হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর জীবনী
৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ
আলী বোগদাদী (রহঃ) মিরপুর
পিতাঃ- বাগদাদের সুলতান ফকরুদ্দিন শাহ্ (র)
তরীকাঃ- বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) এর
কাদরিয়া তরিকা
…
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ- বাবা শাহ্ আলি ছিলেন
বাগদাদের তৎকালীন বাদশাহ বড় ছেলে।
ছেলে বেলা থেকেই শাহ্ আলী বাবা ছিলেন ভাবুক
ও সংসার বিরাগী।বাবা শাহ্ আলি ৩০
পারা কুরআনের হাফেজ ছিলেন।সব সময়
তিনি ইবাদত বন্দেগীতেই কাটাতেন।তাহার
পিতার মৃত্যুর পর রাজ্য পরিচালনার ভার শাহ্
আলি বাবার ওপর অর্পিত হলে মাওলার প্রেমের
পাগল শাহ্ আলি তা তুচ্ছ ও নগণ্য ভেবে সমস্ত সুখ
শান্তি বিসর্জন দিয়ে আল্লাহ্ পাকের
সন্ধানে বেড়িয়ে পড়েন।ভ্রমন পথে হযরত শাহ্
জালালের সাথে দেখা হলে তার সফর
সঙ্গী হয়ে বাংলায় আগমন করেন।বাংলায়
তিনি শাহ্ জালাল (র) এর নির্দেশে ফরিদ পুর
জেলার গের্দা নামক এলাকায় ইসলাম প্রচার
করেন।বাবা শাহ্ আলি যখন বাগদাদ
হইতে বাংলায় আসেন তখন তিনি দয়াল নবী (স)
এর কেশ মোবারক ও গাউসুল আজম বড় পীর আব্দুল
কাদির জিলানির জামা মোবারক
সঙ্গে নিয়ে আসেন।দিল্লীর তৎকালীন সুলতান
শাহ্ আলি (র) নিকট এত মূল্যবান জিনিস দেখার
সুযোগ পেয়ে বাবাকে খুশি হয়ে ফরিদপুর জেলার ১২
হাজার বিঘা জমি দান করেন। সেখান কিছুকাল
অবস্থানের পর সংসার বিরাগী শাহ্
আলি ঢাকার মিরপুরে চলে আসেন এবং জীবনের শেষ
নিঃশ্বাস এখানেই ত্যাগ করেন।বাবা শাহ্ আলির
মৃত্যুর পর তাহার পুত্র শাহ্ ওসমান গদিনশিন হন।
বলা হয়ে থাকে হযরত শাহ
আলী বোগদাদী (রহঃ)বংশ ধর এখনও জীবিত
আছেন। তার মধ্যে হযরত শাহ্ হাকিম একজন কামেল
অলি ছিলেন।
বাবা শাহ্ আলির কারামতঃ-
১। হাতের আশা বৃক্ষে পরিনতঃ- হযরত শাহ
আলী বোগদাদী (রহঃ) এর তাহার হাতের
আশাকে কারামত শক্তির প্রভাবে বট গাছে পরিনত
করেন।বর্তমানে ঐ গাছটা সিন্নি গাছ
নামে পরিচিত আছে।গাছটা আজও ৭০০ বছর
ধরে বাবা শাহ্ আলির মাজারের বাম
পাশে মাথা উঁচু করে দারিয়ে আছে।বহু ভক্ত
আশেকান সেই গাছের নীচে মোমবাতি আগর
বাতি জ্বালিয়ে মানত করেন।সেখানে ভক্ত
আশেকান দের মানত বাবা শাহ্ আলীর দয়ায়
অপূর্ণ থাকে না।
২।সিন্নি গাছে ভয়াবহ আগুনঃ- কয়েক বছর
আগে হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর এই
সিন্নি গাছে হঠাৎ আগুন লেগে যায়।তানা ৩ দিন
ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করেও যখন আগুন
নিভাতে পারছিলো না,তখন উপায় বুদ্ধি না হযরত
শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর তৎকালীন
খাদেমের কাছে পরামর্শ চাইলে বাবার খাদেম
শাহ্ আলীর দরগার পানি দোঁহাই শাহ
আলি বলে আগুনে ছুড়ে মারেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিন
আগুন বাবার রহমতে নিভে যায়।
৩। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু মাজার শরিফঃ- শাহ
আলি বাবার মাজার খুব উঁচু। বাংলাদেশে এমন
উঁচু মাজার আর ২য় টি নেই।
৪। হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) রহস্য জনক
ওফাত – কথিত আছে বাবা শাহ্ আলি একবার ৪০
দিনের চিল্লায় মগ্ন হন।চিল্লায় মগ্ন হওয়ার
আগে বাবা তার মুরিদদের ৪০ দিন পূর্ণ হবার
আগে ভুলেও যেন হুজরার দরজা না খোলার নির্দেশ
দেন।বাবা হুজরার ভিতর আল্লাহর
সাথে ফানা ফিল্লাহর নামাজে রত হন।
ফানা ফিল্লাহর নামাজ তরীকার জগতে খুবই
কঠিন নামাজ।সব আউলিয়ারা এই নামাজ পড়ার
যোগ্যতা রাখেন না।উল্লেখ্য এই নামাজ
পড়াকালীন সময় আল্লাহ্র তরফ থেকে অনেক
ভয়ংকর সৃষ্টির সামনে পড়তে হয়,তাই এই নামাজ
পড়াকালিন সময়ে কেউ যদি সামান্য মনোযোগ
অন্যদিকে দেন,তাহলে আল্লাহ্র
জালালি নূরে তার দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার
সম্ভবনা আছে। বাবা শাহ্ আলির কথা মত সবাই
বাবার চিল্লা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন।কিন্তু
চিল্লা শেষ হওয়ার ১ দিন আগে অর্থাৎ ৩৯ তম
দিনে বাবার হুজরা হতে অসম্ভব চীৎকার
আসতে থাকে ।বাবার মুরিদ্গন তখন উপায়
না পেয়ে বাবার নিষেধ থাকা সত্তেও হুজরার
দরজা খুলে দেখেন বাবা শাহ্ আলীর দেহ
রক্তাক্ত অবস্থায় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে পড়ে আছে ।
পরে ভক্তরা বাবার সেই লাশকেই
সসম্মানে মিরপুরে দাফন করেন।বর্তমানে মিরপুরেই
বাবা শাহ্ আলির পবিত্র মাজার শরিফ আছে।কথিত
আছে বাবা শাহ আলি এখনও তাহার
খাটি আশেকদের সাথে দেখা করেন।উক্ত
ঘটনা থেকে আবারও প্রমানিত হল যে আল্লাহর
অলিদের মৃত্যু নেই,তারা অমর।
৫।২০০ বছর জন শূন্য ছিল ঃ- হযরত শাহ
আলী বোগদাদী (রহঃ) এর মাজার পূর্বে এমন ছিল
না।পূর্বে শাহ্ আলী বাবার মাজার ছিল
জনাকীর্ণ ও সকলের কাছে অজ্ঞাত।প্রায় ২০০
বছর বাবার মাজার এমন অজ্ঞাত ছিল।
পরবর্তীতে শাহ্ মুহাম্মাদ নামের একজন কামেল
অলি তার দিব্য চক্ষুতে শাহ্ আলি বাবার রওজার
খবর জানতে পেরে নিজের হাতে হযরত শাহ
আলী বোগদাদী (রহঃ) এর মাজার পরিষ্কার
করেন এবং সেই সাথে মাজার পাকা করার
উদ্যোগ নেন।এরপর থেকে যতই দিন যায় বাবার
মাজারের জৌলুশ আর কখনও কমতে দেখা যায় নি।
৬।বৃহস্পতিবারের মাহফিলঃ- প্রতি বৃহস্পতিবার
হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) মাজারে বিরাট
মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।দেশের নামি দামি,বাউল,ফকির,
সাধু সন্ন্যাসীরা ভক্তি মুলক গানে গানে হযরত
শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর গুণগান করেন।
উক্ত দিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম
দেখা দেয়।সেদিন এত মানুষের সমাবেশ
ঘটে যে পুরা মিরপুর ১ নাম্বার রোডে জাম
লেগে যায়।
হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) জিন্দা-
অলি,আজও কোন ভক্ত যদিহযরত শাহ
আলী বোগদাদী (রহঃ)কে প্রেম
ভক্তিতে ডাকেন,তাহলে বাবা সাথে সাথে তাহা
ডাকে সারা দিয়ে থাকেন।
(সংগৃহীত)