই তিনজন ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী কেবলা কাবা রাঃ এর পীরভাই, সহপাঠী ও মাদ্রাসা জীবনের সহকর্মী। হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী কেবলা রাঃ এর ৩৫ জন খলিফার প্রত্যেকে আধ্যাত্মিক জগতের অতি উচ্চস্তরে উন্নীত হইয়াছিলেন। তাঁহারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ প্রতিভা গুণে এক একজন উজ্জ্বলতম তারকা সদৃশ। তাঁহাদের যথার্থ পরিচয় জ্ঞাপন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই এমন ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত এবং এমন বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, যেন কেহ কাহারো চাইতে কম নহেন। সকলেই যেন দিগ্বিজয়ী আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ।

(সংগৃহীত)

Comments

comments