ঘুমানো এবং জাগ্রত হওয়া
ইসলামে যত নিয়ম কানুন রয়েছে সবই বান্দার উপকারের জন্য। কিভাবে চললে বান্দার ভাল হবে তা স্রষ্টা-ই ভাল জানেন। তাই ইসলামী পদ্ধতি কখনোই বান্দার কষ্টের জন্য নয় বরং কষ্ট ও রোগ বালাই থেকে বাঁচানোর জন্যই ইসলামী পদ্ধতি গুলো। চলুন দেখে নিই ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার বিষয়ে ইসলাম কি বলছে-
শয়ন ও জাগরনের ১৫টি মাদানী ফুল (নিয়মাবলী)
(১) শয়ন করার আগে বিছানাকে ভালভাবে ঝেড়ে নিন যাতে কোন ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ইত্যাদি থাকলে বের হয়ে যায়,
(২) শয়ন করার আগে এ দুআটি পড়ে নিন,
اَللهُمَّ بِاسمِكَ اَمُوتُ وَاَحى
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মৃত্যুবরণ করছি এবং জীবিত হব। (অর্থাৎ শয়ন করি ও জাগ্রত হই)।
(বুখারী শরীফ, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্ঠা-১৯৬, হাদীস নং-৬৩২৫),
(৩) আসরের পর ঘুমালে স্মরণ শক্তি কমে যায়। প্রিয় নবী ﷺ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আসরের পর শয়ন করে আর তার বুদ্ধি কমে যায়, তবে সে যেন নিজেকে তিরস্কার করে। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস নং-৪৮৯৭, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্ঠা-২৭৮)
(৪) দুপুরে কায়লুলা (অর্থাৎ কিছুক্ষণ শয়ন করা) মুস্তাহাব। (আলমগীরী, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-৩৭৬) সাদরুস শরীয়া, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী رحمة الله عليه বলেন, যথাসম্ভব এটা ঐ সমস্ত লোকদের জন্য হবে যারা রাত জেগে ইবাদত করে, নামায আদায় করে, আল্লাহর যিকির করে কিংবা কিতাব পাঠ করে অথবা অধ্যয়নে ব্যস্ত থাকে। কেননা রাত জাগার কারণে যে ক্লান্তি আসে তা দূর হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, অংশ-১৬তম, পৃষ্ঠা-৭৯, মাকতাবাতুল মাদীনা)
(৫) দিনের শুরুতে কিংবা মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ঘুমানো মাকরূহ। (আলমগীরী, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-৩৭৬)
(৬) পবিত্রাবস্থায় ঘুমানো মুস্তাহাব,
(৭) কিছুক্ষণ ডান পার্শ্ব হয়ে ডান হাত গালের নিচে রেখে কিবলামুখী হয়ে শয়ন করুন এরপর বাম পার্শ্ব হয়ে শয়ন করুন, (আলমগীরী, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-৩৭৬)
(৮) শয়ন করার সময় কবরে শয়ন করার কথা খেয়াল করুন। কেননা সেখানে একা শয়ন করতে হবে আপন আমল ব্যতীত কেউ সঙ্গী হবে না,
(৯) শয়ন করার সময় আল্লাহর স্মরণ, তাহলীল ও তাসবীহ পাঠ করতে থাকুন, (অর্থাৎ পড়তে থাকুন) ঘুম আসা পর্যন্ত এভাবে করতে থাকুন কেননা মানুষ যে অবস্থায় শয়ন করে ঐ অবস্থায় উঠে এবং যে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উঠবে। (আলমগীরী, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-৩৭৬)
(১০) জাগ্রত হওয়ার পর এ দুআ পাঠ করুন (বুখারী শরীফ, খন্ড-৪র্থ, পৃষ্ঠা-১৯৬, হাদীস নং-৬৩২৫)
اَلحَمدُ لِلّهِ الَّذِى اَحيَانَا بَعدَ مَا اَمَا تَنَا وَاِلَيهِ النُّشُور
অনুবাদ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন এবং তারই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
(১১) ঐ সময় এ বিষয়ের দৃঢ় সংকল্প করুন পরহিযগারী ও তাকওয়া অবলম্বন করব কারো উপর জুলুম করব না।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-৩৭৬)
(১২) যেসব বালক বা বালিকার বয়স ১০ বছর হয়েছে তাদেরকে আলাদা আলাদাভাবে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা চাই বরং এ বয়ষের বালককে সমবয়সী কিংবা তার চাইতে বড় পুরুষের সাথে ঘুমাতে দিবেন না, (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৯ম, পৃষ্ঠা-৬৩০)
(১৩) স্বামী স্ত্রী যতক্ষণ একসঙ্গে শয়ন করবে ততক্ষণ দশ বছর বয়সী সন্তানকে নিজের সাথে রাখবে না, সন্তানের যখন উত্তেজনা শক্তি আসে তবে সে সাবালক হয়ে গেল। (দুররে মুখতার, খন্ড-৯, পৃষ্ঠা-৬৩০)
(১৪) ঘুম থেকে উঠে প্রথমে মিসওয়াক করুন,
(১৫) রাতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করাতো সৌভাগ্যের ব্যাপার। প্রিয় নবী, হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেন, ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে রাতের নামায। (সহীহ মুসলিম, পৃষ্ঠা-৫৯১, হাদীস নং-১৬৩)
(বি.দ্র. উপরের সবগুলোকে সুন্নাত বলবেন না। যা সুন্নাত নয় তা সুন্নাত বলা নিষেধ। তবে সবগুলোকে এক সাথে সুন্নাত ও আদব বলতে পারবেন।)