খবরের বিস্তারিত...


জনাব মাওলানা খাজা মুহাম্মদ তৈয়বুল ইসলাম নকশেবন্দী মুজাদ্দেদি (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

খাজা মুহাম্মদ তৈয়বুল ইসলাম ( রহ.) একজন অতিশয় সাধারন মানুষ ছিলেন যাকে বলা যেতে পারে সহজ মানুষ । কোন রকম বৈষয়িক ভাবনা ছিল না তার চরিত্রে। সাদা মনের মানুষ,সোনার মানুষ। অনেকেই তাকে সোনা ভাই বলেও সম্মোধন করতেন।
আল্লাহর ওলীর আওলাদ ছিলেন, ভাইবোন বন্ধুবান্ধবগনও কামেল ওলী ছিলেন। জন্ম বেড়েউঠেছিলেন আউলিয়ার পরিবারে ।                                   ওলীর বাগানের ফুল, গাছতলার ফুল ।

জন্ম – ১৯৪৫ ইং , গাছতলা দরবার শরিফে, ইসলামপুর , চাঁদপুর জেলা ।
ইন্তেকাল – ৮ই জুলাই ২০০৮ ইং
পিতা সুফিজী খাজা আহমদ শাহ (রহ.)।
তরিকাহ – নাকশেবান্দিয়া মুজাদ্দেদিয়া।
মাজহাব- হানাফি।
আকিদা- সুন্নি।

সন্তানঃ

১/ খাজা মঈনুল ইসলাম মাসুম।
২/ খাজা মনিরুল ইসলাম মাসুদ
৩/ খাজা মারুফুল ইসলাম মাহমুদ।
৪/ খাজা মুহাম্মদ ইসমাইল জাবেহ উল্লাহ
৫/ খাজা কাউছার
৬/ খাজা সোহাগ

খুব ছোট বয়সে পিতাকে হারিয়ে ছোট ছোট ভাইবোনদের নিয়ে খুব সংগ্রাম করেই জীবন যাপন, পড়ালেখা করেছেন, মানোরি মাদ্রাসা থেকে হাজীগন্জ মাদ্রাসা হয়ে ঢাকা আলিয়া । প্রচন্ড মেধাবী হওয়ার কারনে জীবনের প্রতিটি পরিক্ষায় প্রথম স্থানে অধিকার করেন । ঢাকা আলিয়াতে পড়ালেখা সময় কুমারটুলী জামে মসজিদে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

একসময় একটি মুদ্রণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন । মারজান প্রিন্টিং প্রেস । প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সহিত দীর্ঘদিন পরিচালনা করেছেন।

তিনি ছাত্র বয়স থেকেই টুকটাক ব্যবসা করতেন , ছাত্র বয়স থেকেই কোরবানি করতেন ।

ছাত্র বয়সেই ইসলামের সকল অনুশাসন অনুশীলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী । নামাজ ,রোজা, যাকাত , কোরবানি সবসময় যথেস্ট আগ্রহের সাথে আদায় করতেন । হুজুরের দুধমা হুজুরের মামী যোবায়েদা বেগম বলতেন দরবেশ মামা শিশু বয়স থেকেই আল্লাহর ওলী ছিলেন ,শিশু বয়সে পুস্কুনিতে গোছল করাতে নিতেই তিনি লজ্জায় লাল হয়ে যেতেন।

তাকে কখনোই দুস্টুমি করতে দেখা যায় নাই। এমন কি ছেলেবেলায়ও খেলাধুলায়েও তাকে পাওয়া যেত না । তিনি সবসময় পড়ালেখা ,নামাজ ,রোজা,কোরআন শরিফ তিলাওয়াত নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকতেন। ফাহেসা বিষয়ে তার কোন আগ্রহ ছিল না কোন সময়ই।

সুদর্শন ও পুর্ণ কামেল মানুষ ছিলেন ,ফর্সা লম্বাটে হালকা পাতলা গায়ের গড়ন ছিল । সাদা পান্জাবি পড়তেন পাজামাও সাদা পড়তেন সাদা লুংগি পড়তেন, একটা সাদা রুমাল সব সময় তাঁর সাথে থাকতো কিস্তি সাদা টুপিও তিনি এক সময় পরতেন পরে পাগড়ির প্রয়োজনে গোলটুপি পরতেন । সাদা রং এর প্রতি ভালবাসা বলবো না এই রংটা দরবেশের সাথে খুব মানানসই ছিল।

অত্যান্ত পরিস্কার চলাফেরা করতেন । মানুষের সাথে তার ব্যাবহার ছিল সাধারন ও সহজসরল ।

মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে পালন করতেন। পুরো বাংলাদেশ ব্যাপি তার কোন প্রিয়জন আপন জনের কথা মনে হলে তিনি স্বশরিরে উপস্থিত হয়ে খোঁজখবর নিতেন ,কিছু না কিছু নিয়ে গিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য সহযোগীতা করতেন।

কথা বলতেন মুল্যবান, আপন মানুষের মত। হেদায়েত পাওয়া যেত তার কথায় পরামর্শে ।

জুমাবার তিনি যখন খানকাহ থেকে মসজিদে প্রবেশ করতেন মুসল্লিগন ভালবেসে দাঁড়িয়ে যেত তিঁনি মিষ্টি করে সবার মোসাবাহ হাতবুলিয়ে দিতেন ও খোজ খবর নিতেন । জুমাবার তিনি থাকনে একটু ভিন্ন মেজাজে,জুমারবয়ানে ইসলামের সমসাময়িক গুরুত্বসম্পন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা করতেন।

#পরজগারি, #আখলাকের_পরিপূর্ণতা,#চরিত্রের_সততা,#মুসলমানদের_সামাজিক_দায়িত্ব_কর্তব্য এই সকল বিষয়কে গুরুত্ব দিতেন। মসজিদের মিম্বারে একটি লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে বিশেষ করে #শরিয়তের_পাবন্ধির জন্য সবাইকে আহবান করতেন, (রেহনুমায়ে শারিয়াতি যাকে বলে)
ভালো লাগতো দেখতে যেন এই মানুষটাকে দেখতেই আমার জন্ম হয়েছে ।
আলোচনায় হুজুরের শুদ্ধ্ উচ্চারন সহজ সরল বচন মানুষকে ভিষন আকর্শন করত ,সবাই হুজুরের কথা মন দিয়ে শুনতো । খুত্‌বার ২য় অংশ তিনি জোরে জোরে উচ্চারণ করতেন যেন ধমক দিচ্ছেন কিন্তু অত্যান্ত বলিষ্ট ভাবে এতো ভালো লাগতো ..
তিনি যখন নামাজে ইমামতি করতেন তাঁর কোরআনুল করিমের তিলাওয়াত এত দরাজ ছিল এত#শ্রুতিমধুর ছিল কল্পনাতীত । তেলাওয়াতের সূর ছিল বেহেশতি। বড় দরাজ করে তিলাওয়াত করতেন ।
ফজরের নামাজের তিলাওয়াতে কখন কখন কাদঁতেন তাঁর চোখের পানিতে দাড়ি মুখ নাঁক ভিজে যেত, কন্ঠ ও ভেজা ভেজা…
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে দন্ডায়মান হয়ে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত কি সুন্দর হয় ! হুজুরকেই আমি দেখেছি । অপুর্ব সে অভিজ্ঞতা।

নামাজ শেষে মুছল্লিগন লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতো হুজুরের হাত ছুঁয়ে দেখার জন্য কি আকুতি কি মিনতি মানুষের তার কাছে ! মুছল্লিগন তাঁকে এতো ভালবাসতেন ! সকল বিষয়ে অবগত করতে সকলের কত ইচ্ছা ছিল তার কাছে। কত সমস্য নিয়ে হুজুরের কাছে আসতো ! আমি হুজুরের পাশে মুগ্ধ হয়ে এসব দেখতাম আর আমার বুকটা ভোরে যেত #গৌরবে

হুজুরকে সব সময় ব্যাস্ত দেখতাম কোরআন মজিদ তিলাওয়াতে অথবা নামাযে দণ্ডায়মান কিংবা কিতাব পড়ায় মগ্নচৈতন্য ।
ঘুম থেকে উঠে দেখতাম হুজুর নামাজ পড়ছেন, আবার ঘুমতে যাওয়ার সময়ও দেখতাম তিনি নামাজ পড়ছেন এতো নামাজ আমি এই পৃথিবিতে কাউকেই পড়তে দেখি নাই । নামাজের মোসল্লায় বসে এক পা উঠিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করতেন, সেজদায় ঘন্টার পর ঘন্টা থাকতেন। #দুপহর #বিকেল #সন্ধ্যাকাল #রাত #গভিররাত সবসময়।

কি চাইতেন তিনি দয়াময়ের দরবারে ?
নকশেবান্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকার সকল রিয়াজত গুলো গুরুত্বের সাথে পালন করেছেন । দরবেশ হুজুরের রিয়াজত গুলোর মধ্যে কবর চিল্লাহ ছিল উল্লেখযোগ্য । তিনি বছরে ৪০ দিন তরিকার মাশায়েখদের স্মরনে ,আল্লাহ ও তার রাসুলের মুহাব্বতে কবর চিল্লাহ করতেন ।

এক আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যেই নিয়োজিত ছিলেন চিরজিবন । কোন লোভ ছিলনা মানুষটার একে বারে নির্লোভ মানুষ ছিলেন ! দুনিয়াকে ভ্রুক্ষেপ করে চলতেন সবসময়। আল্লাহর তার রাসুলের সন্তোষ্টি ছিল তার জীবনের মোকসুদ। আউলিয়াদের খেদমত করেই জীবনপথ পাড়ি দিয়েছেন এবং কঠিন সততার সাথে সেই চেষ্টাই করে গেছেন জীবনভর। আল্লাহ তার এই কঠোর চেষ্টা গুলোকে কবুল করুক।

মানুষ মরনশীল ! এই কথাটি আরো একবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি ২০০৮ ইং ৮ই জুলাই ২৫শে আষাঢ় যোহরের প্রাক্কালিন সুন্নত আদায় করতে সেজদারত অবস্থায় আল্লাহর তাকে তার শাহি দরবারে তলব করে নিয়ে যান ।আল্লাহর হুকুমে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার এই কর্মযজ্ঞ থেকে নিজেকে আড়াল করেন। প্রভুর আদেশ শিরোধার্য।

লেখকঃ
সাহেবজাদা খাজা মুহাম্মদ মঈনুল ইসলাম মাসুম , গাছতলা দরবার শরীফ
পিতাঃ গাছতলা দরবার শরিফের পীর সাহেব মাওলানা খাজা তৈয়বুল ইসলাম (রহঃ)

 

Comments

comments