খবরের বিস্তারিত...


হযরত শাহ আব্দুল্লাহ গোলাম আলী দেহলভী নখশবন্দি মুজাদ্দেদি ( রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

হুজুর ছিলেন ত্রয়োদশ শতকের একজন মুজাদ্দিদ এবং উচ্চ স্তরের আউলিয়াগণের একজন যিনি ইসলামকে হিজরী শতকের শুরুতে দ্বীন ইসলাম কে পুনর্জীবন দান করেছিলেন এবং শতকের সমস্ত আউলিয়াগণ হুজুরের নিকট থেকে ফয়েজ লাভ করে উপকৃত হয়েছিলেন।

হযরত শাহ গোলাম আলী (রহঃ) ছিলেন হযরত মির্জা মাজহার জানে জানান (রহঃ) এর প্রধান খলিফা।

হযরত শাহ গোলাম আলী (রহঃ) ১৭৪৩ ইং ( ১১৫৬ হিজরী) সালে জন্ম গ্রহন করেন।

জন্মস্থান : পাটিয়ালা, বর্তমান পাঞ্জাব, হিন্দুস্তান

পিতা: সাইয়েদ আব্দুল লতিফ দেহলভি কাদেরী (রহঃ)

নামকরন: হযরতের জন্মের পূর্বেকার ঘটনা, হযরতের পিতা স্বপ্নে দেখলেন, হযরত আলী (রা:) নির্দেশ দিচ্ছেন হবু ছেলের নাম ‘আলী ‘ রাখার জন্য। তাই জন্মের পর ছেলের নাম রাখা হল ‘ আলী’। পরবর্তী তে নাম রাখা হয় ‘ গোলাম আলী ‘। এবং হুজুরের চাচা জান নাম রাখেন আব্দুল্লাহ।

মাত্র এক মাসেই পবিত্র কোরআন সম্পুর্ন মুখস্ত করে ফেললেন।

পিতার ইচ্ছা ছিল তার পীর সাহেব হযরত নাসির উদ্দিন কাদেরী (রহঃ) এর নিকট ছেলেকে বায়াত করাবেন। কিন্তু বায়াত হবার জন্য দিল্লী গিয়ে দেখলেন পীর সাহেব ইন্তেকাল করেছেন।

২২ বছর বয়সে হযরত মির্জা মাজহার জানে জানান (রহঃ) এর নিকট বায়াত গ্রহন করেন শাহ আব্দুল্লাহ গোলাম আলী (রহঃ)। নকশবন্দিয়া তরীকার প্রশিক্ষন নেয়ার সময় তার মনে সন্দেহ হয়, হয়ত বড় পীর সাহেব আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) তার ওপর নাখোশ কাদেরিয়া তরীকা চর্চা না করায়।
একদিন সপ্নে দেখলেন পাশাপাশি দুই টি ঘর।একটি তে আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এবং অপর টি খাজা নখশবন্দ বোখারী (রহঃ). । হুজুর বড় পীর সাহেবের নিকট অনুমতি চাইলেন খাজা নখশবন্দ (রহঃ) এর নিকট যাওয়ার জন্য।বড় পীর সাহেব অনুমতি দিলেন, বললেন, মূল উদ্যেশ্য আল্লাহ্‌ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করা, কোন নির্দিষ্ট তরীকা গ্রহন উদ্দেশ্য নয়।

সুদীর্ঘ ১৫ বছর পীর সাহেবের খেদমত করার পরে তিনি ইজাজত লাভ করেন এবং প্রধান খলিফা নিযুক্ত হন।

আপন পীর সাহেবের নিকট তরীকায়ে নকশবন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়া ছাড়াও কাদেরিয়া ও চিশতিয়া তরিকায় খেলাফত লাভ করেন।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছোট বেলায় তার পিতা ও ভাই সহ বায়াত গ্রহন করেন হুজুরের নিকট।

ইন্তেকাল: ২২ শে সফর ১২৪০ হিজরী মোতাবেক অক্টোবর ১৮২৪ ইং সালে ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
ইন্তেকালের সময় জামেউত তিরমিজি বইটি হুজুরের বুকে ছিল।
হুজুরের প্রধান খলিফা আবু সাইদ ফারুকী মুজাদ্দেদী (রহঃ) নামাজে জানাজা পড়ান। জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় দিল্লি জামে মসজিদে।
দিল্লিতে খানকাহে মাজহারিয়া তে দাফন করা হয়।

খলিফা গণের সংক্ষিপ্ত তালিকা:

১) হযরত আবু সাইদ মুজাদ্দেদী (রহঃ)
২) হযরত শাহ আহমদ সাইদ মুজাদ্দেদি (রহঃ)
৩) মাওলানা খালেদ আল বাগদাদি (রহঃ)
৪) হাযরত শাহ রউফ আহমদ ফারুকি মুজাদ্দেদি রামপুরী (রহঃ)
৫) মাওলানা বাসারাতুল্লাহ (রহঃ)
৬) মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন কুসুরী (রহঃ), পাকিস্তান
৭) মাওলানা সাইয়েদ ইসমাইল মাদানি (রহঃ)
৮) মাওলানা গুল মুহাম্মাদ গজনভি (রহঃ), উজবেকিস্তান
৯) মাওলানা মুহাম্মাদ শারীফ (রহঃ) , সেরহিন্দ
১০) মাওলানা পীর মুহাম্মাদ কাস্মিরী (রহঃ)
১১) মাওলানা জান মুহাম্মাদ হেরাতি (রহঃ), আফগানিস্তান
১২) শাইখুল হারাম মাওলানা মুহাম্মাদ জান (রহঃ), মক্কা

কিতাব সমুহ:

১) মাকামতে মাজহারী ( মির্জা মাজহার (রহ) এর জীবনী)
২) ইদাহ আল তরিকত, ( নখশবন্দিয়া তরিকার মূল কথা)
৩) আহওয়াল এ বুজুরগান
৪) মাকামত এ মুজাদ্দিদ আলফেসানী (রহঃ)
৫) তরিকায় বায়াত অয়া আজকার
৬) তরিকাহ শরিফাহ শাহে নখশবন্দ
৭) আহ ওয়াল শাহে নখশবন্দ
৮) রিসালাহ আজকার
৯) রিসালাহ মুরাকাবাহ
১০) রাদ আইতিরাজাত
১১) রাদ মুখালিফিন হযরত মুজাদ্দিদ (রহঃ)
১২) রিসালাহ মাশগুলিয়া
১৩) কামালতে মাজহারি
১৪) সুলুক রাকিয়া নখশবন্দিয়া
১৫) মকতুব শরীফ

ছবি: বামে, হযরত শাহ গোলাম আলী (রহঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ, দিল্লী

 

Comments

comments