হাইকোর্ট মাজার: হযরত খাজা শরফুদ্দিন চিশতী(রাহঃ) এঁর জীবনী
ঢাকা সুপ্রিমকোর্ট সংলগ্ন এই মহান সাধকের মাজার শরীফটি সুপরিচিত হলেও, বাংলার রাজধানীতে এই মহান সাধকের ইসলাম প্রচারের ইতিহাস অনেকেরই অজানা রয়েছে। একদিকে ওলি বিদ্ধেষী মুসলিম নামধারীদের অপপ্রচার, অন্যদিকে নাস্তিকদের গভীর ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে এই মাজার শরীফ ও ছাহেবে মাজারের গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস অপ্রকাশিত।
অথচ এই ইতিহাসকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার প্রসারের ইতিহাস অপূর্ণাঙ্গ।
হাইকোর্টের মাজার শরীফের প্রকৃত ইতিহাস:
ওলী-এ-বাংলা হযরত শাহ্ খাজা শরফুদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীব উন নওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন হাসান চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর ২য় পুত্র ছিলেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর ২য় স্ত্রী হযরত বিবি ইসমত -এর গর্ভে ও হযরত শাহ্ খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর ঔরষে তিনি ৬২৮ হিজরী মোতাবেক ১২৩০ খৃষ্টাব্দে আজমীর শরীফে জম্মগ্রহণ করেন।
বিগত ৭৫০ বৎসর ব্যাপী লিখিত বিভিন্ন মালফুজাত, তাজকিরাত , মাকতুবাত, বিশেষ করে হযরত শাহ্ খাজা গরীব উন নওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর দ্বিতীয় প্রধান খলিফা হযরত হামিদ উদ্দিন সাভালী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি কর্তৃক ১২৫০ খ্রীষ্টাব্দে রচিত “সুরুবাস সুদুর” এ তথ্য প্রদত্ত হয়েছে । হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি রচিত “ফাতেয়াইদুল ফুয়াদ” এবং তার খলিফা হযরত নাসির উদ্দিন চেরাগী রচিত ” “খায়রুল মঞ্জিল” পূস্তকের বর্ণনায় এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ওলী -এ- বাংলার পিতৃপ্রদত্ত প্রকৃত নাম ছিল খাজা হুসাম উদ্দিন আবু সালেহ চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি। তাঁর জেষ্ঠ্য ভ্রাতা হযরত খাজা ফখর উদ্দিন আবুল খাইর চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি হযরত শাহ্ খাজা গরীব উন নওয়াজ রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর ১ম স্ত্রী বিবি আমাতুল্লাহর গর্ভজাত ও ঐ একই মাতার গর্ভে তাঁর একমাত্র ভগ্নী হযরত বিবি হাফেজা জামাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহা জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর কনিষ্ট ভ্রাতা হযরত খাজা গিয়াস উদ্দিন আবু সাইয়েদ চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি তাঁর গর্ভধারিনী মাতা বিবি ইসমত এর গর্ভজাত ছিলেন। পিতৃকূলে এই ওলী মহান ওলী সাইয়্যেদ ছিলেন এবং বংশধারা পিতা হযরত খাজা গরীব উন নওয়াজ রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি মাধ্যমে রাসূল করীম হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রক্তধারার সাথে সংমিশ্রিত ছিল।
ওলী-এ-বাংলার ৫ বৎসর বয়স কালে ৬ই রজব ৬৩৩ হিজরী মোতাবেক ১২৩৬ খ্রীষ্টাব্দে তার পিতা হযরত খাজা গরীব উন নওয়াজ রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি ইন্তেকাল করেন ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন) ফলে সে সময়ে যুবক বয়স্ক তার জৈষ্ঠ্যভ্রাতা হযরত খাজা খাজা ফখর উদ্দিন আবুল খাইর চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর পরিচর্যায় তিনি লালিত পালিত হন। পরবর্তীতে তিনি দিল্লীতে হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর হাতে বাইয়াত হন ও তার কাছে ইলমে মারেফাতের জ্ঞান অর্জন করেন। ক্রমে তিনি কঠোর সাধনা দ্বারা কামালিয়াতের উচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের আবদালে পরিণত হন। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহির ইন্তেকালের পর আজমীর শরীফ পূনরায় এর ভূতপূর্ব হিন্দু রাজা পৃথিরাজ রায় এর পুত্রগণের দখলে চলে যায় ও আজমীর শরীফের মুসলমানগণ নির্যাতনের শিকার হন।
এ সময় ৬৬৩ হিজরী মোতাবেক ১২৬৫ খ্রীষ্টাব্দে তার জৈষ্ঠ্যভ্রাতা হযরত খাজা ফখর উদ্দিন আবুল খাইর চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি হিন্দু দুস্কৃতকারীদের সাথে যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। ভ্রাতার শাহাদতে হযরত হুসাম উদ্দিন খুবই মর্মাহত হন ও আজমীর শরীফ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৪৫ বৎসর। এ সময় এক রাতে তিনি পিতা হযরত খাজা গরীব উন নওয়াজ রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর নিকট থেকে বাশারত লাভ করেন ও পূর্বদিকের দেশে গমন করে দ্বীনের খেদমত করার নির্দেশ লাভ করেন। এই অবস্থায় কাউকে কিছু না জানিয়ে একদা গভীর রাতে পদব্রজে দিল্লীর উদ্দেশ্যে আজমীর শরীফ ত্যাগ করেন। এই একই সময়ের কিছু পূর্বে হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি বঙ্গদেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লীর হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে ১২ জন আউলিয়া সহযোগে বঙ্গদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আরও বহু আউলিয়া দরবেশ তার সঙ্গী হন।
হযরত হুসাম উদ্দিন আজমীর শরীফ থেকে পদব্রজে দিল্লী আসেন এবং সেখানে সংবাদ পান যে, হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি ১২ জন সঙ্গীসহ পূর্বদিকে বঙ্গদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন এবং বর্তমানে সমরখন্দে অবস্থান করছেন, হযরত হুসাম উদ্দিন পদব্রজে সমরখন্দে গিয়ে তার সাথে যোগ দেন। আজমির শরীফ হতে মুহাম্মদ শরীফ নামে অপর এক দরবেশ একই সময়ে হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর সাথে যোগ দেন। হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর এই কাফেলার সাথে হযরত হুশাম উদ্দিন মূলতান, ইরান, আফগানিস্তান, বিহার প্রভৃতি দেশ পদব্রজে পেরিয়ে বঙ্গদেশের সপ্তগ্রামে এসে উপস্থিত হন। সপ্তগ্রাম তখন ছিল মুসলিম সুলতান শামস্ উদ দীন ফিরোজ শাহ্ এর রাজ্য লাখনৌতির অন্তর্গত। শ্রীহট্ট তখন ছিলো অত্যাচারী হিন্দু রাজা গোবিন্দ এর অধীনে। সুলতান সামস্ উদ্দিনকে শ্রীহট্ট অভিযানের উপদেশ দিয়ে হযরত শাহ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি সুলতানের সেনাবাহিনীর সিপাহশালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন এর বাহিনীর সাথে হযরত হুসাম উদ্দিন ও হযরত শাহ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর ৩৬০ জন ওলী দরবেশ ৭০১ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ খ্রীষ্টাব্দে বিজয়ীর বেশে শ্রীহট্টে প্রবেশ করেন।
অতঃপর শ্রীহট্টে বা সিলেটে হযরত শাহ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর সাথে তিনি ২ বৎসর অবস্থান করেন ও তাঁর সহবতে ফায়েজ ও বরকত লাভ করেন। এই সময় খাজা গরীব উন নওয়াজ রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর পুত্র হিসাবে পরিচিতি প্রকাশ পেলে হযরত শাহ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি তাঁর নাম রাখলেন শরফ উদ্দিন। সেই থেকেই হযরত হুসাম উদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি হযরত খাজা শরফ উদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি নামে পরিচিত হন। হযরত শাহ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর জীবনী গ্রন্থসমূহে তাঁর সঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার নামের তালিকায় তাঁর নাম এবং সাথী মুহাম্মাদ শরীফ ওরফে শরীফ আজমেরী এর নাম অন্তর্ভুক্ত আছে ।
অতঃপর ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি হযরত শাহ জালাল রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি এর নির্দেশে দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে শ্রীহট্ট থেকে দক্ষিণ বঙ্গের দিকে নৌকা যোগে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে সোনারগাঁও এ অবস্থিত “হযরত শরফ উদ্দিন আবু তাওয়ামা” প্রতিষ্ঠিত খানকা শরীফে কিছুকাল অবস্থান করে তথকার সূফী দরবেশদের পরামর্শে রমনা নামক এক গ্রামে অবস্থিত এক কালী মন্দিরের পাশে বসবাসকারী জনগণের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে ইচ্ছুক হয়ে তিনি ঐ এলাকার উদ্দেশ্যে সোনারগাঁও থেকে নৌকা যোগে রওয়ানা হন। উক্ত নৌকার মাঝির জানামতে তিনি উক্ত কালী মন্দিরের কাছাকাছি স্থানে আসার জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে সংযুক্ত এক খাল পথের শেষপ্রান্তে এসে এক গভীর জঙ্গলাকীর্ণ কিন্তু সরু এক পায়ে চলা পথের পাশে অবতরণ করেন। স্থানটি নির্জন লোকালয় শূন্য হওয়ায় তাঁর খুব পছন্দ হয় ও এখানেই তিনি আস্তানা নেন। আজ যে স্থানে এই মাজার মসজিদ অবস্থিত এটাই সেই ভীষণ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান এবং বায়োবৃদ্ধ যারা এখনো জীবিত আছেন তারা জানেন যে, মাজার মসজিদের এই জাতীয় ঈদগাহ মাঠটি ছিল একটি খালের শেষ মাথা এবং এই খালটি দিয়েই ওলী এ বাংলা এই স্থানে এসে নৌকা থেকে অবতরণ করেন এবং এখনও সেই কালি মন্দির সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে।
স্থান এবং বায়োবৃদ্ধ যারা এখনো জীবিত আছেন তারা জানেন যে, মাজার মসজিদের এই জাতীয় ঈদগাহ মাঠটি ছিল একটি খালের শেষ মাথা এবং এই খালটি দিয়েই ওলী এ বাংলা এই স্থানে এসে নৌকা থেকে অবতরণ করেন এবং এখনও সেই কালি মন্দির সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে।
জঙ্গলাকীর্ণকিন্তু সরু একপায়ে চলা পথের পাশে অবতরণ করেন। স্থানটি নির্জন লোকালয় শূন্য হওয়ায় তার খুব পছন্দ হয় ও এখানেই তিনি আস্তানা নেন। আজ যে স্থানে এই মাজার মসজিদ অবস্থিত এটাই সেই ভীষণ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান এবং বায়োবৃদ্ধ যারা এখনো জীবিত আছেন তারা জানেন যে, মাজার মসজিদের এই জাতীয় ঈদগাহ মাঠটি ছিল একটি খালের শেষ মাথা এবং এই খালটি দিয়েই ওলী এ বাংলা এই স্থানে এসে নৌকা থেকে অবতরণ করেন এবং এখনও সেই কালি মন্দির সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে।
খ্রীষ্টিয় দ্বাদশ শতাব্দিতে রমনা গ্রামটি সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ধর্মাবলন্বী এবং হিন্দু জনগণ দ্বারা অধিষ্ঠিত ছিল। খ্রীষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীতে এখানে শিখ ধর্মাবলন্বীদের উপসানালয় “গুরুদুয়ারা নানকশাহী” প্রতিষ্ঠিত হয়। ১১০০ খ্রীষ্টাব্দে নেপালের বদ্রীনাথ যোশী মঠ’ এর শংকরাচার্য স্বামী গোলাপ গিরির নেতৃত্বে একদল তীর্থ দর্শনার্থী রমনা গ্রামে এসে সেখানে আস্তানা গড়ে তোলে এবং কালি মন্দির প্রতিষ্ঠাকল্পে একটি কাঠঘর মন্দির নির্মাণ করে তথায় কালি পূজা শুরু হয়। ক্রমে ক্রমে এই কালিপূজার মন্দিরে কাপালিকদের প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে এবং তারা নরবলী যজ্ঞসহ নানা যাগযজ্ঞ দ্বারা স্থানীয় নিরীহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও অপরাপর বসবাসকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেন। এই কাপালিদের তান্ডবে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে গৃহী হিন্দুরা বৌদ্ধ ধর্মের দিকে ধাবিত হতে থাকে । এই অবস্থায় ওলী-এ-বাংলা এই স্থানে আস্তানা গড়ে তুলেন। এই সময় এই এলাকায় ছিল উৎকট তান্ত্রিক হিন্দু গুরুবাদের প্রভাব এবং সূরাপায়ী তান্ত্রিকাবাদের এই পুরোহিতরা রমণার কালি মন্দিরে নরবলী দিতো। ভয়ে উৎকন্ঠায় এই গ্রামীন মানুষ গুলি যখন অস্থির ছিল তখন মানব সেবার ব্রত নিয়ে এই মহান ওলীর কন্ঠে ধ্বনিত হলো “আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”। এই উচ্চারণে “সিরাতুল মুস্তাকিম” স্পষ্ট হয়ে ওঠে পথভ্রষ্ট মানবকূলের সামনে।
হিজরী ৭০৪ মোতাবেক ১৩০৬ খ্রীষ্টাব্দে ওলী-এ-বাংলা এখানকার আস্তানা থেকে দ্বীন প্রচারে লিপ্ত হন। তার চরিত্র মাধুর্য্য ও শ্রদ্ধেয় পূর্ণাত্মার পরিচয় পেয়ে হিন্দু জনগণ অচিরেই তার প্রতি আকৃষ্টি হতে থাকে এবং দীক্ষিত হতে থাকে ইসলামে । তিনি এই অঞ্চলে ইসলামের বানী প্রচার করতে থাকেন। শত শত হিন্দু তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে । কিন্তু কায়েমী স্বার্থবাদী পুরোহিতরা নানা ভাবে বাধার সৃষ্টি করতে থাকে, তবে ওলী -এ-বাংলার কঠোর সংগ্রামে তান্ত্রিকদের তন্ত্র মন্ত্র নিষ্ফল হয় এবং এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, কালি মন্দিরের তান্ত্রিকেরা হয় ওলী-এ-বাংলার নিকট ইসলামের ছায়া সুশীতলে আশ্রয় নেয় অথবা এই এলাকা ছেড়ে যায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় খ্রীষ্টিয় ত্রয়োদশ শতকে এলাকার কালিমন্দিরটি বিরান হয়ে যায় ও তা বাদুর চামচিকার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয় । ওলী-এ-বাংলার অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে ধীরে ধীরে মুসলিম লোকালয় গড়ে উঠে ও ওলী-এ-বাংলার নামের চিশতী পদবীর কারণে এলাকাটি চিশতীয়া মহল্লা” নামে পরিচিত হয়ে উঠে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই এলাকায় চিশতীয়া মহল্লার বাড়ীঘর, মসজিদ ও কবরস্থান ছিল। ওলী-এ-বাংলার ইন্তেকালের পরবর্তীতে নানা কারণে ক্রমে ক্রমে বিরান হয়ে যায়।
প্রায় ৬০০ বৎসর পর ১৯০৫ সালে এই স্থানে পূর্ব বাংলা প্রদেশের বড়লাটের বাসগৃহ নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করে বৃটিশ সরকার এই এলাকার কবরস্থান নিশ্চিহ্ন করে গভর্নমেন্ট হাউস নির্মাণ করে, যা আজকের পুরাতন হাইকোট ভবন রূপে দাঁড়িয়ে আছে।উল্লেখ্য ওলী -এ-বাংলার ইন্তেকালের পরবর্তীতে স্বামী হরিচরণ গিরি রমণা গ্রামের ঐ কাঠঘর মন্দির ভেঙ্গে পাকা মন্দির এর পত্তন করলে ভাওয়াল রাজমহিষী রানী বিলাসমনি দেবী তা পাকা মন্দিরে পরিণত করেন ও তথায় সনাতন ধর্মীয় আচার আচরণ প্রতিষ্ঠা করেন।
ওলী-এ-বাংলা নিজ জীবদ্দশায় ইসলাম প্রচারে যে সংগ্রাম করে গেছেন, তারই ফলশ্রুতিতে রমণা ছাড়িয়ে ইসলামের মহান বাণী পৌছিয়ে যায় এই এলাকার পশ্ববর্তী সকল জনপদে। শত শত মানুষ ক্রমে ক্রমে তার সোহবতে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা ও ইসলাম প্রচারে তার কঠোর সাধনার কারণে তিনি ওলী-এ-বাংলা নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। ৩৫০ বছর পর ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে যদিও ঢাকার শহর প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু ইসলাম ধর্মের গোড়া পত্তন করেন ওলী-এ-বাংলা হযরত শাহ্ খাজা শরফ উদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি ১৩০০খ্রীষ্টাব্দে তার জীবদ্দশা কালে । বর্তমানের বাংলাদেশে ইসলামের যে জ্যোতি বহমান তা ওলী-এ-বাংলা হযরত শাহ্ খাজা শরফ উদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহিএর দ্বীন প্রচারের শ্রমের ফসল । এই কারণেই তার মাজার এক পূণ্যময় স্থানে পরিণত হয়েছে। মহান এই ওলী শুধু যে অজ্ঞ পথহারা মানুষদের মাঝে ধর্মীয় বাণীই পৌছাতেন তাই নয় বরং তাদের সামাজিক জীবনে ইসলামের সংহতির বীজ বপন করে দিতেন। ফলে এই এলাকায় ইসলামের দরজা দিনে দিনে মজবুত ভীত প্রাপ্ত হয় যা আজও আমাদের মাঝে বিকাশমান।
ওলী-এ-বাংলা হযরত শাহ্ খাজা শরফ উদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহি দীর্ঘ ৩৪ বৎসর এই এলাকায় অবস্থান করে দ্বীনের খেদমত করেন। হিজরী ৭৩৮ মোতাবেক ১৩৪০ খ্রীষ্টাব্দে ওলী-এ-বাংলার ১১০ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল হয় (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন) তার ভক্ত আশেকান ও মুরীদগন চিশতীয়া মহল্লার কবরস্থানের সন্নিকটে তার হুজরার মধ্যে তাকে দাফন করেন। সেটাই আজ ওলী-এ-বাংলা হযরত শাহ্ খাজা শরফউদ্দিন চিশতী রহমাতুলাল্লাহি আলাইহিএর মাজার শরীফ । ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন সময়ে মাজারটির সংস্কার সাধিত হয়। এ কাজে ঢাকায় নবাব আহসান উল্লাহ ও নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুর সহ বহু আশেকান ভক্তদের অবদান রয়েছে।