খবরের বিস্তারিত...


দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় শরিয়ত সম্মত কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই

জুলাই 24, 2018 আক্বীদা

1) পেশাবের পর ঢিলা ব্যবহার ও তা নিয়ে হাটাহাটি করার হুকুম কি?

★ যেহেতু পানির দ্বারা নাপাক বেশি পরিস্কার হয়, তাই পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা সুন্নত। আর ঢিলা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা জায়েজ। {তিরমিজী-১/২৯, মুসতাদরাকে হাকেম-১/১৫৫, হেদায়া-১/৪৮, শরহে নুকায়া-১/৪৮, শরহে বেকায়া-১২৭}

عَطَاءُ بْنُ أَبِي مَيْمُونَةَ قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا خَرَجَ لِحَاجَتِهِ، أَجِيءُ أَنَا وَغُلاَمٌ، مَعَنَا إِدَاوَةٌ مِنْ مَاءٍ، يَعْنِي يَسْتَنْجِي بِهِ»

আতা বিন আবী মাইমুনা বলেন, আমি শুনেছি আনাস বিন মালিক রাঃ বলেছেন, রাসূল সাঃ যখন প্রয়োজন সম্পন্ন [টয়লেটে যাবার জন্য] করার জন্য বের হতেন, তখন আমি ও আরেক ছেলে আসতাম। আমাদের সাথে পানির পাত্র থাকতো। অর্থাৎ এ দিয়ে রাসূল সাঃ ইস্তিঞ্জা করতেন। {বুখারী, হাদীস নং-১৫০}

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

وَمَنْ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ، وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ،

যে ব্যক্তি ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ব্যবহার করে। যে তা করবে সে উত্তম কাজ করল, আর যে করেনি তাতে কোন সমস্যা নেই। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫}

ঢিলা হাতে হাটাহাটি করা

আসলে ঢিলা হাতে হাটাহাটি করা জরুরী বিষয় নয়। এটি দেখতেও সুন্দর দেখায় না। কিন্তু ইস্তিঞ্জার ক্ষেত্রে আবশ্যক হল পেশাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। এটি আবশ্যকীয়।

ভাল করে বুঝে নেই। ঢিলা হাতে হাটাহাটি কোন জরুরী বিষয় বা সুন্নত নয়। কিন্তু পেশাবের ফোটা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা আবশ্যকীয় বিষয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এ বিষয়ে আমরা দু’টি হাদীস লক্ষ্য করি-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا: فَكَانَ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ البَوْلِ – قَالَ وَكِيعٌ: مِنْ بَوْلِهِ – وَأَمَّا الْآخَرُ: فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ “.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হচ্ছিলেন। বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। কোন বড় কারণে আজাব হচ্ছে না। একজনের কবরে আজাব হচ্ছে সে পেশাব থেকে ভাল করে ইস্তিঞ্জা করতো না। আরেকজন চোগোলখুরী করতো। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৮০, বুখারী, হাদীস নং-১৩৬১}

عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ»

হযরত ঈসাব বিন ইয়াযদাদ আলইয়ামানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে, তখন সে যেন তার লজ্জাস্থানকে তিনবার ঝেড়ে নেয় বা পবিত্র করে নেয়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬}

যেহেতু পেশাব এমন বস্তু। যার ছিটা শরীরে লাগলে কবরের আযাব হয়ে থাকে। আর হাদীসেও লজ্জাস্থানকে ঝেড়ে পবিত্র করার কথা এসেছে। তাই যাদের পেশাব করার পর পেশাবের ছিটা ফোটা ফোটা করে পড়ে, তাদের উচিত কিছুক্ষণ হেটে তা পবিত্র করা। নতুবা পেশাবের ছিটা শরীরে লাগার দরূন মারাত্মক গোনাহ হবে। যা কবরের আযাবের কারণ হবে। সেই সাথে কাপড় থাকবে নাপাক। আর নাপাক কাপড় দিয়ে নামায হয় না।

2)  তায়াম্মুমে দুইবার মাটিতে হাত মারার কোন দলীল আছে কি?

তায়াম্মুমে দুইবার হাত মারা

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّيَمُّمُ ضَرْبَتَانِ ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ، وَضَرْبَةٌ لِلْيَدَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ»

হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তায়াম্মুম দুই জরব তথা দুইবার হাত মারা। একবার চেহারার জন্য, আরেকবার দুই হাত কনুই পর্যন্তের জন্য।

আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩৩৬৬,

সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬৮৫,

মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৬৩৪,

সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৯৯৭,

মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৫৫৪,

কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৬৬৮৮।

আল্লামা জারুল্লাহ সাদী, বলেন, হাদীসটি সহীহ। {আননাওয়াফেউল আতরাহ-১১০}

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «التَّيَمُّمُ ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ، وَضَرْبَةٌ لِلْكَفَّيْنِ

হযরত আবু উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তায়াম্মুমে চেহারার জন্য একবার মাটিতে হাত মারবে, আর দুই হাতের জন্য আরেকবার হাত মারবে। {আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৭৯৫৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৬৬৯২}

عَنْ جَابِرٍ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” التَّيَمُّمُ: ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ , وَضَرْبَةٌ لِلذِّرَاعَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ

হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্নিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তায়াম্মুমে একবার চেহারার জন্য, আরেকবার দুই হাত কনুই পর্যন্তের জন্য মাটিতে হাত মারবে।{সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬৯১, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৯৯৯}

3) টয়লেটে যাবার সময় মাথায় কাপড় রাখা কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

টয়লেটে যাবার সময় মাথায় কাপড় রাখা সুন্নত। এমনটিই রাসূল সাঃ থেকে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

عَنْ حَبِيبِ بْنِ صَالِحٍ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ لَبِسَ حِذَاءَهُ، وَغَطَّى رَأْسَهُ

হযরত হাবীব বিন সালেহ রাঃ থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন, তখন জুতা পরিধান করতেন, এবং মাথা ঢেকে নিতেন।

সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৫৬।

খুলাসাতুল আহকাম, হাদীস নং-৩২৪।

আলফাতহুল কাবীর, হাদীস নং-৯০৭২।

কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৭৮৭৬।

আশ শামায়েলুশ শরীফাহ, হাদীস নং-১৯৮।

মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ জারুল্লাহ সা’দী বলেন, এটি সহীহ মুরসাল। { আননাওয়াফেউল আতরাহ, বর্ণনা নং-২৩৭}

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ غَطَّى رَأْسَهُ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ যখন টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন মাথা ঢেকে নিতেন। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৫৫, খুলাসাতুল আহকাম, হাদীস নং-৩২৩, হুলয়াতুল আউলিয়া}

4) ইমাম সাহেব ভুলে ওজু ছাড়া নামায পড়িয়ে ফেললে হুকুম কী?

ইমাম সাহেবসহ তার পিছনে যারা নামায পড়েছেন, তাদের কারো নামাযই হয়নি। সকলের জন্য উক্ত নামায পুনরায় কাযা করা আবশ্যক।

কারণ, পবিত্রতা ছাড়া নামায হয় না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ (6

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।{৫: ৬, সূরা মায়িদা-৬}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَقْبَلُ اللَّهُ صَلَاةً إِلَّا بِطُهُورٍ،

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্রতা ছাড়া নামায গ্রহণযোগ্য হয় না। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৭২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ১, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৩৬৬}

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى

অনুবাদ-যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়, তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২

সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২

عن جابر بن عبد الله  : أن عمر بن الخطاب جاء يوم الخندق بعدما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب قال النبي صلى الله عليه و سلم ( والله ما صليتها ) . فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلى العصر بعدما غربت الشمس ثم صلى بعدها المغرب

[ 573 ، 615 ، 903 ، 3886 ]

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-ওমর বিন খাত্তাব রা. খন্দকের দিন সূর্য ডুবার পর কুরাইশ কাফেরদের তিরস্কার করতে করতে এলেন। নবীজী সাঃ কে বললেন-“হে আল্লাহর নবী! আমি আসরের নামায পড়তে পারিনি এরই মাঝে সূর্য ডুবে গেছে”। নবীজী সাঃ বললেন-“হায় আল্লাহ! আমরাওতো পড়তে পারিনি! তারপর আমরা সমতল ভূমিতে দাঁড়ালাম। আর তিনি নামাযের জন্য অযু করলেন। আর আমরাও নামাযের জন্য অযু করলাম। তারপর সূর্য ডুবে গেলেও প্রথমে আমরা আসর পড়লাম। তারপর মাগরিব পড়লাম।(বুখারী শরীফ-হাদিস নং-৫৭১,৫৭৩,৬১৫,৯০৩,৩৮৮৬,)

عن أنس بن مالك قال : سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الرجل يرقد عن الصلاة أو يغفل عنها قال : كفارتها يصليها إذا ذكرها

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-এর কাফফারা হল যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।

সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৯১

মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১০৪১

মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩০৬৫

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩২৬২

সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৫

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُولُمَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلَمْ يَذْكُرْهَا إِلَّا وَهُوَ مَعَ الْإِمَامِ فَإِذَا سَلَّمَ الْإِمَامُ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ الَّتِي نَسِيَ ثُمَّ لِيُصَلِّ بَعْدَهَا الْأُخْرَى

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলতেন-যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় তারপর তা স্মরণ হয় ইমামের সাথে জামাতে নামাযরত অব্স্থায়, তাহলে ইমাম সালাম ফিরানোর পর যে নামায ভুলে পড়েনি, তা আদায় করবে, তারপর অন্য নামায পড়বে।

মু্য়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৫৮৪

সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩০১২

5) স্বপ্নদোষ হলে গোসল না করে সমস্ত কাপড় পরিবর্তন করে ওযু করে নামায আদায় করলে হবে কি?

না, হবে না। গোসল করতে হবে। গোসল না করে যতই কাপড় পরিবর্তন করা হোক নামায পড়া জায়েজ হবে না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغْتَسِلُوا ۚ وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا [٤:٤٣]

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক,তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা,যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ,আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়,তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল। {সূরা নিসা-৪৩}

6) স্থায়ী কেপ লাগানো দাঁতের ভিতরে পানি প্রবেশ না করলে ওজু হবে কি?

না, কোন সমস্যা নেই। আপনার ফরজ গোসল মুখে পানি দিয়ে গড়গড়া করলেই আদায় হয়ে যাবে।

فى الفتاوى الهندية-  والصرام والصباغ ما في ظفرهما يمنع تمام الاغتسال وقيل كل ذلك يجزيهم للحرج والضرورةومواضع الضرورة مستثناة عن قواعد الشرع (الفتاوى الهندية-1/13)

প্রামান্য গ্রন্থাবলী:

১- ফাতাওয়া আলমগীরী-১/১৩

২-ফাতাওয়া শামী-১/২৮৪

7) অজুর পানি শরীর থেকে মুছে ফেলা কি ঠিক?

হাদিসে এসেছে যে, “রাসূল সা. অযু করে নেকড়া বা কাপড়ের টুকরা দিয়ে অযুর পানি মুছতেন”। তাছাড়া অন্য হাদিসে এসেছে যে, “অযুর পানির সাথে গোনাহ ঝরে যায়”।

আর গোনাহ ঝরা পানিকে না মুছে রেখে দেবার কোন মানে হয়না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

فى سنن الترمذى- حدثنا سفيان بن وكيع بن الجراح حدثنا عبد الله بن وهب عن زيد بن حباب عن أبي معاذ عن الزهري عن عروة عن عائشة قالت : كان لرسول الله صلى الله عليه و سلم خرقة ينشف بها بعد الوضوء (سنن الترمذى، ابواب الطهور، باب ما جاء في التمندل بعد الوضوء، رقم الحديث-53)

وفى صحيح مسلم- حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ ح وَحَدَّثَنَا أَبُو الطَّاهِرِ – وَاللَّفْظُ لَهُ – أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِى صَالِحٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ – أَوِ الْمُؤْمِنُ – فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ (صحيح مسلم، كتاب الطهارة، باب خُرُوجِ الْخَطَايَا مَعَ مَاءِ الْوُضُوءِ، رقم الحديث-600)

প্রামান্য গ্রন্থাবলী:

১. তিরমিযী শরীফ-হাদিস নং-৫৩

২. সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৬০০

৩. সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং-৮৪০

৪. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৭১৪

৫. সুনানে দারে কুতনী, باب التنشف من ماء الوضوء হাদিস নং-১

8) ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ করে মহিলারা যদি রমজানের রোযা রাখে তাহলে কি রোযা হবে?

তবে যদি কোন মহিলা রমজান আসার আগেই এবং হায়েজ শুরু হওয়ার আগে ওষুধ খেয়ে তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার জন্য রোযা রাখা জায়েজ হবে। কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু যদি রমজান চলে আসে, আর রক্ত জারি হয়ে যাওয়ার পর ওষুধ খেয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে হায়েজের সর্বনিম্ন সীমা কমপক্ষে ৩ দিন পর্যন্ত রোযা রাখতে পারবে না। এর পর থেকে রাখতে পারবে। {কিতাবুল ফাতওয়া-৩/৪০৫}

9) ওযুর সময় সওয়াবের জন্য কোন দোয়া আছে কি?

আর অজুর মাঝে পড়বে

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي ، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي

বাংলা উচ্চারণ- আল্লাহুম্মাগফিরলী জাম্বী ওয়া ওয়াসসি’লী ফী দারী ওয়া বারিকলী ফী রিযকী। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৯৯০৮, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৫০৮০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭২৭৩, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৯৩৯১}

অজুর শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে পড়বে

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ- আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৯৯১২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৬৯, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৭১৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৪, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৬০৭৪}

10) গর্দান মাসাহ করার হুকুম কি?

অনুবাদ-হযরত মুসা বিন তালহা বলেন-যে গর্দান মাসাহ করবে, সে কিয়ামতের দিন গলায় বেড়ি পরানো থেকে মুক্ত থাকবে। {কিতাবুত তুহুর-৩৭৩, হাদীস নং-৩৬৭}

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন-বর্ণনাটি সম্পর্কে একথা বলা যায় যে, যদিও তা একজন তাবেয়ীর কথা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস গণ্য হবে। কেননা, তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। {আত তালখীসুল হাবীর-১/৯২, হাদীস নং-৯৭}

এছাড়া আল্লামা বাগাভী রহঃ, ইবনে সাইয়িদুন্নাস রহঃ, শাওকানী রহঃ প্রমূখও অযুতে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন। {নাইলুল আওতার-১/২০৪}

কথিত আহলে হাদীসদের বড় ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান এ মতকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন-গর্দান মাসাহ করাকে বিদআত বলা ভুল। আত তালখীসুল হাবীর গ্রন্থের উপরোক্ত বর্ণনা ও অন্যান্য বর্ণনা এ বিষয়ের দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া এর বিপরীত বক্তব্য হাদীসে আসেনি। {বুদূরুল আহিল্যাহ-২৮}

11) “” ওজিফা “” শব্দের অর্থ কি?

وظیفہ – Wazifa “ওযীফা” অর্থ দৈনন্দিন বা নিয়মিত ও নির্ধারিত কর্ম বা কর্মসূচী।
এর অর্থ হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরআন এর বিভিন্ন আয়াত তেলাওয়াতে নিয়োজিত থাকা তাছাড়া আল-আসমা উল হুসনা, তসবিহ, দোয়া, দুরুদ শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা এগুলো পাঠ করাকেও ওজিফা বলে।

এটা সাধারনভাবে বেশি সুফী সাধক গনের ব্যবহৃত শব্দ যা
আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য বিভিন্ন তেলাওয়াত ও দোয়া-দুরুদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

12) ওযু করার পর আয়নার দিকে তাকালে কি ওযু ভেংগে যাবে?

প্রশ্নকর্তার বুঝার সুবিধার্থে বলছি। এই আয়নার দিকে তাকালে ওযু ভেংগে যায় যিনি ফতোয়া দিয়েছেন তিনি ভ্রান্ত ফতোয়া দিয়েছে।

তাই তার জবাবে বলতে চাই যদি আয়নার দিকে তাকালে ওযু ভেংগে যায় তাহলে কেউ নদী, পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে ওযু করলে তাও ভেংগে যাবে কারন আয়না যেমন আলোর প্রতিসসরন এর মাধ্যমে একটা প্রতিচ্ছবি বা বিম্ব সৃষ্টি করে তেমনি স্বচ্ছ পানিও তা সৃষ্টি করে তাই নিজের চেহারা আয়নাতে দেখলে যদি ওযু ভেংগে যায় পানিতে দেখলে এমন কি স্টিল বা যেকোন স্বচ্ছ মাধ্যমে দেখলেই ভেংগে যাবে। তাই ওযু ভেংগে যাবে এই ফতোয়া ভুল। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

১৩) নামাযে ২ সেজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় কি পড়তে হয়?

আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়ার হামনী ওয়াজবুরনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী।

অর্থ : হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি দয়া করো, আমাকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করো, আমাকে সত পথ দেখাও এবং আমাকে রিজিক দান করো।

★ সহিহ তিরমিজি

অন্য বর্ননায়,

রাব্বিগ ফিরলি রাব্বিগ ফিরলি।

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করো।

★ ইবনে মাজাহ

(সংগৃহীত)

Comments

comments