খবরের বিস্তারিত...


ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় ইসলামঃ পর্ব এক –  মীর্জা মহসিন

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক একটি সূরার নাম করন করেছেন” আশ-শুআরা” যার অর্থ কবিগণ। এ সূরায় আল্লাহ পাক কবিদের সাহিত্যচর্চায় উৎসাহের পাশাপাশি কবিদের সাহিত্যচর্চার দিক নির্দেশনাও প্রদান করেছেন।যেমন সূরা আশ শূআরার ২২৪-২২৭ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন ” এবং বিভ্রান্তরা কবিদের অনুসরণ করে। আপনি কি দেখেন না, তারা প্রতিটি উপত্যকায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবংএমন সব কথাবার্তা বলে, যা তারা করে না।তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম করে, আল্লাহকে অত্যাধিক স্মরন করে এবং নিপীড়িত হলে প্রতিশোধ গ্রহন করে”।
এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা(রা), হজরত হাসসান বিন সাবিদ(রা) ও হজরত কাব ইবনে মালিক( রা) অশ্রুসিক্ত বদনে রাসূল (দঃ) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজি পেশ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেছেন। কিন্তু আমরা তো কাব্যচর্চা করি। এখন আমাদের কি উপায় হবে? রাসূল(দঃ) বলেন, আয়াতের শেষাংশ তিলাওয়াত কর। এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো,তোমাদের কাব্যচর্চা যেন সার্থক হয় এবং অনর্থক ও ভ্রান্ত উদ্তেশ্য আশ্রিত না হয়।কাজেই তোমরা আয়াতের শেষাংশে উল্লিখিত ব্যতিক্রমীদের অন্তর্ভুক্ত।
রাসূল (দঃ) এর পবিত্র ধমনিতে কাব্যপ্রতিভার শোণিতধারা সদা বহমান ছিল। রাসূল (দঃ) এর মাতা আমিনা বিনতে ওয়াহাব ছিলেন যুগধর্মের দাবীতে একজন স্বভাবকবি।রাসূল(দঃ) পিতা আব্দুল্লাহর আকস্মিক মৃত্যুর পর রাসূল(দঃ) মাতা আমেনা যে মর্সিয়া বা শোকগাথা রচনা করেন, তা ইতিহাস খ্যাত। পিতৃব্য আবু তালিবের কবিখ্যাতও ছিল সর্বত্র সুবিদিত।রাসূল (দঃ) এর শৈশব অতিবাহিত হয় ভাষাপ্রাচুর্য ও সাহিত্যের রসস্নিগ্ধ পরিবেশের আবহে।রাসূল(দঃ) এর কয়েকটি জীবনী গ্রন্থে পাওয়া যায়, তিনি হুনাইনের যুদ্ধে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। হযরত আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসূল (দঃ) কখন কখন বক্তব্যে আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার কবিতা দিয়ে উদাহরন দিতেন।কাব্যচর্চায় রাসূল (দঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে কোনো কোনো কবিতায় প্রকৃত জ্ঞানের কথা রয়েছে।, তিনি আরো বলেন, ভালো কথা যেমন সুন্দর, ভালো কবিতাও তেমন সুন্দর। আরেক হাদিসে বলেন, কবিতা হলো সুনামঞ্জস্যপূর্ণ কথামালা।যে কবিতা সত্যনিষ্ঠ, তা সুন্দর। আর যে কবিতা সত্যের অপলাপ, তাতে কোনো কল্যাণ নেই।

কবি ও কবিতার প্রতি রাসূল (দঃ) এর ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। কবিতাও সাহিত্যের দ্বার অবারিত রাখতে তিনি কবি সাহিত্যিকদের পুরস্কৃত করতেন।মাঝে মধ্যে তিনি কবি সাহাবিদের কাছ থেকে কবিতা শুনতেন।কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি রাসূল (দঃ) এই আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতা দেখে খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) রাসূল (দঃ) কে মাঝে মাঝে কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতেন। একবার রাসূল (দঃ) দীর্ঘ সফরে বের হলেন। মরুভূমিতে উটের পিঠে বন্ধুর পথ। রাত ও হয়ে উঠেছে বেশ। হঠাৎ বলে উঠলেন হাসসান কোথায়? হযরত হাসসান রাঃ এগিয়ে এসে বললেন এইতো আমি হে আল্লাহর রাসূল। রাসূল (দঃ) বললেন একটি কবিতা শুনাও তো।
শুধু তাই নয় মসজিদ ই ননবীর ভিতরে শুধু কবিতা পাঠের জন্য আলাদা মিম্বার তৈরী করা হয়েছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে হাসসান (রাঃ) মুসলমানদের কবিতা শুনাতেন।
কবি হযরত কাব ইবনে জুহাইর (রাঃ) রাসূল (দঃ) এর হাতে ইসলাম গ্রহন করে রাসূল (দঃ) প্রশংসাজ্ঞাপক কবিতা রচনা করেন ” বানাত সুআদ” কবিতা। আনন্দিত হয়ে রাসূল (দঃ) তাকে নিজের ডোরাকাটা চাদর উপহার দেন। কবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)কে মদিনার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও বানিয়েছিলেন।
(চলবে- )

লেখকঃ মীর্জা মহসিন, লেকচারার-অর্থনীতি, চট্টগ্রাম নেসারিয়া কামিল মাদ্রাসা

Comments

comments