মুসলমানদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক সংকটের কারণ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
বর্তমানে মুসলমানরা বিশ্বব্যাপী এক সংকটে নিপতিত। তাঁরা এতসব সমস্যার সম্মুখীন যে সেগুলোর কোন সমাধান নেই। অতীতে তারা নিজেদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান নিজেরাই করতে সক্ষম ছিল। অথচ বর্তমানে দৈনন্দিন নতুন নতুন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে তাঁরা শান্তি ও স্থিরতা থেকে বন্ঞ্চিত।
মুসলমানরা নামায,রোযা হজ্জ যাকাত প্রভৃতি প্রভৃতি ইবাদত অতীতেও নিয়মিত পালন করেছিল এবং আজও করছে। হিসাবের গরমিল এখানেই যে,অতীতে তারা পেয়েছিল সর্বত্রই সম্মান ও মর্যাদা,পক্ষান্তরে,আজ তাদের ভাগ্যে জুটছে শুধু অপমান আর লাঞ্ছনা। তাদের ইবাদত বন্দেগীতে নেই কোন স্বর্গীয় সুখ,তাদের নামায বা প্রার্থনাগুলোও আর ফলপ্রদ হয় না।এখন আমাদের প্রশ্ন,কেন এমন হচ্ছে? মুসলসানদের এ দুর্গতির কারণ কি?
এর প্রকৃত কারন হচ্ছে,মুসলমানরা আর পূর্বের মতো আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধির কাজে আত্মনিয়োগ করেন না।তারা এখন আন্তরিকতা ছাড়াই ইবাদত করে থাকেন। তাঁদের উদ্দেশ্য বা নিয়্যত বিশুদ্ধ নয়। ফলে তারা তাদের ইবাদত বন্দেগীতে কোন উপকারিতা পাচ্ছেন না। যত লোককে নামায আদায় করতে দেখা যায়,তাদের প্রায় প্রত্যেকই গভীর ধ্যান ও মনোযোগ ছাড়াই নামায আদায় করে থাকেন। এ কারনে,তাদের নামায অন্তঃসারশূন্য প্রাণহীন(Soulless) বাহ্যিক ধর্মানুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
মুসলমানদের এ দুরবস্থার কারণ বহিস্থ নয় বরং অন্তস্থ। মুসলমানরা তাঁদের অন্তর্জগতের এ অবস্থার পরিবর্তন সাধন না করা পর্যন্ত আল্লাহ পাকও তাদেরকে বর্তমান এ দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করে উত্তম অবস্থা দান করবেন না। আল্লাহ বলেন,”তিনি কোন সম্প্রদায়ের বা জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না,যতক্ষন না তাঁরা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করেন। (আল কুরআন)
এখানে অপর একটি প্রশ্নের সৃষ্টি হয় যে মানুষ কিভাবে নিজেদের পরিবর্তন আনবে এবং সে পরিবর্তনই বা কিরূপ?এ প্রসঙ্গে হযরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী রহঃ বলেছেন,”মানুষের নফসের অবৈধ চাহিদা,অবৈধ যৌন বাসনা,লোভ ও শয়তানের আনুগত্য পরিত্যাগ করার মাধ্যমে ঐ পরিবর্তন সাধন করতে পারে।” প্রত্যেকই খাটি তওবা এবং উল্লিখিত উদ্দেস্য সাধনে পূর্ণ নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে সেই কাংখীত পরিবর্তনের দিকে এগুতে পারে। এ ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্র্রন ও আত্মশুদ্ধি ও অন্তরের বিশুদ্ধতা এত প্রয়োজন যে এ ছাড়া কোন আমলই কবুল হবে না।
অন্তর বিশুদ্ধকরন,আত্মনিয়ন্ত্র্রন ছাড়া সম্ভব নয়। মুসরদলমানদের যাবতীয় সমস্যা এবং মানবিক সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে আত্মশুদ্ধি(Self purgation)। যদি মুসলমানেরা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে এ কাজ করেন,তাহলে যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন,পরকালেও সফলকাম হবেন। কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ ক্বদ আফলাহা মান্ যাক্-কাহা ওয়া ক্বদ খাবা মান্ দাচ্ছাহা।” অর্থাৎ তারাই অবশ্যই সফলকাম হয়েছে,যারা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং যারা নিজেদেরকে কলুষিত করেছে,তারা অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছে।”(সুরা আশ্-শামস্)।
সুতরাং আত্মসুদ্ধিই মানুষকে বিশুদ্ধ ;ঈমানে ভূষিত করে এবং তার নফ্সকে পূর্ণ অনুগত বানিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। কারো নফ্স মুতমাইন্না (প্রশান্ত) না হওয়া পর্যন্ত তার অন্তর ও মন ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে না। চিরন্তন সুখ ও আরামের স্বার্থেই প্রত্যেকের উচিৎ আত্মনিয়ন্ত্র্রন করা। বিষয়টি চিন্তা ভাবনা এবং একটু মেহনতের দাবী রাখে।
(সূত্রঃ নূরে মারেফাত)-
আবুল হাসান শাইখ মুহাম্মদ ইকরামুল হক অনূদিত