খবরের বিস্তারিত...


ওয়াজ নসিহতের একাল-সেকাল ——— অধ্যক্ষ মোঃ এনামুল হক কুতুবী

ওয়াজ নসিহতের একাল-সেকাল

***************

***************

ওয়াজ-নসিহত ইসলামে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।রাসূল (দ),সাহাবায়ে কেরাম(রা) এবং তাবেয়ীনদের(রা)যুগ থেকেই দ্বীনি আক্বায়েদ -আহকাম সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ওয়াজ-নসিহত কিংবা ধর্মীয় আলোচনা অবদান রেখেছে।পরবর্তী সময়ে আওলিয়ায়ে কেরাম একই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ধর্মীয় জলসা বা মাহফিলের মাধ্যমে ইসলামের মর্মবাণী আপামর মুসলমানদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন।তাই রাসূল (দ) বলেন-الدين النصيحة
অর্থাৎ নসিহত বা সদুপদেশ প্রদান দ্বীনের অংশ।

কিন্তু বর্তমানে সেই সোনালী অবস্থা আর নেই।আমাদের দেশে একসময় ওয়াজ মাহফিল করতেন বড় বড় বুজুর্গ ব্যক্তিরা।তাদের হৃদয় নিংড়ানো আলোচনায় মানুষের আমল -আখলাক পরিবর্তন হত।সে সময় বোধ করি নসিহত করতেও ন্যূনতম যোগ্যতার ব্যাপারটি বজায় ছিল।এই পৃথিবী থেকে বুজুর্গানে দ্বীনের বিদায়ের সাথে সাথেই তাদের জায়গায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অযোগ্য ব্যক্তিরা আসন গেড়ে বসছে।এর ফলে কলুষিত হচ্ছে ইসলামি ভাবধারা আর সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ফেতনা।রাসূল (দ) বলেন-
اذا وسد الامر الى غير اهله فانتظر الساعة-
অর্থাৎ অযোগ্য ব্যক্তির হাতে যখন গুরুদায়িত্ব অর্পিত হবে তখন তোমরা কেয়ামতের জন্য অপেক্ষা কর।

এই হাদীস শরীফের বাস্তবতা আজ আমাদের সমাজে বিদ্যমান।ওয়াজ মাহফিলের রেওয়াজ রয়ে গেছে ঠিক কিন্তু যোগ্য ওলামায়ে কেরামের স্থান দখল করে নিয়েছে কিছু লেবাছধারী অর্বাচীন।এর ফলে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি সঠিক দিক নির্দেশনা থেকে আর সমাজে নানা ধরনের অপকর্ম প্রচারিত হচ্ছে ধর্মীয় মোড়কে।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র) ‘আল ক্বাউলুল জামিল’ এ উল্লেখ করেন যে সেই ব্যক্তিই পীর হবে কিংবা অপরকে দ্বীনি নসিহত করবে যার তাফসীরে জালালাইন, মিশকাত শরীফের মত মৌলিক কিতাবগুলো নিজে পড়ে অপরকে বুঝানোর ক্ষমতা রয়েছে।সুতরাং এই ন্যূনতম মানদণ্ডটুকু অন্তত অনুসরণ করা উচিত।আমরা যারা এখনো আন্তরিক উদ্দেশ্য নিয়ে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করে থাকি আমাদের উচিত আলোচক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি স্মরণে রাখা নচেৎ আমরাও ইসলামি তামাদ্দুন ধ্বংসের অংশীদারে পরিণত হব।

পরিশেষে বলতে চাই,আমাদের আন্তরিকতা এবং সচেতনতাই পারে ওয়াজ-মাহফিলের সুস্থ সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে এবং সুন্নীয়াতকে বাঁচাতে।

Comments

comments