খবরের বিস্তারিত...


হযরত মাওলানা শাইখ নুর মুহাম্মদ মিনানগরী নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী (রহঃ):

বৃটিশ শাসনামলের কথা । প্রায় দুইশত বছরের বৃটিশ শাসন বাংলার মুসলিম শাসনের সৌর্য বীর্যের ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছিল। বৃটিশদের অনুগত কিছু মৌলভী আমাদের সমাজে দ্বীন ইছলাম নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর মতবাদ প্রচার করে। মুল উদ্দেশ্য ছিল বাংলার মুছলমানদের অন্তরকে আল্লাহ ও রাসুল (স:) এর ভালোবাসাশুন্য করা। চারিদিকে যখন বিশৃংখলা বিদয়াত কুসংস্কার অন্ধকার তখন একজন সুন্নী হানাফী মাওলানা জন্ম নিয়েছিলেন এই বাংলার জমীনে। তিনি হযরত মাওলানা শাইখ নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) ।

হযরত মাওলানা শাইখ নুর মুহাম্মদ মিনানগরী নকশেবন্দী মুজাদ্দেদী (রহঃ) ছিলেন হযরত মাওলানা কমর উদ্দীন খাঁন রামপুরী (রহঃ) এর সুযোগ্য শিষ্য।সেই সময় বাংলাদেশে তেমন ইসলামী উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা ছিলনা। তাই দ্বীন ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে নুর মুহাম্মাদ ভারতের রামপুর চলে গেলেন । সেখানে ইসলামী শরীয়ত এর বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা সমাপ্ত করলেন অত:পর রামপুর খানকায়ে ইনায়তিয়া- মুজাদ্দেদীয়ার ততকালীন পীর হযরত মুফতি শাহ হিদায়তুল্লাহ খাঁন (রহঃ) এর নিকট নখশেবন্দিয়া-মুজাদ্দেদীয়া তরীকায় খেলাফত হাছিল করেন।

খেলাফত নিয়ে মাওলানা নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) ফিরে আসলেন আপন দেশে। শুরু করলেন ইসলামী শরীয়ত ও তরীকত প্রচারের মিশন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আল্লাহর দ্বীন ইসলাম এর শরীয়ত কায়েম করতে গিয়ে তাকে বিদায়াতীদের মোকাবেলা করতে হল, অনেক বাহাছ হলো, মাওলানা নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) জয়ী হলেন। সত্যের বিজয় হলো। দলে দলে নারী পুরুষ, যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে কুরআন হাদিসের আলোয় আলোকিত হল।

মাওলানা নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) অনুভব করলেন, ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার করতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন “মেনানগর নুরুল হুদা মাদ্রাসা”। মাদ্রাসার নামকরন করেছিলেন ‘ নুরুল হুদা’ যার অর্থ – হিদায়েতের আলো। এবং আপন পীর হযরত মুফতি শাহ হিদায়েতুল্লাহ খাঁন (রহঃ) এর পবিত্র নাম মুবারকের সাথে মিল রেখেছেন যাতে মুরশিদের নামের অসীলায় মাদ্রাসা এবং এখানকার তালেবে এলেমগনের ওপর বরকত হয়। পরবর্তী তে তার পুত্র হযরত মাহমুদ আলম (রহঃ) ‘নুরুল হুদা মুজাদ্দেদিয়া মাদ্রাসা’ নামকরন করেন। হযরত মুজাদ্দেদ আলফেসানী (রহঃ) এর নামের বরকতের উদ্দেশ্যে মুজাদ্দেদিয়া যুক্ত করেন।

এই মহান বুজুর্গ উনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার অধীন ৪নং হাড়িয়ার কুঠি ইউনিওনের কিশমত মেনানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলীম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম শাইখ আশিক মুহাম্মাদ। বড় দুই ভাই শাইখ জাহের মুহাম্মাদ ও শাইখ তাহের মুহাম্মাদ ব্যবসা বাণিজ্য করতেন।

পিতার আগ্রহে এবং দোয়ার বরকতে মাওলানা নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) আলেম হতে পেরেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।শরীয়তের লংঘন দেখলে রেগে যেতেন। গান বাদ্য বাজনা অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। হুজুরের বাড়ীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ জন আদবের সাথে যেত।

হযরত মাওলানা নুর মুহাম্মাদ(রহ:) ১৯৪৮ সালের ১৪ই রজব ইন্তেকাল করেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত মেনানগর নুরুল হুদা মুজাদ্দেদিয়া মাদ্রাসার পাশেই তাকে দাফন করা হয়। শত শত ছাত্র ভক্ত মুরিদানকে কাঁদিয়ে মাওলানা নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) আপন রবের ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্ত কালের সফরে যাত্রা করেন।

হযরতের চার পুত্র ও দুই কন্যা ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র বাল্যকালেই ইন্তেকাল করেন। পুত্রদের মধ্যে হযরত মাওলানা মাহমুদ আলম (রহঃ) অনেক বড় অলী ছিলেন। যিনি আলম পীর সাহেব নামে সুপরিচিত।

অপর দুই পুত্র শাইখ আব্দুস সামাদ এবং শাইখ আব্দুর রাজ্জাক।
আল্লাহ্‌ পাক তার প্রিয়বান্দাগনকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।

ছবি: হযরত শাইখ নুর মুহাম্মাদ (রহঃ) পবিত্র মাজার শরীফ

Comments

comments